Home কলাম মুসলমান ফেইসবুকে কোরআনের উপর পদচিহ্ন দিয়ে হিন্দু ও বৌদ্ধ হত্যা কেন?

মুসলমান ফেইসবুকে কোরআনের উপর পদচিহ্ন দিয়ে হিন্দু ও বৌদ্ধ হত্যা কেন?

সোনা কান্তি বড়ুয়া : ভারতে ইসলাম ধর্মের অবমাননায় বাংলাদেশে হিন্দু ‘হত্যা কেন? ইসলামী মৌলবাদী গোষ্ঠীর হিন্দু ও বৌদ্ধ হত্যায় মানবধর্ম কেঁপে উঠেছে! মৌলবাদী গোষ্ঠী ভুয়া আইডি নিয়ে রামুর উত্তম বড়ুয়াকে হত্যা করষর ১০ বছর পর গত ১৮ জুন ২০২২ মির্জাপুর ডিগ্রী কলেজেরঅধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে হত্যা করেছে! অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই সত্যি বাংলাদেশে স্বাধীনতার মূলমন্ত্র কি মুসলমান মৌলবাদী গোষ্ঠীর ইসলাম ধর্ম অবমাননায় ফেক আইডিতে? মুসলমান আহমেদ সালমান রুশদির চতুর্থ উপন্যাস “দ্য স্যাটানিক ভার্সেস” (১৯৮৮ সালে প্রকাশিত) নিয়ে মৌলবাদী গোষ্ঠ কোনো স¤প্রদায়ের বাড়িঘর, দোকানপাট ধ্বংসযজ্ঞ করল নষ! একে বলা হয় চিটিংবাজ মৌলবাদী ধর্মের সহনশীলতার বকওয়াস। সংখ্যালঘু নির্যাতন উপশমে বিশ্বমৈত্রীর সব ধর্ম নিয়ে হৃদয়সরণি থেকে বইয়ের রাজপথে সর্ব জীবে দয়া এবং অহিংসা পরম ধর্ম আবহমান বেদনার অনুভব। বাংলাদেশে বীভৎস হত্যাযজ্ঞ প্রথায় মানুষের জীবন কেড়ে নেওয়াটাই ইসলামী মৌলবাদী গোষ্ঠী ধর্মান্ধদের ধর্ম।

হিন্দু বৌদ্ধ জুম্ম ও পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ মুসলমান মৌলবাদী গোষ্ঠীর ইসলাম ধর্ম অবমাননায় ফেক আইডিতে জিম্মি। প্রতিটি ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগণের হামলার প্রেক্ষাপট একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস। এবং প্রতিবারই ঘটনা ঘটার বেশ কিছুদিন পর সরকার থেকে বলা হয়- হামলাকারীদের চিহ্নিত করা হবে; সে যে দলেরই হোক না কেন; রেহাই পাবে না। কিন্তু আর কিছুই হয় না। শুধু ঘোষণা আসে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মেরামত কিংবা নির্মাণের। কিন্তু ভুক্তভোগী অনেকেই বলেন, নতুন ঘরবাড়ি তাঁরা চান না। বরং তাঁরা নিরাপদ জীবন চান। এখানে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি- কারা, কী জন্য এই হামলাগুলো করে বা করায়। এর পেছনে কী উদ্দেশ্য? এর পেছনে থাকে মূলত ভূমি দখলের রাজনীতি। হামলাকারীরাও ‘সাধারণ’ কোনো মানুষ না। ভূমি দখলের বাইরে ভোটের রাজনীতিও এর সঙ্গে যুক্ত। ধারাবাহিকভাবে এত সা¤প্রদায়িক হামলার পরও জঘন্য চাতুরীরমৌখিক হুঁশিয়ারি ছাড়া এখন পর্যন্ত আর কোনো ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি সরকার। কারণ, বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি তাদের রাজনৈতিক প্রয়োজনে যখন-তখন ধর্মকে ব্যবহার করছে। তারাও তাই নিশ্চুপ থেকে এই হামলাকারীদের রাজনৈতিক আশকারা দেয় এবং হিসাব কষতে থাকে- কীভাবে এটিকে নির্বাচনে ব্যবহার করা যায়। লক্ষণীয়, বাংলাদেশে ধর্মহীন বিজ্ঞান খোঁড়া, বিজ্ঞানহীন ধর্ম অন্ধ!

ইসলামী মৌলবাদী গোষ্ঠী ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগণের সম্পদ হরিলুট করতে ২৫ হাজার ইসলামী জঙ্গি ২৯শে সেপ্টেম্বর ২০১২ সালে রামুর মুসলমান ফেইসবুকে উত্তম বড়ুয়ার ফেক আইডি বানিয়ে কোরাণের উপর পদচিহ্ন দিয়ে উত্তম বড়ুয়াকে হত্যা করে এবং মৌলবাদী গোষ্ঠী রামুর ২৩টি বৌদ্ধ বিহার ধ্বংসযজ্ঞ করেছে! মৌলবাদী গোষ্ঠী ১১৯টি বৌদ্ধ স¤প্রদায়ের বাড়িঘর, দোকানপাট ও মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ করেছে! ভুয়া আইডি নিয়ে উত্তম বড়ুয়াকে হত্যা করষর ১০ বছর পর গত ১৮ জুন ২০২২ মির্জাপুর ডিগ্রী কলেজেরঅধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে হত্যা করে জামায়াত মৌলবাদী গোষ্ঠীর অন্যায় ন্যায় হল, সত্য হল অসত্য, অসত্য হল সত্য, অধর্ম যুদ্ধ হল ধর্ম যুদ্ধ! মানবাধিকারের আলোকে ধর্মকে অবমাননা করার অধিকার যেমন কারো নেই, তেমনি আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে মন্দির, বাড়ি-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ভাংচুর ও নির্যাতন করার অধিকার কাউকে দেওয়া হয়নি। বিচারহীনতা ও ভয়ের সংস্কৃতির দরুন এই পরিস্থিতি এখন ভয়ঙ্কর ও অসহনীয় হয়ে উঠছে। বাংলাদেশের মতো একটি অসা¤প্রদায়িক দেশে এ ধরণের সা¤প্রদায়িক হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশে ইসলামী মৌলবাদী গোষ্ঠীর রাজনীতি কোরআন নিয়ে হিন্দুদের ধর্মে হস্তক্ষেপ করেছে’ গত ১৩।১০।২০২১ ইং তারিখে!

মানবজাতির হৃদয়াসনে মানবতা চির দেদীপ্যমান হয়ে ছিল, আছে এবং থাকবে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্ষমতাবানদের বলি হিন্দু বৌদ্ধ নির্যাতন এবং (১) স্বপন কুমার বিশ্বাসকে ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অপবাদ দিয়ে পুলিশের সামনে’ জুতার মালা দিয়ে চরমভাবে অপমান করে পিটিয়ে হত্যা করেছে! (২) সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আসামিকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারসহ ছয় দফা দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন! (৩) বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সঞ্জয় সরকার ও উন্মেষ রায়কে কোনঠাসা করে মানসিক দিক দিয়ে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে। (৪) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরিটাস অধ্যাপক অরুণ কুমার বিশ্বাসের বাড়ির জমি দখল করে নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ শিক্ষক ঐক্য পরিষদ এসব ঘটনার তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং ঘটনাগুলোর সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছে।

সেই রেশ না কাটতেই ১৫ জুলাই ‘ধর্ম অবমাননা’র অভিযোগে সেই নড়াইলেরই লোহাগড়ায় হিন্দু বাড়িতে হামলা ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। নড়াইলের মির্জাপুরে কয়েক দিন আগে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছিল। অর্থাৎ এ রকমই একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে সেখানকার এক কলেজ অধ্যক্ষকে জুতার মালা পরানো হয়। সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, ফেসবুকে এক পোস্টের নিচে এক শিক্ষার্থী ধর্মীয় অবমাননামূলক মন্তব্য করেছে বলে এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া হয় এবং সেই অভিযোগ তুলে তার বাড়িতে হামলা ও আগুন দেওয়া হয়। সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, হামলাকারীদের নয় বরং অভিযুক্ত সেই শিক্ষার্থী এবং তার বাবাকে আটক করেছে পুলিশ। কেন একই কায়দায় এই সা¤প্রদায়িক হামলাগুলো হচ্ছে? এগুলো কি আসলে নিছক হামলা? এই ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ আসলে কী অর্থ বহন করে? এর রাজনৈতিক অর্থনীতিই আসলে এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।

নড়াইলের লোহাগড়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্টে কথিত ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ওঠার পর সতর্ক অবস্থান নিয়েছিল থানা পুলিশ (২২ জুলাই SAMAKAL)! কথিত ওই অভিযোগের জেরে যাতে সংখ্যালঘুদের ওপর বিক্ষুব্ধ জনতা যাতে হামলা না করতে পারে সেজন্য উপজেলার দিঘলিয়া গ্রামের সাহাপাড়ার পশ্চিম-দক্ষিণ অংশে অবস্থান নেন পুলিশ সদস্যরা। কারণ অভিযুক্ত আকাশ সাহার বাড়ি সাহাপাড়ার এ অংশে। পাশাপাশি বিক্ষুব্ধ জনতার ওপর ছিল কঠোর নজরদারি। পুলিশের সতর্কতার কারণে পশ্চিম-দক্ষিণাংশে সুবিধা করতে না পেরে অবস্থান পাল্টায় হামলাকারীরা। হঠাৎ করেই তারা সাহাপাড়ার পূর্ব দিকে চলে যায়। এরপর মন্দির ও বাড়িঘরে শুরু হয় হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের তাণ্ডব।
মানবাধিকারের আলোকে অকৃতজ্ঞ জামায়াতের উগ্র সা¤প্রদায়িকতার বাহক শক্তিটি ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে জনগণের সম্পদ হরিলুট করেছে! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত লিখেছেন, “জামায়াতের উগ্র সা¤প্রদায়িকতার বাহক শক্তিটি ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে জনগণের সম্পদ হরিলুট করেছে এবং পরবর্তীকালে বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনে ১৯৭০-৮০-র দশকে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক অর্থ সরবরাহ পেয়েছে; এসব অর্থ-সম্পদ তারা সংশ্লিষ্ট আর্থ-রাজনৈতিক মডেল গঠনে বিনিয়োগ করেছে; অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের বিনিয়োজিত প্রতিষ্ঠান উচ্চ মুনাফা করছে; আর এ মুনাফার একাংশ তারা ব্যয় করছে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে, একাংশ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রসারে, আর (কখনো কখনো) একাংশ নতুন খাত-প্রতিষ্ঠান সৃষ্টিতে।

গবেষণার তথ্যানুসারে, ২০১৪ সালে বাংলাদেশে মৌলবাদের অর্থনীতির বার্ষিক নিট মুনাফা আনুমানিক ২ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা। এ মুনাফার সর্বোচ্চ ২৭ শতাংশ ৬৬৫ কোটি টাকা আসে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে (ব্যাংক, বীমা, লিজিং কোম্পানি ইত্যাদি); দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৮.৮ শতাংশ ৪৬৪ কোটি টাকা আসে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ট্রাস্ট ও ফাউন্ডেশন থেকে; বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান খুচরা, পাইকারি, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে ২৬৬ কোটি টাকা আসে ১০.৮ শতাংশ; ওষুধ শিল্প ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান থেকে আসে ১০.৪ শতাংশ ২৫৬ কোটি টাকা; স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আসে ৯.২ শতাংশ ২২৬ কোটি টাকা; রিয়েল এস্টেট ব্যবসা থেকে আসে ৮.৫ শতাংশ ২০৯ কোটি টাকা, সংবাদ মাধ্যম ও তথ্য প্রযুক্তি থেকে আসে ৭.৮ শতাংশ ১৯৩ কোটি টাকা, আর রিকশা, ভ্যান, তিন চাকার সিএনজি, কার, ট্রাক, বাস, লঞ্চ, স্টিমার, সমুদ্রগামী জাহাজ, উড়োজাহাজের মতো পরিবহন-যোগাযোগ ব্যবসা থেকে আসে ৭.৫ শতাংশ বা ১৮৫ কোটি টাকা।

লক্ষণীয়, বাংলাদেশে ধর্মহীন বিজ্ঞান খোঁড়া, বিজ্ঞানহীন ধর্ম অন্ধ”! ২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ছোট বড় সাড়ে তিন হাজার মামলা হয়েছে। ধর্মীয় অনুভূতির সুড়সুড়ি কিংবা ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’-এর আওয়াজ তুলে দিয়ে সা¤প্রদায়িক হামলা চালিয়ে এদের মূল লক্ষ্য থাকে ভূমি দখল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা দেখতে পেয়েছি, বাংলাদেশ রাষ্ট্র নিশ্চুপ থাকায় রামুর ২৫ হাজার ইসলামী জঙ্গি হামলাকারীরা প্রশ্রয় পায়। আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্রমাগত চাপ প্রয়োগে উৎসাহিত করে, যে পর্যন্ত না তাঁরা ভূমি থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ফেক আইডি বানিয়ে কোরাণের উপর পদচিহ্ন দিয়ে ইসলাম ধর্মের অবমাননায় বাংলাদেশে মুসলিম জন গোষ্ঠীর বিচার হয়নি।

বাংলাদেশে ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান- এ চারটিই প্রধান ধর্ম। আমাদের দেশে মসজিদের পাশে মন্দির, ঈদ ও পূজা উদ্যাপন হয়; একই সঙ্গে আজানের ধ্বনির পাশাপাশি মন্দিরে বাজে বাঁশরির সুর। আধুনিক বাংলাদেশের সব্যসাচী লেখক ও কবি সৈয়দ শামসুল হক বলেছেন, ‘একসাথে আছি, একসাথে বাঁচি,/ আজো একসাথে থাকবোই/ সব বিভেদের রেখা মুছে দিয়ে সাম্যের ছবি আঁকবোই।’ মৌলবাদীরা সংখ্যালঘুদেরকে দুঃখের দহনে করুন রোদনে আর কতকাল ধরে তিলে তিলে ধ্বংস করবে? মানবজাতির হৃদয়াসনে মানবতা চির দেদীপ্যমান হয়ে ছিল, আছে এবং থাকবে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্ষমতাবানদের বলি হিন্দু বৌদ্ধ নির্যাতন! প্রধানত, ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।

বাংলাদেশে সংখ্যাগুরু ‘মুসলমান নেস’ আপত্তিকর না হলেও সংখ্যালঘুর ‘বৌদ্ধনেস’ এবং হিন্দুনেস ঢের সমস্যাজনক। সংখ্যাগুরু মুসলমানদের ধর্মাচরণে, সংস্কৃতিতে কেউ বিপন্ন বোধ করে না। কিন্তু সংখ্যালঘু হিন্দু বৌদ্ধদের বেলা গল্প আলাদা। তখন তাঁদের ক্ষেত্রে সংবিধানস্বীকৃত আত্মপরিচয়ের বৌদ্ধদের রামুর বৌদ্ধ বিহার অধিকারকে ও দেশের স্বার্থের বিপরীতে দাঁড় করিয়ে দেওয়া চলে! কেবল পর্দাতেই নয়, বাস্তবেও নাগরিক থেকে রাষ্ট্র সকলের চোখে হিন্দু বৌদ্ধকে সহজেই ‘ভিলেন’ বানানো চলে। তখন ধর্মান্ধ সংখ্যাগুরুর এই রাষ্ট্র তাঁর এমন একটি ভাবমূর্তি নির্মাণ সম্পূর্ণ করে, যাতে তার আত্মপরিচিতির অন্যতম অভিজ্ঞানবৌদ্ধনেস – হিন্দুনেস ও খোদ হিন্দু বৌদ্ধ সমাজের মধ্যেই আতঙ্ক তৈরি করে। হিন্দু ও বৌদ্ধ হত্যায় মানবধর্ম কেঁপে উঠেছে! বীভৎস হত্যাযজ্ঞ প্রথায় মানুষের জীবন কেড়ে নেওয়াটাই ধর্মান্ধদের ধর্ম!

নাগরিক প্রতিবাদ সমাবেশে বিশিষ্টজনেরা! দেশে চলমান সা¤প্রদায়িকতা প্রতিরোধে সামাজিক বিপ্লবের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন বিশিষ্টজনেরা। তারা মনে করছেন, অসা¤প্রদায়িকতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এই রাষ্ট্রে সা¤প্রদায়িকতা দানা বেঁধেছে, যা মোটেই কাম্য নয়। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে প্রয়োজন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জাগরণ এবং সামাজিক বিপ্লব। রোববার সকালে রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত ব্র্যাক সেন্টার অডিটোরিয়ামে আয়োজিত সা¤প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে এক নাগরিক প্রতিবাদ সমাবেশে তারা এ কথা বলেন। ‘এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ’ এ আয়োজন করে। সার্বিক সহযোগিতায় ছিল ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’।

পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের সভাপতি অর্থনীতিবিদ কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ড. সারওয়ার আলীর সভাপতিত্বে এবং এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরজুল ইসলাম চৌধুরী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মো. আবদুল মতিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান পরিষদের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য কাজল দেবনাথ, সাবেক সরকারি কর্মকর্তা আলি ইমাম মজুমদার, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. মালেকা বানু, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান নারী পরিষদের সদস্য পদ্মাবতী দেবনাথ, চাকমা রানী ও মানবাধিকারকর্মী রানী ইয়েন ইয়েন প্রমুখ।

মৌলবাদী গোষ্ঠী সংখ্যালঘুদেরকে দুঃখের দহনে করুন রোদনে আর কতকাল ধরে তিলে তিলে ধ্বংস করবে? সমকাল অনলাইনে প্রকাশিত সংবাদে দেখা যাচ্ছে- ধর্ম অবমাননার কথিত অভিযোগ যার বিরুদ্ধে, তাকে শনিবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে তার পিতাকেও আটক করা হয়েছিল। এখানেও যে প্রশ্ন বড় হয়ে দাঁড়ায়, তা হচ্ছে- উত্তেজনা সৃষ্টিকারী ও হামলাকারীদের বদলে আক্রান্তদের আটক করার অর্থ কী? আমরা বরং দেখতে চাইব, আগের ঘটনাগুলোসহ নড়াইলে উত্তেজনা সৃষ্টিকারী ও হামলাকারীদেরই আইনের আওতায় আনা হয়েছে। মাশরাফি বিন মুর্তজার এই আহ্বানের সঙ্গে আমরা একমত যে, যদি কেউ ধর্ম অবমাননা করেও থাকে, তার প্রতিকারে প্রচলিত আইনি ব্যবস্থা রয়েছে। তার বদলে যারা আইন নিজের হাতে তুলে নিতে চায় এবং বেআইনি কর্মকাণ্ডে উস্কানি দেয় ও অংশগ্রহণ করে, তাদেরই বিচার হওয়া জরুরি। আমরা আশঙ্কা করি, প্রায় প্রতিটি ঘটনায় হামলাকারীদের বদলে আক্রান্তদের আটক ও হেনস্তা করার কারণেই সা¤প্রদায়িক শক্তিগুলো বেপরোয়া হয়ে উঠছে এবং নতুন নতুন এলাকা আক্রান্ত হচ্ছে। নড়াইলের ঘটনায় উস্কানিদাতা ও হামলাকারীদের বিচার নিশ্চিত করা গেলে ভবিষ্যতে অন্যত্র এ ধরনের ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে!

একটি সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী বাংলাদেশ থেকে হিন্দু বৌদ্ধ জুম্মদদের তাড়িয়ে দিয়ে সম্পদ ও রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাইছে। তাই যারা সা¤প্রদায়িক হামলা করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রসঙ্গত:চিটিংবাজ মৌলবাদী গোষ্ঠী ইসলাম ধর্মের অবমাননায় বাংলাদেশের হিন্দু বৌদ্ধ নির্যাতন! আর প্রতিটি হামলার পরপরই এলাকা থেকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা চলে যায়। কখনও তারা এলাকা ছাড়ে, কখনওবা ছাড়ে দেশ। আবার কখনও খুবই অল্প দামে জমি বিক্রি করতে বাধ্য হয়। ইসলাম ধর্ম অবমাননায় হিন্দু হত্যা ও ফেক আইডিতে কোরাণ অবমাননা কেন? কোরাণের উপর পদচিহ্ন দিয়ে রামুর মৌলবাদী মুসলমান শক্তি বাংলাদেশের হিন্দু ও বৌদ্ধ বিদ্বেষী নীতিতে হিন্দু শব্দটাতে কাঁটাতারের বেড়া প্রতিষ্ঠা করেছে।

৭১-এর পরাজিত অকৃতজ্ঞ ধর্মান্ধ শক্তি এমন এক অভিশাপ যা থেকে নিস্তার পাইনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা! ১৯৭১ সালে ২৬ মার্চ শুক্রবার জুমার নামাজের পরপরই এক দল বিহারীরা ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে সাধারণ মানুষের বাড়িঘর আর প্রতিষ্ঠানে আগুন জ্বালিয়েছিলো। ঠিক ৫০ বছর পর উগ্রপন্থী জঙ্গি সংগঠন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ শুক্রবার জুমার নামাজের পর ঢাকায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটালো! এই উগ্রপন্থী জঙ্গি গোষ্ঠীর দল বঙ্গবন্ধুর ম্যূরালে হাত দিলো! ৩০ লক্ষ শহীদের তাজা রক্তের বিনিময়ে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন করা এই দেশে শীঘ্রই এই জঙ্গিবাদের বিচার হবে, অবশ্যই বিচার হবে ইনশাআল্লাহ্।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা একেবারে বিলুপ্ত করার জন্য রাজাকার, জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশের অকৃতজ্ঞ সামরিক প্রশাসকগন রাষ্ঠ্রদ্রোহী ছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে সামরিক প্রশাসকগন এবং উগ্র জামায়াতে ইসলামী দলটির এতো ভয়ঙ্কর ষড়য়ন্ত্র ছিল কেন? জামায়াতে ইসলামী দলটির নেতাকর্মী এবং প্রশাসকগন বাংলাদেশের স্বাধীনতার রাষ্ঠ্রদ্রোহী ছিলেন এবং উগ্র জামায়াতে ইসলামী দলটির নেতাকর্মীদের বিচার না হলে তাদের ঔদ্ধত্য বাঙালি জাতিকে নষ্ট করে দেবে!
বিশ্ববৌদ্ধ পুরস্কার প্রাপ্ত প্রখ্যাত মানবতাবাদী লেখক সোনা কান্তি বড়ুয়া (Bachelor of Arts, University of Toronto), The AuthorÕs World famous and glorious New Book entitled ÒPRE – VEDIC MOHENJODARO BUDDHISM & MEDITATION IN THE NUCLEAR AGE , (516 Pages) সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা প্রবাসী কলামিষ্ঠ, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে বিশ্ববৌদ্ধ প্রতিনিধি!

Exit mobile version