অনলাইন ডেস্ক : হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ২৫০ কেজি ওজনের আরও একটি জেনারেল পারপাস (জিপি) বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার সকালে পাওয়া বোমাটি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক বাহিনীর বিমান থেকে ভূমিতে নিক্ষেপ করা হয়েছিল বলে ধারণা করছে বেসামরিক বিমান চলাচল (বেবিচক) কর্তৃপক্ষ।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম. মফিদুর রহমান বলেন, ‘হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের মাটি খননকালে তৃতীয় দফায় একই ওজনের আরও একটি বোমা (২৫০ কেজি) উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, আরও একটি বোমা কাছাকাছি দূরত্বে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। সতর্কতার সঙ্গে সেটিও উদ্ধারে কাজ করা হচ্ছে।’
বোমা উদ্ধারের বিষয়ে তিনি জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনীর যুদ্ধবিমান থেকে বোমাগুলো নিক্ষেপ করা হয়। কোনো কারণে বোমাগুলি নিষ্ক্রিয় থেকে যায়। এতদিন থাকার কারণে বোমাগুলো মাটির গভীরে চলে যায়। এগুলো আমাদের বিমান বন্দরসহ আশে পাশের এলাকা ধ্বংস করার জন্যই পাক বাহিনী নিক্ষেপ করেছিল।
এর আগে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে ২টি বোমা উদ্ধার করা হয়। তবে আজকের বোমাটি উদ্ধারের পর আরও একটি বোমা থাকার কারণ সম্পর্কে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, ‘সাধারণত যুদ্ধ বিমান থেকে একত্রে ২টি করে বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এর আগে উদ্ধার করা ২টি বোমা একত্রে ফেলা হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই আজকের বোমাটি পাওয়ার পর ধারণা করা হচ্ছে- কাছাকাছি দূরত্বে আরও একটি বোমা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।’
তৃতীয় টার্মিনালের কনস্ট্রাকশন সাইট থেকে জেনারেল পারপাস (জিপি) বোমাটি উদ্ধার করা হয়।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে বলা হয়, ‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের কনস্ট্রাকশন সাইটে চলমান পাইলিং এর সময় শনিবার আনুমানিক ১০টা ৫০ মিনিটে আরও একটি ২৫০ কেজি ওজনের জেনারেল পারপাস (জিপি) বোমা পাওয়া যায়। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বঙ্গবন্ধুর প্রশিক্ষিত বোমা ডিসপোজাল দল আধুনিক যন্ত্রপাতি সহকারে দ্রুততার সাথে ঘটনাস্থলে পৌঁছে বোমাটি নিষ্ক্রিয় করে। পরবর্তীতে বোমাটি ডিমোলিশ/ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় সতর্কতার সহিত নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। উল্লেখ্য যে, বোমা বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রাপ্ত পূর্বের বোমাগুলোর ন্যায় এই বোমাটিও ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভূমিতে নিক্ষেপ করা হয়েছিল।’
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ কাজের দায়িত্বে রয়েছে জাপানের মিতসুবিশি করপোরেশন, ফুজিতা করপোরেশন ও স্যামসাং মিলে গঠিত এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম (এডিসি)। দেশের সব বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প উদ্বোধন ও ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিমানবন্দরের মূল টার্মিনালের দক্ষিণ পাশে ২১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হবে সুপরিসর এই তৃতীয় টার্মিনাল। এই অর্থ ব্যয়ের একটি অংশ প্রকল্প সহায়তা হিসেবে দেবে জাইকা। বাংলাদেশ সরকার বাকি অর্থের যোগান দেবে। এই প্রকল্পের আওতায় একটি প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল বিল্ডিং, রাস্তা, কার পার্কিং, কার্গো কমপ্লেক্স, পার্কিং অ্যাপ্রোনসহ আরো অন্যান্য স্থাপনা তৈরি করা হবে।
তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ কাজ শেষ হতে সময় লাগবে চার বছর। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে বছরে প্রায় দুই কোটি যাত্রী চলাচলের সুযোগ পাবে।