অনলাইন ডেস্ক : বৈশ্বিক করোনার কারণে দেশে ফেরত আসা রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরে যেতে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সম্প্রতি আবুধাবিতে ৬৮ বাংলাদেশি বড় ধরনের হয়রানির শিকার হন। পরে বাধ্য হয়ে তারা বাংলাদেশে ফেরত আসে। ফেরত আসা এসব প্রবাসী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এ ছাড়াও বিমানের টিকিট সংগ্রহে পদে পদে হয়রানি ছাড়াও একটি টিকিট কিনতে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত গুনতে হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সঙ্গে এক জরুরি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বৈঠক সূত্র জানায়, সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং এয়ার অ্যারাবিয়ার ফ্লাইটে প্রবাসীকর্মীর আবুধাবি থেকে ফেরত আসার বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে (বেবিচক) আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। ওই প্রতিবেদনের আলোকে প্রত্যাবর্তনকারী যাত্রীদের পুনরায় সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্স কিংবা ক্ষেত্রমতে সরকারি ব্যবস্থাপনায় গন্তব্যে ফেরত পাঠাতে ব্যবস্থা নিতে হবে। যেসব যাত্রীর বাংলাদেশ বিমানের টিকিট বুকিং দেওয়া আছে, পরবর্তী ফ্লাইটে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স তাদের অনুকূলে টিকিট দেবে এবং এ ক্ষেত্রে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত কোনো মূল্য পরিশোধ করতে হবে না। বিদেশ গমনেচ্ছু এবং দেশে ফিরে আসতে ইচ্ছুকদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ক্রমান্বয়ে ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি আরও ভালো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ সংখ্যা বাড়ানো হবে। বাংলাদেশ বিমানসহ অন্য এয়ারলাইন্সের টিকিটের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণের বিষয়ে বেবিচক প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টিকিট পেতে প্রতিদিন সকাল থেকে বিমান অফিসে ভিড় জমাচ্ছেন হাজার হাজার বিদেশগামী। প্রতিদিন হাতেগোনা কয়েকজন টিকিট পেলেও অধিকাংশই ফিরছেন খালি হাতে। রবিবার সকালে বিমান অফিসের সামনে বিক্ষোভ করেন হয়রানির শিকার যাত্রীরা। চট্টগ্রাম থেকে এখনো মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে ফ্লাইট চালু হয়নি। ঢাকা হয়ে মধ্যপ্রাচ্যে যাচ্ছেন চট্টগ্রামের প্রবাসীরা।

করোনা মহামারীর কারণে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ও আবুধাবি থেকে আসা অন্তত ২৫ থেকে ৩০ হাজার প্রবাসী আটকা পড়েছেন বৃহত্তর চট্টগ্রামে। এর মধ্যে যারা দেশে ৬ মাস অতিক্রান্ত করেছেন তারা নানা সংকটে পড়েছেন। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর বাংলাদেশের সঙ্গে দুবাই ও আবুধাবির ফ্লাইট চালুর পর বিমান অফিসে প্রবাসীদের ভিড় বেড়েছে।

টিকিট সংকট নিয়ে বিদেশগামীদের ক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স জানিয়েছে, দুবাই ও আবুধাবি রুটে মহামারীর আগে যাদের টিকিট কেনা ছিল, এখন তাদের টিকিট আগে দেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় নতুনরা টিকিট পাচ্ছেন না। বাংলাদেশ বিমানের টিকিট না পেয়ে ক্ষোভ, চট্টগ্রামে ভাঙচুরের পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এ ব্যাখ্যা দেয়।

মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিমান সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, ঢাকা-দুবাই ও ঢাকা-আবুধাবি রুটে যেসব যাত্রী আগে ফিরতি টিকিট করার পরও করোনার কারণে যেতে পারেননি, আগে তাদের টিকিট দেওয়া হবে। ফিরতি টিকিট রি-ইস্যু করা সম্পন্ন হওয়ার পরই কেবল নতুন করে টিকিট বিক্রি শুরু করা হবে।

জানা গেছে, এয়ার অ্যারাবিয়া বিমানের একটি ফ্লাইট আবুধাবি পৌঁছানোর পর সেটির ৫১ জন যাত্রীকে আমিরাতের অভ্যন্তরে ঢোকার আগে আটকে দেওয়া হয়। এ ছাড়া ২২৫ জন যাত্রী নিয়ে আবুধাবি পৌঁছানোর পর বিমানের একটি ফ্লাইটের ৮১ যাত্রীকে আটকে দেওয়া হয়।

এদিকে আটকে থাকা যাত্রীরা বলছেন, তারা সবাই ইমিগ্রেশনের লাইনে ছিলেন। ১৪৪ জন যাত্রী চলে যাওয়ার পর তারা জানতে পারেন ইমিগ্রেশনের সিস্টেমের মধ্যে আইসিএ পারমিশন সাবমিট করার জন্য দেখাচ্ছে। কিন্তু তাদের কারও কাছে আইসিএ পারমিশন ছিল না। যারা বের হয়েছেন তাদের কাছেও আইসিএ পারমিশন ছিল না বলেও জানান যাত্রীরা।

এদিকে বিদেশগামীদের কোভিড নমুনা পরীক্ষায় অব্যবস্থাপনা রোধ ও উচ্চ হারে ফি আদায় প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। সংস্থাটি বলছে, আকাশপথে বিদেশগামী যাত্রীদের কোভিড-১৯ পরীক্ষার নেগেটিভ সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং সরকারের নির্ধারিত কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে নমুনা পরীক্ষার অনুমতি দেওয়ায় বিপুল পরিমাণ বিদেশগামী যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে।

অন্যদিকে আকাশপথে বিদেশগামী যাত্রীদের কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষায় সরকার নির্ধারিত হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে নমুনা পরীক্ষা করালে সাড়ে তিন হাজার টাকা ও বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হলে সাড়ে চার হাজার টাকা দিতে হবে। এই উচ্চ হারে নমুনা ফি নির্ধারণ করার কারণে সরকারি হাসপাতাল থেকে নমুনা পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত হলেও তাদের গুনতে হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালের জন্য ধার্য করা ফির সমান টাকা। সরকারি প্রতিষ্ঠানে নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিভাগের দুই রকম ফি নির্ধারণের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য এবং মহামারীকালে এমন দ্বৈতনীতি জনমনে ক্ষোভ বাড়াতে পারে।

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, প্রবাসী কর্মীরা দেশের সম্পদ। তারা যেন সহনশীল পর্যায়ের বিমান ভাড়ায় গন্তব্যে ফিরে যেতে পারে সেদিকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে লক্ষ রাখতে হবে। গন্তব্য দেশের চাহিদা অনুযায়ী পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসহ বিদেশে গমনের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়াও প্রবাসী কর্মীদের বিদেশযাত্রা নির্বিঘœ করার জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।