অনলাইন ডেস্ক : এতদিন গাজায় যুদ্ধবিরতির বিরোধিতা করে আসছিল ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। একাধিকবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ভেটোও দিয়েছে দেশটি। ফলে রেজল্যুশন পাস হয়নি মানবিক যুদ্ধবিরতির। এবার দেশটি নিজে থেকেই সাময়িক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব তুলতে যাচ্ছে নিরাপত্তা পরিষদে। এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে একটি খসড়াও তৈরি করেছে মার্কিন প্রশাসন। তবে এটি কবে নাগাদ পরিষদে ভোটে দেওয়া হবে– তা উল্লেখ করা হয়নি। খবর রয়টার্সের।
মার্কিন খসড়ায় দেখা গেছে, অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি গাজার দক্ষিণের রাফায় বড় স্থল আক্রমণের যে পরিকল্পনা করেছে ইসরায়েল, তার বিরোধিতা করছে ওয়াশিংটন। এ ছাড়া হামাসের হাতে বন্দি সব জিম্মিকে মুক্তি এবং গাজায় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছাতে সব ধরনের বাধা দূর করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অবশ্য যুদ্ধবিরতির জন্য আলজেরিয়ার খসড়া প্রস্তাবে গতকালই ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ শুরুর প্রায় পাঁচ মাস পর অবস্থান বদলাল ওয়াশিংটন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মার্কিন প্রশাসনের এক সিনিয়র কর্মকর্তা সোমবার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ভোটে ‘তাড়াহুড়ো করবে না’। একই সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধে আলোচনার জন্য সময় দিতে চায়। নিরাপত্তা পরিষদে কোনো বিষয়ে প্রস্তাব পাস করাতে এর পক্ষে অন্তত ৯টি দেশের ভোট প্রয়োজন।
মার্কিন খসড়ায় উল্লেখ রয়েছে, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে রাফায় বড় স্থল আক্রমণ চালানো হলে বেসামরিক মানুষের আরও ক্ষতি হবে।’
ইসরায়েলি বর্বরতা শুরুর পর এটি দ্বিতীয়বারের মতো গাজা ইস্যুতে ওয়াশিংটনের প্রস্তাব। গত অক্টোবরে দেওয়া প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র ‘যুদ্ধবিরতি’ শব্দটি ব্যবহার না করলেও এবার ব্যবহার করেছে। এটি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ওই প্রস্তাবে রাশিয়া ও চীন ভেটো দিয়েছিল।
এর আগে ইসরায়েলের বিপক্ষে আনা খসড়া প্রস্তাবে দুইবার ভেটো দেয় যুক্তরাষ্ট্র। আর ভোটদানে বিরত থাকে দুইবার।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক সংকট গ্রুপের পরিচালক রিচার্ড গোয়ান বলেছেন, ওয়াশিংটনের এই খসড়া প্রস্তাবে ইসরায়েল এখন আরও উদ্বিগ্ন হবে। তিনি বলেন, খসড়াটি নেতানিয়াহুর জন্য জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো সবচেয়ে শক্তিশালী সংকেত।
মার্কিন প্রশাসনের আরেক সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, মার্কিন এই খসড়া ‘ইসরায়েল বা আমাদের অন্য কোনো অংশীদারের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির বিষয়টি বোঝায় না।’
এই খসড়ায় আরও কিছু বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে গাজায় জনসংখ্যাগত বা আঞ্চলিক পরিবর্তনের প্রচেষ্টা এবং বাফার জোন স্থাপনের ইসরায়েলি পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে। একই সঙ্গে বেসামরিক অবকাঠামোর ব্যাপক ধ্বংস করা এবং অস্থায়ী বা স্থায়ীভাবে গাজার ভূখণ্ডকে কমিয়ে ফেলার মতো যে কোনো পদক্ষেপের বিরোধিতাও করছে যুক্তরাষ্ট্র।
এদিকে টাইমস অব ইসরায়েলের খবরে বলা হয়েছে, যুদ্ধের কারণে গত বছরের শেষ তিন মাসে ইসরায়েলের অর্থনীতির আকার ২০ শতাংশ কমেছে; যা করোনা মহামারির সময়ের কাছাকাছি। ওই সময় ৩০ শতাংশ কমেছিল দেশটির অর্থনীতি। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, হামাসের সঙ্গে যুদ্ধে ব্যয় বৃদ্ধি, অতিরিক্ত সেনাসদস্যকে রণাঙ্গনে পাঠানো, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কমে যাওয়া। গত সোমবার কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো এই তথ্য প্রকাশ করে।