Home কলাম যে বাহনে সারা জীবন

যে বাহনে সারা জীবন

রবার্ট ইগার : (দা ওয়াল্ট ডিজনী কোম্পানির প্রধান নির্বাহী হিসাবে রবার্ট ইগারের পনের বছরে অর্জিত শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতা। ২০০৫ সালে রবার্ট ইগার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন যখন কোম্পানি এ যাবৎ কালে সর্বাধিক সঙ্কটময় পরিস্থিতি অতিবাহিত করছে। তিনটি মূলনীতির উপর ভর করে তিনি এগুলেন এক. গুণগত মানের শ্রেষ্ঠতা বজায় রাখা, দুই. নিত্য নতুন প্রযুক্তির সাথে প্রতিযোগিতা না করে প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিৎ করা এবং তিন. গন্ডির বাইরে বিশ্বব্যাপী নিজেদের চিন্তা-চেতনার প্রসার ঘটানো। চৌদ্দ বছরে তিনি ডিজনিকে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মর্যাদাসম্পন্ন মিডিয়া কোম্পানিতে রূপান্তর করলেন। এখন পিক্সার, মার্ভেল, লুকাসফিল্ম, টুয়েন্টি ওয়ান সেঞ্চুরি ফক্স প্রভৃতি স্বনামধন্য কোম্পানির মালিক দা ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানি। রবার্ট ইগারের লেখা “দা রাইড অফ এ লাইফ টাইম” সাপ্তাহিক ‘বাংলা কাগজ’এ ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ করছেন উন্নয়ন সংগঠক ও অনুবাদক কোরবান আলী)

ছাপান্ন.
ত্রয়দশ অধ্যায়
সততা ও ন্যায়পরায়ণতা অমূল্য সম্পদ
(পূর্ব প্রকাশিতের পর) রোজান সম্পর্কিত সমস্য প্রায় শেষ এবং আমাদের টুয়েন্টি-ফাস্ট সেঞ্চুরি ফক্স অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চলমান এমন সময় পিক্সারের প্রধান নির্বাহী জন ল্যাসেটারের ছয় মাসের ছুটি শেষ হয়ে তিনি কাজে ফিরেছেন। বেশ কিছু কথোপকথনের পর তিনি এবং আমি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছালাম যে তার ডিজনি থেকে সম্পূর্ণ প্রস্থান বুদ্ধিমানের কাজ। আমরা এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে উচ্চ স্তরের গোপনীয়তা বজায় রাখতে সম্মত হলাম।

এটি ছিল সবচেয়ে কঠিন এবং জটিল কর্মী সংক্রান্ত সমস্যা যা আমি নিস্পন্ন করলাম। জন চলে যাওয়ার পর আমরা পিট ডক্টরকে পিক্সারের প্রধান সৃজনশীল কর্মকর্তা এবং জেনিফার লিকে ওয়াল্ট ডিজনি অ্যানিমেশনের প্রধান সৃজনশীল কর্মকর্তা নিয়োগ দিলাম। জেনিফার লি ফ্রোজেনের লেখক এবং পরিচালক ছিলেন। উভয়েই উজ্জ্বল, সকলের প্রিয়ভাজন, অনুপ্রেরণাদায়ক মানুষ এবং তাদের নেতৃত্ব একটি রূপালী অধ্যায়ের শুভ সূচনা করল। এই দুজন না থাকলে কোম্পানির জন্য একটি বেদনাদায়ক সময়ের উদ্ভব হত।

চতুর্দশ অধ্যায়
গভীর মূল্যবোধ
১২ জুন, ২০১৮ তারিখে ম্যানহাটন জেলার নি¤œ আদালতের বিচারক আমেরিকান টেলিফোন এন্ড টেলিগ্রাফ ক্রয়ের বিষয়ে টাইম ওয়ার্নারের পক্ষে রায় দিলেন। পরের দিন কমকাস্টের ব্রায়ান রবার্টস টুয়েন্টি-ফাস্ট সেঞ্চুরি ফক্স ক্রয়ের জন্য নতুন অফার ঘোষণা করলেন: শেয়ার প্রতি ৩৫ ডলার (মোট ৬৪ বিলিয়ন ডলার) যেখানে আমাদের শেয়ার প্রতি অফার ছিল ২৮ ডলার। শুধুমাত্র সংখ্যাটি উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ছিল এমন না, বরং সম্পূর্ণ নগদ অর্থের অফারটি অনেক শেয়ারহোল্ডারদের কাছে আকর্ষণীয় হবে যারা স্টকের পরিবর্তে নগদ অর্থ পছন্দ করে? হঠাৎ করেই আমরা স্বপ্ন ভঙ্গের ঝুঁকিতে পড়ে গেলাম, যেটা নিয়ে আমরা এত স্বপ্ন দেখেছি এবং গত ছয় মাস ধরে কঠোর পরিশ্রম করেছি।

ফক্স বোর্ড একটা সভার তারিখ নির্ধারণ করেছে। সভাটি এক সপ্তাহ পরে লন্ডনে অনুষ্ঠিত হবার কথা। সভায় কমকাস্টের অফারে বোর্ডের সদস্যবৃন্দ ভোট দেবেন। আমরা আবার বিডে অংশগ্রহণ করতে পারি এবং আমাদের অফার মূল্যের নম্বরটি কী হবে তা দ্রæত সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। আমরা আমাদের বিড মূল্য বাড়াতে পারি কিন্তু সেটা কমকাস্টের অফার মূল্যের সামান্য নিচে নির্ধারিত হতে পারে এবং আশা করি তাদের বোর্ড বিশ্বাস করতে থাকবে যে আমেরিকান টেলিফোন এন্ড টেলিগ্রাফ কোম্পানির ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত আদালতের নতুন রায় সত্বেও নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার অনুমোদনের পথ এখনও আমাদেরটায় সহজ হবে। আবার আমরা কমকাস্টের অফারটির সমান মূল্যে অফার নির্ধারন করতে পারি এবং আশা করতে পারি যে সমান অফারের জন্য কমকাস্ট আমাদের চুক্তিতে বাধা দেবে না। এমনকি যদিও অনেক বিনিয়োগকারী স্টকের চেয়ে নগদ অর্থ পছন্দ করেন। অথবা আমরা কমকাস্টের অফার মূল্যের উপরে মূল্য নির্ধারন করতে পারি এবং সেক্ষেত্রে আশা করতে পারি যে আমাদের অফার মূল্যের উপরে কমকাস্টের যাওয়ার জন্য বেশি জায়গা অবশিষ্ট নেই।

আলোচনায় অংশ নেন আমাদের নির্বাহীবৃন্দ ও ব্যাংকাররা। তারা সকলেই আমাকে কমকাস্টের অফারেরে কম বা সমান সমান মূল্য নির্ধারনের কথা বললেন এবং আমাদের পক্ষে থাকা নিয়ন্ত্রন সংস্থার অনুমোদন প্রক্রিয়ার উপর বাজি ধরতে পরামর্শ দিলেন। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমি একটা নকআউট বিড মূল্য চাই এবং বোর্ড আমাকে আমাদের বিডিং মূল্য বাড়ানোর অনুমোদন দিয়েছে। ইতিমধ্যে অ্যালান ব্রাভারম্যান বিচার বিভাগের সাথে আলোচনা অব্যাহত রেখেছেন, নিয়ন্ত্রণ সংস্থার অনুমোদনের পথ পরিষ্কার করার চেষ্টা করছেন। আমাদের ফক্স অধিগ্রহণের বিডিং যুদ্ধে জয়ী হওয়া উচিত।

ফক্স বোর্ড কমকাস্ট অফারে ভোট দেওয়ার দুই দিন আগে আমি, অ্যালান, কেভিন, ক্রিস্টিন এবং ন্যান্সি লি লন্ডনে উড়ে গেলাম। আমি নিশ্চিত করেছি আমাদের বিড মূল্য কী হবে তা আমাদের দলের শুধুমাত্র কয়েকজন লোকই জানেন এবং সবাইকে সতর্ক করে বললাম এক্ষেত্রে গোপনীয়তা রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উচ্চতর বিড মূল্য নির্ধারণ করার বিষয়ে আমাদের পরিকল্পনার কোনো আভাস কমকাস্টকে দিতে চাইনি। আমরা লন্ডনের একটা হোটেলের রুম ভিন্ন নামে সংরক্ষণ করেছি যেখানে আমরা ইতিপূর্বে কখনও থাকিনি। এটি সত্য কিনা জানিনা তবে কিছু লোক আমাদের বলেছেন যে কমকাস্ট কখনও কখনও প্রতিযোগীদের ব্যক্তিগত জেটের গতিবিধি ট্র্যাক করে। তাই লন্ডনে উড়ে যাওয়ার পরিবর্তে প্রথমে আমরা বেলফাস্টে উড়ে গেলাম, সেখান থেকে আমরা ভিন্ন বিমান ভাড়া করে লন্ডনে গেলাম।

আমরা লন্ডনে যাবার পথে বিমানে উঠার ঠিক আগে আমি রুপার্টকে ফোন করে বললাম, ‘আমি আগামীকাল আপনার সাথে একটা মিটিং করতে চাই।’ পরের দিন বিকেলে কেভিন এবং আমি আর রুপার্ট এবং জন ন্যালেনের সাথে রুপার্টের অফিসে দেখা করতে গেলাম। আমরা চারজন তার মসৃণ মার্বেল টেবিলের চারপাশে বসলাম। বারান্দার দিকে তাকালাম যেখানে তিনি এবং আমি ডিসেম্বরে একটা ছবির জন্য পোজ দিয়েছিলাম। আমি সরাসরি মূল প্রসঙ্গে কথা বলা শুরু করলাম। আমি বললাম ‘আমরা ৩৮ ডলারের একটা অফার দিতে চাই। অর্ধেক নগদ অর্থে এবং অর্ধেক স্টকে।’ আমি তাকে আরও বললাম আমরা এর চেয়ে বেশি কিছু করতে পারবো না।

আমরা এক লাফে ৩৮ ডলার মূল্য নির্ধারণ করলাম। কারণ আমি সন্দেহ করছিলাম কমকাস্ট সম্ভবত তাদের বিড মূল্যের চেয়ে বেশিতে যেতে পারে এবং আমরা যদি ৩৫ ডলারে যাই, তবে তারা ৩৬ ডলারে যাবে। যদি আমরা ৩৬ ডলারে যাই, তাহলে তারা ৩৭ ডলারে যাবে, প্রতিটি পর্যায়ে নিজেদেরকে বোঝাতে সক্ষম হবে যে শুধুমাত্র এক ডলার বেশি। এরকম চলতেই থাকবে যতক্ষণ না শেষ পর্যন্ত আমরা শেয়ার প্রতি ৪০ ডলার পর্যন্ত যাব। সেক্ষেত্রে আমরা শেয়ার প্রতি ৩৮ ডলার দিয়ে শুরু করলাম, এ অবস্থায় তাদের প্রতি শেয়ারে কমপক্ষে ৩ ডলার বাড়াতে হবে, বিষয়টি তাদের জন্য চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। (যেহেতু তারা পুরোটায় নগদ অর্থে অফার করেছিলেন, এর অর্থ আরও অনেক পরিমান নগদ অর্থ তাদের ঋণ করতে হবে এবং উল্লেখযোগ্যভাবে তাদের ঋণের বোঝা বাড়বে।)

কমকাস্ট ধরে নিয়েছিল যে ফক্স বোর্ড পরের দিন সকালে তাদের প্রস্তাবে ভোট দিচ্ছে। তা না করে রুপার্ট তার বোর্ডে আমাদের নতুন অফার নিয়ে আনলেন এবং বোর্ড এটি অনুমোদন করে দিলেন। বোর্ড মিটিং শেষ হবার পর তারা কমকাস্টকে জানিয়ে দিলেন তারা আমাদের নতুন বিড গ্রহণ করেছেন। আমরা ফক্সের সাথে যৌথভাবে ঘোষণা করলাম। আমাদের এই নতুন পদক্ষেপটি বিনিয়োগকারীদের কাছে অবিলম্বে ব্যাখ্যা করার দরকার ছিল, কিন্তু আমারা লন্ডনে কনফারেন্স রুম ভাড়া করতে পারিনি কারণ আমরা চাইনি কেউ জানুক আমরা এই হোটলে অবস্থান করছি। তাই আমরা আমার হোটেল রুমে একটা স্পিকারফোন এনেছিলাম এবং সেখান থেকে বিনিয়োগকারী সম্মেলন শুরু করলাম। এটি একটা পরাবাস্তব দৃশ্য ছিল, ক্রিস্টিন এবং আমি বিনিয়োগকারীদের সাথে কথা বলার সময় আমাদের ছোট দলটি একটা হোটেল রুমে জড়ো হলম। সেখান থেকে সিএনবিসি টেলিভিশন সেটে আমাদের এইমাত্র তৈরি করা সংবাদটি কাভার করল।

আমরা আমাদের চূড়ান্ত বিড মূল্য নির্ধারণ করার কিছুক্ষণ পরে আমি অ্যালান ব্রেভারম্যানকে দৃঢ়ভাবে অনুরোধ করেছিলাম যে তিনি আমাদের অধিগ্রহণের বিষয়ে বিচার বিভাগের সাথে একটা চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেন কিনা। তিনি জানতেন স্পোর্টস টেলিভিশনে আমাদের মনোযোগ বেশি এবং ফক্স আঞ্চলিক ক্রীড়া নেটওয়ার্কের মালিক হওয়া আমাদের জন্য বড় সমস্যা হবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আমরা ন্যায়বিচারের স্বার্থে দ্রুত চুক্তি করার জন্য ফক্স আঞ্চলিক ক্রীড়া নেটওয়ার্ককে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেয়াই ভালো হবে, ঘটেছেও তাই। এটি কমকাস্টের চেয়ে আমাদের একটা বিশাল সুবিধা দেবে। তাদের জিততে হলে আমাদের ৩৮ ডলারের প্রস্তাবকে হারাতে হবে এবং একটা জটিল ও দীর্ঘ আমেরিকান নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া পারি দিতে হবে। দুই সপ্তাহের মধ্যে আমরা বিচার বিভাগের একটা নিশ্চয়তা পত্র পেয়েছি – যদি আমরা ক্রীড়া নেটওয়ার্ক বিক্রি করতে রাজি হই তবে তারা আমাদের চুক্তি ব্লক করার জন্য কোন মামলা করবে না। এটি আমাদের পক্ষে একটা গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।

ফক্স বোর্ডের ভোটের পরে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য বোর্ডের সর্বসম্মত সুপারিশ সহ নতুন প্রক্সি ভোটের নোটিশ তাদের শেয়ারহোল্ডারদের কাছে পাঠানো হয়েছে। শেয়ারহোল্ডারদের ভোট জুলাইয়ের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হবে, যা এখনও কমকাস্টকে একটি উচ্চ বিড মূল্য দিয়ে ফিরে আসার জন্য পর্যাপ্ত সময় দেয়া হয়েছে। কয়েক সপ্তাহ ব্যাপী এটা স্নায়ুবিক চাপ হয়ে থাকল। যতবারই আমি আমার কম্পিউটার অন করেছি বা ইমেল দেখেছি বা সিএনবিসি টেলিভিশন চালু করেছি, প্রতিবারই আমি কমকাস্টের খবর দেখার আশা করছি। চিন্তায় ছিলাম তারা কি আমাদের ছাড়িয়ে গেল। জুলাইয়ের শেষের দিকে আমি আর কেভিন তিন দিনের বৈঠকের জন্য ইতালি গেলাম এবং সেখান থেকে লন্ডনে ফিরে আসি। আমরা লন্ডনে একটা গাড়িতে ছিলাম তখন আমি ডেভিড ফেবারের কাছ থেকে ফোন কল পেলাম। সে সিএনবিসির স্কোয়াক অন দ্য স্ট্রিটের হোস্ট। আমি ফোন ধরলে ডেভিড বললেন, ‘এই বিবৃতিতে আপনার কোন মন্তব্য আছে?’
‘কোন বিবৃতি?’
‘কমকাস্টের বিবৃতি।’

আমার উদ্বেগ অবিলম্বে অনেক গুণে বেড়ে গেল। আমি বললাম ‘আমি জানি না আপনি কোন বিবৃতির কথা বলছেন।’
ডেভিড বললেন যে খবরটি এই মাত্র প্রচার হচ্ছে: ‘ব্রায়ান রবার্টস ঘোষণা করেছেন যে তারা আর বিড মূল্য দেবেন না।’
আমি অনুমান ছিল সে বলবে যে তারা আমাদের উপরে আবার বিড করবে। আমার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল ‘হুররে আমরা জিতেছি!’

আমি এক মুহূর্তের জন্য চুপ হয়ে গেলাম, তারপর আরো আনুষ্ঠানিকভাবে আমার প্রতিক্রিয়া জানালাম, ‘আপনি আপনার শ্রোতাদের বলতে পারেন যে আপনি আমার সাথে কথা বলেছেন।’
তিনি তার শ্রোতাদের সে কথা বলেছিলেন – এবং তিনি তাদের আরও বলেছিলেন আমি বলেছি, ‘হুররে, আমরা জিতেছি!’ (চলবে)
কোরবান আলী, অনুবাদক, টরোন্ট, ক্যানাডা।

Exit mobile version