অনলাইন ডেস্ক: শেষ হল চার দিনব্যাপী রিপাবলিকান জাতীয় সম্মেলন (আরএনসি)। প্রচার-প্রচারণা, সমাবেশ-র‌্যালির ধামাকাতেই বোঝা যাচ্ছিল বেশ জমকালো হবে।

এবারের রিপাবলিকান সম্মেলন। অন্তত ডেমোক্র্যাট সম্মেলনকে যে বহুগুণে ছাড়িয়ে যাবেন তা অনেকটা নিশ্চিতই ছিল মার্কিনরা। কিন্তু সব দোনামোনা ছাপিয়ে যা ঘটল তা সত্যিই ইতিহাস।

ঠিক যেন ভার্চুয়াল সম্মেলনের মতোই আরেকটি ঐতিহাসিক নতুনের যোগ হল রিপাবলিকানের ইতিহাসে। পারিবারিক সম্মেলন!

রিপাবলিকানদের এবারের নির্বাচনী মিলনমেলাকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘পারিবারিক সম্মেলন’ বলেই মনে করছেন দেশটির বেশির ভাগ রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

সঙ্গে ‘সাঁকো নাড়াচ্ছে’ ট্রাম্পবিরোধী সিএনএন, ওয়াশিংটন পোস্ট, এপি’র মতো বিশ্বখ্যাত গণমাধ্যমগুলোও। সমালোচকরা বলছেন, এবারের রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনকে অনেকটা নিজের নতুন ‘পারিবারিক ব্যবসায়’ পরিণত করেছেন ট্রাম্প। যা আগে কখনও দেখা যায়নি।

এবার ট্রাম্প পরিবারই ছিল সম্মেলনের মধ্যমণি ও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। সম্মেলনের এমন একটা দিনও পাওয়া

যাবে না যেদিন এই পরিবারের কেউ না কেউ বক্তব্য দেননি। স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে থেকে শুরু করে জামাই এমনকি পুত্রবধূদেরও ছিল সরব উপস্থিতি। ট্রাম্পের জন্য রিপাবলিকান নেতাদের চেয়ে তারাই বেশি কথা বলেছেন।

সম্মেলনের মূল আয়োজন নর্থ ক্যারোলিনা শার্লট শহরে হলেও ছিল অনেকটাই নিষ্প্রভ। বিপরীতে আলো ঝলমলে হয়ে ওঠে হোয়াইট হাউস ও রাজধানী ওয়াশিংটন মনুমেন্টের চারপাশ। সিএনএন।

ডেমোক্রেটিক জাতীয় সম্মেলনের এক সপ্তাহ পর গত সোমবার শুরু হয় রিপাবলিকান সম্মেলন। চার দিনব্যাপী সম্মেলনের প্রতিটি দিনই ট্রাম্প পরিবারের কাউকে না কাউকে বক্তা হিসেবে হাজির করেছে আয়োজকরা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এর মাধ্যমে মূলত ট্রাম্পের গত চার বছরের ব্যর্থতা চার দিনে ঢাকার অপচেষ্টা করা হয়েছে। আর ট্রাম্প পরিবারের সদস্যরাও ধবল ধোলাইয়ের মাধ্যমে ট্রাম্পকে মার্কিনিদের সামনে নতুনভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন।

প্রথমদিন উদ্বোধনী বক্তব্যের মাধ্যমে সম্মেলনের সূচনা করেন ট্রাম্প। এরপরই মঞ্চে আসেন বড় ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র ও পুত্রবধূ কিম্বার্লি গুইফয়েল। ট্রাম্পের প্রচারণা দলের তহবিল সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করছেন তারা। এদিন ডেমোক্র্যাট নেতাদের বিশেষ করে তাদের প্রার্থী জো বাইডেনকে আক্রমণের ক্ষেত্রে যেন ট্রাম্পকেও ছাড়িয়ে যান ট্রাম্প জুনিয়র।

বাইডেনকে ‘জলাশয়ের দানব’ বলেও আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘এই দেশকে ও এর সবকিছুকেই তারা ধ্বংস করতে চায়।’ শ্রোতাদের উদ্দেশ করে পুত্রবধূ কিম্বার্লি বলেন, ডেমোক্রেটিকরা আপনাদের স্বাধীনতা হরণ করতে চায়। আপনাদের চিন্তা-চেতনা ও আদর্শকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়।’ নানা গালগল্পে শ্বশুরকে প্রশংসায় ভাসান তিনি।

দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেন থেকে টেলিভিশনের পর্দায় হাজির হন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প। উইসকনসিনে এক কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার প্রেক্ষিতে বিক্ষোভের প্রতি ইঙ্গিত করে জাতিগত ঐক্যের আবেদন জানান তিনি।

বলেন, ‘সহিংসতা ও লুটপাট বন্ধ করুন।’ আবেগঘন কণ্ঠে ভোটারদের কাছে স্বামী ট্রাম্পকে ভোট দেয়ার আবেদনও জানান মেলানিয়া। বলেন, ‘ট্রাম্প সব সময় আপনাদের পাশেই থাকবেন।’

‘ল্যান্ড অব অপরচুনিটি’ প্রতিপাদ্যের ওপর ভিত্তি করে এদিন বক্তব্য রাখেন ট্রাম্পের দুই ছেলে-মেয়ে যথাক্রমে এরিক ট্রাম্প ও টিফানি ট্রাম্প। এরিক তার বক্তৃতায় ডেমোক্র্যাটদের ‘উগ্রবাদী’ বলে তোপ দাগেন।

বলেন, ‘আমাদের সশস্ত্র বাহিনীগুলোর সদস্যরা যখন আমাদের স্বাধীনতা রক্ষায় প্রতিদিন জীবন বিলিয়ে দিচ্ছেন, তখন তারা হাঁটু গেড়ে আমাদের জাতীয় সঙ্গীতকে অসম্মান করতে চায়।’

তৃতীয় দিন বুধবার বক্তব্য দেন আরেক পুত্রবধূ (এরিকের স্ত্রী) লারা ট্রাম্প। বক্তৃতায় শ্বশুরের অতি প্রশংসা করতে গিয়ে গালগল্প ঝাড়েন তিনি। সবকিছু বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলতে গিয়ে দেন অনেক ভুল তথ্যও। বলেন, ‘ট্রাম্পই জাতিসংঘের মহাসচিবকে নিয়োগ দিয়েছেন।’

সম্মেলনের শেষদিন বৃহস্পতিবার মঞ্চে হাজির হন ট্রাম্প পরিবারের সর্বশেষ আকর্ষণ ট্রাম্পের বড় মেয়ে ও হোয়াইট হাউসে তার বিশেষ উপদেষ্টা ইভাংকা ট্রাম্প। এদিন সন্ধ্যায় হোয়াইট হাউসের সাউথ লনে গাদাগাদি করে বসা প্রায় এক হাজার শ্রোতার সামনে বাবা ট্রাম্পকে একজন ‘যোদ্ধা’ হিসেবে অভিহিত করেন তিনি।

বলেন, ‘আগামী চার বছরের জন্য আমেরিকার এমন একজন যোদ্ধারই প্রয়োজন।’

ঘরে ঘরে ভোট চাইবেন বাইডেন : যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতে (সুইং স্টেট) ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট চাইবেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন। তবে করোনাভাইরাসের সব বিধি মেনেই প্রচারণা চালাবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনী প্রচারণার নতুন এই কৌশলের কথা জানান বাইডেন। নিজেকে একজন ‘কৌশলী রাজনীতিক’ দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমি শিগগিরই উইসকনসিনে যাচ্ছি। মিনেসোটাও যাব। পেনসিলভানিয়াতেও কিছু সময় কাটাব।

এর সবকিছুই আমরা এমনভাবে করব যাতে করোনা বিধির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।’ বাইডেনের উল্লেখ করা রাজ্যগুলোকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড’ তথা যুদ্ধক্ষেত্র বলা হয়ে থাকে। কারণ এই রাজ্যগুলোই নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল নির্ধারণ করে থাকে।

এই জনমত জরিপে এই তিনটি রাজ্যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে এখনও এগিয়ে রয়েছেন বাইডেন। আগামী সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে রাজ্যগুলো সফর করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। এএফপি