Home কানাডা খবর ভ্যাকসিনেশন নীতির সুফল পাচ্ছে অন্টারিও

ভ্যাকসিনেশন নীতির সুফল পাচ্ছে অন্টারিও

শাহনুর চৌধুরী : ভ্যাকসিন নিয়ে কানাডায় পক্ষে-বিপক্ষে নানা মতামত থাকলেও অন্টারিও প্রশাসন প্রথম থেকেই ভ্যাকসিনেশনের পক্ষে কঠোর অবস্থান নিয়েছিল। এখন তারা এর সুফল পাচ্ছে। আলবার্টা ও সাসকাচুয়ানসহ যারা ভ্যাকসিনেশনে শিথিলতা দেখিয়েছিল সে সব অঞ্চলে এখন করোনার ৪র্থ ঢেউ শুরু হলেও অন্টারিওতে তুলনামূলকভাবে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে করোনা মহামারির বৈশিষ্ট্যের (সংক্রমণ ব্যাপকতা) কারণে দেশের কোন একটি অঞ্চলের পক্ষে বেশি দিন নিরাপদ থাকা সম্ভব নয়। তাই কানাডার সব প্রভিন্সে এখন অন্টারিওর মতো কঠোর ভ্যাকসিন নীতি গ্রহণের কথা বলা হচ্ছে।

করোনা মহামারি শুরুর পর প্রথম যখন টিকা আবিষ্কৃত হয় তখন ইউরোপ-আমেরিকার অনেক দেশের মতো কানাডাতেও টিকা কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম দিকে কানাডায় টিকা নিয়ে কিছুটা বিশৃঙ্খলা দেখা গেলেও অল্প কিছুদিনের মধ্যেই দেশটি তা সামলে উঠে। এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো নিজেকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ ঘোষণা করেন। তারপরও টিকার বিরল কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াসহ নানা কারণে অনেকে টিকা নিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনসহ বিভিন্ন দেশের তুলনায় টিকা নেয়ার হারে পিছিয়ে পড়ে কানাডা। এরই মধ্যে বাধ্যতামূলক টিকা গ্রহণ ও ভ্যাকসিন পাসপোর্ট নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। বিশেষ করে আদিবাসী গোষ্ঠীগুলো এই বিষয় ২ টিকে কানাডার জনগণের মৌলিক অধিকার নীতির পরিপন্থী বলে প্রচারণা চালাতে থাকে। ফেডারেল সরকার টিকা বাধ্যতামূলক করতে চাইলেও বিরোধী কনজারভেটিভরা এর বিপক্ষে অবস্থান নেয়।

এরই মধ্যে গত আগস্ট থেকে তুলে নেওয়া হয় কিছু বিধি-নিষেধ। সেপ্টেম্বরে খুলে দেওয়া হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেই সাথে চোখ রাঙাতে থাকে করোনা ডেল্টা ভেরিয়েন্ট। বিভিন্ন স্থানে বাড়তে থাকে সংক্রমণ।

এমন পরিস্থিতিতেও অন্টারিওতে চলতে থাকে ভ্যাকসিনেশন নীতির কঠোর বাস্তবায়ন। আলবার্টায় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতামত উপেক্ষা করে প্রিমিয়ার জেসন কেনি সবকিছু খুলে দেন। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি শিথিল করা হলেও টিকা গ্রহণে কোনো কঠোরতা আরোপ করা হয়নি। একই পরিস্থিতি তৈরি করা হয় পশ্চিমাঞ্চলীয় সাসকাচুয়ান ও ব্রিটিশ কলম্বিয়াসহ বিভিন্ন প্রদেশে। ‘বেস্ট সামার’ উপভোগ করার অজুহাতে এসব অঞ্চলে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরার নীতি ও বাতিল করা হয়।

চার মাস পর এখন পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে অন্টারিওর তুলনায় আলবার্টা, ব্রিটিশ কলম্বিয়া, ও সাসকাচুয়ানে কোভিড আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক অনেক বেশি। বিশেষ করে আলবার্টা ও সাসকাচুয়ানের পরিস্থিতি খুবই নাজুক। এই মুহূর্তে সাসকাচুয়ানে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অন্টারিওর চাইতে বেশি। অথচ লোকসংখ্যার দিক দিয়ে অন্টারিওর জনসংখ্যা সাসকাচুয়ানের ১০ গুণ।

অন্যদিকে আলবার্টার হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীতে পরিপূর্ণ। মৃত্যুর হারও বেশি। প্রভিন্সের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের প্রধান বলেছেন, চলতি সপ্তাহে প্রতি ৪২ মিনিটে একজন করোনা রোগী মারা গেছেন। গত বুধবারে একদিনেই মারা গেছেন ৩৪ জন। মহামারি শুরুর পর এটি এখানে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। তিনি বলেন, মৃতদের বেশিরভাগই আন-ভ্যাকসিনেটেড। তাদের আইসিইউতে রেখেও বাঁচানো যাচ্ছে না। এই মৃত্যুর হার বেশি হওয়াতেই এখনো আলবার্টার হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ সংকট দেখা দেয়নি বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, যে হারে জটিল রোগি আসছে তাতে সবাইকে আইসিইউ সাপোর্ট দেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে যেত।

স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান বলেন, এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না যদি এখানেও অন্টারিওর মতো কড়াকড়ি আরোপ করা হতো। তিনি বলেন, খুব বেশিদিন আগের কথা নয় যে অন্টারিওর স্বাস্থ্য খাতও প্রায় ভেঙে পড়েছিল। ফোর্ড প্রশাসনের ভুল নীতির কারণে তেমনটা হতে চলেছিল। কিন্তু তারা দ্রæত সঠিক পথে ফিরে আসায় এখন স্বস্তিতে আছে। করোনা ভাইরাসের ৪র্থ ঢেউয়ের গর্জন এখন আর তাদের কাবু করতে পারছে না।

ভ্যাকসিনেশন হারের তুলনা করতে গিয়ে দেখা যায় অন্টারিওতে ১২ বছরের উর্ধ্বে বয়স্কদের মধ্যে ৮১ শতাংশের বেশি উভয় ডোজ টিকা নিয়েছে। এই হার আলবার্টা ও সাসকাচুয়ান থেকে অনেক বেশি। ওই দুই প্রভিন্সে এখনো উভয় ডোজ টিকা নেয়ার হার ৭০ শতাংশের কম। এই হার কানাডার অন্য যেকোন প্রভিন্সে তুলনায় সবচেয়ে কম। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্টারিওতে টিকার হার তুলনামূলক বেশি হলেও তা এখনো নিরাপদ মাত্রায় পৌঁছেনি। শিগগিরই ওই হার ৮১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশের উপরে নিতে হবে। অন্যথায় যে কোনো সময় ডেল্টা ভেরিয়েন্টের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। এজন্য ফোর্ড সরকার বাধ্যতামূলক ভ্যাকসিনেশন, ভ্যাকসিন কাড ও ভ্যাকসিন পাসপোর্টের মাধ্যমে যত বেশি সম্ভব মানুষকে টিকার আওতায় এনে জনগণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে চাইছে। সূত্র : দ্য স্টার

Exit mobile version