শহীদ খোন্দকার টুকু : বেঁচে থাকার জন্য অত্যন্ত জরুরি একটি শব্দ। এটি ছাড়া কেউ থাকতে পারে কি? জানি, সবাই বলবেন, না। নেভার।
সম্পর্ক শুধু এক বা একাধিক মানুষের সাথেই গড়ে ওঠে না। বা সম্পর্কের গভীরতা বলি, বা আকার বলি তা নির্মিত হয় অনেক কিছুর উপর ভিত্তি করে।
কিছু সম্পর্ক হয় by default যেমন রক্তের সম্পর্ক। বাবা মা, ভাই বোন, ছেলে মেয়ে। কিছু তৈরী হয় by choice, তাদের ভেতর মুখ্য হলো স্বামী স্ত্রী অথবা প্রেমিক প্রেমিকার প্রণয়ের সম্পর্ক। তারও বাইরে আছে বন্ধুদের সাথে সম্পর্ক যেটাও by choice। স্বামী-স্ত্রী, বন্ধু বান্ধবের বাইরেও আরো কিছু সম্পর্ক তৈরী হয় by choice, যেগুলোকে সামাজিক সম্পর্ক বলা যায়। যেমন আমরা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যাই বা সামাজিক সংগঠনের সাথে যুক্ত হই। এসবের বাইরে আরেকটি সম্পর্ক আমাদের বেঁচে থাকার জন্য খুবই জরুরি আর সেটা হলো কাজ কেন্দ্রিক বা কর্মক্ষেত্র কেন্দ্রিক সম্পর্ক। এখানে সম্পর্কটা বা সম্পর্কগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাময়িক এবং কতগুলো terms of references কেন্দ্র করে তৈরী হয় এবং পরবর্তীতে তা ধরে রাখা হয়। যেমন আমি কাজ করবো কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক পাবো। আমার কাজের জন্য সহকর্মী অথবা অধঃস্থন কিংবা উরধস্থনদের সাথে নানা ধরনের কাজভিত্তিক যোগাযোগ বা সম্পর্ক রাখতে হয়। কখনো কখনো প্রোডাক্ট বা সার্ভিসেস সাপ্লাইয়ার, ক্লায়েন্ট এদের সাথেও যোগাযোগ এবং সম্পর্ক রাখতে হয়।
যদিও এই কর্ম কেন্দ্রিক সম্পর্ক থেকেও কখনো কখনো by choice সম্পর্ক তৈরী হয়ে যায়। অনেক প্রণয়ের সম্পর্ক তৈরী হয় বা বিয়ে। অথবা অনেক বন্ধু বান্ধব তৈরী হয় যা টিকে থাকে কর্মক্ষেত্রের সীমানা পেরিয়ে, হিসেব নিকেস এর বাইরে। অনেক সময় আমৃত্যু।
যে কোন সম্পর্কই বলি, তৈরী করাটা যতটা না সহজ, তাকে ধরে রাখা অনেক বেশি কঠিন। এমনকি by default এ যে সকল সম্পর্কগুলো থাক্? তাদের বেলাতেও এটা প্রযোজ্য।
By choice এর ভেতর সে সকল সম্পর্ক তৈরী হয়, তাদের ভেতর সামাজিক সম্পর্ক থেকে বের হওয়াটা সবচেয়ে সহজ। কর্ম কেন্দ্রিক সম্পর্ক থেকে বের হওয়াটাও কঠিন নয়। যদি জীবন ধারনের জন্য যে অর্থের প্রয়জন হয়, তার একটা alternate ব্যবস্থা থাকে।
By choice এর ভেতর বন্ধু বান্ধবের সম্পর্ক থেকে বের হওয়াটাও খুব কঠিন নয় যদিও কোন কোন বন্ধু বান্ধবের সাথে সম্পর্কটা ভেঙ্গে যাওয়া খুব কষ্টকর বা বেদনাদায়ক হয়। তবে সময়ের সাথে সাথে সেই ক্ষতগুলো সেরে যায়। কারণ এই সব সম্পর্কের ক্ষেত্রে তেমন কোন expectation থাকে না বা চাওয়া পাওয়ার হিসেবটাও খুব কঠিন নয়।
By default যে সম্পর্কগুলো, সেগুলোতেও সময়ের আবর্তে দূরত্ব বেড়ে যায়। আত্মার ভেতর গভীর একটা শেকড় থাকলেও প্রতিদিন, প্রতি সপ্তাহে, প্রতি মাসে চাওয়া পাওয়ার বেড়াজালে তা আটকে থাকে না।
এক্ষেত্রে সবচেয়ে জটিল সমীকরণ হলো বিয়ে। বিয়ে একাধারে প্রণয় এর আবার আরেক দিক দিয়ে একটা একটা লিগাল চুক্তি এবং ধর্মীয় বা সামাজিক রীতি নীতি বা দুটো দিয়েই কম বেশি বাঁধা। পশ্চিমা বিশ্বে বিয়ে না করে লিভিং টুগেদার সম্পর্কেতেও বিয়ের লিগাল কন্ট্রাক্টের অনেক কিছু ধঢ়ঢ়ষু করা হয়।
লিগ্যাল কন্ট্রাক্টের কারণে হোক, সামাজিক বা পারিবারিক দায়বদ্ধতার কারণে হোক বা, ছেলে মেয়েদের কথা ভেবে হোক এমনকি সম্পর্কে থাকা অন্য মানুষটির জন্য ভালোবাসার ছিটে ফোঁটা ও অবশিষ্ট থাকলে বা একধরনের মায়া থাকলে বিয়ে বা লিভিং টুগেদার, আরো শক্ত করে বলতে হয় বিয়ের সম্পর্ক থেকে বের হওয়াটা সব চাইতে কঠিন।
আমার এই পোস্টটা এই ব্যাপারটা নিয়েই যে কোন সম্পর্কই বলি, তাকে টিকিয়ে রাখা বা আরো পজিটিভভাবে বলতে গেলে সুন্দর করে রাখতে চাইলে সবচেয়ে বড় উপাদান হলো রিসপেক্ট। একে অপরের প্রতি রিসপেক্ট। আর স্বামী স্ত্রী বা লিভিং টুগেদার সম্পর্কের পার্টনারদের ভেতর এর প্রয়োজন অনিবার্য। রিসপেক্ট থাকলে লাভ, কেয়ার, এম্পাথি, সাপোর্ট সব আপনি এসে যুক্ত হয়। রিসপেক্ট না থাকলে এগুলোর কিছুই আশা করা যায় না।
যেসব সম্পর্কে ভাগাভাঙ্গি শুরু হয় তাদের অনেক কারণ থাকে, অনেক কিছু যৌক্তিক, অনেক কিছু তৃতীয় কোন পক্ষের অযাচিত বা অনাকাক্সিক্ষত influence -এর কারণে। কিন্তু আমার মনে হয় একজনের প্রতি আরেক জন রিস্পপেক্ট ফুল থাকলে কোন দিন কোন সম্পর্ক ভেঙ্গে পড়া কঠিন। খানিকাটা Ups and down হতেই পারে, কিন্তু সেটাও ঠিক হয়ে যায়।
অনেকে বলেন, আমি এত স্যাক্রিফাইস করেছি, আমি একা কেন স্যাক্রিফাইস করব ইত্যাদি ইত্যাদি। এই স্যাক্রিফাইস শব্দটা সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটা গারবেজ। এটাকে পরিত্যাগ করা উচিত। আমাদের সবাইকে কিছুটা এডজাসটমেন্ট করতে হয়। কর্মক্ষেত্রে করতে পারলে সংসার জীবনে নয় কেন? স্যাক্রিফাইস করেছি ভাবলেই আপনি হেরে গেলেন। বড় একটা ডেন্ট হয়ে গেল কিন্তু।
শেষ কথা, নানা টানাপোড়েনের ভেতর নানা কারণে অনেক তিক্ত সম্পর্ক থাকার পরেও অনেকে সংসার থেকে চলে যেতে পারে না। কেউ অর্থনৈতিক কারণে, কেউ ছেলে মেয়েদের কথা চিন্তা করে, কেউ বা সামাজিক কারণে কিংবা অন্য কারণে। যে কারণেই হোক, কেউ যদি কোন সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চান তাহলে সম্পর্কের ভেতর থাকা অন্য মানুষটিকে অপমান করবেন না। সে যদি কোন ভুল করে থাকে এবং তাকে ক্ষমা করতে না পারেন, বারবার সেটাকে সামনে এনে তাকে অসন্মান করতে চাবেন না। হেয় করবেন না। কি লাভ হবে তাতে?
তার খারাপ কিছু কে বারবার মনে না করে, সে একটা হলেও ভালো কিছু করে থাকলে সেটা কে মনে করুন। কারণ choice তো আপনার। আপনি চলে যেতে পারতেন। আপনি যাননি। খুব ভালো কথা। আপনি সম্পর্কটাকে টিকিয়ে রাখতে চান। কিন্তু বারবার যদি আপনি সেই মানুষটিকে সরাররি বা অন্য মানুষদের সামনে হেয় করেন, সেই সম্পর্ক আসলেই কি টিকতে পারে?
আমি sociologist বা psychologist নেই। আজ বাইরে অনেক স্নো স্টরম। ঘরে আটকে আছি। মনে হলো কিছু লিখি, তাই লিখলাম। কাউকে উদ্দেশ্য করে নয়। এরকম অনেক দেখেছি, অনেকের কাছে শুনেছি, তাই আমার মনের ভাবনাটা শেয়ার করলাম।
সবাই ভাল থাকবেন। অন্য কে সন্মান করবেন। কাউকে হেয় করার চেষ্টা করবেন না। তাকে যদি ভাল না লাগে, অসহ্য মনে হয়, সম্পর্কটাতে সুন্দরভাবে ইতি টানেন। আর যদি থেকে যাবার সিদ্ধান্তই নেন, তাকে আরো জটিল না করাই শ্রেয়।
শহীদ খোন্দকার টুকু : টরন্টো, কানাডা