Home আন্তর্জাতিক যেসব শর্তের বিনিময়ে ক্ষমতা ছাড়তে রাজি জেলেনস্কি

যেসব শর্তের বিনিময়ে ক্ষমতা ছাড়তে রাজি জেলেনস্কি

অনলাইন ডেস্ক : একের পর এক অপ্রত্যাশিত মোচড় নিচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধ। এবারে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের পদ ছাড়তে রাজি আছেন বলে জানিয়েছেন ভলোদিমির জেলেন্সকি। তবে সে জন্য বেশ কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছেন তিনি।

ইউক্রেন যুদ্ধের তৃতীয় বর্ষপূর্তির একদিন আগে, রবিবার কিয়েভে এক সংবাদ সম্মেলনে নিজের এই অবস্থানের কথা জানান জেলেন্সকি। সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা মোটেও তার লক্ষ্য নয়। যদি যুদ্ধ থামিয়ে ইউক্রেনে স্থায়ী শান্তির নিশ্চয়তা দেয়া হয়, তবে তার বিনিময়ে প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়তে রাজি তিনি।

এছাড়া ইউক্রেনকে যদি পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদ দেয়া হয়, তার বিনিময়েও অনায়াসে প্রেসিডেন্টের পদ ছাড়তে সম্মত বলে জানান জেলেন্সকি। তিনি বলেন, ‘যদি সত্যিই ইউক্রেনে যথাযথ শান্তি নিশ্চিত করা হয়, আর তার জন্য আমার পদত্যাগের প্রয়োজন পড়ে, তবে আমি তা করতে প্রস্তুত। দ্বিতীয়ত, কার্যকর প্রক্রিয়ায় এই দেশকে যদি ন্যাটোতে যুক্ত করা হয়, তার বিনিময়েও আমি তাৎক্ষণিকভাবে প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়তে রাজি আছি। সে জন্য বেশি সময় নেবো না’।

এ প্রসঙ্গে জেলেন্সকি আরো বলেন, এক দশক ধরে মসনদ দখলে রাখার আকাঙ্ক্ষা তার নেই। তবে শান্তি চুক্তি চাইলে, ইউক্রেন কখনোই ন্যাটোতে যুক্ত হতে পারবে না, বরাবরই এই শর্ত জানিয়ে আসছে রাশিয়া। ক্রেমলিনের মতে, পার্শ্ববর্তী দেশ ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্যপদ পাওয়া রাশিয়ার জন্য গুরুতর নিরাপত্তা হুমকি। তাছাড়া কিয়েভকে ন্যাটোর সদস্যপদ দেয়ার বিপক্ষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও।

এদিকে যুদ্ধের তৃতীয় বর্ষপূর্তি ঘিরে সোমবার ইউরোপের নেতাদের সাথে গুরুত্বপূর্ণ এক বৈঠকে অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন জেলেন্সকি। ওই বৈঠকে যুদ্ধের ব্যাপারে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার বদলে স্বল্পমেয়াদী করণীয় নিয়ে আলোচনা হবে।

অন্যদিকে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ৫০০ বিলিয়ন ডলারের চুক্তিতে যাওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ট্রাম্প ও জেলেন্সকির সম্পর্ক আরো তিক্ত হয়ে উঠেছে। ট্রাম্পের দাবি, সামরিক সহায়তার বিনিময়ে ইউক্রেনের কাছে ৫০০ বিলিয়ন ডলার পাওনা যুক্তরাষ্ট্রের। এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে জেলেন্সকি জানিয়েছেন, ইউক্রেন এ যাবত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা পেয়েছে। আর সেগুলো ছিল সহায়তা, সহায়তা কখনোই ঋণ হতে পারে না। ইউরোপের অন্যান্য দেশও সহায়তা দিয়েছে।

পরবর্তী প্রজন্মগুলোর ওপর আর্থিক চাপ তৈরি হয়, এ ধরনের কোনো চুক্তিতে যাবেন না বলেও জোরালো অঙ্গীকার করেছেন জেলেন্সকি। তবে অর্থনৈতিক চুক্তির প্রশ্নে ট্রাম্পের সাথে আলোচনায় বসতে চান বলে জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে এসব নাটকীয়তার মাঝেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন-ইইউ ইউক্রেনের তুলনায় রাশিয়ার পেছনে বেশি অর্থ ব্যয় করছে বলে নতুন তথ্য সামনে এসেছে। জ্বালানি বিষয়ক ফিনল্যান্ডভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা- সিআরইএ জানিয়েছে, ২০২৪ সালে রাশিয়া থেকে জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানি বাবদ ২৩ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে ইইউ। একই সময়ে আর্থিক সাহায্য বাবদ ইউক্রেনকে ১৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে তারা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ার ওপর ইউরোপের জ্বালানি নির্ভরতা কমানোর কথা বলা হলেও, তা যে এখনো চলমান সিআরইএ’র প্রতিবেদনে সে চিত্রই উঠে এসেছে। শুধু তাই নয়, যুদ্ধের মাঝেও মিত্র ইউক্রেনকে আর্থিক সহায়তা বাবদ যে পরিমাণ অর্থ দেয়া হয়েছে, তার তুলনায় রাশিয়ার জ্বালানি আমদানিতে অধিক ব্যয়ের বিষয়টি কিয়েভের জন্য উদ্বেগজনক।

Exit mobile version