নাদিরা তাবাস্সুম : সাফিদের চাচাত ভাইয়ের দুই ছেলে, মিশির এবং শিশির। তারা দুজনেই একই পরিবারের এবং এক বছরের ছোট বড়। চেহারায় দুজনের সামান্য কিছু মিল থাকলেও স্বভাব ও আচরণে একেবারে ভিন্ন। মিশির ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত অস্থির, চঞ্চল ও অনর্গল কথা বলে। লেখাপড়া ও শিক্ষাগ্রহণে আগ্রহ কম কিন্তু যেকোন খারাপ অভ্যাসে তাড়াতাড়ি জড়িয়ে পড়ে, দুষ্ট বন্ধুদের সাথে মেলেমেশা করে এবং কোন বিচার বিবেচনা করে না। পরিবারে সকলেই ওকে নিয়ে চিন্তিত ও হতাশ। ওদিকে শিশির শান্ত ও স্থির স্বভাবের, সারাদিন পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পছন্দ করে।

পরিবারের সকলেই শিশিরের বিষয়ে খুব আশাবাদী যে ও বড় হয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবে। এখানে মিশিরের চেয়ে শিশির অনেক বেশি সচেতন; অথচ একই শিক্ষাদীক্ষায় তারা বড় হচ্ছে। এ সচেনতা তার স্বভাবগতভাবে এসেছে। সাফিদের এক সহপাঠী বান্ধবী নাম সুদিপা। তার স্বামী বিয়ের পর প্রকাশ করে যে সে মাদকাশক্ত। দিন রাত টাকার জন্য চাপ সৃষ্টি করে এবং টাকা না দিলে সুদিপাকে মারধোর করে। এ কারণে সুদিপা অনেক মানসিক কষ্ট সহ্য করেছে। পরে পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে চেষ্টা করে। নিজে উদ্যোগ নিয়ে বহু উপায়ে স্বামীকে চিকিৎসা ও কাউন্সিলিং-এর ব্যবস্থা করে। অবশেষে তার স্বামী সে অবস্থা থেকে ফিরে এসেছে এবং এখন অত্যন্ত ভদ্র ও ধার্মীক মানুষ হয়ে গেছে। এতে অবশ্যই লোকটির নিজেরও ভালো হওয়ার চেষ্টা ছিলো। এভাবে অনেকে জীবনের প্রথম দিকে দুষ্টুচক্রে জড়িয়ে গেলেও পরবর্তীতে যেকোন কারণে সচেতন হয়ে মন্দ কাজ পরিত্যাগ করে এবং সম্পূর্ণ সৎমানুষে রূপান্তরিত হয়ে যায়। সবই সচেতন ও অবচেতন মনের ক্রিয়াকলাপ যা মস্তিষ্কে ঘটে থাকে। মানুষের মস্তিষ্কে যেমন সচেতনতা আছে তেমনই সারা বিশ্ব জুড়ে বিরাজমান আকাশ বাতাস গ্রহ নক্ষত্র গ্যালাক্সি সকল কিছুতেই সচেতনতা নিহিত আছে। তাইতো বিশ্ব ভরা প্রাণ সকল ক্রমাগত চলছে ঘুরছে। এইটিই মৌলিক বিষয়। যেহেতু সচেতনতা অদৃশ বিষয় তাই আমরা দেখি না। বর্তমান বিজ্ঞান মতে, বিশ্বে আমরা সবকিছু দেখি না। যাকিছু দেখি তার বেশির ভাগই অদৃশ্য থেকে যায়। বিশ্বের মাত্র ৫% মানুষের দৃষ্টিগোচর হয় এবং ৯৫% অগোচরে রয়ে যায়। অর্থাৎ সচেতন ও অবচেতন মনের সৃষ্টি যা কিছু আমরা বাস্তব মনে করি ও দেখি তা প্রকৃতপক্ষে আমাদের সচেতনতা কর্তৃক সৃষ্ট। বিজ্ঞান প্রমাণ করেছ যে, সবকিছু শক্তি, ভাইব্রেশন এবং আলো; বাস্তব সত্য নয়। আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী ডোনাল্ড হফম্যান মনে করেন যে, সচেতনতা (Consciosness)-এর জন্য মস্তিষ্কে ক্রিয়াকলাপ সংঘটিত হয় এবং বস্তুত পৃথিবীতে অবস্থিত সকল বস্তু সৃষ্টি করে । মৌলিক পর্যায়ে সবকিছু হলো শক্তি। বাস্তবতা বলে বাস্তব কিছু নেই। কানাডার নিউরীসাইন্টিষ্ট প্যাট্রীক ক্যাভানাগ বলেন “এটা সত্যি গুরুত্বপূর্ণ বোঝার জন্য যে আমরা বাস্তব দেখিনা । আমরা তাই দেখি যা আমাদের জন্য সৃষ্ট হয় ।”

এ জন্যেই শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জনের এত গুরুত্ব যা সচেতনতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহতায়ালা যুগে যুগে নবী রাসুলগণকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন মানুষকে প্রকৃত সত্য ও জ্ঞান দিয়ে মানুষকে সচেতন করার জন্য ।