স্বপন কুমার সিকদার : “নিশি অবসানপ্রায়, ওই পুরাতন বর্ষ হয় গত!
আমি আজি ধূলিতলে এ জীর্ণ জীবন করিলাম নত।
বন্ধু হও, শত্রু হও, যেখানে যে কেহ রও, ক্ষমা করো আজিকার মতো
পুরাতন বরষের সাথে, পুরাতন অপরাধ যত।”- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
“তোরা সব জয়ধ্বনি কর! তোরা সব জয়ধ্বনি কর!
ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখির ঝড় তোরা সব জয়ধ্বনি কর”!! – নজরুল ইসলাম

পহেলা বৈশাখ বঙ্গাব্দের প্রথম দিন, তথা বাংলা নববর্ষ। দিনটি সকল বাঙালি জাতির ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণের দিন। পহেলা বৈশাখ বাংলাদেশে জাতীয় উৎসব হিসেবে পালিত হয়ে থাকে। বঙ্গাব্দের সূচনা নিয়ে বিভিন্ন মতবাদ বা ধারণা প্রচলিত আছে। কল্যাণ ও নতুন জীবনের প্রতীক হল নববর্ষ। এই দিনে পুরনো বছরের ব্যর্থতা, নৈরাশ্য, ক্লেদ-গ্লানি ভুলে গিয়ে নতুন ভাবে পথ চলা শুরু হয় স্বপ্ন পূরণের প্রত্যাশায় তথা সুখ,শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায়। বিশ্বকবির আহ্বান ও বাসনা –
“এসো হে বৈশাখ, …যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে-যাওয়া গীতি, অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক।

মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা, অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা ৃ ৃমায়ার কুজ্ঝটিজাল যাক দূরে যাক।” – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
সাধারণভাবে গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জী অনুসারে প্রতি বছর ১৪ই এপ্রিল বাংলাদেশে নববর্ষ পালিত হয়ে থাকে। বাংলা একাডেমি কর্তৃক নির্ধারিত আধুনিক বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে এই দিন নির্দিষ্ট করা হয়েছে। দিনটি বাংলাদেশে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে গৃহীত। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতি বাণী প্রদান করেন।

জনদাবীর মুখে ১৯৬৪ সালে পূর্ব-পাকিস্তান প্রাদেশিক সরকার পহেলা বৈশাখকে সরকারী ছুটির দিন ঘোষণা করে। ইংরেজি ১৯৬৪ সাল, বাংলা ১৩৭১ সালের ১ বৈশাখ ‘ছায়ানট’ বাংলা নববর্ষ পালন শুরু করে (সূত্র: উইকিপিডিয়া)। ১৯৬৭ সাল থেকে রমনার বটমূলে শুরু হয়।
ছায়ানটের নববর্ষ অনুষ্ঠান (সূত্র: সন্জীদা খাতুন, আলোকের ঝর্ণাতলায়, পৃষ্ঠা ১৪)। বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আবেদনক্রমে ইউনেস্কো ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩০শে নভেম্বর বাংলাদেশের ‘‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’’কে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। ২০১৬ সালে, ইউনেস্কো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রা উৎসবকে “মানবতার অমূল্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য” হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৮০’র দশকে স্বৈরাচারী শাসনের বিরূদ্ধে সাধারণ মানুষের ঐক্য, শান্তির বিজয় ও অপশক্তির অবসান কামনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে পহেলা বৈশাখে সর্বপ্রথম এই আনন্দ শোভাযাত্রার প্রবর্তন হয়। ছায়ানটের উদ্যোগে রমনার বটমূলে রবীন্দ্রনাথের ‘এসো হে বৈশাখ এসো’ সঙ্গীতের মাধ্যমে নতুন বর্ষকে বরণ করা হয়। নববর্ষের প্রভাতে রমনা উদ্যান ও চারপাশের এলাকায় উচ্ছল ও আনন্দময় জনস্রোতে সৃষ্টি হয় জাতীয় বন্ধন। সমগ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা পরিণত হয় এক বিশাল মানবসমুদ্রে। বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বাংলা একাডেমী, ছায়ানট, চারুকলা ইনস্টিটিউট প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বিভিন্ন জাতীয় কর্মসূচি গ্রহণ করে। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে তিন পার্বত্য জেলায় উপজাতীয়দের ঐতিহ্যবাহী ‘বৈসাবি’ আনন্দমুখর পরিবেশে পালিত হয়। জাতীয় এই উৎসবটি এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অসা¤প্রদায়িক উৎসব। “বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি” প্রতিপাদ্যে এবার নতুন বাংলা বছরকে স্বাগত জানাতে ১৪৩০ বঙ্গাব্দের পহেলা বৈশাখে আনন্দে উচ্ছ¡সিত, উদ্বেলিত ও উদ্দীপ্ত হবে সমগ্র জাতি ও দেশ।

হালখাতা, শোভাযাত্রা, বৈশাখী মেলা ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে দিনটি উদযাপন করা হয়। এসব নববর্ষ উদযাপনের অন্যতম অঙ্গ। আমরা একে অপরকে জানাই ‘শুভ নববর্ষ’।মহা মিলনক্ষেত্র বৈশাখী মেলা নববর্ষকে উৎসব মুখর করে তোলে। এই দিনে দেশে ধর্ম নির্বিশেষে সমগ্র বাঙালি জাতি নতুন বছরকে বরণ করে নেয়ার আনন্দে মেতে উঠে। এই দিনটিতে বাঙালি পৃথিবীর যেখানেই থাকুন, উনি তার জাতীয় ঐতিহ্য উদযাপনে সরব হন। এই দিনে বাঙালি পুরুষ ও মহিলারা নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সাজেন। পরিবেশন করা হয় বাঙালির প্রিয় পান্তা-ইলিশসহ বিভিন্ন রকমের বাঙালী খাবার। নববর্ষ পালনের মধ্যে দিয়ে বাংলার অগণিত মূল্যবান লোকসংস্কৃতি বিশ্বের দরবারে পরিচিতি পায়। পৃথিবীজুড়ে সকল বাঙ্গালীর মধ্যে ঐক্যগত সেতু রচিত হয়। প্রকৃতির নিসর্গ মঞ্চে ধ্বনিত হয় নবজীবনের সঙ্গীত। রজনীকান্ত সেনের “তুমি নির্মল করো, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে। তব পূণ্য-কিরণ দিয়ে যাক মোর মোহ-কালিমা ঘুচায়ে” গানের আবহে আমরা অবগাহন করি। দিকে দিকে মানুষের বর্ষবরণের উৎসব-আয়োজনে ও অভিনন্দন-এ সূচিত হয় নতুনের অভিষেক।

নববর্ষ আসে তারুণ্যের আলোকিত প্রদীপ হাতে নিয়ে। ইহা নির্মল আনন্দের উৎসধারা – আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে চলার প্রেরণা। এটি বাঙালির সার্বজনীন লোকউৎসব। এই দিনটি আমাদের কাছে মুক্তির বার্তা নিয়ে আসে। মুক্তি হলো প্রাত্যহিকতার জীর্ণ জীবন থেকে, মুক্তি হলো প্রতিদিনের ক্ষুদ্র ও আত্মসর্বস্ব জীবনের গণ্ডি থেকে, মুক্তি হলো চিত্তের দীনতা ও হতাশা থেকে। এই দিন আমাদের কাছে পরম আশ্বাসের ও পরম প্রার্থনার। এই পুণ্য দিনে আমরা লাভ করি এক মহাজীবনের উদার সান্নিধ্য। বর্ষারম্ভের পুণ্য মুহূর্তে নবোদিত সূর্যের আলোর ঝরনা ধারায় আমরা শুচিত হয়ে অনুভব করি পরম প্রেমময়ের আনন্দ স্পর্শ। আমাদের স্বার্থপরতা ও ক্ষুদ্রতার গন্ডি পেরিয়ে আমরা এই দিনে মিলনের উদার উৎসব প্রাঙ্গণে এসে সম্মিলিত হই। বিশ্বকবির আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমাদের হৃদয়ও বলে – “আজ এই সকালে ধীরে ধীরে তার কপালে, এই অরুণ আলোর সোনার-কাঁঠি ছুঁইয়ে দাও”। আমাদের হৃদয় কোন অসীমের রাজ্যে, কোন অনির্বচনীয় আনন্দের অভিমুখে ধেয়ে চলে। সবকিছু মিলে দেশটা যেন হয়ে ওঠে উৎসবে আনন্দে পরিপূর্ণ। মিলনের অমলিন খুশিতে অবারিত অন্তর প্রীতির স্পর্শে এই বিশেষ দিনে মুখর হয়ে ওঠে। নৃত্য-গীতে, সভা-সমিতিতে, আনন্দে-উৎসবে বছরের প্রথম দিনটি হয়ে ওঠে মহিমাজ্জ্বোল। আমরা উদ্বুদ্ধ হই বৃহত্তর জীবনবোধ ও সমষ্টিচেতনায়। একই সঙ্গে সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতন হই। শুভ ইচ্ছা, সংকল্প ও এগিয়ে চলার নতুন প্রেরণায় আমরা উজ্জীবিত হই।

আমাদের জাতীয় চেতনা বা বাঙালি সত্তা তথা বাঙালি সমাজ-সংস্কৃতির অস্থিমজ্জার সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে বাংলা নববর্ষ।নববর্ষ অনবদ্য আনন্দের এক মিলনোৎসব – এটি অখণ্ড বাঙালি জাতির তথা অবিছিন্ন সত্তার উৎসব। এটি আমাদের অতীত ঐতিহ্যকে জাগ্রত করে, বর্তমানের মূল্যায়ন ঘটায়, জাতির আগামী দিনের রুপ রেখার দিক নির্দেশনা দেয়। নববর্ষ আমাদের গৌরব। এই দিনে অনাগত দিনের স্বপ্ন ও সম্ভাবনার জন্য জাতি নিজেকে প্রস্তুত করে। নববর্ষ সকল মানুষের কাছে নতুন জীবনের দ্বার উন্মোচিত করে। এই দিনে ক্ষুদ্রতা ও সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে আমরা কামনা করি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের। নববর্ষে ভ‚পেন হাজারিকার কালজয়ী “মামুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য” গানের আবেদন আমাদের হৃদয় তন্ত্রীতে বেজে উঠে। আমরা কামনা করি, নূতন বৎসরে মানুষ যেন মানুষ হিসাবে তার অধিকার খুঁজে পায়। কবির উৎকন্ঠা ও কামনা –
“কিন্তু তুমি কি জানো এদেশে কখন আসবে নতুন দিন?
বলো না কখন এই ক্ষীণ হাতে ঘুরবে যুগের চাকা,
এই প্রাসাদে ও অট্টালিকায় উড়বে তাদেরই নাম?
নতুন বছরে সেই অনাগত নতুনের প্রত্যাশা”। – মহাদেব সাহা
নববর্ষের দিনে আমরা ভুলতে চাই অতীতের দুঃখ-বেদনাকে। নতুন উদ্দীপনায় গড়তে চাই জীবনকে। তাই জীবনের কবি জীবনানন্দ দাশের আহ্বান – “এসো-এসো, ওগো নবীন, চ’লে গেছে জীর্ণ মলিন – আজকে তুমি মৃত্যুবিহীন, মুক্ত সীমারেখা”।

পুরাতনের স্থলে নতুনকে নতুন রূপে সাজিয়ে নেওয়া পহেলা বৈশাখের মর্ম বাণী। এইভাবে নতুন দিনের স্বপ্ন নিয়ে বারে বারে আসুক নতুন বছর। নববর্ষের সূর্যের রক্তিম আলো আমাদের জীবনের সকল গ্লানি মুছে দিক। ভালবাসায় ধন্য হোক জীবন। জীবন ভরে উঠুক সুখ, শান্তি ও অনাবিল আনন্দে। নববর্ষে নতুন ভাবে, নতুন সাঁজে ও নতুন সম্ভাবনায় ছুঁয়ে যাক আমাদের হৃদয়। কবির সুরে সুর মিলায়ে যেন আমরাও কামনা করি – “নব নব আনন্দে জাগো আজি, বৈশাখের প্রথম পুণ্য প্রভাতে। সব জ্বালা যন্ত্রণা যাক মুছে, আসুক এক নুতন ভোর”। আমরাও যেন চাই একটি নুতুন সকাল কিছু সুন্দর স্বপ্ন, কিছু মিষ্টি অনুভ‚তি ও কিছু স্বপ্নিল সৃষ্টি নিয়ে শুরু হোক। হেমন্তের সোনালী ধানের শীষে সারাবেলা উত্থাল হাওয়া যেমন করে ভাসে, তেমন করে সবার জীবন কাটুক আনন্দ আর উচ্ছ¡াসে।নতুন করে বাঁচার আশায় যেন আমরা বুক বাঁধি। নতুন ভোরের নতুন আলোয় আমরা যেন আশার প্রদীপ জ্বালি। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মত আমাদেরও কামনা হউক – “জীর্ণ যা-কিছু যাহা-কিছু ক্ষীণ, নবীনের মাঝে হোক তা বিলীন – ধুয়ে যাক যত পুরানো মলিন, নব-আলোকের স্নানে”।

নববর্ষে স্রষ্টার কাছে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের মতো আমাদেরও ঐকান্তিক প্রার্থনা- “আজি পুরানো যা কিছু দাও গো ঘুচিয়ে, মলিন যা কিছু ফেলো গো মুছিয়ে”। পুরানো সব স্মৃতি ইতি করে আমাদের তাকাতে হবে নব সুর্যের দিকে। নূতনের আশায় বুক বেঁধে পুরাতন বৎসরের ক্লান্ত স্মৃতিতে ইতি টেনে উদ্বুদ্ধ হতে হবে বৃহত্তর জীবন বোধ ও সমষ্টি চেতনায়। যারা আমাদের ধর্ম, বর্ণ ইত্যাদি চেতনায় আবদ্ধ করে রাখতে চায়, তাদের চেষ্টার বিরুদ্ধে নববর্ষ উদযাপন হোক চৈতন্য, বোধশক্তি বা অনুভুতির আলোক প্রদীপ বা অগ্নি মশাল। নববর্ষের অনবদ্য মিলন উৎসবের ভিতর দিয়ে জীবনে বিস্তার ঘটুক প্রীতিময়তার। নববর্ষ মনের সকল মলিনতা দুর করে এগিয়ে চলার প্রেরনায় আমাদের উজ্জ্বীবিত করুক। নববর্ষ সত্যের, প্রেমের, মঙ্গলের ও নির্ভীক মহত্বের গৌরবে উদ্ভাসিত হউক। নববর্ষ মানুষের কাছে নব জীবনের দ্বার উন্মোচিত করুক। নববর্ষে আমরাও যেন বিশ্বকবির আহ্বানে সাড়া দিয়ে বলি – “নব আনন্দে জাগো আজি নব রবিকিরনে, শুভ্র সুন্দর প্রীতি উজ্জ্বল নির্মল জীবনে”। সকল অশুভ শক্তিকে পেছনে ফেলে নতুন দিনের শুভ সূচনা হোক, জাতি খুঁজে নিক নতুন মুক্তির দিশারী। নববর্ষ উদযাপনের মধ্য দিয়ে বাঙালির বাঙালিত্ব বিশ্বায?িত হোক, বাঙালি সংস্কৃতি মর্যাদা পাক বিশ্বের দরবারে। আপন আত্মা ও সংস্কৃতির সমৃদ্ধির দিকে বাঙালি যত্নবান হয়ে উঠুক। নববর্ষে বাঙালিত্ব এবং বাঙালি সংস্কৃতির পবিত্র উদযাপনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জীবনের সকল অন্ধকার দূরীভ‚ত হয়ে নতুন বছর ভরে উঠুক নতুন জীবনের আশার আলোয়।

আসুন, পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে আমরা আমাদের মধ্যকার সকল বিভেদ ও দ্বিধা দূর করতে সচেষ্ট হই। আমরা জাগ্রত হই অখণ্ড জাতীয় চেতনায় – আমরা আবদ্ধ হই আগামীর গর্বিত প্রেরণায়। নববর্ষের এই শুভক্ষণে, আসুন, কবিকণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে আমরাও বলি, “যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ, প্রাণপণে পৃথিবীর সরাবো জঞ্জাল”। নববর্ষে জীবনের সকল ক্লান্তি, গ্লানি, হতাশার অবসান হোক এবং নতুন করে জীবনটা আনন্দ-উল্লাসে ভরে উঠুক। নববর্ষ আমাদের নতুন করে এগিয়ে চলার প্রেরণা দিক – উজ্জীবিত করুক। পরম করুনাময়ের কাছে কবিগুরুর মতো আমাদেরও কামনা হউক -“হে চিরনূতন, আজি এ দিনের প্রথম গানে, জীবন আমার উঠুক বিকাশি তোমার পানে”। নববর্ষের এই দিনে আমরাও যেন নিজের মনকে ভালবাসায় সিক্ত করে বলি-
“এসো তুমি প্রিয়ে, আজন্ম-সাধন-ধন সুন্দরী আমার.
দুটি রিক্ত হস্ত শুধু আলিঙ্গনে ভরি, কণ্ঠে জড়াইয়া দাও-মৃণাল-পরশে ….
এসো সুপ্তি, এসো শান্তি, এসো প্রিয়ে, মুগ্ধ মৌন সকরুণ কান্তি, বক্ষে মোরে লহো টানি” – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
বাঙালী জাতীয়তাবাদ বিকাশে তথা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে নববর্ষের চেতনা যেমন কাজ করেছে তেমনি আজ বাঙালী জাতীয়তাবাদ অনুভ‚তিকে ধরে রাখা ও তাকে আরো বেগবান করার জন্য যথাযত মর্যাদায় নববর্ষ উদযাপন আরো বেশী প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নিজ নিজ দেশের জাতীয়তাবাদ ও বোধের বিকাশে নববর্ষ উদযাপন করা হয়। প্রতিটি জাতি ও সভ্যতা নিজ সংস্কৃতির মাধ্যমে খুঁজে পায় তার নিজস্ব অনুভ‚তি এবং স্বকীয় বৈশিষ্ট্য। বিধাতার কাছে প্রার্থনা – ১৪৩০ সাল সবার জন্য অনাবিল সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি, সুস্বাস্থ্য, সৌভাগ্য ও সাফল্য বয়ে আনুক। সর্বান্ত করনে কামনা করি, সবার জীবন নূতন বৎসরে অনন্ত ভালবাসা ও হাসিতে পূর্ণ থাকুক। বাঙালি সংস্কৃতি উজ্জীবিত থাক যুগে যুগে। অসা¤প্রদায়িক বাঙালি চেতনার সর্বব্যাপী উজ্জীবনের মধ্যেই রয়েছে পয়লা বৈশাখ উদযাপনের সার্থকতা। ছবি সমূহ সংগৃহীত।ভালো থাকুন। আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। ধন্যবাদ।