অনলাইন ডেস্ক: কম্বোডিয়া ছাড়াও ভিয়েতনামের পোশাক রপ্তানি পরিস্থিতি বাংলাদেশের চেয়ে ভালো।
করোনার থাবায় বিশ্বের অন্যতম বৃহত বাজার যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানিতে রীতিমত ধস নেমেছে। দেশটির পোশাক আমদানির তথ্য সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান ওটেক্সার (অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল) হিসাব অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে দেশটির পোশাক আমদানি কমেছে প্রায় ৩১ শতাংশ। এর ধাক্কা লেগেছে দেশটিতে রপ্তানিকারক প্রায় সব দেশেই।

একমাত্র কম্বোডিয়া বাদে সেখানে শীর্ষ ১০ রপ্তানিকারক দেশের সবারই রপ্তানি কমেছে। তবে ওটেক্সার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আলোচ্য সময়ে কম্বোডিয়া ছাড়াও ভিয়েতনামের পোশাক রপ্তানি পরিস্থিতি বাংলাদেশের চেয়ে ভালো। অন্যদিকে প্রধান রপ্তানিকারক চীনের অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মোট ৩ হাজার ৩৮৭ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পোশাক পণ্য আমদানি করেছে। আগের বছরের একই সময়ে এই পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৮৮৬ কোটি ৫৭ লাখ ডলারের।

ওটেক্সার হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের সাত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি কমেছে ১৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ। একই সময়ে ভিয়েতনামের রপ্তানি কমেছে ১১ শতাংশের মতো। দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এখনো দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পোশাক রপ্তানিকারক দেশের তালিকায় রয়েছে। অন্যদিকে কম্বোডিয়ার রপ্তানি কমেনি, বরং বেড়েছে ৬ শতাংশের কিছু বেশি।

করোনার অতিমারিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার পোশাক রপ্তানি বাড়ার পেছনে কিছু কারণ তুলে ধরেছেন রপ্তানিকারকরা। উভয় দেশই পণ্য পাঠানোর সময়ে (লিড টাইম) বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। অন্য দিকে ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা পায়। আবার তারা কৃত্রিম তন্তুনির্ভর (ম্যান মেইড ফাইবার) ব্যবহার করে পোশাক রপ্তানি করে বেশি। চীন থেকে একই কাঁচামাল আমদানি করে রপ্তানির ক্ষেত্রে সময়ের দিক থেকে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে থাকে ভিয়েতনাম।

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ফতুল্লা গ্রুপের কর্ণধার ফজলে শামীম এহসান ইত্তেফাককে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের পোশাক রপ্তানিতে সাড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক রয়েছে কিন্তু ভিয়েতনামের পণ্যে শুল্ক নেই। শুল্ক সুবিধা থাকায় বাংলাদেশের চাইতে পরিষ্কারভাবে এগিয়ে থাকছে ভিয়েতনাম। তাদের গভীর সমুদ্র বন্দর রয়েছে। ফলে তারা সেখান থেকে সরাসরি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাতে পারে। আর আমাদের ফিডার ভ্যাসেলে পণ্য কলম্বো, সিঙ্গাপুর কিংবা ভিয়েতনাম পাঠাতে হয় আগে। এরপর সেখান থেকে মাদার ভ্যাসেলে যুক্তরাষ্ট্রে যায়। ফলে লিড টাইমে তারা এগিয়ে থাকছে। এসব কারণে তারা আমাদের চাইতে এগিয়ে রয়েছে।

বর্তমানে পোশাক রপ্তানিকারক হিসেবে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান প্রতিযোগী দেশ মনে করা হয় ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়াকে। তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি হয়েছে ২৯০ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের। আগের বছরের একই সময়ে দেশটিতে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩৫৬ কোটি ৬৫ লাখ ডলারের পোশাক পণ্য।

অন্যদিকে ভিয়েতনাম চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেছে ৬৯৪ কোটি ২২ লাখ ডলারের পোশাক পণ্য। আর কম্বোডিয়া ২০১৯ সালে ১৪৫ কোটি ডলারের রপ্তানি করলেও চলতি বছরের সাত মাসে রপ্তানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫৪ কোটি ডলারের।

এছাড়া গত সাত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনের রপ্তানি কমেছে ৪৯ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে দেশটিতে চীনের পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৭৩৪ কোটি ৬৪ লাখ ডলারের। গত বছরের একই সময়ের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৪৫০ কোটি ডলারের পোশাক পণ্য।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ ১০ পোশাক রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে গত সাত মাসে ইন্দোনেশিয়ার কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ, ভারতের ৩৩ শতাংশ, মেক্সিকোর ৩৬ শতাংশ, হন্ডুরাসের ৪৭ শতাংশ পাকিস্তানের ১৯ শতাংশ এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রায় ২৬ শতাংশ।