অনলাইন ডেস্ক : মিয়ানমারের সাবেক নির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধানকে ক্ষমতাচ্যুত করে করে ক্ষমতা দখল করে সামরিক জান্তা।

চার বছর আগের এক সামরিক অভ্যুত্থানে নির্বাচিত বেসামরিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন জেনারেলরা নিজেদের বৈধতা অর্জনের সম্মিলিত প্রচেষ্টা হিসেবে দেশটিতে আরেকটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের তোড়জোড় শুরু করেছেন। কিন্তু গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশটিতে জান্তার এই নির্বাচনী প্রচেষ্টা সহিংসতার ঝুঁকি তীব্র করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গত দুই মাসে জান্তা সরকার চলতি বছরে দেশটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে প্রতিবেশীদের কাছে পরিকল্পনার রূপরেখা প্রকাশ করেছে। এর অংশ হিসেবে ভোটারদের তালিকা প্রস্তুত করার জন্য পরিচালিত একটি আদমশুমারির ফলাফলও প্রকাশ করেছে। দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠানে ‘স্থিতিশীলতা’ নিশ্চিতে জান্তা কাজ করছে বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থান ঘটিয়ে দেশটির গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে। এরপর ক্ষমতায় আসা জান্তা বাহিনী দেশটিতে গৃহযুদ্ধের মুখোমুখি হয়। দেশজুড়ে গড়ে ওঠা বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী ও গণতন্ত্রপন্থিদের সঙ্গে লড়াইয়ে একের পর এক এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে জান্তা বাহিনী। এর মাঝেই এসব পদক্ষেপ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টিকে ক্ষমতাসীন জান্তা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে দেশটিতে জান্তাবিরোধীদের অনেকে এই নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনার বিরোধিতা করছেন। বিশ্লেষক, বিদ্রোহী এবং কূটনৈতিক-সহ অন্তত আটটি সূত্র বলেছে, নির্বাচনী ব্যালটের আগে উত্তেজনা বাড়তে চলেছে। বিদ্রোহীদের সঙ্গে জান্তা সৈন্যদের লড়াই অব্যাহত থাকায় দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে অত্যধিক সহিংসতার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা।

নির্বাচনের তারিখ এখনও ঘোষণা করা হয়নি। তবে দেশটির মাত্র অর্ধেক অঞ্চলে ভোটের আয়োজন করতে পারবে জান্তা। জান্তার শাসনামলে কয়েক ডজন বিরোধী রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নির্বাচনে কেবল পরীক্ষিত ও সামরিকপন্থি দলগুলো অংশ নিতে পারবে। সমালোচকরা জান্তার নির্বাচন আয়োজনের এমন পরিকল্পনাকে ধোঁকাবাজি বলে অভিহিত করেছেন।

গত ডিসেম্বরে প্রকাশিত মিয়ানমারের জাতীয় আদমশুমারির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ৩৩০টি শহরের মাঝে কেবল ১৪৫টিতে সরেজমিনে আদমশুমারি পরিচালনা করতে সক্ষম হয়েছে ক্ষমতাসীন সামরিক জান্তা সরকার। রাজধানী নেইপিদোর আলোচনার বিষয়ে অবগত এক কর্মকর্তা বলেছেন, বর্তমানে জেনারেলরা চলতি বছরের শেষের দিকে দেশের ১৬০ থেকে ১৭০টি শহরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করছেন।

বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় নাম প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেছেন, জেনারেলরা নির্বাচনের আয়োজন করতে চান। নির্বাচনের আগে ওই সব অঞ্চল স্থিতিশীল করতে চায় জান্তা।

তবে এই বিষয়ে মন্তব্য জানতে কল করা হলেও জান্তার একজন মুখপাত্র সাড়া দেননি বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স। অভ্যুত্থানের পর থেকে গঠিত দেশটির নতুন প্রতিরোধ গোষ্ঠীর সমন্বয়ে জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো জান্তার কাছ থেকে বিভিন্ন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ছিনিয়ে নিয়েছে। সীমান্ত এলাকাগুলো থেকে জান্তা সৈন্যদের তাড়িয়ে দিয়ে দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় নিম্নভূমির দিকে অগ্রসর হতে শুরু করেছে এই বিদ্রোহীরা।

আসন্ন নির্বাচনের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইনস্টিটিউট অব পিসের মিয়ানমার-বিষয়ক বিশ্লেষক ইয়ে মায়ো হেইন বলেন, ‘‘এই পদক্ষেপ অনিবার্যভাবে মিয়ানমারের সংঘাতকে নজিরবিহীন স্তরে নিয়ে যাবে।’’

মিয়ানমারে বর্তমানে জরুরি অবস্থা জারি রয়েছে; যার মেয়াদ চলতি জানুয়ারি মাসেই শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে মিয়ানমারের জান্তা জরুরি অবস্থার মেয়াদ নতুন করে ছয় মাসের জন্য বৃদ্ধি অথবা অভ্যুত্থানের বার্ষিকীর আগেই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে পারে বলেও গুঞ্জন রয়েছে।

সূত্র: রয়টার্স।