স্পোর্টস ডেস্ক : এমন ম্যাচ দেখতেই তো দিনের পর দিন অপেক্ষা করে থাকে ক্রিকেটপ্রেমীরা। আজ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মঞ্চে সেই ম্যাচটাই দেখা গেল। ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচ যেমন হওয়া উচিত, তেমনই টানটান উত্তেজনা ছড়িয়ে শেষ ওভারের শেষ বলে হলো ফয়সলা। ওই বলের আগ পর্যন্তও কেউ নিশ্চিত হতে পারেনি যে কোন দল জিততে যাচ্ছে।
কারণ ভারতের ব্যাটিংয়ের বেশির ভাগ সময় ম্যাচের নিয়ন্ত্রণে ছিল পাকিস্তান। শেষ পর্যন্ত রুদ্ধশ্বাস ম্যাচটি ৪ উইকেটে জিতে নিল রোহিত শর্মার দল। ম্যাচসেরা বিরাট কোহলি।
রান তাড়ায় নেমে ভারত সতর্ক শুরু করে। দ্বিতীয় ওভারেই লোকেশ রাহুলকে (৪) বোল্ড করে দেন নাসিম শাহ। দলের রান তখন ৭। চতুর্থ ওভারে অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে (৪) ইফতেখারের তালুবন্দি করে ভারতের বিপদ বাড়ান আরেক পেসার হারিস রউফ। এরপর আরো দুটি উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় ভারত। বিধ্বংসী মেজাজে শুরু করা সূর্যকুমার যাদবকে (১০ বলে ১৫) কিপারের গ্লাভসবন্দি করেন রউফ। এরপর অক্ষর প্যাটেল (২) রান আউট হলে ৩১ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে কাঁপতে থাকে ভারত।
বিরাট কোহলি খেলছিলেন ধীরগতিতে। ১২তম ওভারে মোহাম্মদ নওয়াজকে ছক্কা মেরে হাত খোলেন। তার সঙ্গী হার্দিকও ছিলেন মারমুখী। দুজনের জুটি দারুণ জমে ওঠে। কিন্তু রানের সঙ্গে বলের পার্থক্য বেড়েই যাছিল। শেষ তিন ওভারে দরকার হয় ৪৮ রানের। ৪৩ বলে ফিফটি পূরণ করেন কোহলি। শাহিন শাহ আফ্রিদির করা ১৮তম ওভারে ৩ চারে ১৬ রান তুলে নেন কোহলি। ১২ বলে প্রয়োজন হয় ৩১ রানের। ১৯তম ওভারের বোলার হারিস রউফ। প্রথম দুই বলে সিঙ্গেল, তৃতীয় বল ডট আর চতুর্থ বলে হয় সিঙ্গেল। শেষ দুই বলে ছক্কা হাঁকান কোহলি। শেষ ওভারে প্রয়োজন হয় ১৬ রান। সেই শেষ ওভার ছিল চরম নাটকীয়।
বোলার মোহাম্মদ নওয়াজ। প্রথম বলেই ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৩৭ বলে ৪০ রান করা হার্দিক। তৃতীয় বলে ছক্কা মারেন কোহলি। বলটি নো বল ডাকেন আম্পায়ার। যদিও বলটির উচ্চতা নিয়ে আপত্তি জানান পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা। ফ্রি হিটের বলটি হয় ওয়াইড। ৩ বলে দরকার ৫ রান। চতুর্থ বলে ৩ রান নিয়ে নেন কোহলি। ২ বলে চাই ২ রান। পঞ্চম বলে স্টাম্পড হয়ে যান দিনেশ কার্তিক (১)। শেষ বলে প্রয়োজন ২ রানের। আবারও ওয়াইড দিয়ে বসেন নওয়াজ। স্কোর সমান সমান। অবশেষে শেষ বলে সিঙ্গেল নিয়ে ভারতকে ৪ উইকেটে জিতিয়ে দেন নতুন ব্যাটার রবিচন্দ্রন অশ্বিন। কোহলি অপরাজিত থাকেন ৫৩ বলে ৬ চার এবং ৪ ছক্কায় ৮২* রানে।
আজ রবিবার মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৮ উইকেটে ১৫৯ রান তোলে পাকিস্তান। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই প্রথম আঘাত হানে অর্শদীপ সিং। লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে ‘গোল্ডেন ডাক’ মেরে ফেরেন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম। ফিরতি ওভারে এসে এই তরুণ পেসার তুলে নেন আরেক ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ানকে (৪)। বিপদে পড়া পাকিস্তানের হাল ধরেন শান মাসুদ আর ইফতেখার। তৃতীয় উইকেটে এই দুজন গড়েন ৫০ বলে ৭৬ রানের জুটি। ইফতেখার ৩২ বলে আর শান মাসুদ ৪০ বলে ফিফটি পূরণ করেন।
৫১ রানেই ইফতেখারকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে জুটি ভাঙেন মোহাম্মদ শামি। এরপর শাদাব খান (৫), হায়দার আলী (২) আর মোহাম্মদ নওয়াজকে (৯) পরপর দুই ওভারে তুলে নিয়ে পাকিস্তানকে আবার বিপদে ফেলেন হার্দিক পান্ডিয়া। আসিফ আলী ৩ বলে ২ রান করে অর্শদীপের তৃতীয় শিকার হন। শেষদিকে ৮ বলে ১৬ রানের ক্যামিও খেলেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। এতেই পাকিস্তানের স্কোর দেড় শ ছাড়ায়। ২০ ওভারে তাদের স্কোর দাঁড়ায় ৮ উইকেটে ১৫৯ রান। ৩২ রানে ৩ উইকেট নেন অর্শদীপ সিং। আর হার্দিক পান্ডিয়া নেন ৩০ রানে ৩ উইকেট। একটি করে উইকেট নিয়েছেন ভুবেনশ্বর কুমার ও মোহাম্মদ শামি।