অনলাইন ডেস্ক : মস্কো ইউক্রেনের সমস্ত ভূখণ্ড থেকে সেনা প্রত্যাহার করলে আগামীকালই কিয়েভ রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসবে। ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি রবিবার এ কথা বলেছেন।

সুইজারল্যান্ডে শান্তির জন্য আয়োজিত শীর্ষ সম্মেলনের সমাপ্তিতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জেলেনস্কি আরো বলেন, তবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুদ্ধ শেষ করবেন না। তাই সামরিক বা কূটনৈতিক হোক, যেকোনো উপায়ে এটি বন্ধ করতে হবে।

এ ছাড়া যুদ্ধ জয়ের জন্য পশ্চিমা সহায়তা যথেষ্ট ছিল না বলেও উল্লেখ করেন জেলেনস্কি। তবে তার মতে, এই শীর্ষ সম্মেলন প্রমাণ করে, ইউক্রেনের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন দুর্বল হচ্ছে না।

কয়েক ডজন দেশ ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বৈঠকটি শেষ করেছে। পাশাপাশি এদিন একটি চূড়ান্ত ঘোষণা গৃহীত হয়েছে, যেখানে রাশিয়াকে দৃঢ়ভাবে যুদ্ধের ব্যাপক দুর্ভোগ ও ধ্বংসের জন্য দায়ী করা হয়েছে।

তবে ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, সৌদি আরবসহ বেশ কয়েকটি দেশ এতে স্বাক্ষর করেনি।
ইউক্রেনের যুদ্ধের অবসান ঘটাতে সাহায্য করতে পারে—এমন একটি প্রক্রিয়ার জন্য সম্ভাব্য সর্বোত্তম সমর্থন তৈরি করা এই শীর্ষ সম্মেলনের লক্ষ্য ছিল। ৯০টিরও বেশি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা এতে অংশ নিয়েছে। তবে রাশিয়াকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি এবং তাদের সবচেয়ে বড় সমর্থক চীনও উপস্থিত ছিল না।

এতে কেউ কেউ শীর্ষ সম্মেলনের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে।
চূড়ান্ত ঘোষণায় জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওপর ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করার আহ্বান জানানো হয়েছে, যা বর্তমানে রাশিয়ার দখলে রয়েছে। পাশাপাশি ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণকে ‘যুদ্ধ’ হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছে। তবে মস্কো তাদের এই কার্যক্রমকে যুদ্ধ হিসেবে স্বীকার করে না।

এ ছাড়া সব বন্দিদের বিনিময় ও রাশিয়া কর্তৃক অপহৃত শিশুদের ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে চূড়ান্ত ঘোষণায়।

শীর্ষ সম্মেলনের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় জেলেনস্কি উপস্থিত বিশ্বনেতাদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘এই শীর্ষ সম্মেলন বলছে, আন্তর্জাতিক সমর্থন (ইউক্রেনের জন্য) দুর্বল হচ্ছে না।’

জেলেনস্কিকে জিজ্ঞেস করা হয়, যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের দুর্বল অবস্থান তাকে কূটনৈতিক পদক্ষেপগুলো বিবেচনা করতে বাধ্য করেছে কি না? তিনি উত্তর দেন, এটি এমন নয় এবং ইউক্রেন সব সময় শান্তির কথা বলে। আলোচনায় মস্কোর উপস্থিতি শান্তির জন্য তাদের ইচ্ছুকতা প্রদর্শন করবে।

ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘রাশিয়া আগামীকাল আলোচনা শুরু করতে পারে, যদি তারা আমাদের অঞ্চল থেকে সরে যায়।’

চীন ইউক্রেনের শত্রু নয় মন্তব্য করে জেলেনস্কি আরো বলেন, ‘আমরা চীন ও তাদের আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করি। আমরা চাই চীন আমাদের জন্যও একই কাজ করুক।’ সেই সঙ্গে তিনি বেইজিংকে শান্তি প্রস্তাবের উন্নয়নে গুরুত্ব সহকারে জড়িত হওয়ার আহ্বান জানান।

আশা করা হয়েছিল, সব প্রতিনিধিদল রাশিয়ার আক্রমণের নিন্দা করে একটি চূড়ান্ত ঘোষণা সমর্থন করবে। কিন্তু অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর কার্ল নেহামার রবিবার সাংবাদিকদের বলেন, ঘোষণাটি সর্বসম্মতভাবে সমর্থন করা হবে না।

এর আগে জেলেনস্কি শনিবার বলেছিলেন, সুইস সম্মেলনের ফলাফল মস্কোকে জানানো হবে, ‘যাতে দ্বিতীয় শান্তি সম্মেলনে আমরা যুদ্ধের আসল সমাপ্তি ঠিক করতে পারি’। রাশিয়া অবশ্য সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনকে সময়ের অপচয় হিসেবে বর্ণনা করেছে। সেই সঙ্গে পুতিন শুক্রবার বলেছেন, ইউক্রেন চারটি অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করলে তিনি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হবেন, যে অঞ্চলগুলো রাশিয়া আংশিকভাবে দখল ও সংযুক্ত করার দাবি করে। কিন্তু এক দিন পরই শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানকারী পশ্চিমা নেতারা পুতিনের এ প্রস্তাব দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেন।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি পুতিনের প্রস্তাবকে ‘প্রপাগান্ডা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক পুতিনের বিরুদ্ধে ‘আলোচনা করার ইচ্ছার বিষয়ে একটি বানোয়াট কথা বলার’ অভিযোগ করেছেন।

পরে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ রবিবার বলেন, রুশ নেতা ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনার বিষয়টি অস্বীকার করেননি। তবে বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিতের জন্য নিশ্চয়তার প্রয়োজন হবে এবং জেলেনস্কি অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।

সূত্র : বিবিসি