অনলাইন ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘রিজার্ভের অর্থ দেশের উন্নয়ন, আমদানি ও জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করা হচ্ছে।’
নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন পায়রা সমুদ্রবন্দরে বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারেন রিজার্ভের টাকা গেল কোথায়, যারা এই প্রশ্নটা করেন তাদের বলছি রিজার্ভের টাকা গেল পায়রা বন্দরে। রিজার্ভের টাকা গেছে দেশের জনগণের জন্য খাদ্য কেনায়, সার কেনায়। রিজার্ভের টাকা জনগণের কল্যাণে এবং আমদানিতে ব্যয় হয়েছে। কেউ এই অর্থ আত্মসাৎ বা অপব্যবহার করেনি।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘এ টাকা কেউ চিবিয়ে খায়নি। মানুষের কাজেই লাগছে, কাজেই ব্যবহার করা হচ্ছে। আমাদের আমদানিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা কাজে লাগাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার সকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকা পটুয়াখালী জেলার পায়রায় যুক্ত হয়ে ভার্চুয়ালি ১১ হাজার ৭২ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে, পায়রা সমুদ্র বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলে ক্যাপিটাল ড্রেজিংসহ আটটি জাহাজের উদ্বোধন, প্রথম টার্মিনাল ও ছয় লেনের সংযোগ সড়ক এবং একটি সেতু নির্মাণ।
এই উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বন্দরটিকে তার পূর্ণ সক্ষমতায় কাজ করতে সক্ষম হবে এবং দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে নতুন মাত্রা যোগ করবে, যার সুফল জাতি যুগ যুগ ধরে ভোগ করবে।
সরকারপ্রধান বলেন, সামান্য সার্ভিস চার্জে এই টাকা আসলে বন্দর কর্তৃপক্ষকে ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে এবং ঘরের টাকা ঘরেই থাকছে, কেবলমাত্র এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর হয়েছে।
নৌ-রুট উন্নয়নের জন্য গৃহীত প্রকল্পগুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের গৃহীত পদক্ষেপগুলো সম্পন্ন হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও প্রাণবন্ত, শক্তিশালী ও উন্নত হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পায়রা বন্দর নামটি তারই দেওয়া এবং তার সরকার এখানে একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ শুরু করেছে এবং এই বন্দরে কয়লার জাহাজ আনয়নের মাধ্যমেই বন্দরের জাহাজ চলাচল শুরু হয়।
তার বহুদিনের ইচ্ছা ছিল নিজস্ব অর্থায়নে এটি করবেন কারণ বিদেশি অর্থে অনেক ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে কারণে বাংলাদেশের রিজার্ভের টাকা দিয়েই তিনি একটি ফান্ড তৈরি করেন। যার নামও তিনি নিজেই রাখেন ‘বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফান্ড’ (বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল) এবং সেই ফান্ডের টাকা দিয়েই বন্দরের ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হয়। যাতে আমাদের রিজার্ভের টাকা আমাদের অবকঠামো উন্নয়নের কাজে ব্যয় করা সম্ভব হয়। সেজন্যই এই পদক্ষেপ বলেও তিনি জানান।
প্রত্যেক বন্দরের নাব্যতা রক্ষায় তার সরকার বন্দরগুলোতে নিজস্ব ড্রেজারের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতি বছরই মেইনটেইনেন্স ড্রেজিং আমাদের করে যেতে হবে।
তার সরকার এই নদি ডেজিং করে এই নৌপথটাকে উত্তর বঙ্গ পর্যন্ত নিয়ে যেতে চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাশাপাশি আসাম এবং ভূটান পর্যন্তও এই নৌপথ চালু হতে পারবে। সরকার ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম এবং মোংলা বন্দর নেপাল, ভূটান এবং ভারতকে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। একপাশে মোহনা এবং এক পাশে চট্টগ্রাম বন্দর থাকায় এই পায়রা বন্দরও এক সময় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামাল এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহাইল অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর ওপর অনুষ্ঠানে একটি প্রামণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানে পায়রা বন্দর প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এই বন্দরটাকেই এক সময় আমাদের গভীর সমুদ্র বন্দরে উন্নীত করতে পারব, ইনশাআল্লাহ। ইতোমধ্যে মাতারবাড়ি ও মহেশখালিতে যে বন্দর আছে সেটাও গভীর সমুদ্র বন্দরেই রূপান্তর হয়েছে। পাশাপাশি পায়রা বন্দরকেও ভবিষ্যতে আমরা সেভাবে উন্নত করতে পারব। সেই বিশ্বাস আমার আছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আজকে সত্যিই খুব আনন্দিত। আমাদের রিজার্ভের টাকা দিয়ে তৈরি করা ফান্ড, সেই ফান্ডের টাকা দিয়েই আমরা এই কাজ আজকে শুরু করতে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে এই বন্দরে ২৬০টি বৈদেশিক বাণিজ্যিক জাহাজ আগমন করেছে এবং এর মাধ্যমে দেশের প্রায় ৬১৩ কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব আয় হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়ে বলেন, ‘আমি মনে করি এটা কিন্তু প্রতি বছরই ড্রেজিং করতে হবে। ইতোমধ্যে রেল যোগাযোগ যাতে হয় সেই সমীক্ষাও চলছে। ভবিষ্যতে আমাদের পরিকল্পনাই আছে যে, একেবারে ঢাকার সঙ্গে পায়রা বন্দর পর্যন্ত আমরা রেল যোগাযোগও চালু করব।’
সরকারপ্রধান নৌপথে যাতায়াতকে তার সরকার সবসময় গুরুত্ব দেয় উল্লেখ করে পায়রা বন্দর থেকে সমগ্র বাংলাদেশে নৌপথে যোগাযোগ করা যাবে বলেও জানান
নদীমাতৃক বাংলাদেশে এখন সড়কপথ, রেলপথ, নৌপথ ও বিমানপথে যোগাযোগ সমন্বিতভাবে হচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, পায়রা বন্দর এলাকায় নৌবাহিনীর ঘাঁটি তৈরি হয়েছে। সেনাবাহিনীর জন্য সেনা ছাউনি করা হয়েছে এবং বিমানবাহিনীর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ শুধু সড়কেই নয়, বরং সব পথেই করা যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।