মনিস রফিক : চলচ্চিত্রের যাত্রাপথ ইতোমধ্যে ১২৫-এ পা দিয়েছে। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে নবীন আর শক্তিশালী এই শিল্পমাধ্যমকে ‘অষ্টম আশ্চর্য’ বলা হয়। আমাদের জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আশা-নিরাশা আর ভালোবাসার কথা যেভাবে এই শিল্পমাধ্যমে উঠে আসে, তা অন্য শিল্প মাধ্যমে সম্ভব হয় না। মূলত পূর্বের ছয়টি শিল্পের মিথস্ক্রিয়া আর প্রতিফলনে ঋদ্ধ চলচ্চিত্র নামের এই ‘সপ্তম শিল্পকলা’। শুরু থেকে বর্তমানের চলচ্চিত্রের যাত্রাপথটা কেমন ছিল, আর কোন কোন অনুসন্ধিৎসু ক্ষণজন্মা স্বপ্ন দেখা মানুষের স্বপ্নের ফসল এই চলচ্চিত্র, সে সব বৃত্তান্ত উঠে আসবে চলচ্চিত্রকর্মী মনিস রফিক এর লেখায়। চলচ্চিত্র যাত্রাপথের এই বাঁকগুলো ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হবে ‘বাংলা কাগজ’ এ।

আঠার.
১৯৪৯ সালের ৩ মার্চ মামাতো বোন বিজয়ার সাথে সত্যজিতের বিয়ে হয়। ১৯৫০ সালের এপ্রিলে কোম্পানীর লন্ডন শাখায় তাঁকে কাজ করার জন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু সত্যজিতের ঐ মুহূর্তে লন্ডন যাবার কোন ইচ্ছে ছিল না। কারণ তাঁর মন পড়েছিল রেনোয়ার দি রিভার শ্যুটিং-এর প্রতীক্ষায়। যাহোক অফিসের কর্তাদের প্ররোচনায় আর ইংল্যান্ডের চলচ্চিত্র কাছ থেকে দেখার স্বপ্নে ১৪ এপ্রিল বিজয়া ও সত্যজিৎ সমুদ্র পথে রওনা হলেন। জাহাজে করে কলম্বো থেকে লন্ডনে পৌঁছাতে ষোল দিন লেগেছিল। এই দিনগুলোতে তিনি পথের পাঁচালী’র চিত্রনাট্যের খড়সা করে ফেললেন। উলে­খ্য, পথের পাঁচালী কিশোর সংস্করণকে আম আঁটির ভেপু নামকরণ করা হয়।

সত্যজিৎ রায়

নিঃসন্দেহে, ১৯৫৫ সালকে বাংলা চলচ্চিত্রের মাহেন্দু হিসেবে গণ্য করা হয়। আর এটির কারণ হচ্ছে এই বছরে পথের পাঁচালী’র মুক্তিলাভ। এমন একটি ক্ষণ-এর জন্য যে দীর্ঘ পরিশ্রম ও সাধনার প্রয়োজন সত্যজিৎ রায় তাঁর জীবন দিয়ে সেটা দেখিয়ে গেছেন। দীর্ঘদিন ধরে তাঁর পথের পাঁচালী নিয়েতো চিন্তাভাবনা ছিল, তবে ১৯৫১ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত চলচ্চিত্র উৎসব বলতে গেলে তাঁকে ঠেলে দিল পথের পাঁচালী নির্মাণের জন্য। সেই উৎসবে আসা ছবিগুলো মধ্যে অন্যতম ডি সিকার বাইসিক্ল থিফ, মিরাকল ইন মিলান, রোসিলিনির ওপেন সিটি, টাটির জুর দ্য ফেত এবং আকিরা কুরোসাওয়ার রশোমন। সত্যজিতের মতে, তাঁর উপরে রশোমন এর প্রভাব ছিল ‘ইলেকট্রিক’। পরপর তিনদিন তিনি রশোমন দেখেছেন। তিনি বলেছেন ‘কী তীব্র আবেদনে যে এ ছবি আলোড়িত, স্বচক্ষে না দেখলে তা আন্দাজ করা যায় না।’ এই উৎসবের যে ফল সত্যজিতের উপর পড়ল তা হচ্ছে, তাঁর মনে আর কোন সংশয় রইল না যে তিনি ছবি করবেন। আর পথের পাঁচালী’ই হবে তাঁর প্রথম ছবি।

১৯৫২ এর ডিসেম্বর মাসে বিভূতিভুষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবারকে জানানো হয়েছিল যে, সত্যজিৎ পথের পাঁচালী নিয়ে ছবি করতে আগ্রহী। সত্যজিৎ রায়ের খুব ইচ্ছে ছিল, বিভুতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে তাঁর উপন্যাস নিয়ে কথা বলা এবং তাঁর পরিকল্পনার কথা জানানো। কিন্তু ১৯৫০ সালের পহেলা নভেম্বরে বিভূতিভূষণের আকস্মিক মৃত্যু হলে সত্যজিৎ এর আশা পূরণ সম্ভব হয়নি। এই মৃত্যুতে সত্যজিৎ খুবই বেশি ম্রিয়মান হয়ে পড়েছিলেন। সেই সময়ে পথের পাঁচালী’র চিত্রস্বত্তে¡র জন্য অনেকেই বিভূতিভূষণের বিধবা স্ত্রীর সাথে কথা বলেছেন এবং মোটা অংকের টাকা দেওয়ার প্রস্তাবও দেন। কিন্তু রমা দেবী টাকার প্রলোভনে না পড়ে সত্যজিৎকেই ছবিটি করার অনুমতি দেন। এর পেছনে অবশ্য কাজ করেছিল, আম আঁটির ভেঁপু বইয়ে করা সত্যজিতের চমৎকার সব ইলাসট্রেশন আর সত্যজিতের পরিবার। কারণ রমা দেবী নিজে ছিলেন উপেন্দ্রকিশোর আর সুকুমার রায়ের অত্যন্ত অনুরাগী। রমা দেবী শুধু সত্যজিৎ রায়কে বলেছিলেন, শুধু শ্যুটিং এর অর্থ জোগাড় করতে, চিত্রস্বত্তে¡র অর্থ নিয়ে না ভাবতে। তবে সেই সময় বেশ কয়েকজন পরিচিত চলচ্চিত্র পরিচালক রমা দেবীর কাছে এমন অনুযোগ করেছিলেন যে, সত্যজিৎ এর মত কম বয়স্ক ও চলচ্চিত্র পরিচালনায় অনভিজ্ঞ একজনের হাতে এত সুন্দর একটা কাহিনী দিয়ে যে ছবিটি তৈরী হবে, সেখানে অবশ্যই উপন্যাসের মৃত্যু ঘটবে।

‘পথের পাঁচালী’র চিত্রনাট্যের স্টোরি বোর্ডে সত্যজিৎ রায়ের আঁকা বিভিন্ন দৃশ্যের ছবি

পথের পাঁচালী’র চিত্রনাট্যের ঝামেলা শেষ হবার পর সত্যজিৎকে পড়তে হল প্রযোজক জোগাড়ের সমস্যায়। নতুন এক পরিচালককে বিশ্বাস করে কেউ অর্থলগ্নি করতে চাইলো না। তার উপর এই ছবিতে কোন নামীদামী অভিনেতা অভিনেত্রী নেই যাদের দেখে দর্শকরা প্রেক্ষাগৃহে ছুটে আসবে। পথের পাঁচালী’র বাজেট ছিল সত্তর হাজার টাকা। এই টাকার জন্য বা প্রযোজক জোগাড় করে দেবার জন্য সত্যজিৎ এবং তাঁর বন্ধুরা প্রথমে গেলেন সেই সময়ের কোলকাতার একমাত্র শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত রঙ্গমঞ্চের মালিক শিশির মলি­ক এর কাছে। তিনি চিত্রনাট্যের বিন্যাস শুনে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন। তখনই তিনি রানা এন্ড দত্তকে পথের পাঁচালীর জন্য জোর সুপারিশ করেন। রানা বাবু প্রথম কিস্তিতে চলি­শ হাজার টাকা দিতে রাজী হন। তবে তিনি সংশয় প্রকাশ করেন, যে ছবিতে স্টার নেই, গান নেই এবং মারপিঠ নেই, সেই ছবিতে এত অর্থ খরচ হবে কি করে? তবে প্রযোজকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ানো সত্যজিতের ভাল লাগছিল না। তিনি সিদ্ধান্ত নেন, তিনি আসলেই ছবি তুলতে পারেন কি না, এটা বুঝানোর জন্যই কিছু দৃশ্যের শ্যুটিং করে প্রযোজকদের দেখাবেন। আর এ কাজের জন্য অন্তঃত দশ হাজার টাকা সংগ্রহের জন্য তিনি তাঁর ইন্সিওরেন্স থেকে প্রায় সাত হাজার টাকা এবং বাকী টাকা বন্ধুদের কাছ থেকে ধার নেন। পথের পাঁচালী’তে যে নিশ্চিন্দিপুর গ্রামের কথা রয়েছে, বিভুতিভূষণের প্রিয় গোপাল নগর গ্রামে গিয়ে সত্যজিতের মনে হয়েছিল, ছবির মূল শ্যুটিংটা ওখানেই করবেন।

মূল শ্যুটিং এর টাকা প্রথম প্রথম রানা বাবু দিতে থাকেন, কিন্তু পরবর্তীতে হঠাৎ করে তিনি অর্থের যোগান বন্ধ করে দেন। মহাঝামেলায় পড়ে শ্যুটিং ইউনিটের পুরো দল। এই ঝামেলা থেকে সাময়িক উদ্ধারের জন্য বিজয়া রায় তাঁর সমস্ত গয়না দিয়েছিলেন, সেগুলো বন্ধক রেখে কয়েকটি দিন শ্যুটিং চলেছিল। পথের পাঁচালী শেষ করার জন্য সত্যজিৎকে তাঁর বহুদিনের বহু কষ্টে সংগৃহীত বড় আদরের বিদেশী প্রকাশনের বৃহদাকার বই, অ্যালবাম এবং বিদেশী ধ্রæপদী সঙ্গীতের রেকর্ডগুলো বিক্রী করে দিতে হয়। পরবর্তীতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ছবিটি শেষ করার জন্য এগিয়ে আসে। উলে­খ্য, তখন পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী ছিলেন ডা. বিধানচন্দ্র রায়। ডা. রায়ের সিদ্ধান্তে ছবির পুরো সত্তর হাজার টাকা সত্যজিৎকে দেয়া হয় যদিও সেই সময়ের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের চলচ্চিত্র বিষয়ক কর্মকর্তা সত্যজিৎ রায়কে এই অর্থ প্রদান সম্পূর্ণই জলে গেল বলে মন্তব্য করেছিলেন। অথচ শুধুমাত্র ১৯৬১ সালে পথের পাঁচালীর মার্কিন ডিস্ট্রিবিউটর এডওয়ার্ড হ্যারিসন কোম্পানী পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে ৫০,০০০ ডলার রয়্যালটি দিয়েছেন; সরকারের অবশ্য আরো প্রাপ্য বাকী ছিল। চুক্তির শর্তে কোন উলে­খ না থাকার ফলে সত্যজিৎ পথের পাঁচালী ছবি থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আসা এই বিশাল অংকের অর্থের কোন অংশ পাননি। অর্থ পাওয়া সম্পর্কে তাকে প্রশ্ন করায়, তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, “নট আ পেনি। দে গেট দ্য মানি বাট আই গট দ্য ফেম।”

‘পথের পাঁচালী’র সঙ্গীত পরিচালক বিশ্ববিখ্যাত সেতার বাদক রবি শংকরের (ডানে) সাথে সত্যজিৎ রায় (বামে)

১৯৫৫ সালের ১৯ আগষ্ট পথের পাঁচালী মুক্তি পায়। ছবিটি শুরু থেকে প্রচুর দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছিল। যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার পথের পাঁচালীর জন্য সত্তর হাজার টাকা দিতে গিয়ে বলেছিল, টাকাটা পুরোটায় জলে যাচ্ছে, সেই সরকারের কোষাগারে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে প্রায় এক লক্ষ সত্তর হাজার টাকা জমা হয়। পথের পাঁচালীকে ভারতের সবচেয়ে বেশি ব্যবসা সফল ছবি বললে সম্ভবত ভুল হবে না। কারণ এটাই একমাত্র ছবি যেটা সেই সুদূর ১৯৫৫ সাল থেকে এখনো ব্যবসা করে যাচ্ছে, যার জন্য বিনিয়োগ ছিল মাত্র সত্তর হাজার টাকা।
১৯৫৫ সালেই ভারতীয় ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্ররূপে পথের পাঁচালী নির্বাচিত হয় এবং সেরা পরিচালকের সম্মান পান সত্যজিৎ রায়। কিন্তু পুরষ্কারটি ঘোষিত হয় ১৯৫৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। পথের পাঁচালী কোলকাতায় ২৬ আগষ্ট মুক্তি পাওয়ার পূর্বে প্রথম প্রদর্শিত হয় নিউইয়র্কে। ১৯৫৫ সালের ৩ মে তারিখে। বিদেশ থেকেই এর জন্য প্রথম পুরষ্কার আসে। ১৯৫৬ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটি বেস্ট হিউম্যান ডকুমেন্ট হিসেবে স্পেশাল জুরি পুরষ্কার পায়।

পথের পাঁচালী একটা প্রবল ভূমিকম্পের মত ভারতীয় চলচ্চিত্রের গৃহীত কাঠামোকে চূর্ণ করলো। পথের পাঁচালী যে নব বাস্তববোধ দর্শক ও সমালোচকদের হতবাক করেছিল, তার উপাদানে সত্যজিৎ রায়ের ডিটেলের বিশেষ অবদান রয়েছে।
নিশ্চিন্দিপুরের গরীব পুরোহিত হরিহরের পরিবারের কাহিনী যেমন গ্রাম বাংলার অসংখ্য মানুষের কাহিনী। হরিহরের স্ত্রী সর্বজায়া, কন্যা দুর্গা, পুত্র অপু এবং দুঃসম্পর্কের ইন্দির ঠাকুরণকে নিয়ে আবর্তিত কাহিনীর মাঝে মধ্যে যে ডিটেল সত্যজিৎ রায় ব্যবহার করেছেন তা সত্যিই ভারতীয় ছবিতে পূর্বে কখনো দেখা যায়নি। শাপলা পাতার ওপর ফড়িঙের খেয়ালী নৃত্য, জল-পতঙ্গের ছন্দোবদ্ধ গতি, আকাশ ভাঙ্গা বৃষ্টি কিংবা বর্ষণান্ত রাত্রির শেষে ভাঙ্গা রান্না ঘরে চিৎ হয়ে থাকা মরা ব্যাঙ পূর্বে কখনো এত সূ²ভাবে ভারতীয় দর্শকরা দেখেনি। এ ছবিতে ছোট্ট দুর্গার চুরি করা পেয়ারা নিয়ে ইন্দির ঠাকুরণের সেই খুশি হয়ে ওঠার মধ্যে সারা গ্রাম বাংলার অতীত যেন তার সরলতা, দারিদ্র এবং সহজ সুখ নিয়ে ধরা পড়ে। অথবা দুর্গার মৃত্যুর কয়েকদিন পরে বিষন্ন অপু স্নানের পর ভিজে চুল নিজেই আঁচড়ায়। এ কাজটা দিদির অভাবে সে প্রথম করে। এরপর গায়ে চাদর জড়িয়ে সে বাইরে বেরিয়ে যায়। কিন্তু আকাশের দিকে তাকিয়ে ফিরে আসে এবং ছাতাটা সঙ্গে নিয়ে যায়। মনে হয়েছে, একটি সহায় সম্বলহীন অতি দরিদ্র পরিবারে মাত্র কয়েকদিন পূর্বেকার একটি মৃত্যু তাকে যেন প্রাপ্ত বয়স্ক করে তোলে এবং সহসা একটা স্বনির্ভরতা এবং দায়িত্ববোধ ছোট্ট অপুর মধ্যে সচেতন হয়ে ওঠে। এমন অসংখ্য ডিটেলস্ এ পথের পাঁচালী একটি অনন্য সুন্দর চলচ্চিত্র হয়ে উঠেছে এবং এই নতুন ছবির স্বাদ শুধুমাত্র ভারতীয় দর্শকরা গ্রহণ করেনি বরং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সৎ চলচ্চিত্রের সব দর্শক তা গ্রহণ করেছে।

সত্যজিৎ রায় নির্মিত দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘অপরাজিত’র পোস্টার

পথের পাঁচালী পর সত্যজিৎ রায় অপরাজিত করার সিদ্ধান্ত নেন। পথের পাঁচালীর নিশ্চিন্দিপুর থেকে মা বাবার সাথে অপুর কাশিতে যাওয়া এবং কলেজে যাবার কাহিনী এই ছবিতে ওঠে এসেছে। ইতোমধ্যে চলচ্চিত্রের মধ্যে ভালভাবে ঢুকে যাবার জন্য সত্যজিৎ রায় ডি কে কিমার এর চাকুরী ছেড়ে দেন। পথের পাঁচালী তৈরির সময় প্রযোজক নিয়ে যে ভোগান্তি পোহাতে হয় অপরাজিত সম্পূর্ণ উল্টোটা ঘটে। প্রযোজকরা এক প্রকার লাইন দিয়ে থাকে সত্যজিৎ রায়কে দিয়ে ছবি বানানোর জন্য। শেষ পর্যন্ত চারু প্রকাশ ঘোষ, হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় এবং বিএন বন্দ্যোপাধ্যায় তিনজন মিলে এ ছবির প্রযোজনা করেন। পথে পাঁচালী’র পরিবেশক অরোরা ফিল্ম কর্পোরেশনও এবার পরিবেশকের দায়িত্ব নেয়। সেই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অজিত বসুর প্রস্তাব অনুযায়ী এক লাখ টাকার মূলধন নিয়ে একটি প্রযোজক সংস্থা করার প্রস্তাব হয়। এর পঞ্চাশ ভাগ মালিকানা থাকবে সত্যজিৎ রায়ের আর পঞ্চাশ ভাগ চারু প্রকাশ ঘোষ প্রমুখের। মূলধনের পঞ্চাশ হাজার টাকা অরোরা সত্যজিৎ রায়কে বার্ষিক এক টাকা সুদে ধার দেয়। অন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা চারু বাবুরা দেয়। সিদ্ধান্ত হয় প্রিন্ট ও পাবলিসিটি বাবদ সব খরচ অরোরা পরিবেশক বহন করবে। সত্যজিৎ রায় নতুন এই সংস্থার নাম দেন এপিক ফিল্মস। মূলতঃ পথের পাঁচালীর অভূতপূর্ব সাফল্যের পর সত্যজিৎ রায়কে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। (চলবে)