রাকিব হাসান রাফি, স্লোভেনিয়া : অন্য বছরের তুলনায় এবার ইউরোপে কিছুটা আগে শীত এসেছে। গত বুধবার থেকেই এই মহাদেশের বিভিন্ন দেশে তুষারপাত শুরু হয়েছে। শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বসনিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ভেলিকা ক্লাদুসার শরণার্থী শিবিরে আটকেপড়া বাংলাদেশিদের মাঝেও নেমে এসেছে বাড়তি দুর্ভোগ। গত সেপ্টেম্বরে রয়টার্সে প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর ক্রোয়েশিয়ার সীমান্তবর্তী শহর ভেলিকা ক্লাদুসার জঙ্গলে আটকেপড়া বাংলাদেশিদের দুর্দশার কথা বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে আসে। মূলত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত কোনো দেশের সীমানায় প্রবেশের জন্য তারা সেখানে অবস্থান নিয়েছিল। তাদের অনেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ক্রোয়েশিয়া হয়ে স্লোভেনিয়া এবং সেখান থেকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য দেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়েছিল। তবে স্লোভেনিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার পুলিশের তৎপরতার কারণে তাদের বাধ্য হয়ে আবার বসনিয়ায় ফিরে আসতে হয়।

জানা যায়, এ ধরনের শিবিরে জীবন ধারণের জন্য যেখানে প্রয়োজনীয় জিনিসের উপস্থিতি খুঁজে পাওয়া দুস্কর, সেখানে শীত নিবারণের জন্য যথার্থ প্রস্তুতির চিন্তা করাটা আরও কঠিন।

স্থানীয় এনজিও নো নেম কিচেনের হয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী আলবা ডোমিঙ্গুয়েজ পেনা বলকান ইনসাইটকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, অতীতে ভেলিকার ক্লাদুসার বাংলাদেশিদের শরণার্থী শিবিরে ১০০ জনের মতো বাস করত। তবে বুধবারের তুষারপাতের পর সেখান থেকে অনেক শরণার্থী অন্য স্থানে চলে গেছে। বতর্মানে তারা তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছে, তীব্র শীতে তাদের পক্ষে সেখানে টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।

তিনি আরও বলেন, এর আগে তাদের অনেকে একটি পরিত্যক্ত ফ্যাক্টরিতে আশ্রয় নিয়েছিল, বর্তমানে তারা যেখানে অবস্থান করছে সেখানকার সার্বিক পরিস্থিতি এ ফ্যাক্টরির তুলনায় অনেক বেশি শোচনীয়। বর্তমানে বেশিরভাগ শিবিরে ধারণ ক্ষমতার চেয়েও অতিরিক্ত শরণার্থী বাস করছে।

নূরুল হুদা হাবীব নামে বসনিয়া প্রবাসী এক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী জানান, ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় বসনিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা দুর্বল। তাই শরণার্থীদের কেউই বেশি দিন বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনায় থাকতে চান না। মূলত অবৈধভাবে ইউরোপের দেশ ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স কিংবা পর্তুগালে প্রবেশের জন্য তারা বসনিয়া আসেন। তাদের অনেকে ক্রোয়েশিয়ায় প্রবেশের সময় সেখানকার পুলিশের অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশি শরণার্থীদের অনেকে সিরিয়ান কিংবা পাকিস্তানি অথবা আফগান শরণার্থীদের হাতে ছিনতাই ও ছুরিকাঘাতের শিকার হন। তাই বসনিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক জোরদার করে এ রুটে মানব পাচার রোধের পাশাপাশি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বৈধ উপায়ে জনশক্তি রপ্তানি করার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া এই বাংলাদেশি শরণার্থীদের মানবিকভাবে সহায়তা করার জন্য তিনি নেদারল্যান্ডসে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রতি আহ্বান জানান।