অনলাইন ডেস্ক : মহাকাশে প্রায় ৯ মাস থাকার পর অবশেষে সফলভাবে পৃথিবীতে ফিরতে সক্ষম হয়েছেন নাসার দুই নভোচারী বুচ উইলমোর ও সুনিতা উইলিয়ামস।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) সন্ধ্যায় স্পেসএক্সের ‘ক্রু ড্রাগন ফ্রিডম’ মহাকাশযানে করে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য ফ্লোরিডার উপকূলে অবতরণ করেন তারা।
২০২৪ সালের ৬ জুন এক সপ্তাহের মিশনে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে যান বুচ ও সুনিতা। কিন্তু বোয়িংয়ের যে ক্যাপসুলে তারা যান, সেই ‘স্টারলাইনারে’ ত্রুটি দেখা দেয়। তাই নিরাপত্তার কারণে তাদের সময়মতো পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি।
সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানায়, বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) সকাল ৯টা ৫ মিনিটে স্পেসএক্সের মহাকাশযান ড্রাগনটি লক করা হয়। এরপর ক্রুরা ফ্লাইটের পোশাক পরেন এবং নিরাপত্তা পরীক্ষা সম্পন্ন করেন। পরে সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে বেলা ১১টা ৫ মিনিটের দিকে মহাকাশযানটি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়।
স্পেসএক্সের ক্যাপসুলটি অবতরণের সময় নভোচারীদের সঙ্গে ছিলেন আরও দুই ক্রু সদস্য, নাসার নভোচারী নিক হেগ ও রুশ মহাকাশচারী আলেকজান্ডার গরবুনভ। ক্রু ড্রাগনে ফিরতি যাত্রা শুরু করার ১৭ ঘণ্টা পর এই চার নভোচারী পৃথিবীর আকাশমণ্ডলে প্রবেশ করেন। বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টা ৫৭ মিনিটে তাদের বহনকারী ক্যাপসুলটি বিশেষ প্যারাস্যুটের সাহায্যে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা উপকূল থেকে প্রায় ৫০ মাইল দূরে সমুদ্রে নেমে আসে।
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার অভিজ্ঞ নভোচারী ও মার্কিন নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত পাইলট বুচ ও সুনিতা দুজনই। ক্রু ড্রাগনের এ ফিরতি যাত্রা নিয়ে ক্রু–৯ মিশনের কমান্ডার ও নাসার নভোচারী নিক হেগ বলেন, ‘কী অসাধারণ যাত্রা!’
৫৯ বছর বয়সী সুনিতা ও ৬২ বছর বয়সী বুচ দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা ও স্টেশনের রক্ষণাবেক্ষণ কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তাদের কাজের মধ্যে ছিল—স্টেশনের অভিমুখ নিয়ন্ত্রণকারী যন্ত্রপাতি মেরামত, নিক্সার এক্স-রে টেলিস্কোপের জন্য আলোক ফিল্টার সংযোজন ও একটি আন্তর্জাতিক ডকিং অ্যাডাপ্টারে প্রতিফলক ডিভাইস প্রতিস্থাপন।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বুচ, সুনিতা এবং আরও দুই আমেরিকান নভোচারী ডন পেটিট ও নিক হেগ মহাকাশ থেকে ভোট দিয়েছেন। সুনিতা বলেন, ভোট দেওয়া একজন নাগরিক হিসেবে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
নাসা তাদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা সহজ করে দেয়। হিউস্টনের মিশন কন্ট্রোল সেন্টার তাদের কাছে এনক্রিপ্টেড ইমেলের মাধ্যমে ব্যালট পেপার পাঠায়। নভোচারীরা তা পূরণ করে উপগ্রহের মাধ্যমে নিউ মেক্সিকোর একটি গ্রাউন্ড টার্মিনালে পাঠান। সেখান থেকে এটি মিশন কন্ট্রোলে পৌঁছে এবং পরে সংশ্লিষ্ট কাউন্টি ক্লার্কের কাছে পাঠানো হয়।
এ ছাড়াও নভোচারীরা আইএসএসে থাকা অবস্থায় উল্লাসের মধ্যে ক্রিসমাস উদযাপন করেন। সান্তা টুপি ও রেনডিয়ার হেডব্যান্ড পরে পৃথিবীর মানুষের উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান তারা। ক্যান্ডি ক্যান বাতাসে ভাসতে ভাসতে তারা একে অপরের কাছে মাইক্রোফোন ছুঁড়ে দিচ্ছিলেন। সুনিতার লম্বা চুল শূন্য অভিকর্ষে ভেসে থাকায় তাকে দেখতে ভিন্ন লাগছিল।
আইএসএসে থাকা অবস্থায় প্রতিদিন ১৬ বার সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার সুযোগ হয় নভোচারীদের। কেননা আইএসএস প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ১৬ বার পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। এই অনন্য দৃশ্য নভোচারীদের পৃথিবী সম্পর্কে নতুনভাবে ভাবতে শিখিয়েছে। এ বিষয়ে সুনিতা বলেন, এটি আমাদের ভিন্নভাবে চিন্তা করতে শেখায়। পৃথিবী একটাই, আমাদের এটি রক্ষা করা উচিত।
এ ছাড়া প্রতিদিন ভোর ৪টা ৩০ মিনিটে এবং সুনি সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে দিন শুরু করতেন বুচ। মহাকাশে থাকার কারণে শরীরের হাড় এবং পেশির ক্ষয় রোধে প্রতিদিন দুই ঘণ্টারও বেশি সময় শরীরচর্চা করতেন তারা।