মুহাম্মদ তানিম নওশাদ : সারসংক্ষেপ: শত শত বছর ধরে ভারতবর্ষে রাধা ও কৃষ্ণের প্রেম কাহিনী বৈষ্ণব ধর্ম ও সাহিত্যের অন্যতম প্রধান উপজীব্য। কিন্তু কৃষ্ণের দয়িতা রাধার প্রেমকে কেন্দ্র করে যে ভাবরসের সৃষ্টি হয়েছে, তার আবেদন বৈষ্ণব সাহিত্যের আঙিনা ছাড়িয়ে সমগ্র ভারতের সামগ্রিক সাহিত্য ভান্ডারেই পড়েছে। ধর্মীয় বলয়ে ধর্মবেত্তাদের মনে যেমনি, সাহিত্যাঙ্গনে ও আধ্যাত্মিক বলয়ে বৈষ্ণবশাস্ত্রীদের মনে তেমনি, আবার নৃবিজ্ঞানের ও ইতিহাসের পাঠকদের মনেও স্বভাবতই এই প্রশ্ন উদিত হয়েছে, কে এই রাধা? তিনি কি সাহিত্যের উপজীব্য মাত্র? তাহলে বৈষ্ণব ধর্মে তার এই চূড়ান্ত অধিষ্ঠানের পেছনের কারণ কি? পুরাণোক্ত রাধার কি কোন ঐতিহাসিক অস্তিত্ব রয়েছে? কৃষ্ণের সাথে রাধা যুক্ত হলেন কিভাবে? রাধা কি শুধুই কৃষ্ণের দয়িতা, নাকি তিনি আরো বেশি কিছু? এই প্রবন্ধে লেখক এই প্রশ্নগুলোর উত্তর বিস্তৃত আকারে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আর ধর্মীয় অঙ্গন থেকে রাধা সাহিত্যে প্রবেশ করেছেন, নাকি তার ঐতিহাসিক অস্তিত্ব ছিলো ও পরে তিনি ধর্মীয় পরিসরে প্রবেশ করেছেন – সে বিষয়ে লিখতে গিয়ে কিছু যৌক্তিক অনুমানের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। রাধা বৈষ্ণব শাস্ত্রের আঙিনা পেরিয়ে তান্ত্রিক ও শাক্তদেরও আরাধ্যাতে পরিণত হয়েছেন। সেখানে তার রুপ কিরকম? লেখক সেই ধারণা দেয়ারও চেষ্টা করেছেন এই প্রবন্ধে। আর এই প্রবন্ধে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার মধ্য দিয়ে লেখক মূলতঃ রাধাকে একটি সামগ্রিক অবস্থান থেকে পাঠ করার চেষ্টা করেছেন। রাধা যেখানে সেখানে প্রাসঙ্গিকভাবেই তার দয়িত বা প্রেমিক কৃষ্ণের প্রসঙ্গও উঠে আসবে। এখানেও তাই হয়েছে। রাধার ঐতিহাসিকতা বিচার করতে যেয়ে লেখক প্রাসঙ্গিকভাবে কৃষ্ণের ঐতিহাসিকতা নির্ণয় করতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অনুমান এই প্রবন্ধে হাজির করার চেষ্টা করেছেন; বিশেষতঃ গোপ সম্প্রদায়ের মধ্যে বেড়ে উঠা কৃষ্ণ কি অন্ত্যজ শ্রেণীর প্রতিনিধি আকারে সমাজে প্রথম হাজির হয়েছিলেন? লেখক সেই প্রশ্নের উত্তরও এখানে পেশ করেছেন তার প্রাসঙ্গিক অনুমানের জায়গা থেকে।
ব্রহ্মের পরমকলা যে পদ্মিনী তা থেকে কোটি কোটি ব্রহ্মান্ড উৎপন্ন হয়। এবং তার প্রসাদগুণেই রুদ্র, বিষ্ণু ও ব্রহ্মা সংহার, পালন ও সৃষ্টি কার্য্যে নিয়ত আছেন। পদ্মিনীর দেহকান্তিই প্রকৃতি এবং তার কোটি কোটি অংশ কোটি কোটি চন্দ্রমা। (রাধাতন্ত্রম, দেব্যুবাচ: ১২-১৪)১
১.
আমরা যারা হিন্দু বা সনাতন ধর্ম সম্পর্কে কিছু জানতে চাই তারা অবগত যে, কংসের অত্যাচারে ও অনাচারে যখন পৃথিবীর অবস্থা করুণ, তখন বৈকুন্ঠধামবাসী বিষ্ণু কৃষ্ণ নাম নিয়ে কংসের আপন ভগ্নীর পুত্র রুপেই ধরাধামে অবতরণ করলেন অর্থাৎ কংস বধের অভিপ্রায়ে তিনি অবতারত্ব গ্রহণ করলেন এবং নিজের মৃত্যুর বিষয়ে কংস যেহেতু গণক ও ধর্মীয় পন্ডিতদের মাধ্যমে আগে থেকেই জ্ঞাত ছিলো, সে তাই নিজের মৃত্যু ঠেকাতে একের পর এক তার বোনের সদ্যজাত সন্তানদেরকে হত্যা শুরু করলো। কৃষ্ণ ছিলেন তার পিতা-মাতা অর্থাৎ, বসুদেব ও দেবকীর অষ্টম সন্তান, যিনি ছিলেন একমাত্র পুত্র সন্তান এবং বিষ্ণুর অবতার, সেই কৃষ্ণ অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে যান এবং গোকুলে পালক পিতা-মাতা নন্দগোপ ও যশোধার গৃহে প্রতিপালিত হন। এই গোকুলেই তার সাক্ষাৎ হয় তার ভবিষ্যৎ প্রেয়সী গোপকন্যা শ্রীরাধিকার সাথে, যাকে বৈষ্ণবকুল বিশেষতঃ বঙ্গে সবাই রাধারাণী নামেই ডাকতে বিশেষ ভালোবাসে। এহলো রাধাকে জানবার প্রথম পাঠ। কিন্তু বৈষ্ণব শাস্ত্রে রাধার ব্যাখ্যা আরো ব্যাপক। তিনি ব্রহ্মের পরম প্রকৃতি। তিনিই জগজ্জননী ও সৃষ্টির আদি কারণ, অর্থাৎ জগৎকারণ। তবে তিনি আদিতে কিভাবে এই জগজ্জননী এবং কৃষ্ণের সমবায়িনী শক্তি অর্থাৎ কৃষ্ণের সামগ্রিক সৃষ্টিশক্তির মূলপ্রবাহ হয়ে উঠলেন তার ব্যাখ্যা প্রথমে আমরা যে জায়গাগুলো থেকে আলোচনা করবো, সেগুলো করবো বৈষ্ণব ও গৌড়ীয় বৈষ্ণবশাস্ত্রের ধারামতে, শাক্ত ও তান্ত্রিকদের চিন্তার আলোকে এবং রামকৃষ্ণ মিশনের প্রাজ্ঞজনদের চিন্তানুসারে। শশীভূষণ দাশগুপ্তের ব্যাখ্যার জায়গা থেকেও আমরা রাধাকে কিছুটা বুঝবার চেষ্টা করবো। কারণ রাধাপাঠকে বিশেষতঃ বঙ্গাঞ্চলে একাডেমিক ডিসকোর্স আকারে হাজির করার পেছনে তার অবদান অনস্বীকার্য । তবে শুরুতেই বলে নেয়া ভালো যে, রাধাকে বৃহৎব্যাপ্তীতে বোঝার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধারাগুলোর মধ্যে মিলও আছে; যেমন: ধর্মীয় ব্যাখ্যার জায়গা থেকে রাধার উপস্থাপনে প্রায়শই শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যাগুলো প্রায় সমাšতরাল। কারণ এই ব্যাখ্যাগুলোর জন্য ধর্মীয় নানান ধারা ও উপধারাসমূহ অনেক ক্ষেত্রেই একই উৎসসমূহ ব্যবহার করেছে।
২.
হিন্দু বা সনাতন ধর্মের সব ধারাগুলোই এই বিষয়ে একমত যে, হিন্দু ধর্মের যে ত্রিত্ববাদ (Hindu Trinity) তিন প্রধান দেবতাকে নিয়ে গড়ে উঠেছে, অর্থাৎ জগতের সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা, পালন কর্তা বিষ্ণু এবং তার সংহারক শিব -এদের প্রত্যেকের নারী সমবায়িনী শক্তি রয়েছে; যেমন: ব্রহ্মার জন্য সরস্বতী ও বিষ্ণুর জন্য লক্ষী। তবে শিবের জন্য এই সমবায়িনী শক্তি কখনো উমা, কখনো শ্যামা, কখনো গৌরী, কখনো সতী, কখনো ভৈরবী, কখনো কালী, কখনো দুর্গা, কখনো চন্ডী ইত্যাদি। অবশ্য বিজ্ঞজনদের এবং শাস্ত্রীয় পন্ডিতদের মত – এ একই শক্তির বিবিধ রুপভেদ মাত্র। এই সমবায়িনী শক্তি হিন্দু শাস্ত্রে বর্ণিত “শক্তিতত্তে¡র” মূল আধার। তবে বলে রাখা ভালো যে, এই নারী শক্তি যাকে হিন্দুশাস্ত্র বলছে প্রকৃতি, তা মূলতঃ দু’টি রুপে হিন্দু আখ্যানগুলোতে চিত্রিত হয়েছে এবং শাস্ত্রীয় বচনে বিবৃত হয়েছে; যথা: অসুর বিনাশিনী শক্তি ও হ্লাদিনী শক্তি। উদাহরণ স্বরুপ বলা যায়, শ্যামা, কালী, দুর্গা, ভৈরবী, চন্ডী – এরা অসুর বিনাশিনী; অর্থাৎ অসুর, পিশাচ, রাক্ষস এবং দানবদের বধের নিমিত্তে তাদের আগমন ঘটেছে। যেমন: আমরা দেবী দুর্গার হাতে মহিষাসুর বধের কাহিনী জানি; যেকারণে তার আরেক নাম মহিষমর্দিনী। এ আখ্যানটি শ্রীশ্রীচন্ডীর অংশ, আর মূলতঃ এটি মার্কেন্ডেয় পুরাণের অন্তর্গত। অন্যদিকে মহাকালী রুপে তিনি বধ করেছেন মধু, কৈটভ, শুম্ভ, নিশুম্ভ, তারকাসুর, ভস্মাসুর, অরুণাসুর, নরকাসুর, ভীমাসুর, রক্তবীজ, ধূ¤্রলোচন, মেঘলোচন, সুগ্রীব, দুর্গমাসুর, শুম্ভ ও নিশুম্ভের অধঃস্থন চন্ড ও মুন্ডসহ আরো বহু অসুরকে, যে কাহিনীগুলো সমগ্র ভারত জুড়েই নানা লোকগাঁথা, আখ্যান, লোকায়ত চিন্তা, নাটক এবং পুরাণাদিতে ব্যাপ্ত রয়েছে। সেই অসুর বধের নিমিত্তে একই দেবী বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নামে পরিচিত হয়েছেন। একই কাহিনী অনেক সময় বহু উৎস থেকে বর্ণিত হয়েছে, ফলে আখ্যানগুলোতে কাহিনীর নানাবিধ চিত্রায়ণ ঘটেছে। তাতে অবশ্য মূল কাহিনীর কোন পরিবর্তন হয়নি। আর বহু বর্ণিল আকারে তার উপস্থাপন মানসলোকে বহু ব্যাঞ্জনাময় বয়ানের দ্বার অবারিত করেছে। যেমন: মধু-কৈটভের বধ। কোন কোন পুরাণমতে এই প্রবল পরাক্রান্ত দুই অসুরের মৃত্যু হয়েছে দেবী মহামায়া, অর্থাৎ দেবী চন্ডী বা কালীর হাতে, যারা দেবী গৌরী, পার্বতী বা দুর্গারই রুপভেদ। কিন্তু শ্রীশ্রীচন্ডীতে আমরা বিষ্ণুকেই তাদের সংহারক রুপে পাই। সেখানে যোগনিদ্রায় শায়িত বিষ্ণুর কর্ণমল (earwax বা cerumen) থেকে মধু ও কৈটভ নামের দুই মহাশক্তিশালী অসুরের আগমন ঘটলে তারা সৃষ্টির প্রধান কারণ প্রজাপতি ব্রহ্মাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়। ব্রহ্মা তখন জগজ্জননী ভগবতী মহামায়া বা মহাদেবী দুর্গার দ্বারস্থ হন। এখানে আমরা জানতে পারি যে, ভগবতী দুর্গা শুধু শিবের সমবায়িনী শক্তি নন, তিনি সমগ্র দেবশক্তি তথা শুভশক্তির কেন্দ্র এবং জগতের সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়ের মূল চালিকা শক্তি। শ্রীশ্রীচন্ডীতে আমরা পাই, তার স্তবগান করতে যেয়ে ব্রহ্মা এক জায়গায় বলছেন,
“যেই ভগবান এই জগতের সৃষ্টি, স্থিতি ও পালন করেন, সেই ভগবানকেও যখন তুমি নিদ্রাবিষ্ট করে রেখেছে, তখন কে তোমার স্তব করতে সমর্থ? আমাকে, ভগবান বিষ্ণুকে ও ভগবান রুদ্রকেও২ তুমিই শরীর গ্রহণ করিয়েছ; কাজেই তোমার স্তুতি করার মত শক্তি কার আছে?”৩
এরপর তিনি দেবীকে বিষ্ণু দেবকে অসুর সংহারের কারণে জাগ্রত করতে অনুরোধ করলে দেবী বিষ্ণুকে যোগনিদ্রা থেকে জাগালেন এবং অসুরদ্বয়কে মোহাচ্ছন্য করে রাখলেন। বিষ্ণু পাঁচ হাজার বছর অসুরদ্বয়ের সাথে যুদ্ধ করলেন। বিষ্ণুর যুদ্ধকৌশলের নিপুণতায় অসুরদ্বয় প্রীত হয়ে তারা তাকে বর দিতে চাইলে বিষ্ণু তাদের তার হাতে বধ্য হওয়ার বর চাইলেন এবং তাদের বধ করলেন৪; অর্থাৎ অসুর বিনাশে দেবী সরাসরি অংশগ্রহণ না করলেও তার পরোক্ষ ভূমিকা ছিলো। আবার ভাগবৎ পুরাণে আমরা পাই যে, বিষ্ণুর কর্ণমল থেকে সৃষ্ট মধু ও কৈটভ নামের দুই মহাশক্তিশালী অসুর ব্রহ্মার কাছ থেকে বেদ লুন্ঠন করে মহাসমুদ্রে আত্মগোপণ করে। বিষ্ণু তখন অশ্বমুখ অবতার বা অশ্বাবতার ‘হয়গ্রীবে’র আদলে বেদ উদ্ধার করেন এবং অসুরদ্বয়কে বধ করেন। আবার ‘দেবী মাহাত্ম্যের’ পঞ্চম অধ্যায়ে আমরা পাই, শুম্ভ ও নিশুম্ভ নামক দুই মহাপরাক্রমশালী অসুরভ্রাতা স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল এই ত্রিলোক জয় করে দেবতাদের নিজেদের অধীন¯ত করে এবং ত্রিলোকের সম¯ত নিয়ম-কানুনের বিনাশের কারণ হয়ে উঠে। আর তা তারা করতে সমর্থ্য হয় তপস্যার দ্বারা ব্রহ্মাকে তুষ্ট করে, যেখানে তারা এই বর চেয়েছিলো যে, তারা হবে মানব ও দানবদের সামনে অপরাজেয়, কাজেই তাদের অবধ্য। কিন্তু তারা ভ্রমবশতঃ দেবতাদের বা দেবীদের কথা বলেননি। ফলে দেবী পার্বতী তাদের বধ করতে চাইলে তারা প্রথমে তাদের দুই অধঃস্থন অসুর চন্ড ও মুন্ডকে প্রেরণ করে। তারা দেবীর রুপে মুগ্ধ হয়ে সে বিষয়ে শুম্ভকে অবহিত করলে শুম্ভ দেবীকে অধিকার করতে আগ্রহী হয়। সে দানব সুগ্রীবকে (Sugriva) প্রেরণ করে দেবীকে প্রণয় নিবেদন করতে, যদিও দেবী তাকে সরাসরি প্রত্যাখান করেন। এবার দেবীকে হরণ করতে অসুর ধূম্রলোচনের নেতৃত্বে ষাট হাজার অসুর প্রেরণ করা হয়। দেবী পার্বতী মহাকালীর রুপ ধারণ করে প্রথমে চন্ড ও মুন্ডকে বিনাশ করেন; ফলে গ্রহণ করেন চামুন্ডা উপাধি। একই কারণে তাকে চামুন্ডী, চামুন্ডেশ্বরী, চর্চিকা, রক্তান্দিকা ইত্যাদি উপাধিতেও ভূষিত করা হয়েছে। এরপর দেবী সমগ্র অসুরবাহিনীকে বিনাশ করেন। ফলে শুম্ভ ও নিশুম্ভ নিজেরাই এবার দেবীর মুখোমুখি হন। নিশুম্ভকে বধ করে দেবীর সিংহ। তার মৃতদেহ থেকে এক ভয়ানক দানব আবির্ভূত হলে দেবী তার বিনাশ ঘটান। এরপর দেবী তার ত্রিশুল দিয়ে শুম্ভকে বধ করেন। যাহোক হিন্দুশাস্ত্রের বক্তব্য হচ্ছে, আমরা এইযে দেবীকে পাই, তিনি শুধু পুরাণোক্ত দেবী নন, তিনি বেদে বর্ণিত মহাদেবীও একাধারে। ঋকবেদের দেবীসূক্তে দেবী ভক্তকে বলছেন,
“আমার দ্বারাই লোকসকল বেঁচে আছে, অন্ন গ্রহণ ও শ্রবণাদি করছে। আমাকে যে অবহেলা করে সে বিনষ্ট হয়। তুমি শ্রদ্ধাবান, সেকারণে আমি তোমাকে এসব বলছি। ব্রহ্মশক্তির প্রতি হিংসাত্মক অসুরদের বধের অভিপ্রায়ে ধনুর্ধর রুদ্রের বাহুতে আমিই শক্তিরুপে অবস্থিতা ছিলাম। আমিই লোকরক্ষার জন্য যুদ্ধকার্যে নিযুক্তা হই। আমিই আকাশ এবং পৃথিবীর মধ্যে প্রবিষ্টা হয়ে রয়েছি।”৫
দেবী এখানে আরো বলছেন, আমিই সমগ্র জগতের রাজ্ঞী, আমার উপাসকেরাই বিভূতিসম্পন্ন হয়; আমিই ব্রহ্মা এবং ব্রহ্মজ্ঞানসম্পন্না, সকল যজ্ঞে আমারই প্রথম পূজাধিকার; দর্শন, শ্রবন, অন্নগ্রহণ ও শ্বাসপ্রশ্বাসাদি প্রাণিজগতের সমগ্র ব্যাপার আমার শক্তিতেই সম্পন্ন হয়; সংসারে যেকোন ব্যক্তি শুদ্ধভাবে আমার উপাসনা না করে আমার অবজ্ঞা করে, সে দিন দিন ক্ষীণ ও কালে বিনষ্ট হয়; হে সখা, যা বলছি তা অবহিত হয়ে শ্রবণ করো – শ্রদ্ধার দ্বারা যে ব্রহ্মবস্তুর সন্দর্শন লাভ হয়, আমিই তা;আমার কৃপাতেই লোক শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করে: আমার কৃপাকটাক্ষেই পুরুষ – ¯্রষ্টা, ঋষি এবং সূক্ষ¥বুদ্ধিসম্পন্ন হয়।৬
যেকারণে এই দেবীশক্তিকে পূজা করতে এবং তাকে আবাহন করতে ¯তব করা হয়,
যা দেবী৭ সর্বভূতেষু শক্তিরুপেণ সংস্থিতা।
নম¯তস্যৈ নম¯তস্যৈ নম¯তস্যৈ নমো নমঃ\
অর্থাৎ, যে দেবী সর্বভূতে শক্তিরুপে বিরাজমান,
তাকে প্রণাম, তাকে প্রণাম, তাকে প্রণাম, তাকে নমস্কার, নমস্কার\
আর দেবীর আরাধনাকারীরা এই দেবীকে মাতৃশক্তি রুপে, অর্থাৎ জগজ্জননী রুপে ভজনা করেন। ফলে এইক্ষেত্রে তারা তাকে এইভাবেও আবাহন করেন, তার প্রতি প্রণতি নিবেদন করেন,
যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরুপেণ সংস্থিতা।
নম¯তস্যৈ নম¯তস্যৈ নম¯তস্যৈ নমো নমঃ\
অর্থাৎ, যে দেবী সর্বভূতে মা রুপে বিরাজমান,
তাকে প্রণাম, তাকে প্রণাম, তাকে প্রণাম, তাকে নমস্কার, নমস্কার\
এই সকল দেবী যে একজনই তার আরেকটি প্রমাণ হচ্ছে পদ্মপুরাণের সৃষ্টিখন্ড। যেখানে বিষ্ণু সাবিত্রী দেবীকে পরম ভক্তিসহকারে ¯তব করে বলছেন, ‘তুমি সর্বগা, সর্বভূতে দ্রষ্টব্যা, সর্বরকমে অদ্ভুতা; সৎ-অসৎ যাহা কিছু দৃশ্য তোমা বিনা কিছুই নয়। তথাপি যে-সকল স্থানে সিদ্ধিকামী ব্যক্তিগণ-কর্তৃক (চলবে)