সৈয়দ মেহেদী রাসেল : বাংলাদেশের লোক সঙ্গীতের প্রাণ পুরুষ, লোক সঙ্গীতের মুকুটবিহীন সম্রাট, মরমী শিল্পী আব্দুল আলীম। স্বাধীনতা যুদ্ধের ৩ বছর পর ১৯৭৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কানাডার মন্ট্রিয়লে বাংলাদেশ কানাডা এসোসিয়েশন এর আয়োজনে গত ৫ই সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার পার্ক ভিউ রিসেপশন হলে শোকসভা ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। শোকসভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আব্দুল আলীম এর সুযোগ্য কন্যা নূরজাহান আলীম এবং প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাউল সম্রাট সুফী সাধক শফি মন্ডল।
শোকসভায় আলোচক নূরজাহান আলীম বাবার স্মৃতিচারণ করেন। বাবার সাথে তেমন কোন স্মৃতি নেই কিন্তু বিখ্যাত বাবার রেখে যাওয়া গান যেন তার চলার পথে পাথেয় হিসেবে কাজ করেছে তিনি জানান। তিনি বলেন, বাবা খুব সাধারণ মানুষ ছিলেন। তার মধ্যে কোন অহংকার ছিলো না। তিনি বাংলাদেশকে খুব ভালবাসতেন। বাবার সাথে যারা কাজ করতেন তাদের কাছ থেকে আমরা আব্দুল আলীমের সন্তান হিসেবে অনেক সম্মান পেয়েছি, আমরা আজো বাংলাদেশের মানুষের কাছে ভালবাসা পাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, আমরা ভাই বোনেরা চাই বিশ্বব্যাপী সবার মধ্যে গানগুলো ছড়িয়ে দিতে। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন আমি যেন বাবার জন্য কিছু করতে পারি। বাবার গাওয়া পাঁচশত এর অধিক গান থেকে মাত্র দুই থেকে আড়াইশত গান আমরা পেয়েছি। অনেকগুলো গান ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সেগুলো সংগ্রহ করতে চাই।
তিনি আরো বলেন, আমার যতটুকু মনে পড়ছে দেশের বাইরে এটাই প্রথম বাবাকে নিয়ে আয়োজন। আমি বাংলাদেশ কানাডা এসোসিয়েশন সহ যারা এই আয়োজনের সাথে জড়িত তাদের কাছে আমি খুব কৃতজ্ঞ, আব্দুল আলীমের পরিবারের পক্ষ থেকে আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। বাবার প্রতি আপনাদের এই ভালবাসা আমাকে আপ্লুত করেছে। বাবাকে নিয়ে আপনাদের এই আয়োজন এই ভালবাসাটুকু আমি দেশে নিয়ে যেতে চাই।
শোকসভার প্রধান অতিথি শফি মন্ডল তার বক্তব্যে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন মরমী শিল্পী আব্দুল আলীমকে। তিনি বলেন, মরমী শিল্পী আব্দুল আলীম এর গান আমাদের মন ছুয়ে যেত। ষাটের দশকে সিনেমায় আব্দুল আলীম এর গান সিনেমার প্রাণ ছিল, উনার গান ছাড়া সিনেমা হতো না। সেই মহান ব্যাক্তিরা মারা যান না আসলে, তারা বেঁচে থাকেন তাদের সৃষ্টিতে। আমাদের সুরের রাধা আব্দুল আলীম এর আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। তার সম্পর্কে বলার অনেক কিছুই আছে। আব্দুল আলীম এই নামটাই একজন সংগীত শিল্পী হিসেবে আমার কাছে অনেক কিছু। বাংলা লোক সঙ্গীতের এই অমর শিল্পী লোক সঙ্গীতকে অবিশ্বাস্য এক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন যেখানে জীবন জগত্ এবং ভাববাদী চিন্তা একাকার হয়ে গিয়েছিল ।
কানাডার মন্ট্রিয়ল বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে, সেখানে আপনারা বাংলা সংস্কৃতির চর্চা করেন, আব্দুল আলীম শোক সভা করছেন, তাকে স্মরণ করছেন আপনাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা, অভিনন্দন ও ভালবাসা।
সভায় অন্যান্য বক্তারা এই মহান শিল্পীর জনপ্রিয় গানগুলো নিয়ে তাদের ভালবাসার কথা জানান এবং আব্দুল আলীমের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন।
শোকসভায় উপস্থিত ছিলেন – বাংলাদেশ কানাডা এসোসিয়েশন এর চেয়ারম্যান এম ছাদেক এ চৌধুরী শিবলী, সাধারণ সম্পাদক জামাল নাসের. বোর্ড অব ডিরেক্টরস এর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন – সাঈদুর রহমান, মূসা মোহাম্মদ, আব্দুল মান্নান, বরুণ বণিক, মকসুম তরফদার, সৈয়দ মেহেদী রাসেল, ওসমান হায়দার বাচ্চু। বাংলাদেশ কানাডা এসোসিয়েশন এর উপদেষ্টাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন – মোস্তাক সরকার, মমিনুল ইসলাম ভুইয়া, প্রকৌশলী এলেন হেলাল, মহিলা সম্পাদিকা বেগম মোস্তাক সরকার, সাংবাদিকদের মধ্যে কাজী আলম বাবু, ইউসুফ রনী, খালিদ হোসেন শাহীন । এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সোসাইটি অব মন্ট্রিয়লের সভাপতি এজাজ আখতার তৌফিক ও ব্যবসায়ী অনুপ কুমার মিঠু।