অনলাইন ডেস্ক : আততায়ীর গুলিতে আহত হওয়ার দু’দিন পর কানে ব্যান্ডেজ নিয়ে রিপাবলিকান পার্টির জাতীয় সম্মেলনে হাজির হন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের মিলওয়াউকি শহরে এ সম্মেলনে সবার দৃষ্টির কেন্দ্রে ছিলেন তিনি। এতে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাম্পকে আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে বেছে নিয়েছেন তাঁরই একসময়ের কট্টর সমালোচক ওহাইওর সিনেটর জে ডি ভ্যান্সকে।

মঙ্গলবার সিএনএন এসব তথ্য জানিয়েছে। সম্মেলন কক্ষে প্রবেশের পর দলের নেতাকর্মীরা ‘লড়াই’ ‘লড়াই’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। গত শনিবার উইসকনসিনে নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্পের ওপর আততায়ী গুলি চালালে তা তাঁর কান ফুটো করে চলে যায়। অল্পের জন্য বেঁচে যাওয়া ট্রাম্পকে সিক্রেট সার্ভিসের লোকজন সরিয়ে নেওয়ার আগে মঞ্চে ওপরের দিকে হাত তুলে তিনি বলতে থাকেন– ‘লড়াই’, ‘লড়াই’, ‘লড়াই’। এ শব্দগুলোই আবার দলের জাতীয় সম্মেলনে তিনি শুনতে পেলেন।

মিলওয়াউকিতে সম্মেলন শুরুর আগেই দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য ওহাইওর জে ডি ভ্যান্সকে ‘রানিং মেট’ বেছে নিয়েছিলেন ট্রাম্প। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র সিএনএনকে জানায়, সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে নাম ঘোষণার ২০ মিনিট আগে ট্রাম্প তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ভ্যান্সকে পছন্দের কথা জানিয়েছিলেন। এর আগে গত শনিবার ট্রাম্পের মার-এ লাগো ক্লাবে দুই নেতা সাক্ষাৎ করেন। মনে করা হচ্ছে, ভ্যান্সের প্রতি কর্মজীবী ভোটারের আস্থাকে কাজে লাগাতে এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন ট্রাম্প। এ সিনেটরের স্ত্রী ঊষা চিলুকুরি ভ্যান্স একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত।

কট্টর সমালোচক পুঁজিপতি ভ্যান্সকে বেছে নেওয়া ট্রাম্পের পক্ষে ছিল এক ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ। প্রকাশ্যে এবং গোপনে তাঁকে প্রায়ই ট্রাম্পের সমালোচনা করতে দেখা যেত। ২০১৬ সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি ট্রাম্পের সমালোচনা করে লেখেন¬– ‘তিনি ভাবছেন, ট্রাম্প কি গাধা নাকি যুক্তরাষ্ট্রে হিটলার।’ এবার সেই ট্রাম্পই বলছেন, জে ডি ভ্যান্স সমালোচক থেকে তাঁর সমর্থকে পরিণত হয়েছেন। রিপাবলিকান পার্টির সম্মেলনে ভ্যান্স সরাসরি ট্রাম্পের প্রতি তাঁর সমর্থন প্রকাশ করেন, যা প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে ট্রাম্পের পথকে আরও প্রশস্ত করেছিল।

এ প্রেক্ষাপটে ফ্লোরিডার আদালতের বিচারক ট্রাম্পের বিরুদ্ধে গোপন নথি রাখার মামলা বাতিল করেছেন। রিপাবলিকান পার্টির এ কনভেনশনে আসা অতিথির মধ্যে যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসকেও দেখা গেছে, যিনি ব্রিটেনে এবারের পার্লামেন্ট নির্বাচনে হেরে গেছেন। বিবিসি লিখেছে, কনভেনশনে ট্রাম্প যখন হেঁটে আসছিলেন এবং ভিআইপি সেকশনের সিঁড়ি ভেঙে মঞ্চে উঠছিলেন, তখন প্রথম হাত মেলান টাকার কার্লসনের সঙ্গে। কার্লসন ডানপন্থি মিডিয়ার গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। এর পর তিনি যখন তাঁর রানিং মেট জে ডি ভ্যান্সের পাশে যান, তখন তাঁর কানের ব্যান্ডেজ দেখা গেলে দলীয় সমর্থকরা চিৎকার করে স্লোগান দিতে থাকেন– ‘ইউএসএ! ইউএসএ!’ তার পর বলেন, ‘ফাইট! ফাইট! ফাইট!’

অনুষ্ঠানস্থলে আসা ৩৫ বছর বয়সী ইরিন লুকাস বলেন, তিনি একজন মার্কিনি ও রিপাবলিকান হিসেবে গর্বিত। অরিগন অঙ্গরাজ্যের ডেলিগেট জেসিকা ডেভিডসন বলেন, ট্রাম্পের কানের ব্যান্ডেজ তাঁকে আবেগাপ্লুত করেছে। কারণ, কেউ তাঁকে হত্যার চেষ্টা করেছে। রিপাবলিকান পার্টির সম্মেলনে বক্তা ছিলেন প্রায় এক ডজনের মতো। এর মধ্যে রাজনীতিক, কনজারভেটিভ অ্যাক্টিভিস্ট ও সাধারণ নাগরিকরা ছিলেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায় আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন ব্যবসায়ী ইলন মাস্ক। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের তথ্য অনুযায়ী, এজন্য মাস্ক প্রতি মাসে ৪৫ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ অনুদান ট্রাম্পপন্থি তহবিল ‘সুপার প্যাক’-এ দেবেন তিনি। এর আগে গত শনিবার হামলার শিকার হওয়ার পর ট্রাম্পের প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন প্রকাশ করেন এ বিলিয়নিয়ার।