Home আন্তর্জাতিক যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে আরব জনতা

যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে আরব জনতা

অনলাইন ডেস্ক : গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বিশাল বিক্ষোভ হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে ম্যানহাটানে রাস্তায় জড়ো হয় হাজার হাজার ফিলিস্তিনপন্থি। এ সময় তাদের হাতে ইসরায়েলকে মার্কিন সহায়তা বন্ধের দাবিসংবলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। ছবি: নিউইয়র্ক টাইমস

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নির্বিচারে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। প্রতিদিন দীর্ঘ হচ্ছে মৃতের সারি। নিহতদের বড় একটি অংশই শিশু। সহায়তা পাঠানোসহ দেশটির এ আগ্রাসনকে বৈধতা দিতে বিশ্বজুড়ে তৎপরতা চালাচ্ছে মার্কিন প্রশাসন।

ইসরায়েলের ধ্বংসাত্মক ও অমানবিক এ অভিযানে জোরালো সমর্থন দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আরব বিশ্বে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ওই অঞ্চলের মার্কিন কূটনীতিকরা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনকে সতর্ক করেছেন। খবর সিএনএনের।

ওই সতর্ক বার্তায় মার্কিন কূটনীতিকরা বলেছেন, এক প্রজন্মের জন্য আরব জনগণের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এ বার্তা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ সম্পর্কে মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে গভীর উদ্বেগের বিষয়টি তুলে ধরেছে।

গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনকে দেওয়া এক তারবার্তায় ওমানের মার্কিন দূতাবাস বলেছে, আমরা যুদ্ধক্ষেত্রে খারাপভাবে হেরে যাচ্ছি। ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের জোরালো সমর্থন আরব জনগণ বস্তুগত ও নৈতিক অপরাধ বলে মনে করে। এটা তাদের কাছে সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ।

দূতাবাসের বার্তাটি মাস্কাটের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মার্কিন কর্মকর্তা লিখেছেন এবং সেটি অন্যদের মধ্যে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ, সিআইএ ও এফবিআইর কাছে পাঠানো হয়। মিসরের কায়রোয় মার্কিন দূতাবাসের আরেকটি তারবার্তা সিএনএনের হাতে এসেছে। ওই বার্তায় রাষ্ট্রচালিত মিসরীয় সংবাদপত্রের মন্তব্য তুলে ধরা হয়েছে, ‘প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নিষ্ঠুরতা এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি অবজ্ঞা পূর্ববর্তী সব মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ছাড়িয়ে গেছে।’

গাজায় ধ্বংসের চিত্র ও ভয়াবহ মানবিক সংকটের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সমর্থনের কারণে বাইডেন অভ্যন্তরীণ ও বিদেশে ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে রয়েছেন। মার্কিন প্রশাসন যখন যুদ্ধবিরতির আহ্বান অস্বীকার করেছে, তখন কর্মকর্তারা গাজায় ত্রাণ সহায়তা বাড়াতে, উপত্যকায় আরও সহায়তা পাঠাতে এবং বেসামরিক লোকদের পালানোর অনুমতি দিতে মানবিক বিরতির জন্য চাপ দিয়েছে। এ অবস্থায় সম্প্রতি আরব বিশ্বের মার্কিন মিত্ররাও গাজার মানবিক সংকটে গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন জর্ডানের রাজধানী আম্মানে সৌদি আরব, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার ও জর্ডানের শীর্ষ কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে আরব নেতাদের চাপের মুখে পড়েন ব্লিংকেন।

অবশেষে বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউস জানায়, ইসরাইল উত্তর গাজায় দৈনিক চার ঘণ্টার সামরিক অভিযানের বিরতি দিতে সম্মত হয়েছে। তবুও প্রশাসনের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সমর্থন নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। বাইডেন প্রশাসনের কিছু জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছেন, ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের এমন দিক রয়েছে, যা লুকানো যায় না। যুদ্ধবিরতি সমর্থন করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি সরকারি কর্মচারীদের আহ্বান বাড়ছে এবং অন্যরাও ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার নির্মমতা দেখে বিচলিত।

হোয়াইট হাউস কম্পাউন্ডের কাছে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ প্রতিদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। গত সপ্তাহে ওয়েস্ট উইংয়ের একটি ফটকে রক্তের অনুকরণে হাতে লেখা ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভ করেন ফিলিস্তিনপন্থিরা। সেখানে ‘গণহত্যা জো বাইডেন’ এর মতো শব্দও লেখা ছিল।

এদিকে গাজার যুদ্ধ সম্প্রসারণ অনিবার্য হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরাবদুল্লাহিয়ান। কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান বিন জসিম আল থানির সঙ্গে ফোনালাপে তিনি বলেন, গাজার বেসামরিক বাসিন্দাদের ওপর নির্বিচারে হামলার কারণে যুদ্ধের পরিধি সম্প্রসারণ অনিবার্য হয়ে উঠেছে। যদিও সংঘাতের ‘অনিবার্য সম্প্রসারণ’ বলতে তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন, তা স্পষ্ট নয়।

Exit mobile version