নাদিরা তাবাস্সুম : সেদিন এক ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণকারীগণ আলোচনা শেষ না করেই অনেকে বাইরে বেরিয়ে যায়। তারা একজন অংশগ্রহণকারী সম্পর্কে মন্তব্য করতে থাকে ‘ভদ্রলোক নিজে একাই পুরো ওয়ার্কশপে প্রশ্ন এবং আলোচনা করে যাচ্ছে, মনে হয় যেন আমরা কেউ কিছু জানি না। তিনি নিজেকে অনেক জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান ভাবেন। কাউকে কথা বলার সুযোগই দিচ্ছেন না’। সাফিদ বলে “ভদ্রলোক বেজায় অহংকারী ও রাগী। প্রশিক্ষক যতবারই অন্যদের প্রশ্ন করেন, ততবারই তিনি উঠে দাঁড়িয়ে জোর গলায় নিজের বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন; আমার মনে হয় ভদ্রলোকের মানসিক সমস্যা আছে”। সাফিদের কথা শুনে সকলেই হেসে উঠে।

পরবর্তী সেশনগুলোতে কেউ আর অংশগ্রহণ করতে চাইলো না এবং এ নিয়ে অভিযোগ কর্তৃপক্ষের কাছে চলে গেলো। সেদিন ওয়ার্কশপ থেকে মনে বেশ অশান্তি ও অস্থিরতা নিয়ে বাসায় ফিরে সাফিদ। বিকেলে বন্ধু মুকিতের সাথে বাইরে হাঁটতে বেরুলে বিষয়টি আলোচনা করে।

মুকিত বলে, “আজকাল সমাজ সংসারে এরকম অশান্তি সৃষ্টিকারী মানুষের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। পারিপার্শিক বাস্তব অশান্ত পরিস্থিতিগুলো প্রায়ই মানুষকে অস্থির করে তুলছে। তাই নিজের মনকে কন্ট্রোলের জন্য মেডিটেশন অথবা ধর্ম চর্চার মাধ্যমে শান্তি খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বিশ্বব্যাপী মানুষের মাঝে যদি জরীপ চালানো হয় যে, কত জন মানুষ পৃথিবীতে শান্তিতে বসবাস করতে চান? আমার মনে হয় ৯৯% মানুষই চায় শান্তিতে বসবাস করতে। জগত সংসারে এমন কোন মানুষ নেই যে শান্তি চায় না। তাহলে কেন যুদ্ধ, সংঘাত ও মারামারি যা কোন কালেই পৃথিবীতে শান্তি আনতে পারেনি; ইতিহাস এর জীবন্ত সাক্ষী।

সাফিদ – ঠিকই বলেছো, বর্তমান উন্নত সভ্যতা দেশ, সমাজ ও সংসারের মানুষগুলোকে উপহার দিয়েছে-অস্থিরতা ও প্রতিযোগীতা। কে কার চেয়ে বেশি ধন, সম্পদ ও ক্ষমতার অধিকারী হবে। সাধারণত দেখা যায় যে, যারা ক্ষমতালোভী, অহংকারী ও অর্থ সম্পদ লোভী তারা সর্বত্র নিজের কর্তৃত্ব বিস্তারে আগ্রহী, নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করাই তাদের মূল লক্ষ্য। তারা অন্যের স্বার্থ উপেক্ষা করে, মানবিক মূল্যবোধ এড়িয়ে চলে।

মুকিত – অথচ প্রত্যেক মানুষের চিন্তা চেতনায় ন্যায়-অন্যায়, ভালোমন্দ নেগেটিভ বা পজিটিভ বিষয়গুলো ক্রিয়াশীল থাকে। তার ইচ্ছাশক্তির উপর নির্ভর করে সে ধ্বংসাত্বক পথ বেছে নেবে নাকি শান্তির পথ বেছে নেবে। তবে একেকজনের সচেতনতা একেকভাবে কাজ করে যদিও মস্তিষ্কের ভিতরে থাকা নিউরোনগূলো একই প্রক্রিয়ায় কাজ করে।

সাফিদ – এটা সত্য যে, মানুষকে পাপ-পূণ্যের জ্ঞান দেওয়া হয়েছে- সেইসাথে তাকে সঠিক পথ বেছে নেয়ার জন্য ইচ্ছাশক্তি দেয়া হয়েছে। যে যার ইচ্ছাশক্তিকে যেভাবে কাজে বাস্তবায়িত করে।