দেলওয়ার এলাহী : গত ৪ জুন, রবিবার দুপুরে টরন্টোর আলবার্ট ক্যাম্পবেল লাইব্রেরি মিলনায়তনে কবি ইকবাল হাসানকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করলেন বৃহত্তর টরন্টোবাসী। প্রায় এক বছর রোগযন্ত্রণার পর প্রখ্যাত কবি ও কথাসাহিত্যিক ইকবাল হাসান ২০২৩ সালের ১২ই এপ্রিল ইন্তেকাল করেন। ইকবাল হাসান যখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা বন্ধু-ভক্ত-স্বজন-শুভাকাক্সক্ষী সার্বক্ষণিক তার শরীরের সর্বশেষ খবর নিয়েছেন। বিশেষ করে বৃহত্তর টরন্টোয় অবস্থানরত ইকবাল হাসানের দীর্ঘদিনের বন্ধু, সহকর্মী, আত্মীয় তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন ছিলেন।

১২ই এপ্রিল ইকবাল ভাইয়ের মৃত্যু হলে এই শহরের পক্ষ থেকে একটি স্মরণসভা করে কবিকে যথাযথ সম্মান ও স্মরণ করার জন্য আন্তরিকভাবে দায় অনুভব করেছিলেন তার কাছের বন্ধু, ভক্ত, শুভাকাক্সক্ষী ও সমাজের নানাপেশার প্রতিনিধি। বিশেষ করে কবি আসাদ চৌধুরী, আমিন মিয়া, এনায়েত করিম বাবুল, সুমন রহমান, সালমা বাণী, মাসুম রহমান, ফারহানা পল্লব, মনিস রফিক, সুব্রত কুমার দাস, শহিদুল ইসলাম মিন্টু, জগলুল আজিম রানা, গোপা চৌধুরী, ড. সুশীতল চৌধুরী, আরিফ হোসেন বনি, ফয়েজ নূর ময়না, দিলারা নাহার বাবু, আসমা আহমেদ, আহমেদ হোসেন, সাহিদুল আলম টুকু, শেখ শাহনওয়াজ, পারভেজ চৌধুরী, সোলায়মান তালুত রবিন, আফিয়া বেগম, আসমা হক, অলক চৌধুরী, ড. বাদল ঘোষ, নাহিদ কবির কাকলি প্রমুখরা গভীরভাবে একটি দায় অনুভব করেছিলেন, ইকবাল ভাইয়ের স্মরণে একটা অনুষ্ঠান করার। এবং সকলেই এই সিদ্ধান্তে একমত ছিলেন যে, কবি ইকবাল হাসানের স্মরণসভা কোন একক সংগঠনের নামের ব্যানারে হবে না। এর রূপকাঠামো হবে নাগরিক। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এই স্মরণসভার বাস্তবরূপ দিতে একটি কার্যকরী টিম দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে এলেন। বৈঠক হলো ফিল্ম ফোরাম অফিসে। অতঃপর কার্যকরী টিমের চূড়ান্ত বৈঠক হলো মাসুম রহমানের ৭ ক্রিসেন্ট-এর বাসায়। কবি ইকবাল হাসান-এর প্রয়াণে স্মরণসভা আয়োজন করার জন্য বিভিন্ন প্রস্তাবের ভিত্তিতে ও সকলের মতামতের প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সুমন রহমান, সালমা বাণী, মাসুম রহমান, সাফিনা বেগম, সুমি রহমান ও দেলওয়ার এলাহী। বৈঠকে স্মরণসভার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা শেষে দেলওয়ার এলাহীকে স্মরণসভার সমন্বয় ও অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়। স্মরণসভা আয়োজনের অগ্রগতি নিয়ে দফায় দফায় সার্বক্ষণিকভাবে যোগাযোগ রক্ষা করেন এনায়েত করিম বাবুল, সুমন রহমান, সালমা বাণী, মাসুম রহমান, ফারহানা পল্লব, ফয়েজ নূর ময়না, মনিস রফিক, সুব্রত কুমার দাস, শহিদুল ইসলাম মিন্টু, কবি আসাদ চৌধুরী, আহমেদ হোসেন, সোলায়মান তালুত রবিন, ফিল্ম ফোরামের সকল সদস্যবৃন্দ ও নানা পেশার বিভিন্নজন।

ইকবাল ভাইয়ের মৃত্যুর পরে তাৎক্ষণিকভাবে তার স্মরণে অনুষ্ঠান আয়োজন করা সম্ভব ছিল না। একেতো রমজান মাস তারউপর ইকবাল হাসানের স্ত্রীর মানসিক স্থিতিশীলতার জন্য ক্যালিফোর্নিয়ায় কন্যার কাছে চলে যাওয়ায় আমরা তার অপেক্ষা করছিলাম। আমরা চেয়েছিলাম তিনি উপস্থিত থাকুন। তার স্বামীকে অনেক মানুষ ভালোবাসেন ও স্মরণ করেন তিনি তা দেখুন। ইকবাল হাসানকে নিয়ে তিনিও তার ভালোবাসা, দুঃখ কষ্ট আমাদেরকে সহভাগ করুন। এসবের চূড়ান্ত রূপ ছিল প্রয়াত ইকবাল হাসানকে নিয়ে গতকালকের স্মরণসভা। একজন কবিকে এই শহর স্মরণ করেছেন। তার বন্ধুরা স্মরণ করেছেন কবির সান্নিধ্যের উষ্ণ ও প্রাণময় স্মৃতি। বিদ্বজ্জনেরা স্মরণ করেছেন সাহিত্যের প্রতি, দেশের প্রতি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি, অসা¤প্রদায়িক ভাবনার প্রতি কবি ইকবাল হাসানের অবিচল নিষ্ঠা ও তার বন্ধুদের সঙ্গে, প্রিয়জনদের সঙ্গে উদ্দাম আড্ডাপ্রিয়তার প্রাণপ্রাচুর্যের রূপ।

ইকবাল হাসানের বন্ধু, স্বজন, ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা জানাই একজন কবির প্রয়াণে এরকম একটি ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ স্মরণসভার আয়োজন করার জন্য। ইকবাল হাসান বেঁচে থাকবেন তার প্রিয়জনদের উজ্জ্বল স্মৃতিতে ও তার লেখা কবিতা, গল্প, উপন্যাস ও স্মৃতিকথার পাতায় পাতায়। কবি ইকবাল হাসানের অমোচনীয় স্মৃতির প্রতি আমার ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা।