Home কলাম শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবসে চোখে আসে পানি

শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবসে চোখে আসে পানি

সোনা কান্তি বড়ুয়া : শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবসে চোখে আসে পানি / এসো স্মরণ করি শহীদ বুদ্ধিজীবিদের কুরবানি। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ আমাদের বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূলমন্ত্র এবং আজ জয় বাংলার ইতিহাসে ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর বাংলাদেশে অমরত্বের বরপুত্র শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবসে চোখে আসে পানি! ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চে পাকিস্তান ইসলামের নাম দিয়ে ফতোয়া দিলেন, বাংলাদেশে “অপারেশন সার্চ লাইট” নামে (বাঙালিদেরকে হত্যা কর ) ৩০ লক্ষ নর নারীসহ শিশু হত্যা, ২ লক্ষ মা-বোনকে ধর্ষণ করেছে। পাকিস্তানের বিশ্বাসঘাতকতায় একাত্তরের দুঃখের দিনে বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানী কারাগারে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্যে নিজের প্রাণদান করতে প্রস্তুত ছিলেন। শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবসে আসে চোখে পানি / এসো স্মরণ করি কুরবানি। এবং বিশ্বাসঘাতক রাষ্ট্রদ্রোহীগণ বুদ্বিজীবি হত্যা নামক অন্ধকার রাজনীতির জন্ম দিল! এই ভয়ঙ্কর ধাঁধাঁর আবর্তে জনঅরণ্যের নরদেহধারী পাকিস্তানের সমাজে পশু মানুষের কি মা বোন নেই? ইতিহাসে ১৯৭১ সালে ১৪ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবসে চোখে আসে পানি! ধর্মান্ধের হিংসা উন্মত্ত রাজনৈতিক ধর্ম মানবতাকে ধ্বংস করেছে!

শোকাবহ ১৪ই ডিসেম্বর এই দিনে তাঁদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন এবং মহান স্রষ্টার দরবারে তাঁদের আত্মার অফুরন্ত শান্তি প্রার্থনা করছি। মানুষের অন্তরে ধর্মান্ধের পশু রাজত্ব করছে। ধর্মের অপব্যবহারের কারণে ২১ ফেব্রুয়ারি, কারণে ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সরকারের গুলিতে ঢাকার রাজপথ সালাম, রফিক, বরকতসহ কত শত নাম না জানা শহীদদের রক্তে রক্তাক্ত হলো এবং সেই বাংলা ভাষার আন্দোলন আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার জন্মদাতা শহীদ মিনার হয়ে বিরাজমান। ধর্ম ও বর্ণবিদ্বেষের অভিশপ্ত রাজনীতির বিদায়ের পর ও আলোকিত জনতা উপলব্ধি করেছেন ধর্মীয় রাজনীতির বর্ণবাদ প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম নয়। সন্ত্রাসীদের হাতে প্রতিশোধের হত্যাযজ্ঞ রাজনীতি মানব জাতির জন্যে মর্মান্তিক অশনি সংকেত। বাংলাদেশে অমানবিক বিভিন্ন ইসলামিক সন্ত্রাসী দল সাম্রাজ্যবাদই তৈরী করেছে “আহা রে হজ যাত্রীর নামে সউদিতে উগ্র মৌলবাদী পাচার হচ্ছে (যায়যায়দিন,২ ফেব্রæয়ারি, ২০০৮)।”

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর সাথে হিন্দু বৌদ্ধ রাষ্ট্রদ্বয় (ভারত ও ভুটান) পাকিস্তানের AGAINST যুদ্ধ করে এবং পাকিস্তানকে পরাজিত করে বাংলাদেশের বিজয় হয় : (১) গণতস্ত্র (২) জাতীয়তাবাদ (৩) সমাজতস্ত্র এবং (৪) ধর্মনিরপেক্ষতা। মানবাধিকারের আলোকে জামায়াতের উগ্র সা¤প্রদায়িকতার বাহক শক্তিটি ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে জনগণের সম্পদ হরিলুট করেছে! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত লিখেছেন, “জামায়াতের উগ্র সা¤প্রদায়িকতার বাহক শক্তিটি ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে জনগণের সম্পদ হরিলুট করেছে এবং পরবর্তীকালে বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনে ১৯৭০-৮০-র দশকে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক অর্থ সরবরাহ পেয়েছে; এসব অর্থ-সম্পদ তারা সংশ্লিষ্ট আর্থ-রাজনৈতিক মডেল গঠনে বিনিয়োগ করেছে; অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের বিনিয়োজিত প্রতিষ্ঠান উচ্চ মুনাফা করছে; আর এ মুনাফার একাংশ তারা ব্যয় করছে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে, একাংশ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রসারে, আর (কখনো কখনো) একাংশ নতুন খাত-প্রতিষ্ঠান সৃষ্টিতে।”

গবেষণার তথ্যানুসারে, ২০১৪ সালে বাংলাদেশে মৌলবাদের অর্থনীতির বার্ষিক নিট মুনাফা আনুমানিক ২ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা। এ মুনাফার সর্বোচ্চ ২৭ শতাংশ ৬৬৫ কোটি টাকা আসে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে (ব্যাংক, বীমা, লিজিং কোম্পানি ইত্যাদি); দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৮.৮ শতাংশ ৪৬৪ কোটি টাকা আসে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ট্রাস্ট ও ফাউন্ডেশন থেকে; বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান খুচরা, পাইকারি, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে ২৬৬ কোটি টাকা আসে ১০.৮ শতাংশ; ওষুধ শিল্প ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান থেকে আসে ১০.৪ শতাংশ ২৫৬ কোটি টাকা; স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আসে ৯.২ শতাংশ ২২৬ কোটি টাকা; রিয়েল এস্টেট ব্যবসা থেকে আসে ৮.৫ শতাংশ ২০৯ কোটি টাকা, সংবাদ মাধ্যম ও তথ্য প্রযুক্তি থেকে আসে ৭.৮ শতাংশ ১৯৩ কোটি টাকা, আর রিকশা, ভ্যান, তিন চাকার সিএনজি, কার, ট্রাক, বাস, লঞ্চ, স্টিমার, সমুদ্রগামী জাহাজ, উড়োজাহাজের মতো পরিবহন-যোগাযোগ ব্যবসা থেকে আসে ৭.৫ শতাংশ বা ১৮৫ কোটি টাকা। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতায় বাঙালি জাতিকে শিক্ষা দিয়েছিলেন :

“মানুষের অধিকারে বঞ্চিত করেছ যারে,
সন্মুখে দাঁড়ায়ে রেখে তবু কোলে দাও নাই স্থান,
অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান।
মানুষের পরশের প্রতিদিন ঠেকাইয়া দূরে
ঘৃণা করিয়াছ তুমি মানুষের প্রাণের ঠাকুরে!
বিধাতার রুদ্ররোষে দূর্ভিক্ষের দ্বারে বসে
ভাগ করে খেতে হবে সকলের সাথে অন্নপান।…
যারে তুমি নীচে ফেল সে তোমারে বাঁধিবে যে নীচে,
পশ্চাতে রেখেছ যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে।”

স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের শহীদ বুদ্ধিজীবি সদস্যদের শাহাদাত বরণের দিন ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর। শুধু বাংলাদেশ নয়; সভ্যতার ইতিহাসে নিকৃষ্ট এক কলঙ্কজনক অধ্যায়ের পরিশিষ্ট। দানবরূপী হিংস্র ঘাতক সৃষ্ট বর্বরতা ও নৃশংসতায় অভিশপ্ত হত্যাযজ্ঞের আচ্ছাদনে নিষ্ঠুর-নির্মমতায় আবৃত এক কঠিন শোকের দিন। জন্ম লগনে বাংলাদেশ, কান্নায় আমার বাংলাদেশ / মন্ত্র আমার বাংলাদেশ, হাঁসিতে আমার বাংলাদেশ। কথায় কথায় বাংলাদেশ, রক্তে আমার বাংলাদেশ। তীর্থ আমার বাংলাদেশ, বিত্ত আমার বাংলাদেশ! ১৯৭২ সালের ৪ই নভেম্বর বাংলাদেশ গণপরিষদ গৃহীত এবং ১৯৭২ সালের ১৪ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রথম খন্ডে প্রকাশিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮ (২) অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে, “রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী পুরুষের সমান অধিকার লাভ করিবেন।” জাতির আত্মপরিচয়ের বাংলাদেশের বিশ্ববিজয়ী মহাশান্তি মহাপ্রেম, ইতিহাসে জয় বাংলার বিজয় দিবস! ঐতিহাসিক “বাঙালী শব্দ মানে” মানুষ নিজের ভুবনে নিজেই সম্রাট। অর্থাৎ “আমি আজ বাঙালি হয়ে ‘অহং’ কে জয় করে সিদ্ধপুরুষ হয়েছি।” চর্যাপদের ৪৯ নম্বর কবিতায় সর্বপ্রথম ‘বাঙালি শব্দ’ মহাকবি ভুসুকু কর্তৃক আবিষ্কৃত হল!”

আজ বাংলাদেশে জনতা একটি বিপন্ন রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চে বাংলাদেশের ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের কাঠগড়ায় এখন ৯২ হাজষর পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই! পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হলো না কেন? পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের (General Yahya Khan, General Abdul Khan, Gen. Tikka Khan and several officers and 92 thousand Soldiers) মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হয়েছে! পাকিস্তানী হিংস্র ত্যাঁদড় যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি ও অন্যান্য দন্ডের আদেশ দেয়া হলো না কেন? ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চে পাকিস্তান ইসলামের নাম দিয়ে ফতোয়া দিলেন, বাংলাদেশে ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নামে বাঙালিদেরকে হত্যা কর! ৩০ লক্ষ নর নারী সহ শিশু হত্যা, ২ লক্ষ মা-বোনকে ধর্ষণ এবং বুদ্বিজীবি হত্যা নামক অন্ধকার রাজনীতির জন্ম হল! এই ভয়ঙ্কর ধাঁধাঁর আবর্তে জনঅরণ্যের নরদেহধারী পাকিস্তানের সমাজে পশু মানুষের কি মা বোন নেই? বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্যে নিজের প্রাণদান করতে প্রস্তুত ছিলেন।

১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর বাংলাদেশে মনুষ্যত্ব কি মরে গে ল? আমার লেখা কবিতায়:
শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবসে চোখে আসে পানি
এসো স্মরণ করি কুরবানি।
শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যকান্ডে শহীদ জননী মা কেঁদে কেঁদে মরে,
মায়ের সন্তান এলো না আর ফিরে !
শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবসে চোখে আসে পানি /
এসো স্মরণ করি কুরবানি।
কেউ হিন্দু আর কেউ মুসলমান /
কেউ বৌদ্ধ আর কেউ খৃষ্টান।
সবাই মিলে আমরা বাঙালী। /
যারা খুন হলো রাজপথে
সে তো বাংলা মায়েরই সন্তান। /
শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবসে আসে চোখে পানি
এসো স্মরণ করি কুরবানি।
দশ দশ দিক করেছে সাড়া / জয় করে জাতি স্বর্গের স্বাধীনতাকে।
যবে এলো যে জীবনের অন- / কত সুখ দিলো বলিদানি।
যেমন ছিল যে ওরা দেশপ্রেমি / তেমন ছিল যে ওরা অভিমানি।
শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবসে চোখে আসে পানি- এসো স্মরণ করি কুরবানি।
সমতট থেকে আমি হাঁটিতেছি বাংলার পথে,
পাল রাজত্বের ইতিহাস বলেছি পদ্মা ব্রহ্মপুত্রের সাথে।”

বাংলাদেশে প্রতারক রাজনীতিবীদগণের চরিত্র কয়লার মত শত ধুলেও ময়লা যায় না। প্রতারণার রাজনীতিতে দেশ ও জাতি স্বাধীনতায় অমৃতের সাধ ভোগ করতেও পারেননি। আজ দেশ ও জগৎ জুড়ে যে গভীরতম অসুক তার জন্যে মানুষের সবর্গ্রাসী লোভ এবং অমানবিক সাম্রাজ্যবাদই তৈরী করেছে “আহা রে মানুষ একটি বিপন্ন প্রজাতি।” মাজের মুষ্টিমেয় রাজনীতিবিদগণ ও ধনিরা উচ্চশিখরে বসে সমস্ত ভোগবিলাস ভোগ করেছে। আর দুঃখীদের শ্রেণীতে চলছে নিদারুণ অভাব, দারিদ্র ক্ষধুা, পীড়ন, শোষণ, বর্জন, যন্ত্রণা ও মৃত্যুভয় এখনও সর্বত্র নৈরাশ্য-নৈরাজ্য। আজকের বাঙালী সমাজ শোষিত, নিপীড়িত, লাঞ্ছিত ও পাকি দালারদের দ্বারা অপমানিতের সমাজ।

“ক্ষমতার দম্ভ, খ্যাতির দম্ভ, বিত্তের দম্ভ এসব কিছুই নিমিষেই যে কোনো সময় চুপসে যেতে পারে। বড় কোনো শক্তির কাছে নয়। অতি ক্ষুদ্র এক আণুবীক্ষণিক Corona ভাইরাসের কাছে। পুরো দুনিয়াটাকে অচলাবস্থায় নিয়ে যেতে পারে খালি চোখে অদেখা এক ভাইরাস। তাই আমাদের সব রকমের দম্ভকে যেন আমরা সব সময় নিয়ন্ত্রণের মাঝেই রাখি। Corona ভাইরাস স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে- কত স্বার্থপর আমরা! “Said Mr. Bill Gates! সময় এসেছে সা¤প্রদায়িক ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার। সামরিক শাসকগণের দুর্নীতির মাফিয়াচক্র থেকে বাঁচতে বঞ্চিত সর্বহারা মানুষ তাই আশ্রয় খুঁজেছে শেখ মুজিবের ভাষণে এবং বুদ্ধিজীবিদের লেখার মাধ্যমে বাঙালি মুসলমান হত্যাযজ্ঞে পাকিস্তানের ধর্মান্ধ ইসলাম ও ইসলামি রাজনীতি বাংলাদেশকে অজগরের মতো গিলে ফেলেছে! এই প্রসঙ্গে ইহা ও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, ১৯৭১ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে পাকিস্তানের পাঞ্জাবি কবি আহমদ সেলিমের লেখা “সদা জিও বাংলাদেশ” শীর্ষক কবিতা করাচীর উর্দূ পত্রিকা ‘আওয়ামি আওয়াজে’ প্রকাশিত হলে; তদানিন্তন ইয়াহিয়া সরকার উক্ত কবির রাষ্ট্রদ্রোহীতার অপরাধে ছয়মাস জেল ও ডজন খানেক বেত্রাঘাতের শাস্তি দিয়েছিল।

পাকিস্তান ‘রাষ্ঠ্রধর্ম ইসলাম’ সংবিধানে লিখে বাংলাদেশ জয়ের বিনিময়ে দেখলেন রক্তপাত এবং মৃত্যুর বিভীষিকা সাথে এই দলের সদস্যরা হত্যা, ধর্ষন, লুটপাট, সংখ্যালঘু নির্যাতন, হিন্দু স¤প্রদায়ের লোকজনকে জোড়পূর্বক ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করা, এটি জয় নাকি পরাজয়? একি ন্যায় নাকি অন্যায়? একি বীরত্ব নাকি চরম পরাজয়? নিরপরাধ শিশু এবং নারীদের হত্যা করা কি বীরের কাজ? অন্য রাজ্য ধ্বংস করে কি নিজ রাজ্যের সমৃদ্ধি করা যায়? কেউ স্বামী, কেউ পিতা, কেউ সন্তান হারিয়ে হাহাকার করেছে-এসব মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞ কি জয় নাকি পরাজয়? আমার বাংলাদেশে, আমার জন্মভূমি আমার কাছে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ তীর্থভূমি। “অশোক যাহার কীর্তি গাইল. / হিমালয় থেকে জলধি শেষ।”

ইসলাম ধর্ম কে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে যেন ব্যবহার করা না হয়, ইহাই বাংলাদেশের আপামর জনসাধারনের মত ও ইচ্ছা। বাঙালি এনলাইটেনমেন্ট যুগে জনৈক জনপ্রিয় কবির ভাষায়, “বিশ্বমানব হবি যদি শাশ্বত বাঙালি হও, সম্পূর্ণ বাঙালি হও।” মুসলমান না হলে কি বাংলাদেশের আদর্শবান নাগরিক হওয়া যায় না? ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে চারিদিকে শুধু মানুষের আহাজারি, হাহাকার। বিভেদ বিদ্বেষের নামই কি রাজনীতি? ধর্মান্ধের হিংসা উন্মত্ত রাজনৈতিক ধর্ম মানবতাকে ধ্বংস করেছে! ধর্মের নামে‘ধর্ম যার, যার, সংবিধান সবার’! ১০ বছরে বাংলাদেশে ৯ লক্ষ হিন্দু কমেছে (টরন্টোর বাংলা কাগজ, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১২)

ধর্ম কে অপব্যবহার করে মানুষ পশু হয়েছে বার বার অনেকবার। ইসলাম ধর্মের নামে অহং সর্বস্ব রাজনীতি বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক দল একাত্তরের আটকে পরা বিহারী শরনার্থীদের সম্বন্ধে একটা টু শব্দ ও করেন না। প্রসঙ্গত: বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, দেশের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ, কোন রাষ্ঠ্রধর্ম নয়:! বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকাররা ‘সওয়াব ’ এর আশায় জোর করে মুসলমান করেছে হিন্দুদের, মুসলমান না হলে মৃত্যু। পিস কমিটির ইচ্ছানুযায়ী বিবাহযোগ্য নব মুসলিম কন্যাদের একটি অংশ পিস কমিটির অনুগত যুবকদের বাড়ীতে তুলে দেবার ব্যবস্থা করা হয় (মুনতাসীর মামুন, রাজাকারের মন, পৃষ্ঠা ৯১)।

ধর্ম যার, যার, বাংলাদেশ সবার! রাজাকার শাহ মোয়াজ্জেম চৎরসব গরহরংঃবৎ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য ধ্বংস করতে যুদ্ধাপরাধী ও জামাতকে নিযুক্ত করে চলে গেছে। জে: জিয়াউর রহমান এবং জে: এরশাদ রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে রাষ্ঠ্রদ্রোহী রাজাকারদের মন্ত্রী বানিয়ে পলিটিক্যাল ইসলামের অমাবস্যার আলোয় বে-আইনি রাজনীতিতে খাল কেটে কুমির আনে। ভারতের দুর্র্ধষ জঙ্গী ড. মুফতি ওবায়দুল্লাহর (জনকন্ঠ, ১৮ই জুলাই, ২০০৯) ঢাকায় গ্রেফতার হলো এবং তার স্বীকারোক্তিতে পাকিস্তানের জঙ্গী সংগঠন লস্কর – ই তৈয়বা ও সামরিক গোয়েন্দা আই এস আইয়ের ১৫ বছরে বিপুল অর্থ ব্যয়ে ৫টি ঔরযধফর ভাই” নামক রাষ্ঠ্রদ্রোহী সন্ত্রাসী দল তৈরী করে চলেছে। অমর শহীদ মিনারের দেশে রাজাকার এবং যুদ্ধপরাধীদের কোন জায়গা নেই।

লেখক সোনা কান্তি বড়ুয়া (Bachelor of Arts, University of Toronto), সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা প্রবাসী কলামিষ্ঠ, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে বিশ্ববৌদ্ধ প্রতিনিধি!

Exit mobile version