বাহারুল হক :
আজ আমার জন্মদিন।
মা তার অভ্যাস মত আজ রাতেও
স্নিগ্ধ পরিপাটি।
ভাবছেন বিছানায় যাবেন;
বিছানায় গভীর ঘুমে দুই শিশু কণ্যা তার।
জানালা খোলা; বাহিরে জোছনার বান;
মায়ের হঠাৎ ইচ্ছে হলো চাঁদ দেখবেন।
দেখলেন। আকাশের ললাটে পূর্ণিমা চাঁদ।
খুশির একটা চমক মায়ের বুক থেকে এতক্ষণে মুখে।
মা ভাবলেন- এমন একটা চাঁদ-মুখ নিয়ে এক পুত্র
সন্তান কী আজ আসতে পারে না আমার বুকে!
মা তো জানতো না আজ তার ইচ্ছা পূরণের দিন।
হঠাৎ বাহিরে মেঘ, জোছনায় ভাটা, বাতাস স্থির;
মায়ের ভিতরটা অস্থির, হৃদ-স্পন্দন রক্তের কাঁপন বেড়ে গেছে বহুগুন;
আমি আড়মোড় ভেঙ্গে একটা নাচন দিলাম;
রাগ ভৈরভি আর তাল দাদরা।
সে প্রলয় নাচনে মায়ের অভ্যান্তরীণ সব জটের বাঁধন খুলে পড়লো।
মা নতুন এক বিছানায়। আমি যেন আরো বেপরোয়া।
“প্রলয় নাচন নাচলে যেদিন আপন ভুলে,
নটরাজ হে নটরাজ জটার বাঁধন পড়লো খুলে”।
মায়ের ক্ষীণ চিৎকার; জটার সব বাঁধন খুলে ফেলে আমি
একেবারে মায়ের বুকে।
বাহিরটা ততক্ষণে আবার পরিস্কার। অমানিশা কেটে গেছে;
আমার মায়ের যন্ত্রণার অবসান হয়েছে। মায়ের ইচ্ছা পূরণ হয়েছে।
চাঁদ-মুখ পুত্র-সন্তান এই আমি মায়ের বুক দখলে নিয়েছি।
আমার মায়ের মুখে মধুর হাসি।
রাত ভোর হয়েছে, জোনাকিরা ঘুমিয়ে পড়িছে,
চাঁদ বিশ্রামে;
নতুন এক সুর্য্য উঠেছে; মায়ের পৃথিবীটা বদলে গেছে।
মায়ের সুখ আর আনন্দে পাখি গান ধরেছে ফুল গন্ধ ছড়াছে;
সে এক নতুন সুর নতুন গন্ধ।
সেদিন থেকে কাঁচা হলুদের রঙ আরো প্রগাঢ় হয়েছে;
গোলাপের পাপড়ি আরো ঘন হয়েছে;
মৌমাছিরা নতুন এক কোরাস ধরেছে।
আব্বাতো বেদিশা; সব বন্ধন ছিন্ন করে সব যন্ত্রণা উপেক্ষা করে
কে এল? কে এই বীর পুরুষ? কী নাম রাখি তার?
মানিক, রতন, স্বপন, বাঁধন, নাকি মহাবীর আলেকজান্ডার?
হঠাৎ পড়িল মনে ভাই তাহার
তাকেই দেই নামকরনের গুরু ভার।
তিনি ভাবিলেন- সময় কত, কেমন পরিবেশ?
রাতের কোন প্রহর? চাঁদের কী কৃষ্ণ না শুক্ল পক্ষ?
একাদশী নাকি পুর্ণিমা?
রাত জাগা পাখিরা কী করছিল?
ডাহুকী কী ভয়ে বিলাপ জুড়ে দিয়েছিল?
এসব ভেবেছেন প্রতি নিমেশ।
সব ভাবিয়া দেখিলেন বাহার নামটা হবে বেশ।
রুপ ও রাগের এক অপূর্ব সংমিশ্রন এক অনিন্দ অধিকার-
বাহার বাহার বাহার।
আমি অথৈ আমি অদ্রিসার,
আমি বসন্ত আমি বাহার।
আমি নিকুঞ্জ আমি নিশাকর,
আমি অধিরথ আমি বাহার।
আমি চনমন আমি তোলপাড়,
আমি পুস্পগুচ্ছ আমি বাহার।
“মধুর আমার মায়ের হাসি চাঁদের মুখে ঝরে”,
জন্মদিনে আজ
“মাকে মনে পড়ে আমার মাকে মনে পড়ে”।