অনলাইন ডেস্ক : যুক্তরাজ্যে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে লাখ লাখ মানুষ অনাহারে অথবা অর্ধাহারে দিনাতিপাত করতে বাধ্য হয়েছেন বলে নতুন এক জরিপে উঠে এসেছে। দেশটির দাতব্য সংস্থা ফুড ফাউন্ডেশনের এই জরিপের ফলে বলা হয়েছে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে লাখ লাখ মানুষ তাদের মৌলিক খাদ্য চাহিদাও পূরণ করতে পারছেন না।

ফুড ফাউন্ডেশন বলছে, যুক্তরাজ্যে জীবনযাত্রার সঙ্কট গভীর হওয়ায় সেপ্টেম্বর মাসে প্রত্যেক পাঁচটি নিম্ন-আয়ের পরিবারের মধ্যে অন্তত একটি পরিবার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হয়েছে। এর অর্থ কোভিড লকডাউনের সময়ের প্রথম সপ্তাহের তুলনায় সেপ্টেম্বর মাসে দেশটিতে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

ফাউন্ডেশনের সর্বশেষ ট্র্যাকার অনুযায়ী, গত জানুয়ারির পর থেকে যুক্তরাজ্যে ক্ষুধার মাত্রা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। গত মাসে দেশটির প্রায় এক কোটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ এবং ৪০ লাখ শিশু দৈনিক নিয়মিত খাবারও খেতে পারেনি। যে কারণে দেশটিতে ঝুঁকিপূর্ণ সব পরিবারের সুরক্ষায় শক্তিশালী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জোরাল হয়েছে।

স্কুলের ক্ষুধার্ত শিশুরা সহপাঠীদের কাছ থেকে খাবার চুরি, স্কুলে খাওয়ার সামর্থ্য না থাকার কারণে দুপুরের খাবার এড়িয়ে যাওয়া, অথবা মাত্র এক টুকরো রুটি দিয়ে মধ্যাহ্নভোজ সারার তথ্যও জরিপে উঠে এসেছে। ভয়াবহ এই চিত্র সামনে আসার পর দেশটিতে অতিরিক্ত আরও ৮ লাখ শিশুকে বিনামূল্যে স্কুলের খাবার সরবরাহের দাবি উঠেছে।

যুক্তরাজ্যের নেতৃস্থানীয় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ স্যার মাইকেল মারমত দেশটিতে ক্ষুধা বৃদ্ধির এই হারকে অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, এটি অবসাদ, মানসিক অসুস্থতা, স্থূলতা, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগ বৃদ্ধিসহ সমাজের সবচেয়ে খারাপ অবস্থার জন্য ক্ষতিকারক স্বাস্থ্য পরিণতি ডেকে আনবে।

ফুড ফাউন্ডেশন মহামারির ঠিক আগ মুহূর্ত থেকে যুক্তরাজ্যের ৪ হাজার ২০০ জনেরও বেশি প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের ওপর এই জরিপ চালিয়েছে। জাতীয়ভাবে প্রতিনিধিত্বমূলক এই জরিপের মাধ্যমে দেশটিতে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সন্ধান করেছে সংস্থাটি। ২০২০ সালের মার্চ ও এপ্রিলে জারি করা লকডাউনের প্রথম পাক্ষিকের সময় সুপারমার্কেটের তাক খালি এবং খাদ্য সরবরাহ ব্যাপকভাবে ব্যাহত হওয়ায় অন্তত ১৪ শতাংশ পরিবার খাবার এড়িয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

তবে পরবর্তীতে কয়েকটি সমীক্ষায় দেখা যায়, দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত পরিবারগুলোর জন্য সরকারের কোভিড সহায়তা কর্মসূচি চালু হওয়ার পর দেশটিতে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার হার কমেছে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে ৭ থেকে ৮ শতাংশ পরিবার স্থিতিশীল হয়েছে। করোনা মহামারির সময় সৃষ্ট সংকট প্রশমনে দেশটির সরকার সাপ্তাহিক সর্বজনীন ২০ পাউন্ড ঋণ, সাময়িক ছুটি এবং ফুড ব্যাংকে জরুরি খাদ্য সরবরাহ তহবিল বৃদ্ধি করেছিল।

গত জানুয়ারি থেকে ক্রমবর্ধমান খাদ্যমূল্য ও জ্বালানির বিল বৃদ্ধি এবং সরকারের কোভিড সহায়তা বাতিল করায় দেশটিতে ক্ষুধা তীব্রভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার জীবনযাত্রার সহায়তামূলক পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও দেশটিতে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় থাকা দুই তৃতীয়াংশেরও বেশি পরিবার বলেছে, তারা কম রান্না করেছেন অথবা জ্বালানির ব্যয় কমাতে ফ্রিজ বন্ধ করেছেন।

ফুড ফাউন্ডেশনের জরিপে দেখা গেছে, গত মাসে যুক্তরাজ্যের ১৮ শতাংশের বেশি পরিবার বলেছে, তারা খাবার গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে অথবা দিনের বেশিরভাগ সময় না খেয়ে থেকেছেন। ক্ষুধার্ত হওয়া সত্ত্বেও কম খেয়েছেন বলে জানিয়েছেন ১১ শতাংশ মানুষ। আর ৬ শতাংশ বলেছেন, তারা সারাদিন কোনও খাবারই গ্রহণ করেননি। বৃহৎ পরিবারগুলোতে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা সবচেয়ে বেশি বলে জরিপে উঠে এসেছে।

দেশটির সরকারের একজন মুখপাত্র দ্য গার্ডিয়ানকে বলেছেন, সমাজের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করাই আমাদের প্রধান অগ্রাধিকারের বিষয়। মানুষ যে ক্রমবর্ধমান দামের সাথে কুলিয়ে উঠতে পারছে না, আমরা সেটিও স্বীকার করছি। যে কারণে আমরা সবচেয়ে বেশি অভাবগ্রস্ত লাখ লাখ মানুষকে কমপক্ষে ১ হাজার ২০০ পাউন্ড অর্থ সরাসরি সহায়তা প্রদান করছি।