অনলাইন ডেস্ক : সিলেট নগরীর জিন্দাবাজার এলাকার হোটেল গোল্ডেন সিটি। নগরীর একেবারে প্রাণকেন্দ্রে অবস্থান হওয়ায় সবসময় ধরনের অতিথিতে গমগম করত হোটেলটি। গণমাধ্যমকর্মীদেরও প্রিয় তালিকায় থাকা হোটেলটিতে শনিবার গিয়ে দেখা গেল ভূতুড়ে অবস্থা। কোথাও কেউ নেই। আলাপ হলে হোটেলের ব্যবস্থাপক মিষ্টু দত্ত বলেন, মার্চের মাঝামাঝি আমাদের হোটেলে কিছু গেস্ট ছিলেন। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত পুরো ফাঁকা। ভালো আছি না খারাপ আছি সেটা নিজেও জানি না।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কর্মীদের বেতন ও ইউটিলিটি বিল দিচ্ছি আমরা। কিন্তু এ মানবিকতা আর কতদিন চালাতে পারব জানি না। খুব বেশি দিন হলে ছাঁটাই করতেই হবে।

শুধু গোল্ডেন সিটি নয়, সিলেটের সব হোটেল-মোটেলেরই এক দশা। করোনা ভাইরাসের কারণে ধস নেমেছে সিলেটের পর্যটন ব্যবস্থাতেই। গত এক দশকে দেশি-প্রবাসী বিনিয়োগে যেটি মাত্রই জমে ওঠতে শুরু করেছিল।

সিলেটের হোটেল-মোটেল মালিকরা বলছেন, প্রতিদিন কেবল সিলেটের হোটেল-মোটেল খাতে প্রায় ৩ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে।

প্রবাসীবহুল সিলেটে বিনিয়োগে অনাগ্রহের বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত। তবে গত এক-দেড় দশকে এ অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন এনেছে পর্যটন খাত। এ খাতে বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছেন প্রবাসী ও বেসরকারি উদ্যোক্তারা। এরই ধারাবাহিকতায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে সারাদেশের মতো সিলেটেও পর্যটন খাতে এখনো বিরাজ করছে স্থবিরতা। হোটেল-মোটেল বন্ধ, পর্যটনকেন্দ্রগুলো ফাঁকা, নেই পর্যটকদের আনাগোনা। কবে এ খাত আবার সচল হবে, তাও বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। চোখে অন্ধকার দেখছেন উদ্যোক্তারা।

উদ্যোক্তাদের মতো বিপাকে পড়েছেন পর্যটন খাতের কর্মীরাও। এরই মধ্যে অনেকেরই চাকরি চলে গেছে। আর বেশিরভাগকেই ছুটি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ছুটিকালীন বেতনও পাচ্ছেন না তারা। এ অবস্থায় হোটেল-মোটেলের অনেক উদ্যোক্তাই ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছেন।

বিভিন্ন হোটেলে কাজ করা কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মার্চ থেকেই ছুটিতে রয়েছেন তারা। মার্চের বেতন পেলেও এপ্রিল থেকে বেতন পাচ্ছেন না।

এ প্রসঙ্গে সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব বলেন, ট্রেডিং, পর্যটন আর আমদানি-রপ্তানিই সিলেটের প্রধান ব্যবসা। এ তিন খাতের ব্যবসায়ীরা এখন করোনার কারণে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। দ্রুত তাদের ব্যবসা সচল হওয়ারও কোনো আশা নেই।

বছরজুড়েই সিলেটে আনাগোনা থাকে পর্যটকদের। ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবের সময় তো বটেই, শুক্র-শনিবারসহ সরকারি বন্ধের দিনগুলোতেও সিলেটে হোটেল খালি পাওয়া কঠিন। ঈদে বা লম্বা ছুটির মৌসুমে অনেকে সিলেটে এসে মাজারে বা স্টেশনে রাত কাটাতেও বাধ্য হন। পর্যটন স্পটগুলোতেও থাকে উপচেপড়া ভিড়। কিন্তু এবার ঈদ আর পহেলা বৈশাখে পুরো ফাঁকা ছিল বিছনাকান্দি, জাফলং, রাতারগুল, লালাখালসহ সিলেটের সব পর্যটনকেন্দ্র।

সিলেটের অন্যতম বড় পর্যটন স্পট জাফলংয়ে নৌকা চালান আলী হোসেন। পর্যটক নিয়ে ঘুরে ভালোই আয় হতো। তিনি বলেন, জীবনে কখনো এ রকম বেকার হইনি। তিন মাস ধরে এখানে কোনো পর্যটক আসেননি। মানুষের সাহায্য-সহায়তা নিয়ে চলতে হচ্ছে।

সিলেটে পর্যটন খাতে প্রতি মাসে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে দাবি করে সিলেট হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমাত নুরী জুয়েল বলেন, তিন মাস ধরে হোটেল-মোটেলে ব্যবসা নেই। এ অবস্থা চলতে থাকলে অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে নেবে। কবে যে এ খাত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারবে তাও আমরা জানি না।

তিনি বলেন, কেবল হোটেল নয়, পর্যটকদের ওপর নির্ভর করে সিলেটে অনেক রেস্টুরেন্ট গড়ে ওঠেছে। তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রের নৌকার মাঝি, পরিবহন সেক্টর, ট্যুরিস্ট গাইড সবাই ক্ষতিগ্রস্ত।