ইচক দুয়েন্দে : ১৯৬০ খৃষ্টাব্দে বাংলাদেশে জন্ম গ্রহণ করেন ইচক দুয়েন্দে। জীবনের অধিকাংশ সময় বসবাস করেছেন বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় পদ্মা-বিধৌত নগরী রাজশাহীতে। কাজ করেছেন কৃষি খামার পরিচালক, গ্রন্থ সম্পাদক এবং ইংরেজি ভাষা প্রশিক্ষক হিসেবে। ইচক দুয়েন্দে’র অন্য বই: We Are Not Lovers (ইংরেজি উপন্যাস) এবং টিয়াদুর (মহাগপ্প)।

১৭.
‘কিট কটাং খটং’ শব্দ করে গরাদ-দরজার তালাটা খুলে যায়। পুঁই চুলভি ও ইমুস ক্যাটস্ প্রস্তুত, এই শেষ মুহূর্তগুলির অঘোষিত নেতা চিকচাকরুই নির্দিষ্ট করে দিয়েছে ওরা দু’জন থাকবে প্রথম দলে। ওরা বেরিয়ে যায়। একবারও পেছন ফিরে না তাকিয়ে তারা সামনে হেঁটে যায়। তারা ধীর স্থির অথচ ত্রস্ত। সামনে গিয়ে তারা ডানে বাঁক নেয়। আবার তারা বামে বাঁক নেয়। তারপর আবার তারা বামে বাঁক নেয়। তাদেরকে এক ঝলক দেখা যায় তখন। দূর থেকে ভালো করে দেখা যায় না। মনে হয় ঘরটা সুন্দর আসবাবে সাজানো, সেখানে তারা ঢোকে। মনে হয় ঘরটায় একটায় খাবার টেবিল আছে, আস্তে আস্তে বিভিন্ন পদের খাবার সেখানে এসে জমা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে গরাদ-দরজা আবার তালাবদ্ধ হয়ে গেছে। এবং সান্ত্রি আশেপাশে নেই।
হাজতঘরটায় কারো মুখেই রা নেই।
দমবন্ধ। প্রতীক্ষা।
কয়েকটা অতি দীর্ঘ মিনিট কেটে যায়। সান্ত্রি এগিয়ে আসে। কিট কটাং খটং শব্দে তালা খুুলে যায়।
বের হয় মিয়ান টিনটুই ও শ্যামল চিল। তারা ধীরে অথচ দ্রæত হেঁটে চোখের আড়ালে চলে যায়। একবারও ফেরায় না মাথা। ঐ সেই ঘরটা, যেখানে মনে হয় খাবার টেবিলে চমৎকার সব খাবার সাজানো আছে, সেখানে তারা ঢোকে।
আবারও তালা আটকে যায়।

এবং সান্ত্রি চলে যায়।
নিস্তব্ধ। অধীর প্রতীক্ষা। হৃদপিণ্ড ধুকপুক করছে।
আস্তে আস্তে আস্তে আস্তে সময় এগুচ্ছে।
মনে হয় কর্তৃপক্ষ আবারও ভুলে গেছে তাদেরকে। একটা কোনো গোলমাল হয়েছে। কোনো ভুল বুঝাবুঝি। হয়তো তাদের মুক্তি স্থগিত হয়ে গেছে। যারা ইতোমধ্যে বের হয়ে গেছে, তারা যদি একবারে বাহিরে গিয়ে না থাকে, হয়তো তাদের ফিরিয়ে আনা হচ্ছে আবারও এই ঘরে।
সান্ত্রি এগিয়ে আসে। খটাং তালা খুলে যায়।
লালু পাঞ্জুমম ও রজেট চিনচুই যাত্রা করে। যাত্রার ঠিক আগে লালু পাঞ্জুমম বলে, ‘আমার মেয়েটাক নিয়ে যাতে পারলাম না। কী সুন্দর মেয়ে ছিল!’ তারা চলে যায়।
তালা আটকে যায়। এবং খটাং খুলে যায়।
যাত্রা করে তিয়াস ঠিসটক ও ফিটিক চ্যাক। এক-পা দু-পা করে তারা আগায়। ডান দিকে বাঁক নেয়। এবং সঙ্গে সঙ্গে পেছন দিকে ঘুরে যায়। তারা দু’জনেই সমস্বরে অত্যন্ত ক্ষীণ গলায় চিৎকার করে ওঠে, ‘সা-ং-বা-দি-ক।’
তারা প্রায় ছুটে হাজতঘরে ফিরে আসে। তারা আতঙ্কিত নয় কিন্তু বিব্রত।

‘ওরা সম্ভবত এই দিকে আসছে’, ফিটিক চ্যাক বলে। ‘ওরা এখানে আসবে। ওরা টের পেয়ে গেছে যে, আমরা পালিয়ে যাচ্ছি। স্যরি, আমরা তো আর সত্যিই পালিয়ে যাচ্ছি না। মানে আমরা একটু কৌশলে বেরিয়ে যাচ্ছি। যাই হোক, এখন আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে। ওরা আসবে এবং জিজ্ঞেস করবে, আমাদের মধ্যেকার অবশিষ্ট ব্যক্তিরা কোথায়? এজন্য আমরা ঐ কোণাটায় গিয়ে জড়োসড়ো হয়ে থাকব। যাতে ওরা গুনে না বুঝতে পারে আমাদের মধ্যে কয়জন পালিয়ে গেছে। স্যরি, আমার আবারও ভুল হয়ে যাচ্ছে, মানে বের হয়ে গেছে। আর ওরা যদি খুবই চাপাচাপি করে, ওদের কাছে পরিচিত, মিয়ান টিনটুই-এর কথা জিজ্ঞেস করে, বলে দেব ওখানে, ঐ শৌচাগারে আছে।’
তিয়াস ঠিসটক কিছু একটা বলতে চায়। তারপর সে চেপে যায়।

অলংকরণ : উদাস আব্দুল্লাহ

হাজতঘরে সব্বাই দাঁড়িয়ে যায়। তারা উত্তেজিত। তাদের চুল একটু একটু খাড়া হয়ে যায়।
ততক্ষণে সান্ত্রি গরাদ-দরজার বাহিরে তালা আটকে দিয়েছে।
‘আমি রাজনৈতিক আশ্রয় চাইতে যাচ্ছি। আগামী বছর এ-সময়ে আমি জুরিখে,’ দ্বিধা ঝেড়ে ফেলেবলে তিয়াস ঠিসটক।

কয়েক মিনিট কাটে, লম্বা দীর্ঘ। খটাং করে পুনরায় গরাদ-দরজা খুলে যায়। ফিটিক চ্যাক ও তিয়াস ঠিসটক একটুও দেরি না করে এবারে সোজা হাঁটা দেয়। বুক চিতিয়ে। ভ্রূক্ষেপহীন। মাথা উঁচু করে। এবং সহসাই তারা অদৃশ্য হয়।
আবার তালা আটকে যায়।

চিকচাকরুই, জিয়াফ ব্যানব্যাট ও ফিজ ফ্যাল ঘরটিতে দাঁড়িয়ে। অবশিষ্ট তিনজন।
দূরে ঐ ঘরটাকে তাদের কাছে রহস্যময় লাগে। যেখানে খাবার টেবিলে সাজানো আছে থরে থরে সুস্বাদু খাবার। তাদের মন বারে বারে ঘুরে যাচ্ছে ঐ ঘরটায়। সেখানে সাজানো মনোরম নরম সোফা। তাদের বন্ধুরা সেখানে হেলান দিয়ে আরাম করছে। বোধহয়, রজেট চিনচুই একজন বড় অফিসারের সঙ্গে মুখোমুখি বসে কথা বলছে। ঐতো হাঁটছে ফিটিক ও তিয়াস।
অনতিদূরের ঐ ঘরটায়, তারা জানত তাদের অপেক্ষা করতে হবে কিছুক্ষণ। কিন্তু ঐ ঘরের ভেতরের কিছুই স্পষ্ট করে দেখা যায় না। আভাস থেকে অনুমান।
প্রতীক্ষা। উত্তেজনা। তারা তিনজনই দাঁড়িয়ে। আবারও মনে হয় তাদের কথা কারো মনে নেই। তারা বিস্মৃত পরিত্যক্ত। সান্ত্রিও আর দৃষ্টিসীমার মধ্যে নেই।
সান্ত্রি একবার দেখা দেয়।

ফিজ ফ্যাল প্রায় লাফ দিয়ে গরাদ-দরজার কাছে পৌঁছায় এবং ঔচিত্য অনৌচিত্য ভাবতে ভাবতে জিজ্ঞেস করেই ফেলে, ‘আমাদেরকে কখন ছাড়বেন?’ এবং তৎক্ষণাৎ যোগ করে অনুরোধ, ‘দয়া করে, তালা খুলুন। আমরা বের হই।’
সান্ত্রি যেন অনুরোধ শুনতে পায় না। সে করিডোর ছেড়ে বারান্দার শেষ প্রান্তে চলে যায়। ঘাড়ে ঝোলানো বন্দুকটা একটু ঠিক করে বসিয়ে, সে আকাশের দিকে তাকায়। অনেকক্ষণ সে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।
একটা সম্ভাবনা বারবার উঁকি দিচ্ছে ফিজ ফ্যালের মনে, হঠাৎ তা পুরোপুরি উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে, ‘আমরা আমাদের বেয়াদপির মূল্য দিতে যাচ্ছি! সব্বাই ছাড়া পেলেও আমরা আর ছাড়া পাচ্ছি না। আমাদের জন্য ওরা পৃথক কিছু ব্যবস্থা করেছে।’
তারা নিজ নিজ ভাবনায় মগ্ন হয়।
একজন কর্তাব্যক্তি আসে। দাঁড়ায় গরাদ-দরজার ওপারে। বলে, ‘দুঃখিত। আপনাদের বেরুতে দেরি হবে।’

কর্তাব্যক্তি আরও বিশদ করে, ‘সাংবাদিকরা এসেছে আমাদের অফিসে। তারা হৈ চৈ করছে। তর্কবিতর্ক করছে। ওরা দাবি করছে, আমরা আপনাদেরকে গোপনে ছেড়ে দিচ্ছি। ওরা শান্ত হোক। চলে যাক। আপনাদেরকে আমরা একে একে ছেড়ে দিচ্ছি। অর্থাৎ আপনারা বেরুবেন একে একে।’

১৮.
ওরা তিনজন হাজতঘরে দাঁড়িয়েই থাকে। পাহারারত সান্ত্রি অদৃশ্য। গরাদ-দরজা নিশ্চল তালাবদ্ধ।
চিকচাকরুই দুই হাতের আঙুলগুলো পরস্পরের ফাঁকে গুঁজে, চোখ খোলা রেখে, অথচ কোনো নির্দিষ্ট দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ না করে গভীর চিন্তায় ডুবে যায়।
‘পৃথিবীতে যে কারাগার নামে একটা জিনিস আছে, এ আমার জানাই ছিল না। বহুবার শুনেছিলাম। বর্ণনা শুনেছিলাম বহু মানুষের মুখ থেকে। বর্ণনাগুলি কি মনে রেখেছিলাম? এরকম একটা মর্মান্তিক জিনিস পৃথিবীতে আছে, অভিনিবেশ সহকারে তা নিয়ে কি ভেবেছিলাম?
‘শুনেছি বাতাসে নাইট্রোজেন, অক্সিজেন ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস আছে। এই শুনেছি মাত্র। পরীক্ষা করে দেখেছি কী পদার্থ তারা, কী তাদের ধর্ম, বর্ণ ও গন্ধ? তাহলে কী করে বলি জানি তাদের?

‘কারাগার, জেলখানা, লালঘর, পুলিশ-হাজত এগুলি কী একই জিনিস না একটু ভিন্ন ভিন্ন তা বলতে পারব না। কারাগারে শাস্তিপ্রাপ্ত আর বিচারাধীন উভয় প্রকারের মানুষদেরকেই কয়েদি বলে কিনা সে-সম্পর্কে আমি নিশ্চিত নই।
‘আইনভঙ্গ করলেই প্রায় বিনা ব্যতিক্রমে মানুষের হাতে কেন পরাতে হবে হাতকড়া? কেন করতে হবে বন্দি?
‘এই নিয়ম তো চালু হয়েছিল ‘জোর যার মুল্লুক তার’ যখন চালু ছিল পৃথিবীতে তখন।
‘জয়ীরা বন্দি করত পরাজিতদের। জয়ীদের দাসে পরিণত হত পরাজিতরা।
‘সাম্য, মৈত্রী, গণতন্ত্রে পরিচালিত একটি রাষ্ট্র কী করে তার নাগরিকদের শাস্তি দেবার জন্য কারাগার রাখে?
‘সুস্থ, সুখী মানুষরা কখনো অপরাধ করে না। অপরাধ করে যারা অসুস্থ ও অসুখী। সেই তথাকথিত অপরাধীদের দরকার সুচিকিৎসা, শাস্তি নয়।

‘শুনেছি ভাসানী, বঙ্গবন্ধু জীবনের একটা দীর্ঘ সময় জেলে কাটিয়েছিলেন। তাঁদের মতো মহৎ মানুষেরা কতো অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধেই-না আন্দোলন করেছিলেন। কেন তাঁদের দাবিতে কারাগার এল না? কেন তাঁরা দাবি তুললেন না, কারাগার তুলে দিতে হবে? তাঁরা দাবি তুলতে পারতেন কারাগারগুলোকে স্কুল বা হাসপাতালে পরিণত করার।
‘তাঁরা তাঁদের আপন জাতিকে মুক্ত করেছিলেন পরাধীনতার গøানি থেকে। বিশাল প্রলয়ংকর কাজ। তাঁদের মেধা, দূরদৃষ্টি ও সাহস ছিল। তাঁরা ডাক দিতেন। জনসাধারণ তাঁদের ডাকে সাড়া দিত।
‘বিদ্রোহী কবির সেই অমর গানটা গেতে গেতে ছুটে যেত জনতা: কারার ঐ লৌহকপাট / ভেঙে ফেল, কর রে লোপাট / রক্তজমাট শিকলপূজার পাষাণবেদী …
‘তছনছ করে দিত তারা। কারাগার উঠে যেত। পৃথিবীতে আমাদের দেশ থেকে প্রথম কারাগার উঠে যেত।

‘আমি ভাসানী বা বঙ্গবন্ধুর উপদেষ্টা হলে এই ধারণাটা তাদেরকে দিতাম। তাঁরা এত খুশি হতেন যে, আমার পিঠে একটা বিরাশি শিক্কা থাপ্পর মেরে বলতেন, ‘সাব্বাশ রুই!’
‘কিন্তু কেন তাঁরা কাজটা করলেন না? দুইজনার বোধহয় কারাগারে নিরিবিলি সময় কাটাতে বেশ ভালো লাগত। বাহিরে থাকলে যা জনপ্রিয়তা! জান যাওয়ার জোগাড়!
‘আজ আমি আমার মধ্যে একটা নেতৃত্বের গুণ দেখছি। এদের সব্বাইকে যেভাবে ক্রমান্বয়ে যেতে বলছি, তা তারা মানছে। তাই বলা যায় না, এই দাবিতে আমি একটা বিরাট আন্দোলন গড়ে তুলতে পারি।
‘বিশাল আন্দোলন। গণজোয়ার। শুধু আমাদের দেশেই নয়, পৃথিবীর সব দেশেই, এই আন্দোলন একটা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়ে যাবে।

‘কারণ তথাকথিত সভ্য দেশগুলির শতকরা পঞ্চাশ ভাগ লোক আইন ভঙ্গ করার অপরাধে জীবনে কমপক্ষে একবার কারাগারে দিন কাটায়।
‘তথাকথিত বর্বর দেশগুলির একশভাগ লোকই কারাগারে কাটায় কারণ তারা তো প্রকৃতপক্ষে তথাকথিত সভ্য দেশগুলির কারাগার।
‘থাক আমার মাথাটা ঝিম্ঝিম্ করছে। আমার শরীরটা খুব দুর্বল লাগছে।
‘আমাদের এই প্রিয় গ্রহ পৃথিবীটাই তো শূন্যে ভাসমান এক বিশাল কারাগার।
‘আমার মাথাটা ঝিম্ঝিম্ করছে।
‘কয়লাখনির গভীর সুড়ঙ্গে কালিঝুলিমাখা যে-মানুষেরা ঘোরে, এখন আমার প্রাণ কাঁদছে তাদের জন্য। কী কষ্টেই-না কাটে তাদের জীবন! দুর্ঘটনা ঘটলে, মৃত্যু। মৃতদেহও যায় না পাওয়া।

‘আমার মাথাটা ঝিম্ঝিম্ করছে। মনে হচ্ছে আমার কাছে গায়েবি ধারণা আসছে।
‘সমুদ্রের তলদেশে যায় ডুবুরিরা। ঘোরে ডুবোজাহাজ। করুণ, কী করুণ মৃত্যু হয় তাদের, হঠাৎ, আকস্মিক।
‘জলে ডুবে যায় জাহাজ, নৌকা। কত-না মানুষ মারা যায়।
‘খাড়া পাহাড় বেয়ে ওঠে দুঃসাহসী পর্বতারোহীরা। আচমকা পড়ে গিয়ে নিহত।
‘আর খুঁতখুঁতে বিজ্ঞানীরা এক সেন্টিমিটারের ১০০০ কোটি ভাগের ১ ভাগে কী কণিকা আছে তা করেন সন্ধান, নাওয়া খাওয়া ভুলে, নিজেদের বন্দি করে গবেষণাগারে, যা আর এক কারাগার।’
‘কারাগার। কারাগার।’
‘একটি বের হওয়া ও বাহির হবার পথ। ফ্যাট বাড়ি। গ্রিলে ঢাকা ব্যালকনি। সেও এক কারাগার।’
‘দেশ রাষ্ট্র পাসপোর্ট ভিজা। বড় বড় কারাগার।’
‘কবর, আরেক কারাগার।’
‘অদৃশ্য মৃতলোক, সবচেয়ে বড় কারাগার।’

‘সেখানে আমার ভাইটা চলে গেছে। সে আর কোনোদিনও ফিরবে না। আমার বড়ভাইটা ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মানুষ। কী তার চেহারা! কী তার বডি! কী সুন্দর টানা চোখ! কী অপূর্ব ভ্রূ! কী দারুণ বুকের ছাতি! গায়ের রং টসটসে লাল। কমলালেবুর রঙ হার মানবে।’
‘পুরুষ হোক মেয়ে হোক, যে তাকে একবার দেখবে, কাজকাম ভুলে সে শুধু তাকেই দেখবে এক পলক। পাঁচশ হাজার মেয়ে তাকে পাওয়ার জন্য পাগল। কিন্তু চোখ তুলে সে কাউকে দেখে না।’

‘এক দিন সে পথে হাঁটে। আমাদের গ্রামে কাজ করে এক লোক নেভিতে। সে আমার ভাইকে দেখে। তার চোখে আর পলক পড়ে না। সে তাকিয়ে থাকে। সে জেনে নেয় আমার ভাইয়ের নাম পরিচয়, তারপর বলে, আমি তোমাকে নেভিতে ভর্তি করে নেব। তুমি পড়াশুনো করো।’
‘আমার ভাইয়ের মাছ ধরার শখ। নদীতে যায় মাছ ধরে। বন্ধুবান্ধব সঙ্গে নিয়ে। একদিন মাছ ধরতে গিয়ে সে আর ফিরল না। গোসল করতে গিয়ে বেকায়দামতো লুঙ্গিটা তার মাথায় আটকে গিয়েছিল। ভালো করে আর সাঁতরাতে পারে নি। খরস্রোতা নদী তাকে টেনে নিয়েছিল।’
‘নদীর সব জেলে বড় বড় জাল ও বঁড়শি নামিয়ে তন্নতন্ন করে খুঁজে তিন দিন পর তাকে পেয়েছিল।’
‘আমার বড়ভাই আর কোনোদিনও মায়ের কোলে ফিরে আসবে না। মৃতলোক থেকে আর কেউ ফিরে আসে না।’
‘লজ্জা। লজ্জা। লজ্জা। ছি ছি ছি। আমরা বেরুব। ঢি ঢি রি রি পড়ে যাবে। কলঙ্ক। দুর্নাম। এর চেয়ে মৃত্যুও ভালো ছিল।’

‘যদি একটা ধাপ বাড়ালেই যাওয়া যেত মৃতলোকে, যে কারাগার থেকে কেউ ফিরে আসে না।’
বেনাপাত্তুঙ্কু লালঘর।
লালঘর নিপাত যাক।
মার্চ-এপ্রিল ২০০৭
রাজশাহী, বাংলাদেশ। (শেষ)