০ সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিল সম্পন্ন ০ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত ০ স্মারকলিপি প্রদানের সিদ্ধান্ত
০ গ্লোবাল এ্যাফেয়ার্স কানাডার সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে – গ্লোবাল বাংলাদেশ হাইকমিশন অটোয়া
০ প্রভিন্সিয়াল গভর্নমেন্টের সাথে এ ব্যাপারে সর্বদা যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে – বাংলাদেশ কনস্যুলেট টরন্টো অফিস

সুহেল ইবনে ইসহাক, টরন্টো, কানাডা: টরন্টোর বাংলাদেশি অধ্যুষিত রিজেন্ট পার্ক এলাকায় গত ২রা ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার রাত আনুমানিক ১১:৩০টার সময় আততায়ীর গুলিতে তিন বাংলাদেশি আহত হন এবং এদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশংকাজনক। টরন্টো সেইন্ট মাইকেল হাসপাতালে আহতের শরীরে অস্ত্রোপচার চলছে। তাছাড়া, হাতে এবং পায়ে গুলিবিদ্ধ মোঃ আব্দুল মুমিন এবং সুলতান আহমদ চৌধুরীর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে, বর্তমানে সানি ব্রুক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। মোঃ আব্দুস ছত্তারের গায়ে কোনও গুলি লাগেনি বলে জানা যায়।

সি.টি.ভি. নিউজ পুলিশের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, রাত ১১:৪৩টার দিকে রিজেন্ট পার্ক বুলুবার্ড এবং ডান্ডাস স্ট্রিট ইস্টের নিকটে ওক স্ট্রিটের একটি পার্কিং লটে গুলির শব্দ শুনে টরন্টো পুলিশকে একটি সূত্র ফোন করে জানায়। সেই সূত্রে তারা কিছু বুলেটের দাগ সমেতসহ একটি সোনালী রঙের হোন্ডা অ্যাকর্ড খুঁজতে এসেছিল। ঘটনাস্থল অনুসন্ধানের ফলে তারা তিনজনকে আহত আহত অবস্থায় পেয়েছেন। তন্মধ্যে একজন এর দশকে প্রাণঘাতী আহত হয়েছিলেন। প্রত্যেককে দ্রুত হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। একটি পুলিশ কাইনাইন দল এবং অন্যান্য বেশ কয়েকটি ইউনিট এই অঞ্চলে ব্যাপক তল্লাশি চালিয়েছে তবে কোনও সন্দেহভাজনকে সনাক্ত করতে পারেনি। তদন্তকারী কর্মকর্তা সি.টি.ভি. নিউজকে জানিয়েছেন, তারা ঘটনাস্থল থেকে ভিডিও ফুটেজ পাশাপাশি কিছু সাক্ষী সংগ্রহ করেছেন। ২০১৪ সালের টয়োটা রেভ-৪ এসইউভি ধূসর গাড়ি চালাচ্ছিল এমন দুজন সন্দেহভাজনকে খুঁজছে পুলিশ। তথ্যসহ যে কাউকে ৪১৬-৮০৮-৫১০০ নম্বরে পুলিশে কল করতে বলা হয়।

স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গোলাপগঞ্জ ফাউন্ডেশন অব টরন্টো’র সহ-সভাপতি আনাই মিয়া, মারহাবা গ্রোসারির মোঃ আব্দুল মুমিন, সুলতান আহমদ চৌধুরী এবং মোঃ আব্দুস ছত্তার ডানডাস স্ট্রিট এবং রিজেন্ট পার্ক বুলুবার্ড সংলগ্ন টিমহর্টন কফি শপ থেকে কফি কিনে নিজেদের পার্ক করা গাড়িতে বসে গল্প করছিলেন। অকস্মাৎ দুইজন বন্দুকধারি তাদেরকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।

সিটিনিউজ.সিএ এর বরাতে জানা যায়, দুইজন বন্ধুকধারি গুলি করে দৌড়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে এবং পরবর্তিতে একটি ধুসর টয়োটা রেভ-৪ গাড়িতে করে পালিয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শিদের মতে দুস্কৃতিকারিদের মধ্যে একজন লম্বা ও হাল্কা শারীরিক গঠন। ঘটনার কারণ এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।

অটোয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন-এর হাইকমিশনার খলিলুর রহমান বাংলা কাগজের এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে জানান, টরন্টো ডাউন টাউনে তিনজন বাংলাদেশির উপর আততায়ীদের এই হামলার খবর শুনা মাত্রই তিনি টরন্টো কনস্যুলার অফিসে যোগাযোগ করেন। আনাই মিয়ার পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করেন। তিনি বলেন, আহতদের সকলের প্রয়োজনীয় তথ্যাদি তার অফিস সংগ্রহ করে গ্লুবাল এফেয়ার্স কানাডার সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাছাড়া প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে বিষয়টি উপযুক্ত তদন্ত সাপেক্ষে সুবিচার নিশ্চিত করতে তাগিদ দেয়া হচ্ছে। তিনি বিশ্বাস করেন, কানাডা পুলিশ প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তদন্ত করবে এবং অভিযুক্তদের অতি সত্ত¡র আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হবে। কানাডায় বসবাসরত সকল বাংলাদেশিদের কানাডার প্রচলিত নিয়মকানুন এবং করোনাকালীন স্থানীয় সকল বিধি নিষেধ মেনে জীবন যাপন করার আহ্বান জানান। বাংলা কাগজকে তিনি আরো জানান, বাংলাদেশিদের বিপদে-আপদে, রোগে-শোকে, বাংলাদেশ হাইকমিশন পাশে রয়েছে।

অটোয়াস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিসের কনস্যুলেট জেনারেল নাঈম উদ্দিন আহমেদ বাংলা কাগজকে জানান, সম্প্রতি রিজেন্ট পার্ক ও ডান্ডাস এলাকার ঘটনায় কানাডার “ল এন্ড ফোর্স” কে টরন্টো কনস্যুলেট-এর পক্ষ হতে আমরা জানিয়েছি। আহতদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। তিনি জানান, প্রভিন্সিয়াল গভর্নমেন্টের সাথে বাংলাদেশ কনস্যুলেট টরন্টো অফিস এ ব্যাপারে সর্বদা যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। টরন্টোতে বসবাসরত সকল বাংলাদেশিদের ‘অন্টারিও স্টে হোম অর্ডার’ মেনে চলে নিরাপদ থাকতে আহ্বান করেছেন। বাংলাদেশী কমিউনিটির জন্য যে কোন প্রয়োজনে বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিস সেবা প্রদানে প্রস্তুত রয়েছে।

বাংলাদেশ এসোসিয়েশন কানাডার প্রেসিডেন্ট জাকির হুসাইন বাংলা কাগজকে জানান, প্রায় ত্রিশ বছরে গড়ে উঠা বাংলাদেশী কমিউনিটিতে ইতোপূর্বে এহেন ঘটনা ঘটেনি। রিজেন্ট পার্কের এই ঘটনায় আমরা সবাই বিস্মিত, আতংকিত বলে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। উপযুক্ত তদন্তের মাধ্যমে সুষ্ঠু বিচার করার জন্য টরন্টো সিটির স্থানীয় কাউন্সিলর ও পুলিশ প্রশাসনের প্রতি তিনি জোর দাবি জানান। তিনি বলেন, সকলের সম্মলিত প্রচেষ্টায় মাধ্যমে এহেন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।

জালালাবাদ এসোসিয়েশন অফ টরন্টো কানাডার প্রেসিডেন্ট দেবব্রত দে তমালের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে সংযোগ না পাওয়ার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফয়জুল চৌধুরীর সাথে আলাপকালে তিনি বাংলা কাগজের এই প্রতিবেদককে জানান, টরন্টোর রিজেন্ট পার্কের গোলাগুলির ঘটনায় জালালাবাদবাসীসহ পুরো বাংলাদেশী কমিউনিটি হতবাক। তিনি বলেন, এ সব এলাকায় আমাদের জ্ঞাত ও অজ্ঞাতভাবে এরকম ঘটনা সময়ে সময়ে ঘটছে, কিন্তু আমাদের শান্ত ও নিরিবিলি বাংলাদেশি কমিউনিটির লোকজনের উপর এটাই প্রথম। আমাদেরকে আরো সচেতন হয়ে চলাফেরা করতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ফয়জুল চৌধুরী বলেন, জালালাবাদ এসোসিয়েশন হতে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে এতদসংশ্লিষ্ট বিষয়ে একটি স্মারকলিপি প্রদানের প্রস্তুতি চলছে।

গোলাপগঞ্জ ফাউন্ডেশন অফ টরন্টো কানাডার প্রেসিডেন্ট নেওয়াজ চৌধুরী সাজু বাংলা কাগজকে বলেন, টরন্টোর রিজেন্ট পার্কের গোলাগুলির ঘটনায় ব্যাগলি কমুইনিটি হতবাক। তিনি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান, টরন্টো পুলিশকে অতি সত্তর আসামিদের আইনের আওতায় আন্তে জোর দাবি জানান।

বৃহত্তর জনগুষ্ঠির সামাজিক সংগঠন বিয়ানীবাজার এসোসিয়েশ অফ টরন্টো কানাডার প্রেসিডেন্ট টুনু মিয়া উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলা কাগজকে জানান, রিজেন্ট পার্কের গুলাগুলির এই ঘটনায় সবাই নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে আতংকিত। প্রশাসনকে নিরাপত্তা বজায় কল্পে অতি সত্তর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য জোর দাবি জানান।

টরন্টো প্রবাসী বাংলাদেশের গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষীপাশা উইনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও গোলাপগঞ্জ ফাউন্ডেশন টরন্টো কানাডার প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক মিসবাহুল কাদির ফাহিম বাংলা কাগজকে জানান, রিজেন্ট পার্কের এই ঘটনা খুবই নিন্দনীয়, তিনি তদন্ত স্বাপেক্ষে দ্রুত বিচারের দাবি জানান।

এদিকে, উক্ত ঘটনায় আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে গোলাপগঞ্জ ফাউন্ডেশন অফ টরন্টো, অন্টারিও এর উদ্যোগে এক ভার্চুয়াল দোয়া ও আলোচনার আয়োজন করা হয় গত ৪ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রাত ৮ ঘটিকার সময়। দোয়া উত্তর আলোচনা সভায় বক্তারা এই অমানবিক ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং অবিলম্বে দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।

ফাউন্ডেশনের সভাপতি নওয়াজ চৌধুরী সাজুর সভাপতিত্বে ও সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছাবির আহমদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় অন্যান্যদের মধ্যে আলোচনা করেন এম.পি.পি. ডলি বেগম। দোয়া পরিচালনা করেন রিজেন্ট পার্কের মসজিদ-আর-রাহামার ইমাম মুফতি মুহিবুল্লাহ ফরায়েজী।

সভার পরিশেষে সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রশাসন বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান ও গুলিবিদ্ধ তিনজনের পরিবারের যেকোন প্রয়োজনে গোলাপগঞ্জ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করা হয়।