অনলাইন ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, উত্তেজনা ততই বাড়ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তীব্র বাক্যবাণ ছুড়ে আসন্ন নির্বাচনে ভোটারদের ডেমোক্রেট পার্টির প্রার্থী জো বাইডেনের পক্ষে রায় দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা। আর বাইডেনের ‘রানিং মেট’ হিসেবে মনোনীত হওয়ার পর থেকেই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে একের পর এক উত্তপ্ত মন্তব্য করছেন কমলা হ্যারিসও। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন

মিশেল ওবামা রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে একহাত নিয়ে বলেছেন, চলতি চার বছরের মেয়াদে যে পরিমাণ ‘বিশৃঙ্খলা’ সৃষ্টি করেছেন তিনি, তার ইতি টানতে ভোটারদের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে বেছে নেওয়া উচিত। সোমবার ডেমোক্রেট দলের জাতীয় সম্মেলনের প্রথম রাতে জ্বালাময়ী বক্তৃতায় মিশেল এসব কথা বলেন।

সাবেক এই ফার্স্ট লেডি বলেন, ‘তিনি যে (প্রেসিডেন্টের) কাজ চালাতে পারেন, তা প্রমাণের জন্য প্রচুর সময় পেয়েছিলেন। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারি, অর্থনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতি আর বর্ণবৈষম্যের চক্করে ঘুরপাক খাওয়া একটি দেশের সময়ের চাহিদা পূরণ করতে পারেননি।’ ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ভুল প্রেসিডেন্ট’ অ্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘যখনই আমরা হোয়াইট হাউসের দিকে নেতৃত্ব কিংবা সান্ত্বনা পাওয়ার জন্য তাকিয়েছি, কিংবা স্থিরতা দেখতে চেয়েছি, তখনই আমরা পেয়েছি বিশৃঙ্খলা, বিভক্তি এবং সহমর্মিতার ভয়াবহ ঘাটতি।’

মিশেল ওবামা বলেন, ‘তিনি সেই লোক নন, যাকে আমাদের প্রয়োজন। বিষয়টা এ রকমই। আপনাদের যদি মনে হয়, পরিস্থিতি এর চেয়ে খারাপ হওয়া সম্ভব নয়; বিশ্বাস করুন, এর চেয়েও খারাপ হতে পারে। তারা তা করবে, যদি না এ নির্বাচনে আমরা পরিবর্তন আনতে পারি। এই বিশৃঙ্খলা বন্ধের কোনো আশা যদি আমাদের থাকে, তাহলে বাইডেনকে এমনভাবে ভোট দিতে হবে, যেন আমাদের জীবনও এর ওপর নির্ভর করছে।’

মিশেলের স্বামী বারাক ওবামা ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত টানা দুই মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন, সে সময় জো বাইডেন ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট। সোমবার রাতে মিশেল ছাড়াও ডেমোক্রেট পার্টির মনোনয়ন লড়াইয়ে বাইডেনের প্রতিদ্বন্দ্বীরা এবং ওহিও অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর জন ক্যাসিচসহ কয়েকজন রিপাবলিকানও নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পকে হারিয়ে বাইডেনকে জেতাতে অনুরোধ করেছেন।

করোনাভাইরাস মহামারি জনিত পরিস্থিতিতে ডেমোক্রেটদের এবারের চারদিনের কনভেনশন অনলাইনে হচ্ছে। এ কনভেনশন থেকেই বাইডেন ও কমলা হ্যারিসকে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন দেওয়া হবে।

মহামারির কারণে নভেম্বরে নিরাপদে ভোট আয়োজন সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যেই ডেমোক্রেটদের এ কনভেনশন শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিরাপদ বিকল্প হিসেবে ডাকযোগে ভোটগ্রহণের জন্য ডেমোক্রেটরা চাপ দিলেও ট্রাম্প বলছেন, এ ধরনের ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় জালিয়াতির সুযোগ থাকে। তিনি ডাকযোগে ভোটের ব্যালট পরিবহণে দায়িত্বপ্রাপ্ত মার্কিন পোস্টাল সার্ভিসের জরুরি তহবিলও আটকে দিয়েছেন।

মিশেল তার বক্তৃতায় এ প্রসঙ্গটিও এনেছেন। তিনি বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে যারা জিততে পারবেন না, তারাই সংখ্যালঘু অধু্যষিত এলাকাগুলোর ভোটকেন্দ্র বন্ধ করে দিয়ে, ভোটার তালিকা কাঁটছাট করে এবং ‘মেইল-ইন’ ভোটের নিরাপত্তা নিয়ে মিথ্যা বলে জনগণকে ভোটদানে বিরত রাখতে চাইছেন।

বাইডেনকে বিপুল সংখ্যক ভোটে জয়ী করার আহ্বান জানিয়ে নির্বাচনের দিন ভোটারদের আরামদায়ক জুতা ও মাস্ক পরার পাশাপাশি কেন্দ্রগুলোতে দীর্ঘ লাইন বিবেচনায় ব্যাগে করে রাতের খাবার, এমনকি পরদিন সকালের নাস্তাও নিয়ে যেতে পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক এ ফার্স্ট লেডি।

এদিকে, আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেট মনোনীত ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস বলেছেন, নভেম্বরের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার নির্বাচনী প্রচারণা শিবির মিথ্যাচার এবং প্রতারণার মতো নোংরা সব কৌশলের আশ্রয় নেবেন। ট্রাম্প জন্ম নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর তার জবাবে কমলা এসব বললেন।

ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন কয়েকদিন আগে তার রানিং মেট হিসেবে কমলার নাম ঘোষণার পর থেকেই ট্রাম্প থেকে শুরু করে তার দল ও প্রচারণা শিবির কমলার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। ট্রাম্প কমলার জন্মস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলে তার প্রয়োজনীয় যোগ্যতা নেই বলেও দাবি করেছেন। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে এক সাক্ষাৎকারে কমলা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে প্রভাবিত করছে, এমন প্রকৃত বিষয়গুলোকে আড়াল করতে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।’

ভারতীয় বংশোদ্ভূত মা ও জ্যামাইকান বংশোদ্ভূত কৃষ্ণাঙ্গ বাবার সংসারে জন্ম নেওয়া কমলা হ্যারিস জো বাইডেনের রানিং মেট হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনীত হওয়ার পর এ নিয়ে দ্বিতীয়বার সাক্ষাৎকার দিলেন। জয় পেলে তিনি হবেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ এবং দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত ভাইস প্রেসিডেন্ট।

সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে নিয়ে একই ধরনের মিথ্যা বলা বর্তমান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত শনিবার বলেন, তিনি কমলা হ্যারিসের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চান না। তবে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পেরেছেন কমলার প্রয়োজনীয় যোগ্যতা নেই। তবে ট্রাম্পের এমন দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেছে ডেমোক্রেটরা। কমলা হ্যারিসের জন্ম ক্যালিফোর্নিয়ার অকল্যান্ডে। দেশটির নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী, কোনো অযোগ্যতা নেই তার।