অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশের ইতিহাসে ২১ আগস্ট একটি নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের ভয়াল দিন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগের ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী’ সমাবেশে নারকীয় গ্রেনেড হামলা চালায় জঙ্গিগোষ্ঠী। ভয়াবহ সন্ত্রাসের শিকার হয় আওয়ামী লীগ। সেদিন বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও মরহুম প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী আইভি রহমানসহ মোট ২৪ জন নেতাকর্মী মরা যান। গ্রেনেডের স্পিন্টারের আঘাতে আহত হন পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীসহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ। আহত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী-সমর্থকদের অনেকে এখনও স্পিন্টারের দুঃসহ আঘাত নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, দলকে নেতৃত্ব শূন্য করতে এদেশের মানুষের আশার বাতিঘর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাসহ দলের প্রথম সারির জাতীয় নেতাদের হত্যার উদ্দেশ্যে ওই ঘৃণ্য হামলা চালায় ঘাতকচক্র। শুধু গ্রেনেড হামলাই নয়, সেদিন শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার গাড়ি লক্ষ্য করেও চালানো হয় গুলি। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও তিনি আহত হন, তার শ্রবণশক্তি চিরদিনের মতো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সেদিন যা ঘটেছিল : দিনটি ছিল শনিবার। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। বিকাল ৪টার দিকে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশের পর সারা দেশে বোমা হামলায় নিহতদের স্মরণে শোক মিছিলের কর্মসূচি ছিল। বিকাল সাড়ে ৪টা নাগাদ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ এলাকা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। শেখ হাসিনা বিকাল ৫টার দিকে সমাবেশস্থলে পৌঁছান। বুলেটপ্রুফ মার্সিডিজ বেঞ্জ জিপ থেকে নেমে নিরাপত্তাকর্মী-বেষ্টিত অবস্থায় তিনি দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একটি ট্রাকের ওপর তৈরি অস্থায়ী মঞ্চে উঠে বক্তৃতা শুরু করেন। বক্তৃতায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী দেশব্যাপী অব্যাহত বোমা হামলার বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন। ২০ মিনিটের বক্তৃতা শেষে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ উচ্চারণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তার হাতে থাকা একটি কাগজ ভাঁজ করতে করতে এগোচ্ছিলের মঞ্চ ট্রাক থেকে নামার সিঁড়ির কাছে। সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ দিক থেকে মঞ্চকে লক্ষ্য করে একটি গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। ঘড়ির কাঁটায় তখন ৫টা ২২ মিনিট। গ্রেনেডটি মঞ্চের পাশে রাস্তার ওপর পড়ে বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। এরপর একে একে আরো ১২টি গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়। মুহূর্তের মধ্যে পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। আতঙ্কে মানুষ দিগবিদিক ছোটাছুটি শুরু করে। গ্রেনেডের আঘাতে মঞ্চের নিচে রাস্তার ওপর বসা বেগম আইভি রহমানসহ অসংখ্য মানুষ লুটিয়ে পড়েন। ঘাতকদের প্রধান লক্ষ্যই ছিল শেখ হাসিনা। পরিস্থিতির তাৎপর্য বুঝতে পেরে মঞ্চে উপস্থিত ঢাকার মেয়র মোহাম্মদ হানিফ এবং শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত দেহরক্ষী তাৎক্ষণিকভাবে এক মানবঢাল তৈরি করে শেখ হাসিনাকে গ্রেনেডের হাত থেকে রক্ষা করেন। তবে গ্রেনেড হামলায় দুই পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেত্রী বেগম আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। মেয়র হানিফের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়ায় অস্ত্রোপচার করার কথা থাকলেও গ্রেনেডের স্পিøøন্টার শরীরে থাকার কারণে তার অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়নি। পরে তিনি ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
এই বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় নিহতদের মধ্যে আরো ছিলেন শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ, আবুল কালাম আজাদ, রেজিনা বেগম, নাসির উদ্দিন সরদার, আতিক সরকার, আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারী, আমিনুল ইসলাম মোয়াজ্জেম, বেলাল হোসেন, মামুন মৃধা, রতন শিকদার, লিটন মুনশি, হাসিনা মমতাজ রিনা, সুফিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা). মোশতাক আহমেদ সেন্টু, আবুল কাশেম, জাহেদ আলী, মোমেন আলী, এম শামসুদ্দিন ও ইসাহাক মিয়া।
মারাত্মক আহতরা হলেন, শেখ হাসিনা, আমির হোসেন আমু, মরহুম আবদুর রাজ্জাক, প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ওবায়দুল কাদের, মোহাম্মদ হানিফ, মরহুম সাহারা খাতুন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, নজরুল ইসলাম বাবু, আওলাদ হোসেন, মাহবুবা পারভীন, উম্মে রাজিয়া কাজল, নাসিমা ফেরদৌস, শাহিদা তারেক দিপ্তী, রাশেদা আখতার রুমা, হামিদা খানম মনি, ইঞ্জিনিয়ার সেলিম, রুমা ইসলাম, কাজী মোয়াজ্জেম হোসেইন, মামুন মল্লিক প্রমুখ।