অনলাইন ডেস্ক : আসন্ন বাজেট অধিবেশন উপলক্ষে সংসদের কর্মকর্তাদের করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরীক্ষায় ৪৩ জন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। তাদের অধিকাংশের শরীরেই তেমন কোনও উপসর্গ নেই। করোনা পজিটিভ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকেই ভিআইপি দফতরে অবাধে যাতায়াত করেন। আর অধিবেশন চলাকালীন এদের অনেকের সংসদ কক্ষে দায়িত্ব পালনের কথা ছিল। সংসদ সচিবালয়ে সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন উপলক্ষে সংসদে দায়িত্বরত ৩০০ জনের মতো কর্মকর্তা-কর্মচারীর করোনা পরীক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ২ জুন থেকে এই পরীক্ষা শুরু হয়। সোমবার (৮ জুন) তাদের কোভিড-১৯ পরীক্ষা শেষ হয়েছে। কিন্তু অধিবেশনে যোগ দিতে পারেন এমন সংসদ সদস্যদের করোনা পরীক্ষার ব্যাপারে কোনও নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
করোনা পজিটিভের বিষয়ে সংসদ মেডিক্যাল সেন্টারের চিফ মেডিকেল অফিসার আরিফুল হক জানান, সংসদে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ৪৩ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে সোমবার ১১ জনের শরীরে, রবিবার ১৬ জনের শরীরে আর শনিবার ৪ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। বাকিদের শরীরে এর আগে পাওয়া গেছে। পজিটিভ হওয়া কয়েকজন মেডিক্যাল সেন্টারের বাইরে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নমুনা পরীক্ষা করিয়েছেন বলেও তিনি জানান।
সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান বলেন, পজিটিভ রিপোর্ট পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, আক্রান্তদের মোবাইলে করোনা পজিটিভ জানিয়ে মেসেজ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও সংসদের সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস তাদের তালিকা ধরে ফোন দিয়ে জানিয়ে দিচ্ছেন। সংসদে না যাওয়ার জন্য বলছেন। জানা গেছে, সোমবার সংসদ সচিবালয়ের ৩১তম কমিশন বৈঠকে উপস্থিত থাকার ছিল এমন কয়েকজন কর্মকর্তার শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়। পরে তারা বৈঠকে যাওয়া থেকে বিরত থাকেন। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, করোনা পরীক্ষার জন্য সংসদ সদস্য মেম্বারস ক্লাবে একটি বুথ তৈরি করা হয়। সেখানে নমুনা নিয়ে হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে অধিবেশনে অংশ নেওয়া এমপিদের করোনা পরীক্ষা করানো হচ্ছে না বলে বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন। তিনি জানান, যাদের করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার দরকার ছিল তাদের করানো হচ্ছে। এছাড়া অনেকে নিজ উদ্যোগে পরীক্ষা করিয়েছেন।
এমপিদের পরীক্ষার ব্যাপারে চিফ হুইপ বলেন, ‘সংসদ সদস্যদের ব্যাপারে আমাদের কোনও নির্দেশনা নেই। কারণ, আজকে টেস্ট করলাম কালকে যে পজিটিভ হবে না তার কোনও গ্যারান্টি আছে? তবে চাইলে তারা নিজেরা টেস্ট করিয়ে নিতে পারেন।
এদিকে এমপিদের করোনা পরীক্ষা না করায় সংসদে কর্মরতদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কারণ, এ পর্যন্ত সাত জন এমপি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। একজন প্রতিমন্ত্রীর বাসায় কর্মরত চার জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। এছাড়া সংসদীয় কমিটির একজন সভাপতির পিএস এবং একাধিক মন্ত্রীর দফতরের কর্মকর্তার কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়েছে। এজন্য সংসদে যোগ দেবেন এমন এমপিদেরও করোনা পরীক্ষার পরামর্শ দিচ্ছেন অনেকে।
এ বিষয়ে সংসদের উপসচিব পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, কেবল তাদের পরীক্ষা করালে কী সুরক্ষা নিশ্চিত হবে? সংসদ সদস্যদেরও করোনা পরীক্ষা করানো উচিত। কারণ, তাদের জনসাধারণের সঙ্গে বেশি মেলামেশা করতে হয়।
আগামী ১০ জুন শুরু হচ্ছে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশন। অধিবেশন শুরুর পরের দিন অর্থাৎ ১১ জুন বাজেট উত্থাপন হবে। এটি পাস হবে ৩০ জুন। বাজেট অধিবেশন ঘিরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে অনেক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
করোনা সংকটকালে অনুষ্ঠেয় এ বাজেট অধিবেশনে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সংসদ সচিবালয়। এক্ষেত্রে শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং বয়স্ক সংসদ সদস্যদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। রোস্টারভিত্তিক সংসদ সদস্যদের অধিবেশনে যোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিদিন উপস্থিতি ৮০/৯০ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হচ্ছে।
অধিবেশন চলাকালে কক্ষে স্বাস্থ্য নিরাপত্তায়ও বড় ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে সাময়িকভাবে আসন বিন্যাসেও পরিবর্তন আনা হবে। প্রধানমন্ত্রীর আশপাশের বেশ কয়েকটি আসন ফাঁকা রাখা হবে। এক্ষেত্রে সংসদের প্রধান হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরীকে আরও এক সারি পেছনে এবং প্রধানমন্ত্রীর ডান পাশের আসনের সংসদ সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরীসহ অন্যদের আরও কয়েক আসন দূরে বসানোর ব্যবস্থা করা হবে। আসন বিন্যাস এবং তালিকা করে সংসদ সদস্যদের উপস্থিতির বিষয়ে প্রধান হুইপের নেতৃত্বে হুইপরা একদফা বৈঠক করেছেন। বৈঠকে কোন দিন কোন কোন সদস্যরা অংশ নেবেন তার তালিকা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়।