অনলাইন ডেস্ক : নানামুখী সংকট আর অস্থিতিশীলতায় বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কা। বিক্ষোভের জেরে সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের বাড়িতে গত মাসে হামলার ঘটনা ঘটেছিল। এমনকি আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের বাড়িতেও।

আর এই ঘটনায় রোববার (৩১ জুলাই) বিক্ষোভকারীদের ওপরে রীতিমতো ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বিক্রমাসিংহে। তিনি বলেন, (আমাকে) গো হোম বলার কোনো মানে নেই, কারণ যাওয়ার মতো আর কোনো বাড়ি নেই আমার।

রোববার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআই। শ্রীলঙ্কান সংবাদমাধ্যম কলম্বো গেজেট-এর বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কার ক্যান্ডি শহরে বক্তৃতা করার সময় বিক্রমাসিংহে বলেন, যে কিছু লোক তাকে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করার হুমকি দিয়েছে।

জবাবে বিক্রমাসিংহে বলেন, ‘আমি আপনাদের কাছে এটা বলতে পারি যে, আমি তেমনটা (বাড়িতে ফিরে যেতে) করতে পারবো না কারণ আমার কাছে যাওয়ার মতো কোনো বাড়ি নেই।’

বিক্রমাসিংহে আরও বলেন, তাকে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার দাবি করা সময়ের অপচয় মাত্র। বরং প্রতিবাদকারীদের উচিত তার পুড়ে যাওয়া বাড়িটি পুনর্নির্মাণের চেষ্টা করা। তিনি বলেন, ‘যার বাড়ি নেই, তাকে বাড়িতে যেতে বলার কোনো মানে নেই।’

আর তাই নিজের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িটি পুনর্নির্মাণের পরে প্রতিবাদকারীরা তাকে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার (গো হোম) দাবি করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। কলম্বো গেজেট জানিয়েছে, রোববার শ্রীলঙ্কান এই প্রেসিডেন্ট বলেছেন, বিক্ষোভকারীদের হয় দেশ পুনর্গঠন করতে হবে আর না হলে তার বাড়ি পুনর্নির্মাণ করে দিতে হবে।

প্রেসিডেন্ট বিক্রমাসিংহে বলেন, শ্রীলঙ্কাকে অর্থনৈতিক সংকট থেকে বের করে আনতে সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাথে একটি চুক্তি প্রয়োজন, তবে অস্থিতিশীলতার কারণে আইএমএফের সঙ্গে সম্ভাব্য এই চুক্তিতে বিলম্ব হচ্ছে।

শ্রীলঙ্কা যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে সেগুলো স্থায়ী সমাধানের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

গত মাসে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়া সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, অর্থনৈতিক সংকটের জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসেকে দোষারোপ করার কোনো মানে নেই, বরং দেশকে অর্থনৈতিক দুরাবস্থা থেকে বের করে আনতে এবং ঋণ শোধ করার জন্য সকল রাজনৈতিক দলকে একত্রিত হতে হবে।

গত সাত দশকে এবারই প্রথম নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপ রাষ্ট্র। বর্তমানে দেশটিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বলে আর কিছু নেই। ফলে ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ অধ্যুষিত শ্রীলঙ্কা খাবার, ওষুধ, জ্বালানির মতো অতি জরুরি আমদানিও করতে পারছে না।

উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর এবারই সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। করোনা মহামারি, জাতীয় অর্থনীতি পরিচালনায় সরকারের অদক্ষতা, বিশ্বজুড়ে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রীয় কোষাগারে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ তলানিতে নেমে যাওয়ায় শ্রীলঙ্কায় বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

জ্বালানি, খাবার এবং ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর আমদানি মূল্য পরিশোধ করতে পারছে না শ্রীলঙ্কা। ডিজেলের সরবরাহ অনিয়মিত হয়ে পড়ায় প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না শ্রীলঙ্কার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো। ফলে গত কয়েক মাস ধরে সেখানে দিনের বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকছে না।