অনলাইন ডেস্ক : পরীক্ষামূলক লকডাউন শেষ হলেও পুরোপুরি করোনামুক্ত না হওয়ায় রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারে বেশ কিছু বিধিনিষেধ বহাল রাখা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো যানবাহন ও মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ। এ কারণে এলাকার আটটি প্রবেশপথের ছয়টি বন্ধ রেখে খুলে দেওয়া হয়েছে মাত্র দুটি। আর একটি পথের একাংশ হেঁটে চলাচলের জন্য খুলে রাখা হয়, যাকে বলা হচ্ছে সার্ভিস গেট। ইন্দিরা রোড সংলগ্ন এই অস্থায়ী গেটটি পরপর দুই রাতে ভেঙে ফেলেছেন এলাকার কিছু মানুষ। স্বেচ্ছাসেবীরা বলছেন, লকডাউনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় এখন আর কেউ কোনো নির্দেশনা মানতে চাইছেন না। শুধু জরুরি নিত্যপণ্যের দোকান খোলার কথা থাকলেও সব দোকানপাটই খুলছে। আবার সন্ধ্যায় দোকান বন্ধ করার আহ্বান জানালে রীতিমতো মারমুখী হয়ে উঠছেন ব্যবসায়ীরা।
স্বেচ্ছাসেবীদের সমন্বয়ক ও স্থানীয় কাউন্সিলরের একান্ত সচিব মাসুদ হোসেন সুমন বলেন, লকডাউন শেষ হলেও এই এলাকাকে গ্রিন জোন ঘোষণা করা হয়নি। বরং কিছু নজরদারি ও চলাচল নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্নিষ্টরা। কাউন্সিলরের নির্দেশে মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কাজ করছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। তবে কিছু মানুষ আগে থেকেই অসহযোগিতা করছেন। তাদেরই কারও নির্দেশে গেট ভেঙে ফেলা হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে দোষীদের শনাক্ত করে উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরই মধ্যে জড়িতদের ব্যাপারে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে।
তিনি জানান, ৩০ জুন মধ্যরাতে লকডাউন শেষ হওয়ার পর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজাবাজারের আইবিএ হোস্টেল ও পান্থপথ এলাকার দুটি প্রবেশপথ খুলে দেওয়া হয়। আর ইন্দিরা রোড সংলগ্ন প্রবেশপথ দিয়ে যান চলাচল ঠেকাতে দেওয়া হয় বাঁশের ব্যারিকেড। পরদিন ১ জুলাই সকালে দেখা যায়, বাঁশ ভেঙে একপাশে সরিয়ে রাখা হয়েছে। অবাধে চলছে সব যানবাহন। এরপর টিন দিয়ে রাস্তাটি বন্ধ করে শুধু হেঁটে চলাচলের পথ রাখা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে দেখা যায় সেটিও ভেঙে ফেলা হয়েছে। ফলে সন্ধ্যায় আবার অস্থায়ী গেট বানানোর কাজ শুরু হয়েছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, মরিচা গার্ডেন নামের একটি আবাসিক ভবনের নিরাপত্তাকর্মীরা অস্থায়ী গেটটি ভেঙেছেন। তারা শুধু নির্দেশ পালন করেছেন। আর নির্দেশ দিয়েছেন ভবনের কয়েক বাসিন্দা, যাদের গাড়ি রয়েছে। গাড়ি চলাচলের সুবিধার্থেই তারা গেট ভেঙেছেন। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। পাশাপাশি তারা ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
স্বেচ্ছাসেবীরা বলছেন, ওষুধ, সবজি বা মুদি দোকানের মতো জরুরি দরকারি ছাড়া অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। সেলুন, চায়ের দোকান, ইলেকট্রিক সরঞ্জাম বা এ জাতীয় দোকান খোলার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কেউ তা মানছেন না। দিনে দু-একবার পুলিশের গাড়ি টহল দেয়, তখন তারা দোকান বন্ধ করেন। পুলিশের গাড়ি চলে যেতেই আবার সব স্বাভাবিক। স্বেচ্ছাসেবীরা কিছু বলতে গেলে দোকানিরা রীতিমতো তেড়ে আসেন। সন্ধ্যায় হ্যান্ডমাইকে ঘোষণা দিয়ে দোকান বন্ধ করার আহ্বান জানালেও তারা শুনতে চান না। বন্ধ করার ব্যাপারে চাপ দিলে রীতিমতো মারামারির পরিস্থিতি তৈরি হয়।
সরেজমিন স্বেচ্ছাসেবীদের বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া যায়। লকডাউনের আগে যেসব দোকানপাট এমনিতে খুলত না, এখন সেসবও খোলা দেখা যাচ্ছে। তারা নির্ধারিত সময়ে দোকান বন্ধের নিয়মও মানছেন না। ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, লকডাউনে দোকান বন্ধ রাখার ক্ষতি পুষিয়ে নিতেই তারা বেশি সময় ধরে ব্যবসা চালাচ্ছেন। আর এলাকার মানুষ যেন অবরুদ্ধ দশা থেকে মুক্তির আনন্দ উপভোগের জন্য রাস্তায় নামছেন। রাজাবাজারজুড়ে মোড়ে মোড়ে মানুষের জটলা।
করোনা সংক্রমণের ঘনত্ব বিবেচনায় ‘রেড জোন’ ঘোষিত পূর্ব রাজাবাজারকে ৯ জুন রাত ১২টা থেকে লকডাউন করা হয়। প্রথমে ১৪ দিনের কথা বলা হলেও পরে তা ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।