জামানা হাসিনা জাফরান : যে কোনো জাতিরই তার মাতৃভাষার প্রতি থাকে গভীর টান। বাঙালির কি তা হবার নয়? বিশ্বের ইতিহাসে একমাত্র বাঙালিরই মাতৃভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জনের ইতিহাস আছে, আছে স্বর্ণ খচিত দলিল। নাম তার একুশ। একুশই বাতি ঘর হয়ে বাঙালিকে একটি বেদনা বিজড়িত প্রদীপ ধরে দেখিয়েছিলো তাদের জাতিসত্তার ফটক দ্বার উন্মোচনের আঁধার পথ। তাই বাঙালি জাতি মাত্রই তাদের চেতনায় প্রোথিত হয়ে আছে একুশের মর্মার্থ। যে কোনো বাঙালি ব্যক্তির হৃদয়ের কোটরে লালিত হয়ে আছে এই মর্মান্তিক বেদনা বিজড়িত দিনের কথাগুলি, স্মৃতিগুলি! তাই একুশ মানে বাঙালির জাতীয় সত্তার লড়াই। বাঙালির মৌলিক অধিকার তথা স্বাধিকার আদায়ের লড়াই। বাঙালির মায়ের মুখের কথা, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ন্যায্য অধিকার আদায়ের লড়াই। একুশ দিয়ে বাঙালি জাতি প্রমাণ করেছে তাদের প্রাণের ভাষা বাংলাই পারে সা¤প্রদায়িকতা তথা দ্বি জাতিতত্ত¡কে মিথ্যারুপ দিয়ে মানবতাকে সবার উর্ধে স্থান দিতে। এ গৌরব রাখি কোথায়! বাঙালির ইতিহাসে যা কিছু অর্জন, যা কিছু গৌরব তার শানে নুযুল একুশের আদর্শেই গঠিত। একুশই বাঙলার মাটিতে বাঙালির স্বাধীনতার বীজ বপন করে তার অঙ্কুরোদগমনের মাধ্যমে বাঙালিকে স্বধীনতার বারতা জানিয়ছিল। তাই একুশ প্রতি বছর ফিরে ফিরে আসে গোটা বাঙালি জাতিকে আবার শানিত ও উদ্ভুদ্দ্ব করতে।

ইতিহাস সাক্ষী
১৯৪৭ সালে সা¤প্রদায়িকতার ভিত্তিতে ভারত থেকে পৃথক হয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃস্টি হওয়ার পর প্রথমেই পাকিস্তানী শাসকেরা বাঙালির উপর তাদের অভিমত চাপিয়ে- শাসন, শোষণ ও অধিকার হরনের পায়তারি চালাতে শুরু করে। কেননা, যে কোনো জাতিকে পঙ্গু করতে চাইলে তার প্রথম পদক্ষেপই হলো তার জাতীয় সত্তাকে ধ্বংস করা। আর তা সহজ হয় যদি সে জাতিকে পরভাষী করে তার কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে নির্মূল করা যায়। তাই পাকিস্তানী শাসক প্রথমেই আঘাত হানে বাঙালির ভাষার উপর। পূর্বপাকিস্তানি তথা পূর্ববাংলার জনগণ বাংলা ভাষায় সংখ্যা গরিষ্ট হওয়া সত্তে¡ও পাক শাসক বাঙালির মায়ের ভাষা বাংলা ভাষাকে বর্জন করে উর্দুকে বাঙালির প্রধান রাষ্ট্র ভাষা হিসাবে লিখতে ও বলতে আদেশ জারি করে। যা বাঙালি মেনে নিতে পারেনি।

দেশ বিভাগ হওয়ার পর পরই ১৯৪৭ থেকে ৫২ পর্যন্ত ঊর্দুই হবে পুরো পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা এ বিতর্ক নিয়ে পর্যায়ক্রমে বার বার প্রস্তাব উঠে। পাশাপাশি প্রতিবারই প্রতিবাদও উঠে। প্রথমেই ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর প্রবন্ধ লিখে প্রতিবাদ, গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের উর্দুর পাশাপাশি বাংলা ভাষা চালুর প্রস্তাব, ইসলামি সাংস্কৃতিক সংঘটন তমুদ্দিন মজলিসের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের নেতৃত্বে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্র ভাষা ও শিক্ষার মাধ্যমে বাংলা ব্যবহারের দৃপ্ত দাব। সবই পাক শাসক কর্তৃক প্রত্যাখিত হয়।
ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, তমুদ্দিন মজলিসের দাবি ও কর্মসূচির উপর পাকিস্তানিদের কঠুর দমন নীতি প্রয়োগ হলে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদটি পুনর্গঠিত হয় এবং ১১ মার্চ ধর্মঘট ও প্রতিবাদ সভা হয়। কিন্তু পুলিশ ঐ প্রতিবাদ সভা পণ্ড করে কর্মসূচির প্রথম সারির মুসলিম ছাত্রলীগের নেতা যেমন; শেখ মুজিব, শামসুল হক, অলি আহাদ সহ ৬৯ জন নেতাকে গ্রেফতার করে। যে কারণে বাঙালিরা ১৩-১৫ মার্চ আরো তেজোদীপ্ত গতিতে ধর্মঘট পালন শুর করে। এইভাবে ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ এর ফেব্রæয়ারী পর্যন্ত বাংলা ভাষা আন্দোলনের কংক্রিট পথ নির্মাণ করেছেন পূর্ববাংলার ছাত্রছাত্রীসহ আরো অসংখ্য সর্ব স্তরের জনতা যাঁরা ছিলেন বাংলা ভাষা আন্দোলনের অগ্রনায়ক। যাদে প্রাণ সপে দেয়া লড়াইয়ে ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এক চূড়ান্ত রূপ এসে দাড়ায়।

সেইদিন ১৯৫২ এর ২১ সে ফেব্রæয়ারি/ ১৩৫৮ বাংলার ৮ই ফাল্গুন, তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানবাসি বাঙালির ভাষার দাবির আন্দোলন প্রতিরোধে পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকদের ১৪৪ ধারা জারির প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় কলাভবনে মিলিত হয়ে মিছিল বের করলে পশ্চিম পাকিস্তানী শাসক পুলিশের গুলির তুরে ঢাকার রাজ পথ রক্তে রঞ্জিত হয়ে যায়। ঘটনাস্থলে তৎক্ষণাৎ প্রাণ হারায় বাংলার সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার সহ আরো অনেকে। সেখানে প্রথমে শাসক পক্ষের পুলিশ যেভাবে কাঁদুনি গ্যাস ছেড়ে আন্দোলন প্রতিরোধ করেছিল। তারা সেভাবেই আরো তোড়জোড়ে নাহয় আন্দোলন প্রতিরোধ করতে পারতো। গুলি ছুঁড়ার কি প্রয়োজন ছিল! বাঙালিকে পিঁপড়াসমতুল্য না ভাবলে গুলি ছুঁড়ে ধূলোয় লুন্ঠিত করার এহেন দুঃসাহস পাকিস্থানীর হতো না!

সেদিনের রক্তে রঞ্জিত রাজপথের শোকাবহ ঐ ঘটনার অভিঘাতে পুরো পূর্ব পাকিস্থানের সর্বস্তরের মানুষের বুকে তীব্রতর ক্ষুভে বিদ্রোহের অগ্নিশিখা দাউ দাউ করে জ্বলে উঠে। বাঙালি জাতি যেন উত্তাল তরঙ্গায়িত জ্বলোচ্ছাসের মতো প্রতিবাদে গর্জে উঠে। তবু কিন্তু পশ্চিম পাকিস্থান কর্তৃক বাঙালির উপর নির্যাতন নিপীড়ন মিশন থামে না। একই তালে বাঙালির পক্ষ থেকেও আন্দোলন, সংসদ বর্জন চলতেই থাকে। অবশেষে পাকিস্তানী হানাদারদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিলো বাঙালি তার ভাষার অধিকার। নতি স্বীকার করতে বাধ্য হলো পাক শাসক। ১৯৫৪ সালের ৭ই মে পাকিস্তান গণপরিষদ বাংলা ভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্র ভাষা হিসাবে গ্রহণ করে, এবং ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংবিধানে প্রণীত ২১৪ নং অনুচ্ছেদে উর্দুর পাশাপাশি বাংলা ভাষাকেও পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা হিসাবে উল্লেখ করে। যা বাঙালির নিবেদিত বিসর্জিত প্রাণের অর্জন।

সেই সাথে বাঙালির আর একটি গৌরবদীপ্ত সূর্যকরোজ্জ্বলা উল্লেখযোগ্য বিষয় যে, আমাদের একুশে ফেব্রুয়ারির দিনটি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে বিশ্বে স্বীকৃত।
প্রসঙ্গতঃ কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে বসবাসরত দুই বাঙালি জনাব রফিকুল ইসলাম এবং আব্দুস সালাম উদ্যোগ নিয়ে ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে প্রস্তাব পেশ করেন। প্রস্তাবটি ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে ১৭ই নভেম্বর ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে উত্থাপন করা হয়। অতঃপর অফিসিয়াল বিভিন্ন ধাপ পার হয়ে প্রস্তাবটি বাংলাদেশের তৎকালীন হাসিনা সরকারের পক্ষ থেকে সমর্থন চেয়ে উনেস্কোর কাছে প্রেরণ করা হয়। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৯৯ সালে ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে প্রস্তাবটিকে ১৮৮ টি দেশ সমর্থন জানায়। সেই থেকে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ঘোষনা করা হয় এবং ২,০০০ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে জাতিসংঘের সদস্য দেশসমূহে যথার্থ মর্যাদার সংগে পালিত হয়ে আসছে।

এখন বিশ্বায়নের দিন। বাঙালিও এখন বিশ্ব জয়ের নেশায় বিভোর। তাই বিশ্বের যে কোনো আনাচে কানাচে গেলেই আপনি বাঙলার সন্তান সন্ততি দেখতেই পাবেন। এটা অবশ্যই গৌরবের। কিন্তু অন্যদিকে আমাদের জাতিগত মৌলিক সত্তা অর্থাৎ যে ‘ভাষা আন্দোলন’, যে শহীদদের রক্ত এখন “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” হয়ে সারা বিশ্বাঙ্গন জুড়ে বসেছে সেই মহান গৌরব কি তবে হাজার রকমারি ভিন ভাষা আর ইংরেজি ভাষাসমুদ্রের প্লাবন অতলে ডুবে যাবে? এই প্রশ্নটা কিন্তু এখন নড়ে চড়েই বসেছে। যদিও আমরা অনেকে এখনো এ বিষয়ে সম্পূর্ণ উদাসীন। জানিনা তবে কি আমরা বাংলা ভাষা সম্মানের সাথে ভালোবেসে গ্রহন করতে পারছি না? কোনো গৌরব অর্জন করা কিন্তু যতটুকু কঠিন তার চেয়েও কঠিন তা রক্ষা করা।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পরই শিক্ষাবিদের মহল থেকে বাংলাদেশের সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু হওয়ার কথা উঠেছিল। কিন্তু আজও তা পুরোপুরি বাস্তবায়ীত হয়নি। দুঃখের বিষয় এখনও বাংলাদেশের বিচারবিভাগ ব্যবস্থাপনায় ইংরেজীর ব্যাবহার চালু রয়েছে। তবে বাংলাদেশের বর্তমান প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব সফরের যে কোন সম্মেলনে বাংলা ভাষায় বক্তৃতা করেন। তিনি বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবেও স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। সাধুবাদ জানাই তাঁকে।

একথা সত্য যে যুগের পায়ে পা মিলিয়ে হাটতে গেলে বিজ্ঞানের নতুন আবিষ্কার তথা যোগাযোগ মাধ্যম গুলোর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কিন্তু তাই বলে ভুলে গেলে চলবে না যে আমাদের নিজস্ব সত্তা যেন বিসর্জিত না হয়। অন্তত শিক্ষিত বিদগ্ধজন যেন এই বিষয়ে পরিচর্যাকারী হয়ে উঠেন। কেননা এখন ভাষা বিকৃতির হিড়িক পড়েছে। বিশেষ করে এফ এম রেডিওর বিরুদ্ধে ভাষা বিকৃতির অভিযোগ সবচেয়ে বেশি। বাংলা নাটকেও এখন মাঝে মাঝে বিদেশী গানের সংযোজন উদাহরন মিলে। হিন্দি সিনেমার তুমুল ধকল ও অন্যদিকে ভিন দেশি সংস্কৃতির প্রভাব আমাদের কোমলমতি শিশুদের দিন দিন পরদেশি জগাখিছুড়ি পথে পরিচালিত করছে। দেশের রাজনৈতিক অবস্থা বিশৃঙ্খল হওয়ায় নেতৃবৃ›দ্বরা বার বার নিজেদের অনুক‚লে বিকৃত ইতিহাস রচনা করে ইতিহাসের পথকেও বিপথগামী করেছেন। ইংলিশ স্কুলগুলোয়ও বাংলা ততটা গুরুত্ব দিয়ে পড়ানো হয় না।

এদিকে, প্রবাসে বসবাসরত বাঙালি প্রজন্মদের দিকে তাকালে যে ছবি ভেসে উঠে তা সত্যিই ভাবিয়ে তুলে। প্রবাসী অভিবাবকদের কথা বলছি, আমরা নিজেরা বাংলা ভাষী হওয়া সত্তে¡ও আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তথা আমাদের সন্তান সন্ততিদের সাথে গৌরব ও প্রহ্লাদের সাথে ইংরেজি ভাষায় বাক্য বিনিময় করি। অন্য বাঙালি বন্ধুর দেখা পেলে যেন আরো বেশি সরবে ভুল উচ্চারণ করে হলেও ইংরেজি ভাষায় মেতে উঠি। যেন এতে আমরা উঁচু জাতিতে রুপান্তরিত হওয়ার সুখানুভূতিতে ভোগী। এমনিতেই বিদেশে চলার প্রধান বাহন ইংরেজি ভাষা হওয়াতে আমাদের প্রজন্মরা বাংলা ভাষা চর্চা করার সুযোগ কম পাচ্ছে। তাছাড়া বিবাহ জনিত কারণে বর্তমান প্রজন্মরা যার যে ভাষার ইচ্ছা সে ভাষাভাষী জীবন সাথীকে বেছে নেয়ার কারণে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তো বাংলা ভাষায় কথা বলা প্রশ্নাতীত হবে। তার উপর আমাদের বর্তমান বাঙালি অভিবাবকদের এহেন উঁচু স¤প্রদায়ী বনে যাওয়ার মানসিক অসুস্থতার পীড়ন জনিত চাপে পড়ে আমাদের জাতীয় সত্তা, আমাদের গৌরবান্বিত মৌলিক সম্পদ আমাদের মাতৃভাষা হুমকির সম্মুখে পড়েছে। যে ভাষার জন্য বাঙালি আত্মউৎসর্গের নজির তৈরী করেছিলো সেই আমাদের ভাষার গৌরবকে আমরা ধরে রাখতে চাই নাকি অবহেলায় পথের ধূলায় ফেলে রাখতে চাই? মাতৃভাষার জন্য জীবন দানকারী একটি জাতির মাতৃভাষার প্রতি এহেন অবহেলা খুবই দুঃখজনক।

যদিও আমরা জানি: ২০১১ সালের আদম শুমারি অনুযায়ী বিশ্বে বাংলা ভাষা ভাষির জনসংখ্যা ২৮ কোটি ৫০ লক্ষ। মাতৃ ভাষা হিসাবে পৃথিবীতে বাংলা ভাষার স্থান পঞ্চম এবং গোটা বিশ্বে বহুল ব্যবহৃত ভাষা অনুযায়ী বাংলা ভাষার স্থান সপ্তম। তদুপরি ইউনেস্কোর জরিপে একুশের আদর্শে অর্জিত আমাদের বাংলা ভাষা বিশ্বের মধুরতম ভাষারও স্বীকৃতি পেয়েছে।

প্রবাশে আমাদের ভাষা বিলুপ্তির হুমকির সম্মুখে দাঁড়িয়েও কেউ কেউ থেমে নেই। কোন কোনো শিক্ষক বাংলা স্কুল সহ সঙ্গীতায়ন প্রতিষ্টান পরিচালনা করে বাংলা ভাষা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির উৎকর্ষ সাধন করার চেষ্টা করছেন। আবার কোনো কোনো সংগঠন বাঙালির বিভিন্ন উৎসবের দিন যেমন: পহেলা বৈশাখ, বিজয় ও স্বাধীনতার দিবস ,পূজা পার্বণ, পিঠা উৎসবের আয়োজন করে, বিভিন্ন ধরণের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে প্রজন্মদের নিজ দেশ, সংস্কৃতি ও কৃষ্টি নিয়ে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে এতে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে কিছুটা বাঙালিয়ানা চর্চা হলেও তা যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন আরো বিস্ততৃত রূপে, আরো স¤প্রসারিত পথে বাঙালিয়ানা চর্চা এগিয়ে নেয়া। প্রতিটি বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় বাংলা স্কুল পরিচালিত করা, বিদেশের স্কুল কলেজ গুলায় বাংলা বিভাগ চালু করা জরুই বলে ভাবছি। সকল শ্রেণীর প্রবাসবাসী বাঙালিদেরকে এ বিষয়ে সচেতনতা এবং সহযোগিতার মাধ্যমে উদ্যোগ নিয়ে জোরে সুরে এগিয়ে আসা জরুরি বলে ভাবছি। সেই সাথে বাঙালির ঘরে যেন আমাদের বাচ্চারা অবশ্যই বাংলা বাসায় কথা বলে সে খেয়াল রাখা জরুরি। প্রয়োজন আরো বিপুল আকারে বাংলা ভাষা চর্চা, শুদ্ধ বানান এবং প্রমিত উচ্চারণ চর্চা করা। লেখায়, বলায়, পঠনে, পাঠনে সর্বস্তরে বাংলাকে প্রতিষ্টিত করা চাই। বিদেশে কিছু অনিয়মিত বাংলা স্কুল চালু হয়ে আবার থেমে যায়। প্রজন্মরা অবুঝ, জীবনের দাবি সময়মত বুঝে উঠতে পারে না। কিন্তু প্রজন্মের নৈয়ায়িক অধিকারের দাবি; “প্রয়োজন অরো দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়ে ঐস্কুল গুলোকে নিয়মিতরূপে চালু রাখা”।

ইতিমধ্যে আমরা আমাদের বর্তমান বসবাস স্থলে বাংলাদেশ কানাডিয়ান ক্যালগেরি এসোসিয়েশনের উদ্যোগে আমাদের বাঙালি শিশুদেরকে বাংলা শিক্ষা দেয়ার প্রাথমিক পদক্ষেপ নিতে এগিয়ে যাচ্ছি। এভাবে প্রতিটি বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় বাংলা স্কুল চালু করলে এবং পরিচালিত করে গেলে আশাকরি আমাদের গৌরবান্বিত বাংলা ভাষাকে বিলুপ্তির অতল গহ্বরে হারিয়ে যেতে দিতে হবে না। আমাদেরকে তৃণমূল পর্যায় থেকে বাংলা ভাষা, বাংলা কৃষ্টি ও সংস্কৃতির শিক্ষার প্রতি মনোযোগী হতে হবে। প্রবাসে বাঙালির জাতীয় সত্তা ধরে রাখতে হলে বাংলা ভাষা শিক্ষা দেয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। শুধু একুশে ফেব্রুয়ারি দিনেই নয় পুরো বছরেই বাংলা ভাষা চর্চা ও বাঙালিয়ানায় জোর দিতে হবে।
আমাদের ভাষা আন্দোলন আসলে থেমে নেই, অর্থাৎ ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য, আমাদের জাতীয় সত্তার অধিকার রক্ষার জন্য আন্দোলন শেষ হয়ে যায় নি। তাই একুশের আদর্শে অর্জিত গৌরব কে নিয়েই আমাদের আরো দূর এগিয়ে যেতে হবে। সে জন্য আমরা বাঙালি অভিবাবকদের সদিচ্ছার হাতই হবে সাফল্যের মূল চাবি কাঠি। রক্ত বিক্রি করে কিনেছি বাংলা, কারো দান খয়রাতে নয়।