অনলাইন ডেস্ক : করোনাভাইরাসে বন্ধ থাকার পর লন্ডন-সিলেট রুটে বিমানের সরাসরি ফ্লাইট ফের চালু হচ্ছে। আগামী সোমবার যুক্তরাজ্যের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে ওই ফ্লাইটটি সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানববন্দরে এসে অবতরণ করবে। পরে সেই ফ্লাইটটি অভ্যন্তরীণ হিসেবে ঢাকায় যাবে। সিলেট-১ আসনের এমপি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের প্রচেষ্টায় এই ফ্লাইটটি চালু হয়েছে। এতে খুশি সিলেট ও লন্ডনের মানুষ। এখন কোনো ভোগান্তি ছাড়াই নিজ শহর সিলেটে আসতে পারবেন লন্ডন প্রবাসীরা। লন্ডন থেকে সরাসরি ফ্লাইট বন্ধ হয়ে পড়ার পর ঢাকায় ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস শেষ করে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে সিলেট আসতে হতো যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের। এতে ভোগান্তি চরমে পৌঁছে।
এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয় লন্ডন ও সিলেটে। বিষয়টি নিয়ে লন্ডন ও সিলেটের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার নেতৃবৃন্দ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন, বেসরকারি বিমান প্রতিমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করেন। এমনকি এ নিয়ে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল সিলেটে। পরবর্তীতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় সেই ফ্লাইটটি পুনরায় চালু করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সেই প্রস্তুতিও শুরু করেছে। ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে- বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে সিলেটের স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য কর্মীরা নিয়োজিত রয়েছে। রয়েছে থার্মো স্ক্র্যানারও। যাত্রীরা আসার পর থার্মো স্ক্র্যানারের মাধ্যমে তাদের পরীক্ষা করে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হবে। যদি কারো উপসর্গ থাকলে তাকে স্বাস্থ্য বিভাগের তরফ থেকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হবে। সেই প্রস্তুতি ইতিমধ্যে নিয়ে রাখা হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে এপ্রিলের প্রথম থেকেই লন্ডন-সিলেট রুটে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। এরপর বিশেষ কয়েকটি ফ্লাইটে আটকেপড়া যাত্রীদের ঢাকা হয়ে বৃটেনে নেয়া হয়। এরপর গত ২১শে জুন থেকে স্বল্প পরিসরে লন্ডন রুটে বিমানের ফ্লাইট চালু করা হয়। হিথ্রো রুটে সপ্তাহে মাত্র একটি ফ্লাইট চালু হয়। ওই ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে হিথ্রো যাচ্ছে প্রতি রোববার। আর সোমবার যাত্রী নিয়ে সিলেট হয়ে ঢাকায় ফেরার কথা ছিল। কিন্তু সেটি না করে করোনা আইসোলেশন সেন্টার না থাকার অজুহাত দেখিয়ে লন্ডন-সিলেট ফ্লাইটটি বাতিল করে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। এতে সব চেয়ে বেশি বিড়ম্বনার শিকার হন সিলেটের যাত্রীরা। কারণ- তাদের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস ঢাকায় শেষ করা হয়। এরপর লাগেজ বহন করে যাত্রীদের অভ্যন্তরীণ যাত্রী হয়ে সিলেট ফিরতে হয়। আবার সিলেটে এসে আরেকদফা তাদের কাস্টমস করতে হয়েছিল। এতে যুক্তরাজ্য প্রবাসী সিলেটিদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। বিমানের এ সিদ্ধান্ত বাতিল করে লন্ডন-সিলেট ফ্লাইট চালুর দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন হয়। সিলেটেও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। যুক্তরাজ্য প্রবাসী ও সিলেটের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে লন্ডন-সিলেট ফ্লাইট চালুর দাবি জানানো হয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের কাছে। এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০শে জুলাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বিস্তৃত আলোচনা হয় এবং ফ্লাইট ফের চালুর সিদ্ধান্ত হয়। ওই সভায় জানানো হয়- করোনা ঠেকাতে লন্ডন থেকে সিলেটগামী যাত্রীদের ইমিগ্রেশন এবং লাগেজ হস্তান্তরে ঢাকায় নিষ্পন্ন হওয়ার যে যুক্তি দেখানো হয়েছে, তা অত্যন্ত দুর্বল। বলা হচ্ছে, কারো উপসর্গ থাকলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠাতে হবে, সিলেটে তো এই সুবিধা নেই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনও বলেন, যে যুক্তিতে লন্ডন-সিলেট ফ্লাইটটি বন্ধের নোটিশ করা হয়েছিল তা’ কর্তব্যের মধ্যে পরে না। কারণ সর্বোচ্চ ৫-১০ শতাংশ যাত্রীর করোনা উপসর্গ থাকতে পারে এবং তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানোর প্রয়োজন পরতে পারে। আমরা স্থানীয়ভাবে সেই ফ্যাসিলিটিজ নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি বলেন- যেকোনো মূল্যে সিলেটে ফ্লাইট চালু রাখতে হবে, কারণ এটা সিলেটবাসী এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বৃটিশ নাগরিকদের প্রতি আওয়ামী লীগ সরকারের কমিটমেন্ট। বিমান কেনার আগে বঙ্গবন্ধুর প্রতিও সিলেট-লন্ডন ফ্লাইট চালুর দাবি ছিল প্রবাসীদের। এটা চালু হয়েছে, কেউ বন্ধ করতে পারবে না। বাংলাদেশ বিমান সিলেটের ম্যানেজার শাহনেওয়াজ মজুমদার জানিয়েছেন- এখন থেকে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটটি হিথ্রো থেকে সোমবার সিলেটে এসে পৌঁছাবে। ওই ফ্লাইটটি রোববার ঢাকা থেকে হিথ্রো যাবে। তিনি জানান, সিলেট-ঢাকা রুটে বিমানের প্রতিদিন একটি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চালু আছে। সোমবার থেকে অভ্যন্তরীণ দু’টি ফ্লাইট হলো। যেটি লন্ডন থেকে সিলেটে আসবে সেটি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট হয়ে ঢাকায় যাবে। সিলেটের লতিফ ট্রাভেলসের সত্ত্বাধিকারী ও হাবের সেক্রেটারী জহিরুল হক চৌধুরী শিরু জানিয়েছেন- দ্রুততম সময়ে মধ্যে এই সিদ্বান্ত হওয়ায় যাত্রীদের ভোগান্তি কমেছে। এজন্য তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিমান কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। মহামারি করোনা সংক্রমণের কারণে বন্ধ থাকা লন্ডন-সিলেট সরাসরি বিমানের ফ্লাইট আবারো চালুর সিদ্ধান্তে প্রবাসীরা খুশি। আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় দ্রুত এই সিদ্ধান্ত নেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন গ্রেটার সিলেট ডেভেলপমেন্ট এন্ড ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল (জিএসসি) ইন ইউকের নেতৃবৃন্দ। সিলেট-লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট বন্ধ হওয়ায় জিএসসি এর প্রতিবাদ জানায় এবং অবিলম্বে সিলেট-লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালুর দাবি জানিয়ে আসছিল। কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ প্রকাশকারীরা হচ্ছেন- জিএসসির কেন্দ্রীয় চেয়ারপার্সন ব্যারিস্টার আতাউর রহমান, সাধারণ সম্পাদক খসরু খান, কোষাধ্যক্ষ সালেহ আহমদ, সাউথ ইস্ট রিজিওনের চেয়ারপার্সন মোহাম্মদ ইছবাহ উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক ফজলুল করীম চৌধুরী, ট্রেজারার সুফী সুহেল আহমদ, ইস্ট লন্ডন শাখার সভাপতি আব্দুল গফুর, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালিক কুটি এবং ট্রেজারার আব্দুল নূর চৌধুরী, এসেক্স শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হক আবু, ট্রেজারার গোলাম মোস্তফা প্রমুখ।