হিমাদ্রী রয় : আট ভাই-বোনের মধ্যে আমি সবার ছোট। দুই ভাইয়ের পরে তিন এবং চার নম্বরে দুই বোন আমার নম্বর আট সুতরাং বয়সের বিস্তর ব্যবধান। আমার সব বড় বোনের বঁধু সাজ আমার ঠিক পড়ে না মনে শুধু স্মরণ কালের যে সময়টায় বোনের মুখের আদলখানি আবছা আলোর মতো ভেসে ওঠে সেই সাজে কোন রঙ ছিলো না। ঋতুচক্রে বারবার করে ফাগুন এসেছে কিন্তু আমার বোনের জীবনে বসন্ত আসেনি আর কিংবা সমাজের রীতির তোয়াক্কা করে নিজেই আসতে দেয়নি। বৃষ্টিতে স্নান শেষের আকাশে রামধনু ওঠে আবার মিলিয়ে যায় যেমন ঠিক তেমনি সাদা থানে আমার বোনকে রামধনু বিহীন অসীম শূন্যতার সাদা আকাশটার মতই লাগতো।

আমার ভগ্নীপতি যেতে যেতে বোনের কপালের রঙটিও গেছেন মুছে। তবে এই কাজটি তিনি নিজে করেননি কোন পুরুষ তা করেন না। যে কোন পুরুষের মৃত্যু হলে তার আ-মরণের সঙ্গীনীর কপালের রঙ মুছিয়ে দিই আমরা মানে এই সমাজ। সংস্কৃতির নামে, ধর্মের ঢালে নারীকেই কেবল বলি হতে হয় কোন না কোন কৌশলে। এই সত্য মেনে যাপন কম সংগ্রামটাই বেশি আমার বোনের জীবনে।

আমার মনের মধ্যে এক বিচার নিজের সাথে নিজেই লড়াই করে চলে প্রতিনিয়ত সেই তথাকথিত আচার এর বিরুদ্ধে। কেন আমার থাকা এবং না থাকার উপরে নির্ভর করবে আমার স্ত্রীর জীবনের রঙ। চলমান শ্বাসে আমি যাকে কপালের লাল রঙে অথবা বসনের রঙে দেখতে ভালোবেসেছি সেই আমি কাছে দূরে মর্তে কিংবা পরপারে থেকেও তাকে রঙেই দেখতে চাইবো। তবে সমাজের কি অধিকার ধর্মের দোহাই টেনে তাঁর সিঁদুর, টিপ, বিন্দি, কিংবা কপালের মাঝখানে মাইক্রো ডট মুছে দেওয়ার।

কিন্তু দুঃখ হয় আমরা এখনও এই সমাজেই আছি এখনও মৃত স্বামীকে পুড়িয়ে এসে স্ত্রীর উজাড় হওয়া পৃথিবীর সবটুকু রঙ মুছে পান্ডুলিপি করি আয়োজন সেখানে শুধুই বিষাদের ছাই। প্রিয়তম মানুষের পরলোকে গমনে এমনিতেই তার হৃদয় চূর্ণবিচূর্ণ তার উপর নিয়ম পালনের অজুহাত।

এখনও অরণ্যের ফাগুন বিধবার জন্য নয় তাদের হৃদয় জানালা দিয়ে বসন্তের কোকিলের আনাগোনা দেখাও বারণ। কারণ অকারণ তাদের জীবন রুক্ষ, রিক্ত, জীর্ণ। নারী নিজেও এর থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না বা আসতে চায় না। অনিয়মও একসময় নিয়ম করে অভ্যাস হয়ে যায় আমাদের বোনেদের, মায়েদের জীবনে। সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের মধ্যে খুঁজে নেয় সান্ত¡নার ভাষা। আজও চিতা থেকে উঠিয়ে আনা রামমোহন এর চেয়ে চিতায় ঠেলে দেয়া রামের কদর বেশি নারীর কাছে আর সঙ্গীনী নির্বাচনে সতীর কদর বেশি পুরুষের কাছে।