অনলাইন ডেস্ক : বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের সংক্রমণে অর্থনীতির টালমাটাল পরিস্থিতিতেও বিদায়ী বছরে রেকর্ড পরিমাণ আয় পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এ আয় দেশের ইতিহাসের যেকোনো সময়ের তুলনায় সর্বোচ্চ। সদ্যবিদায়ী ২০২০ সালে মোট ২ হাজার ১৭৪ কোটি ডলার আয় পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ১৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি।

২০১৯ সালে আয় এসেছিল ১ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা।

করোনাভাইরাসের প্রকোপে রপ্তানিসহ অর্থনীতির নানা খারাপ খবরের মধ্যে রেমিট্যান্সের এ সূচকে বেশ ভালো করেছে বাংলাদেশ। প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাস যেন ইতিবাচক বার্তা নিয়ে এসেছে। যদিও এ সময়েই কাজ হারিয়ে দেশে ফিরেছেন প্রায় আড়াই লাখ প্রবাসী শ্রমিক। আবার অনেকের বেতনও কমে গেছে। এরপরও আয় আসা বেড়েছে। মূলত বৈধ পথে আসা রেমিট্যান্সে সরকারের নগদ ২ শতাংশ প্রণোদনা প্রবাসী আয় বাড়াতে প্রধান ভূমিকা রেখেছে।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, শ্রমিকরা ফিরে এলেও আয় বাড়ছে। কারণ বিদেশে চলাচল সীমিত হয়ে পড়ায় অবৈধ পথে আয় আসা কমে গেছে। এজন্য বৈধ পথে আয় বাড়ছে। আর আমদানি কমে যাওয়ায় রিজার্ভে নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে।

প্রবাসী আয় বাড়াতে ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া শুরু করে সরকার। এরপর থেকেই প্রবাসী আয়ে গতি আসে। তবে করোনাভাইরাসের পর তাতে নতুন মাত্রা দেখা দিয়েছে। যদিও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে বাংলাদেশের প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে বড় ধাক্কা লাগে। মার্চ ও এপ্রিলে আয় কমে যায়। তবে এরপরই বড় ধরনের উল্লম্ফন শুরু হয়। এখনো সেই প্রবণতা অব্যাহত আছে। আর প্রবাসী আয়ে ভর করে নতুন নতুন রেকর্ড হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভে। ফলে অর্থনীতির সবচেয়ে ভালো সূচক হিসেবেই ২০২০ সাল পার করে প্রবাসী আয় খাত।

বিশ্বব্যাপী ভাইরাসের প্রভাবে মার্চ মাসে প্রবাসী আয় কমে প্রায় ১২ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে ১৪৫ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এলেও মার্চে তা কমে ১২৮ কোটি ৬৮ লাখ ডলারে নামে। করোনাভাইরাস আরও প্রকট হলে এপ্রিলে প্রবাসী আয় আরও কমে হয় ১০৮ কোটি ডলার।

তবে এরপরই প্রবাসী আয় বাড়তে থাকে। মে মাসে রেমিট্যান্স আসে ১৫০ কোটি ডলার, যা জুনে আরও বেড়ে দাঁড়ায় ১৮৩ কোটি ডলার। আর ঈদের আগের মাস জুলাইয়ে এক লাফে প্রবাসী আয় ২৬০ কোটি ডলারে ওঠে। কোনো একক মাস হিসেবে এ আয় এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ।

এরপর আগস্টে ১৯৬ কোটি ডলার, সেপ্টেম্বরে ২১৫ কোটি ডলার, অক্টোবরে ২১০ কোটি ডলার ও নভেম্বরে ২০৭ কোটি ডলার আসে। আর পুরো ডিসেম্বরে আয় আসে ২০৫ কোটি ডলার।