অনলাইন ডেস্ক : আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সব সময় আমিই ছিলাম খালেদা জিয়ার টার্গেট। তিনি বলেছিলেন, আমি নাকি প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, বিরোধী দলের নেতাও কোনোদিন হতে পারব না। তার পর বোমা পোঁতা হলো কোটালীপাড়ায়। এর পর তার বক্তব্য, আওয়ামী লীগ শত বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। এর পর গ্রেনেড হামলা হলো। আমার মনে হয় এ কথাগুলো আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। গতকাল শুক্রবার বিকালে গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সূচনা বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীর ওপর অত্যাচার করেছে। আমাদের মিটিং করতে দেয়নি। একজন আমাকে শুধু হাত দেখিয়েছিল বলে তার দাড়ি টেনে টেনে তুলেছিল। বহু নেতাকর্মীর হাতের কব্জি কেটে দিয়েছিল। পা কেটে দিয়েছে। চোখ তুলে ফেলা হয়েছে। বাড়িঘর দখল করেছে। তাদের অত্যাচারে আমাদের ২০ হাজার নেতাকর্মী মৃত্যুবরণ করে। তারা আওয়ামী লীগের নাম-নিশানাও মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল।
বিভিন্ন সরকারের সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পর তার যে অত্যাচার- আমরা আওয়ামী লীগ অফিসে পর্যন্ত বসতে পারতাম না, যেতে পারতাম না, ঢুকতে পারতাম না। আমাদের সিআরআই (গবেষণা প্রতিষ্ঠান) বন্ধ করে দিয়ে ১৬টি কম্পিউটার, ৩০০ ফাইল, ১০ হাজার বই, নগদ টাকা-পয়সা সব কিছু নিয়ে যায়, সেখানে তালা দিয়ে যায়। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আবার সেই অফিস আমরা খুলতে পারি।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমাদের অগণিত নেতাকর্মীকে কারাগারে রেখেছে। সেখানে কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসা নিতে পর্যন্ত যেতে দেয়নি। শুধু আমাদের ওপর অত্যাচার হয়েছে তা-ই নয়, সেনাপ্রধান মোস্তাফিজ, অসুস্থ ছিল, তাকেও সিএমএইচে ভর্তি হতে দেয়নি। অন্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাকে স্ট্রেচারে করে হাজির করা হয়েছে মামলার জন্য। বিমানবাহিনী প্রধান জামাল উদ্দিন সাহেব, তার মতো সৎ একটা মানুষ, তাকে সাধারণ একটা ঘড়ি চুরির মামলা দিয়ে কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়েছে। সেখানে তাকে কোনো ডিভিশনও দেয়নি। তাকে মাত্র দুটি কম্বল দিয়েছিল। ফ্লোরে থাকতে হয়েছে তাকে। এরা যেভাবে অমানবিক কাজ করেছে, এ রকম বহু কাহিনি আছে।
নিজেসহ দলের আরও কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে তাদের ওপর নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমার মনে হয়, এখানে এমন কেউই নেই যার ওপর অত্যাচার হয়নি। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন বা তাদের বাধা দেয়নি। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। জনগণের ভোটে বিশ্বাস করি। ২০০৮ সালে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচন নিয়ে তো কেউ প্রশ্ন তোলেনি। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশ মেজরিটি নিয়ে ক্ষমতায় আসে। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে আওয়ামী লীগ যে কাজ করেছে, এর ফলে জনগণ আমাদের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছে। আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। কিন্তু সেই ভোট ঠেকানোর নামে মানুষ পোড়ানো থেকে শুরু করে যা করেছে, সেটা দেশের মানুষ ভুলে যায় কীভাবে? একেকটা নির্বাচনের আগে তারা অত্যাচার-নির্যাতন করেছে। বলেছে, নির্বাচন করবে না। তারা দেখাতে চেয়েছে- তারা অংশ নেয়নি তাই নির্বাচন হয়নি। এটিই ছিল তাদের উদ্দেশ্য।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, হাইকোর্টের একটা রায় আছে, সংবিধান লঙ্ঘন করে মার্শাল ল জারি করে যারা ক্ষমতা দখল করেছে, সেটিকে অবৈধ বলা হয়েছে। জিয়াউর রহমান শুধু মার্শাল ল নয়, আর্মি রুলস ল, সেটাও ভঙ্গ করেছিল। কারণ সেখানে স্পষ্ট লেখা ছিল- সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় তারা নির্বাচন করতে পারবে না বা কোনো রাজনীতি করতে পারবে না। কিন্তু জিয়া একাধারে সেনাপ্রধান, সেই সঙ্গে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেয়। পরে আবার হ্যাঁ ভোট দিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করে। এর পর রাজনৈতিক দল গঠন করে। সেই দলই হচ্ছে বিএনপি। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীদের হাতে গড়া দল হচ্ছে এ বিএনপি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরের হত্যাকান্ডের পর বাংলাদেশ লক্ষ্যচ্যুত হয়েছিল। পঁচাত্তরের পর ১৯টা সামরিক ক্যু হয়। এর ফলে সামরিক বাহিনীর অনেক সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। কোর্ট মার্শাল হয়, ফায়ারিং স্কোয়াড হয়েছে এবং ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কয়েকদিন আগেও বহু স্বজনহারা মানুষ একত্রিত হয়ে তাদের স্বজন হত্যার বিচার চেয়েছে। তারা লাশও খুঁজে পায়নি। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেই এ ঘটনাগুলো ঘটায়। কাজেই তাদের সেই দাবির একটা তদন্ত হোক। কেন তারা স্বজনদের লাশগুলো পেল না।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমি এবং রেহানা দেশে আসতে পারিনি। আমাদের রিফিউজির মতো থাকতে হয়েছে। ১৯৮১ সালে যখন আমাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়, তখন অনেক বাধা ছিল; কিন্তু আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম দেশে ফিরে আসব। এর পর আমি চেষ্টা করেছিলাম সংগঠনটা গড়ে তোলার। এ সময় পঁচাত্তর-পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে জাতির পিতার খুনিদের বিচার না করে তাদের পুরস্কৃত করা ও বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেওয়া, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেওয়া এবং সংসদে বসার সুযোগ করে দেওয়ার প্রসঙ্গও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
ড. রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন নতুন রাজনৈতিক দলের দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, তাদের যেন কোনো রকম বাধা দেওয়া না হয়।
কোনো দলের নাম উচ্চারণ না করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যত আমরা ভালো কাজ করি, সেখানে একটা বিতর্ক সৃষ্টি করার চেষ্টা সব সময় এদের আছে। এসবে বিএনপি-জামায়াতই সব থেকে বেশি সক্রিয়। আবার এখন নতুন কিছু গজাচ্ছে; সেটা গজাক।
নতুন দলকে বাধা না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি কালকেও আইজিপিকে বলেছি যারা নতুন পার্টি করতে চাচ্ছে, তাদের পার্টি করতে দেওয়া উচিত এবং তারা দল করুক, তারা কাজ করুক।’
তিনি বলেন, এখানে বহু দলীয় গণতন্ত্র বিদ্যমান। কাজেই এখানে যেন কোনো রকম বাধা দেওয়া না হয়। মিছিল করতে চাচ্ছে মিছিল করুক। মিছিলে আমরা বাধা দেব কেন?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের যত রকম আন্দোলন আছে করুক। কিন্তু মানুষ পুড়িয়ে মারতে পারবে না, কোনো জানমালের ক্ষতি করতে পারবে না, সেটা আমাদের দেখতে হবে, যেন কোনো জিনিসের ক্ষতি করতে না পারে।’