হে আমার স্বাধীনতা
হে আমার স্বাধীনতা-
আমরা খুব সহজে পাইনি তোমায়
তোমাকে পাওয়ার জন্য শহীদ হয়েছিল তিরিশ লক্ষ তাজা বাঙালি প্রাণ
হে আমার স্বাধীনতা-
তোমাকে পাওয়ার জন্য কয়েক লাখ মা-বোন বর্বর পাকিস্তানীদের কাছে
সম্ভ্রম হারিয়েছিল, এদের থেকে যদিও মাত্র ৪১৬ জন
বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেলেন,
তাতে কি লাখ লাখ বীরাঙ্গনার অবদান ব্যর্থ হয়ে গেছে!
হে আমার স্বাধীনতা-
তোমাকে পাওয়ার জন্য কত যে যুদ্ধ শিশু জন্ম নিয়েছে
তাদের নির্যাতিত বীরাঙ্গনা মায়েদের গর্ভ থেকে,
যাদেরকে স্বাধীন দেশ পরিচয়টা পর্যন্ত দেয়নি
হে আমার স্বাধীনতা-
তোমাকে পাওয়ার জন্য এক কোটি বাঙালি শরণার্থী হয়েছে, যাঁদের
মাঝে অনেকেই আর স্বাধীন দেশের মুখ দেখেনি
হে আমার স্বাধীনতা-
তোমাকে পাওয়ার জন্য লক্ষ লক্ষ নারী তার সিঁথির সিঁদুর বা
নাকের নথ খুইয়েও পায়নি শান্তি এ স্বাধীন দেশে
হে আমার স্বাধীনতা-
তোমাকে পাওয়ার জন্য কত লক্ষ পরিবার মুক্তিযুদ্ধে ভিটে ছাড়া হয়ে,
আর ফিরে পায়নি তার জন্মের সেই ভিটেমাটি
হে আমার স্বাধীনতা-
তোমাকে পাওয়ার জন্য কত পুরুষকে ধর্মের পরিচয় দিতে উন্মুক্ত
করতে হয়েছে তার সম্ভ্রম, আর রাজাকারের চাওয়া ধর্ম না
দেখাতে পেরে জীবন দিতে হয়েছে কত লক্ষ পুরুষের
হে আমার স্বাধীনতা-
তোমাকে পাওয়ার পর কত মুক্তিযোদ্ধা পায়নি তার যোগ্য সম্মান, আবার
কত যে রাজাকার নাম লিখিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা কোটায়
হে আমার স্বাধীনতা-
তোমাকে পাওয়ার জন্য কত শত পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে,
কত মানুষ খুইয়েছে তার ধর্ম
হে আমার স্বাধীনতা-
তোমাকে পেয়ে অর্ধ শতাব্দী পরও আমরা পরাধীন কেন!
হে আমার স্বাধীনতা-
কবে তুমি সত্যিকারের স্বাধীন হবে নোংরামি আর নীচুতার পরাধীনতা থেকে!
বিজয়িনী বীরাঙ্গনা
স্বাধীন দেশে নিঃশ্বাস নিলাম
মুক্ত বাতাসে বিজয়িনী বেসে
দুর্ভাগ্য আমার মতো বীরাঙ্গনাকে
কাছে টেনে নিল না কেউ একটু হেসে।
বিজয়িনী আমার গর্ভে এলো
বর্বর কোনো পাকি দস্যুর সন্তান
নির্দোষ সেই যুদ্ধ শিশু পেল না
নিজ মাতৃভ‚মে তার স্থান।
এ মাটিতে পেল না সাজা একাত্তরে
করেছিল যারা ধর্ষণ ও নৃশংসতা
দুর্ভাগা বীরাঙ্গনা মা আর যুদ্ধশিশুরা
পেলাম না যোগ্য সম্মান ও মমতা\
হতভাগা স্বাধীনতা
তুলসী তলার প্রদীপটা এখন আর সাঁঝের বেলা জ্বলে না,
কবে যে শেষবার শাঁখের সাথে সে প্রদীপটা জ্বলেছিস আমি তা জানি না।
একে একে সব কটা হিন্দু ঘর পাড়া ছাড়লো,
নিজের শেকরের সেই ভিটে মাটি আর তাদের না রইল।
কত বাড়ি দখলের পর তুলসীমঞ্চটাও ভেঙে ফেলা হলো,
কতেক বাড়িতে তুলসী গাছ ছাড়া শূন্য মন্চটা শ্মশানের মতো পড়ে রইল।
সাঁঝেরবেলা শাঁখ আর উলু ধ্বনির শব্দ কোথাও শোনা যায় না,
কার্তিক মাস জুড়ে কোন বাড়িতে আকাশ প্রদীপ আর দেয়া হয় না।
এটাই কি আমার প্রিয় স্বাধীন ধর্ম নিরপেক্ষ বাংলাদেশ,
এ দেশের স্বাধীনতা পাওয়ার জন্যই কি একাত্তরে লক্ষ প্রাণ হলো শেষ।
১৯৭১ এও এ বাংলায় সনাতন ধর্মাবলম্বী ছিল ২০ শতাংশেরও বেশি ছিল,
পঞ্চাশ বছর পর স্বাধীন দেশে সেই হিন্দু আট শতাংশেরও নীচে নেমে গেল।
একাত্তর পূর্ব ধর্মান্ধতা থেকে মুক্তি পেতে যে স্বাধীন দেশ হয়েছিল,
ধর্মান্ধতার পাঁকে তা কয়েক বছরের মধ্যেই একেবারে ডুবে গেল।
জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার চার মন্ত্র
জপে দেশ স্বাধীন হলো
ধীরে ধীরে একটা একটা করে শপথ মন্ত্র লোপাট হয়ে গেল\
অটোয়া, কানাডা