কবি শরীফ হাসান খুবই সরল ও সাবলীলভাবে তার চির চেনা জগতটাকে কবিতার শব্দ ব্যঞ্জনায় পাঠকের কানে পৌঁছে দেন। কবির কবিতার সাংগীতিক সুর পাঠক একটু চোখ বন্ধ করে শোনার চেষ্টা করলেই তার মানসপটে ভেসে আসে জগত পরিক্রমার এক দীর্ঘ ভ্রমণ, যে ভ্রমণে উপাত্ত হয়ে ফিরে ফিরে আসে আদিকাল থেকে অনাদিকালের দৃশ্যপট। কবি শরীফ হাসানের কবিতার এই আয়োজনে থাকে একটি সুন্দর সমাজ, একটি সুন্দর দেশ আর সুন্দর মানব জীবনের স্বপ্ন। আমাদের আশপাশের পঙ্কিলতা আর জীবনের অসৌন্দর্যকে সরিয়ে সতেজ আলোকিত ভোরের আশায় কাব্যিক প্রতিবাদে মগ্ন শরীফ হাসান মানবতার গান গেয়ে চলেন জীবনের পথে পথে।
কবি শরীফ হাসানের কবিতা এক অদ্ভুত প্রাঞ্জল গতিময়তায় ঋদ্ধ, যা খুব সহজেই পাঠককে নিবিষ্ঠ করে ফেলে কবিতার প্রতিটি পংতিতে। পাঠককে নিজের মনের আয়নায় দাঁড় করানোর শৈলীতে সমৃদ্ধ কবি তার কাব্যিক আলোর রেখায় অবলীলায় বলে দেন পাঠকের বলতে না পারা সব কথা।
মনিস রফিক
শরীফ হাসান একজন নিবেদিত প্রাণ সংস্কৃতিকর্মী। সাহিত্য পত্রিকা, পাঠচক্র, আবৃত্তি, নাটক- যে কোন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে তার বিপুল আগ্রহ। ছেলেবেলায় গল্প-উপন্যাস বেশি প্রিয় ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্য পড়ার সময় জন্মে কবিতা প্রীতি আর সেখান থেকেই লেখালেখির শুরু।
“কবিতার মাঝেই লুকিয়ে সত্য ও সুন্দর”- এই ভাবনায় বিশ্বাসী শরীফ বাংলা ও ইংরেজিতে লেখেন।
তার মতে, শ্রেষ্ঠ কবিতা ইতোমধ্যেই লেখা হয়ে গিয়েছে, চমক জাগানিয়া গল্প ইতোমধ্যেই বলা হয়ে গিয়েছে। তবুও মহান পূর্বপুরুষদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সা¤প্রদায়িকতামুক্ত, মানবিক সমাজ বিনির্মাণে সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চা করতে হবে। এই ব্রত নিয়ে সাধ্যমত লিখছেন শরীফ। প্রতিদিনের যাপিত জীবনানুভূতি, নাগরিক জীবন-সংগ্রাম ও বিড়ম্বনা, মানবিক সম্পর্ক, টানাপোড়েন এবং ‘আধুনিক’ মানুষের জীবন-দর্শন সহজ, সাবলীল প্রকাশ পায় শরীফের কবিতায়। লেখার পাশাপাশি ভালোবাসেন আবৃত্তি, বøগিং এবং ডিজিটাল মিডিয়ায় কবিতা নিয়ে নিরীক্ষাধর্মী কাজ করতে।
বর্তমানে শরীফ অটোয়ায় বাস করছেন, কাজ করেন ফেডারেল গভর্নমেন্টে।
মানুষই আনবে ভোর
সাত আসমান থেকে নেমে আসা কোন ফেরেশতা নয়
নয় কৈলাশ, অলিম্পাস থেকে উড়ে আসা কোন দেবদূত
আমি চাই একজন মানুষ এসে আমায় বলুক,
ভয় নেই, এ দুঃসময় কেটে যাবে।
আমি চাই একজন মানুষ
যার হৃদয় যিশুর সরলতায় পূর্ণ
মুহম্মদের মহানুভবতায় উদ্ভাসিত
বুদ্ধের মত নির্বাণ শুদ্ধ কিংবা শ্রীকৃষ্ণের প্রেমজাত।
হতে পারে সে মাওরি কিংবা রেড ইন্ডিয়ান
দ্রাবিড়, আর্য অথবা যে কোন সংকর
সাদা, কালো, বাদামি, নারী, পুরুষ কিংবা তৃতীয় লিঙ্গের একজন
চাই শুধুই প্রকৃতির সন্তান।
একজন মানুষ আসবেই
অভয়ের হাসি হেসে বলবে, ভোর হবে,
মানুষ ছিল, মানুষ আছে, মানুষ থাকবে
মানুষই আনবে ভোর।
তোমার কি কিছু বলার আছে?
রূপোর থালায় মিহি সুতোয় কাটা মাথা
বিস্ময় বিস্ফোরিত চোখ দুটো তার
সাত পুরুষ জল্লাদ শির কর্তনের নিপুণ কারিগর
ভেবে গদগদ, নিশ্চয়ই খুশি হবেন মহারাজ।
নিশ্চুপ নিথর কাটা মুণ্ডু
মেরুন মখমলে ঢাকা
গীত-বাদ্য-নৃত্য ঝাড়বাতি ঝলমল দরবার
কবি, চিত্রকর, মুফতি, ভাস্কর উপস্থিত সব সভাসদ।
শিঙায় ফুঁক, এলানে বরকান্দাজ
হুঁশিয়ার সাবধান
সিংহাসনে আসীন হলেন মহারাজ, বায়ে বামন বীরবল
ডানে সিপাহসালার কদাকার খিলজী বখতিয়ার
হাঁটুর নিচে ঝুলে আছে দুই হাত কোমরে তলোয়ার
আজ তারই দিন, ইনাম-উপাধি সব শুধুই তার।
দক্ষিণ হস্ত প্রসারণ মাত্র
মস্তকের থালা পেশ হলো মহারাজ চরণকমলে
চুলের মুঠি ধরে শূন্যে তুলে মুণ্ডু, তিনি শুধালেন,
“তোমার কি কিছু বলার আছে, ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির?”
সূর্য বুঝি
আমার একটু রোদ দরকার
পুরনো আমসত্ত¡ শুকানোর জন্য যত টুকু লাগে
ঠিক তত টুকু।
অথবা তেল চিট চিটে লেপ, কাঁথায়
ওম ফেরাতে যত টুকু লাগে ঠিক তত টুকু;
একটুও বেশি নয়।
তাতেও সূর্যের কৃপণতা।
এই সূর্য আবার ভীষণ উদার
ষোড়শী পড়শীর শরীর জুড়ে নিত্য দুপুর খেলা করে
নাভি মূলে নিয়ম মাফিক সেজদা ঠুকে।
সূর্য বুঝি রাষ্ট্রের শিষ্য হলো, বৈষম্যের তালিম নিল
সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী, হালের প্রজ্ঞাপন আর পরিপত্র
সূর্যের প্রস্তুতিটা বেশ জাঁকালো।
প্রত্যাবর্তন
নীরবে ঝরা তুষার ডেকে বলে মধ্য রাতে
এখনই সময় ঘর ছেড়ে তুই বের হ
পরিযায়ী পাখিদের সাথে পালিয়ে যা
আমি তোর কেউ না, বৃষ্টি তোর প্রতীক্ষায়
তুই তার কাছে যা।
ধবল তুষার, সাক্ষী তার সর্বগ্রাসী জোছনা
চিত্কার করে বলে, তোর সবই ভুল
এখনই সময় – বুড়ো বট, পানের বরজ,
রাতের শিশির, টিয়ার সবুজ, লাল মোরগের ঝুটিটা
ওরা সবাই তোর প্রতীক্ষায় – তুই ওদের কাছে যা।
আমি তো ফস্টাস
পিশাচের ক্রীতদাস
বিকিকিনি শেষ সেই কবে হারিয়েছি সব
মেফিস্টোফিলিস হো হো হাসে মুঠোয় তার
আমার ডানা ভাংগা আত্মা।
চিত্রা নদী, কাশফুল, মেঠোপথ, খেয়াঘাট,
ও ডিঙ্গি নৌকা,
সব বাজি হেরে আমি তোমাদের কাছে ফিরেছি
আমাকে গ্রহণ করো, আমার শূন্য হস্ত পূর্ণ করো
দাও সে সোঁদা গন্ধ কিংবা এঁটেল মাটির নির্জনতা।
পোকায় খাওয়া হাজার রাত
আম্মা, আমি খুন করেছি
এই যে দ্যাখো আমার হাতে রক্ত
চকচকে বটিটা তার ঘাড়ে বসিয়েছি
মাছ কাটতে গিয়ে আমি রাক্ষস কেটেছি
মাগো, আমায় তুমি লুকিয়ে রাখো
তোমার চোখে পানি চাইনি আমি
আমার কোন দোষ নেই গো মা
তুমি ওদের বুঝিয়ে বলো।
খোদা জানে, আমি অনেক সয়েছি
রাত বেরাতে পোকায় কেটেছে আমায়
শরীর জুড়ে বিষ ঢেলেছে নিত্য প্রহর
আর পারিনি মাগো, আমার হাত দুটো
বটির কথা শুনেছে, আমার কথা শুনেনি
এখন আমি কী করব, কোথায় যাব?
আমার বাঁচার ইচ্ছে খুব
গরম ভাত আর টাকি মাছের ঝোল।
আম্মা, আমায় নিয়ে চলো
নদীর ওপার হোগলা আর কাশের বন
আমার হাতে রক্ত কেন কেউ জানে না
কোনটা পিশাচ, কোনটা মানুষ কেউ বোঝে না
মাগো, আমায় আঁচলে ঢাকো
চোখের জল মুছে ফেল
কষ্ট হলেও ভুলে যেও
যেমন ভুলেছ তোমার পোকায় খাওয়া হাজার রাত।
* ব্যান্ডদল কুইনের “বোহেমিয়ান র্যাপসডি” দ্বারা অনুপ্রাণিত
নিজেকে অচ্ছুত লাগে
চৈত্র সংক্রান্তিতে চড়কে চড়েছি
নগ্নপদ ভ্রমণ করেছি সপ্তপুরী
আমি নিজেকে ক্রুশবিদ্ধ করেছি
লুটিয়েছি বাইজেন্টিয়ামের পথে পথে
জেরুজালেম থেকে লুম্বিনী, বুদ্ধগয়া
আমি স্পর্শ করেছি বোধি বৃক্ষছায়া
অজন্তা, ইলোরা থেকে পর্বত হেরা
আমি চুম্বন করেছি পবিত্র প্রস্তর
তবু নিজেকে অচ্ছুত লাগে
উটের কুজের মত আমার পিঠ
পঙ্কিলতার পুঁজ আঙ্গুলে আঙ্গুলে
আমি এক অশুভ তিথিতে
তোমার অতিথি হয়েছিলাম
আমার আঙ্গুল তোমার চিবুক ছুঁয়েছিল
আশ্রয়
তোমার ভিটায় আমার মাটি
চৌকাঠ জুড়ে আমার দখল
আলমারি আর ঘুলঘুলিতে আমার ঘাম।
তোমার চায়ের কাপে, ফুলের টবে
পুরনো এ্যালবাম, পারফিউমের শিশি
গানের খাতা, প্রিয় কবিতা, বইয়ের পাতায়
আমার হয়েছে ঠাঁই।
আজ সময় যতই স্বার্থপর হোক –
ঝড়, জলোচ্ছ¡াসে, ভূমিকম্প, ভূমিধ্বসে
দানব দাবানল, ভীষণ অগ্নুত্পাতে
আমি তোমায় ফেলে পালাব না।
সবাই তো ইতর ইঁদুর নয়
ডুবন্ত জাহাজেও কেউ কেউ
খুঁজে নেয় আশ্রয়।
যে পালায় সে হারিয়ে যায়
দেয়ালে দেয়ালে ফেরার হয়
আমি অনেক ঠকে জেনেছি
পালিয়ে বেঁচে মানুষ মরে যায়।
১১। ছিন্ন করো তুমি ভিন্ন করো
(শিল্পাচার্যের “বিদ্রোহী” দ্বারা অনুপ্রাণিত)
ছিন্ন করো তুমি ভিন্ন করো
তেড়ে আসো তুমি ফুঁড়ে আসো
ভেদ করো তুমি প্রতিরোধ করো
প্রশ্নহীন আনুগত্য সে তোমার জন্য নয়
দ্বিধাহীন দাসত্ব সে হবার নয়
মিথ্যার বেসাতি সে মেনে নেবার নয়
রক্তচক্ষু ভয় আমাদের জন্য নয়
মর্দন মন্থন তৈলচিত্র আমাদের জন্য নয়
বিবেকের বিকিকিনি আমাদের জন্য নয়
আমাদেরকে রুখতে পারবে না, আমরা বলবই
আমাদেরকে আটকাতে পারবে না, প্রতিবাদ করবই
আমাদের কন্ঠের দখল নিতে পারবে না, চিত্কার চলবেই
একাকী চিতায় ভস্ম হও
(কবি সহস্র সুমনের নিকট ক্ষমা প্রার্থনাপূর্বক)
এ যাত্রায় বেঁচে গেলে তুমি স্বার্থপরের মতই বাঁচবে
এ যাত্রায় রেহাই পেলে তুমি নিজের কথাই ভাববে
আগের মতই তোমার বিষে কিশোর বানর নীল হবে
রাত্রিবেলা ঝড়ে পড়া শামুকখোলা তোমার পাতে যাবে
এ যাত্রায় বেঁচে গেলে তুমি আরও বড় চোরটা হবে
বেগমপাড়ায় বাড়ি, হাল মডেলের গাড়ি হবে
অহংকারী আমলা হবে, তুমি ধুরন্ধর সদাগর হবে
বালিশ-পর্দা-নারকেল গাছ, সেই সে হরিলুট হবে
আগের মতই নদী বন পাহাড় সাগর গিলে খাবে
তুমি আগের মতই নষ্ট প্রাণের পূজারি, ভ্রষ্ট নাবিক হবে
বদ্ধ পানি নর্দমার কীট হবে, জড়বুদ্ধির মোল্লা হবে
আগুন দেবে বাউলের মন্দিরা আর সংখ্যালঘুর মন্দিরে
নির্মম সন্ধ্যায় ভাওয়ালের বনে মাকে বিসর্জন দেবে
তুমি উদাসীন রাষ্ট্র হবে, কাল কেউটে কেরানি হবে
ফাঁক খুঁজে বাক-স্বাধীনতায় নতুন কোন ফাঁস পরাবে
এ যাত্রায় বেঁচে যদি যাও, তুমি ভীষণ ভক্ষকই রবে
চাল তেল ত্রাণ ফিতরা যাকাত সব চেটেপুটে খাবে
গোলাপি শুশুক লাল হবে, কেজি দরের মাংস হবে
বস্তাবন্দী হবে বৃদ্ধ বাবা, মিষ্টি শ্যামা কারেন্ট জালে ছটফটাবে
পাশের বাড়ির ছোট্ট মেয়ে একলা পেয়ে তুমি দাঁত আর নখ বসাবে।
তার চে’ বরং চলে যাও, তুমি একাকী চিতায় ভস্ম হও
বৃষ্টি বানের জলে ভাস, বাষ্প হয়ে বাতাসে মেলাও
হারাও দূরে বহুদূরে আকাশ বাতাস মহাকাশ ছাড়িয়ে
অন্য কোন ছায়াপথে, ধুঁকতে থাকো কোন দুষ্টগ্রহ হয়ে।
ঊষর পিঠ অথবা আবাদী বুক
মাছের পিঠের মত আমার পিঠ
সয়েছে সহস্র চাবুকের আঘাত
নিরীহ পিঠে জালের গুটি, ঢাকের কাঠি
নিত্য অপবাদ।
আমার পিঠের উপর দিয়ে বয়েছে
সমুদ্রের লোনা জল,
সাহারার ক্ষ্যাপা সাইমুম।
বিঁধেছে শিকারী এহ্যাবের বাতিকগ্রস্ত হার্পুন
বেদুঈনের নির্ভুল নিশানা সুতী² তীর
আর বিশ্বস্ত বন্ধুর বিষ মেশানো ছুরি
উত্তরে শুধু অস্ফুট উচ্চারণ-
“ব্রুটাস তুমিও!”
পিঠকে জর্জরিত করে আমি
আমার বুকটাকে আগলে রেখেছি
চাষ করেছি দামেস্কের গোলাপ
আর শ্বেত শুভ্র কাশবন।
কারণ চূড়ান্ত ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর জন্য
ঊষর পিঠ নয়
আবাদী বুকই সর্বাপেক্ষা উত্তম।
আমার বুকের উপর
আমি যখন শুয়ে থাকি
তখন আমার শিশুপুত্রটি পা টিপে টিপে আমার কাছে আসে
আমার পিঠ মাড়াতে সে বড্ড ভালোবাসে
ভালোবাসে আমার বুকের উপর
তার খেলনা ট্রাকটি চালিয়ে দিতে
সে যদি জানত, কত শত জন –
আত্মীয়, অনাত্মীয়, বন্ধু, পরিচিত, স্বল্প পরিচিত
কত শত বার তার পিতার পিঠ মাড়িয়ে গিয়েছে
সুযোগ বুঝে বুকের উপর চালিয়ে দিয়েছে ট্রাক
“সমগ্র বাংলাদেশ ১০ টন”
আমি দেখতে পাচ্ছি
(ফিল কলিন্সের ইন দ্যা এয়ার টুনাইট দ্বারা অনুপ্রাণিত)
আমি দেখতে পাচ্ছি
আমি পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি
তুমি ডুবে যাচ্ছ
ডুবে যাচ্ছ হিম শীতল অতলান্তিক জলে।
আমি দেখছি তোমার দু’চোখ জুড়ে আতঙ্ক
সাহায্য প্রার্থনায় করুণ আর্তি
তবে জেনে নাও আমি হাত বাড়াবো না
আমি তোমার তলিয়ে যাওয়া উপভোগ করব।
আমি এক পলকের জন্যও চোখ ফেরাবো না
পায়ের তলায় মাটি খুঁজে পাবার জন্য তোমার সে তীব্র সংগ্রাম
প্রবল বেগে হাত-পা ছোঁড়াছুঁড়ি
একটুখানি বাতাসের জন্য তোমার হাতড়ে মরা আমি উপভোগ করব
উপভোগ করব তোমার ঠিকরে বেরিয়ে আসা দু’টো চোখ
ঠিক যেমন আমি প্রথমবার সমুদ্র সৈকতে সূর্যাস্ত উপভোগ করেছিলাম।
আমার সব মনে আছে
কিছুই ভুলিনি, ভুলিনি একটি মিথ্যাও
তুমিও জানতে আমি হাত বাড়াবো না
তুমি জানতে অন্তরের গভীরতম প্রকোষ্ঠে।
আমি দেখতে পাচ্ছি তুমি ডুবে যাচ্ছ হিম শীতল অতলান্তিক জলে
আমার ঈশ্বর জানে আমি শুধু অপেক্ষা করেছি এই মাহেন্দ্রক্ষণের।
পথ তবে
“পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছ?”
কপালকুণ্ডলা/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
পথ তবে থাক পথের মতই
দ্বিধায় ফেলুক প্রতিদিন।
পথ তবে থাক পথের মতই
আলো-আঁধারে ভূয়োদর্শন।
পথ তবে থাক পথের মতই
ঢেকে যাক শ্রাবণ মেঘমালায়।
পথেই মেলাক পথের রেখা
মিলিয়ে অশ্বত্থের ছায়া।
পথ তবে থাক পথের মতই
হোক কুহকিনী সাইরেন কন্যা।
হারিয়ে প্রেয়সী পথেই লুটাক
নিঃস্ব নিষন্ন ‘অভিমানী অর্ফিয়াস’।
পথ তবে থাক পথের মতই
পথেই লুপ্ত হোক নিষ্কলঙ্ক সকাল,
গনগনে দুপুর। পথের ধারেই
অঝোরে কাঁদুক প্রৌঢ? বিকেল বেলা।
মাছ এবং পাখি
আমি হলাম সেই মাছ
যে এক পাখির প্রেমে পড়েছে
মনোহর পাখি আমায় দিয়েছে জ্বর
এখন জলে আমার শীত ভীষণ
আমি ভুলেছি সাঁতার
আমার কেবলি উড়ার সাধ
আমি উড়িবার চাই
আমি উড়িবার চাই
পাখি শুনে, পাখি হাসে
পাখি কানে কানে আমারে কয়
“ঐ নীল আকাশ শুধুই তোমার
তৈরি থেকো, আমি আসব সহসাই”
অবশেষে অগ্রহায়ণের এক ভরদুপুরে
আমার পাখি আমারে উড়ায়
যখন মায়ের বুকে অঘোরে ঘুমায় দস্যি শিশু
তখন আমি উড়ি, আমি উড়ি রুদ্ধশ্বাস
হঠাত দেখি পাখির ঠোঁটে রক্ত
আমার পাখি আমারে ছিঁড়ে
পাখি আমারে খায়
পাখি আমারে খায়
বিড়াল অথবা কাঁঠাল
আমি একবার বিড়ালকে কাঁঠাল
আর ছাতাকে ব্যথা নামে ডেকেছিলাম
অন্য একদিন গোলাপকে বিলাপ
আর বিন্দুকে সিন্ধু বলেছিলাম।
এমন ভুল আমার প্রায়ই হয়
আত্মীয়, অনাত্মীয়, বন্ধু, না-বন্ধুরা
আমার এ বেহাল দশা বেশ উপভোগ করেন।
আমার তাতে কোনও আপত্তি নেই
দিন শেষে সবারই সাধ্যমত ভাববার
এবং বিনোদন খুঁজে নেওয়ার স্বাধীনতা রয়েছে।