Home কলাম ভারতের সংবিধানের কাছে পরাজিত হিন্দু জাতিভেদ প্রথার রাজনীতি

ভারতের সংবিধানের কাছে পরাজিত হিন্দু জাতিভেদ প্রথার রাজনীতি

সোনা কান্তি বড়ুয়া : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বৈদিক হিন্দু জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে বৌদ্ধধর্মের জয়গান গেয়ে “চন্ডালিকা” শীর্ষক নৃত্যনাট্য রচনা করেছিলেন! বৈদিক হিন্দু জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে “আমরা, ভারতের জনগণ সুপ্রতিবেশী হিসেবে একে অন্যের সঙ্গে শান্তিতে বসবাস করতে ভারতের সংবিধানের রচনা করেছিলেন! ভারতের সংবিধানে লেখা রয়েছে, “আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গঠন করতে চাই। একই সঙ্গে এর নাগরিকদের সামাজিক, আর্থিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার, চিন্তা, প্রকাশ, বিশ্বাস, আস্থা ও উপাসনার স্বাধীনতা মর্যাদা ও সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে চাই এবং তাদের সকলের মধ্যে সকল ব্যক্তির মর্যাদা ও দেশের ঐক্য ও সংহতি নিশ্চয়তাদায়ী সৌভ্রাতৃত্ব বাড়িয়ে তুলতে চাই!” বৈদিক বর্ণাশ্রমবাদী হিন্দুধর্মে মানবাধিকার না থাকাতে ভারতের সংবিধানের কাছে পরাজিত হিন্দু জাতিভেদ প্রথার রাজনীতি!

মৌলিক মানবাধিকারে, মানুষের মূল্য মর্যাদায়, নারী পুরুষের সমানাধিকারে এবং সমস্ত ছোট বড় দেশের প্রতি আমাদের বিশ্বাস পুনরুচ্চারণ করতে, এবং তেমন পরিস্থিতি প্রতিষ্ঠা করতে যার আওতায় ন্যায়বিচার ও সমস্ত চুক্তির দায়বদ্ধতার প্রতি সম্মান ও আন্তর্জাতিক আইন যাতে রক্ষা করা হয়, এবং সামাজিক প্রগতি, উচ্চতর জীবনচর্যা ও বৃহত্তর স্বাধীনতাকে বর্ধিত করতে, এবং আমাদের অন্তিম লক্ষ্য- সহিষ্ণুতা পালন করা এবং সুপ্রতিবেশী হিসেবে একে অন্যের সঙ্গে শান্তিতে বসবাস করা!

১। ভারতের সংবিধান পৃথিবীর দীর্ঘতম হাতে লেখা সংবিধান।
২। প্রখ্যাত ক্যালিগ্রাফিস্ট প্রেম বিহারী নারায়ণ রায়জাদা ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহরলাল নেহরুর অনুরোধে দীর্ঘ ছয় মাসের প্রচেষ্টায় এই বিপুল কাজটি একা হাতে সম্পন্ন করেন। গোটা কাজের জন্য এক টাকাও পারিশ্রমিক নেননি তিনি।
৩। শুধু লেখা নয়, সংবিধানের পরতে পরতে রয়েছে বিপুল নকশা। সেই নকশা করেছেন নন্দলাল বসু ও শান্তিনিকেতনের ছাত্রছাত্রীরা। এই নকশায় যেমন রয়েছে বেদ, মহাভারত ও রামায়ণের ছবি, তেমনই রয়েছে মহাত্মা গাঁধীর ডান্ডি অভিযান ও সুভাষ চন্দ্র বসুর ছবিও। টিপু সুলতান ও অশোকের ছবিতে রয়েছে সর্বধর্ম সমন্বয়ের বার্তাও।
৪। ২৫১ পৃষ্ঠার আকর গ্রন্থটির ওজন তিন কিলো ৭৫০ গ্রাম।
৫। সংবিধানের প্রথম প্রতিলিপি ছিল দুটি, একটি হিন্দি ও অপরটি ইংরেজিতে লেখা।
৬। হাতে লেখা সংবিধানের প্রথম প্রতিলিপি দুটি হিলিয়াম পূর্ণ বদ্ধ পাত্রে সংরক্ষিত রয়েছে সংসদ ভবনে।
৭। ৩০৮ জন সদস্য ২৪শে জানুয়ারি সংবিধানে সই করেন।
৮। প্রতি বছর কোনও একজন রাষ্ট্র নায়ক, সাধারণতন্ত্র দিবসে প্রধান অতিথি হয়ে আসেন। ১৯৫০ সালে প্রথমবার এসেছিলেন ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট সুকর্ণ।
৯। সাধারণতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের ট্যাবলোগুলির গতিবেগ থাকে ঘণ্টায় প্রায় পাঁচ কিলোমিটার।
১০। রাজপথে সাধারণতন্ত্র দিবসের উদযাপন শুরু হয় ১৯৫৫ সালে। এর আগে এই রাস্তার নাম ছিল কিংসওয়ে। যার নাম পরিবর্তন করে করা হয় রাজপথ।

ভারতের সংবিধানের বিরুদ্ধে হিন্দুরাজনীতি বৌদ্ধদের শ্রেষ্ঠতম তীর্থভূমি “বুদ্ধগয়া” দখল করে বৈদিক হিন্দুপন্থীরা মিথ্যা ইতিহাস বানিয়ে বৌদ্ধ সভ্যতাকে গ্রাস করে ফেলেছে। ৬ই ডিসেম্বর ১৯৯২ সালে বাবরী মসজিদ ভেঙে রাম মন্দির প্রতিষ্ঠা ট্রাজেডী ইহা এক ভারতীয় আইনের শাসনে হিউম্যান রাইটস এবং ধর্মনিরপেক্ষতার কলঙ্ক। বৈদিক বর্ণাশ্রমবাদী হিন্দুধর্মে মানবাধিকার না থাকাতে গৌতমবুদ্ধের “অহিংসা পরম ধর্ম” কে সম্রাট অশোক (খৃঃ পূর্ব ৩০০ বছর) সশ্রদ্ধ প্রনাম করে মানব জাতির মানবতা রক্ষার উদ্দেশ্যে শিলালিপি রচনা করেছিলেন!

হিন্দুধর্ম তথা হিন্দু-সংস্কৃতির কেন্দ্রে আছে ব্রাহ্মণ্যবাদী জাতিভেদ প্রথার বৈদিক-সংস্কৃতি এবং বেরিয়ে আসছে সন্ত্রাসী জাতিভেদ প্রথায় অপরাধের ফিরিস্তি! ধর্মীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে নাগরিক উদ্যোগ জোরদার করা দরকার! হিন্দু জাতিভেদ প্রথায় ভারতীয় কোন ব্রাহ্মণ শূদ্রকে হত্যা করলে কুকুর বিড়াল হত্যার সমান পাপের প্রায়শ্চিত্ত করবেন (মনুস্মৃতি ১১/ ১৩২)। সহজ কথায় ব্রাহ্মণ্যবাদের হিন্দু জাতিভেদ প্রথায় রাজনীতির ষড়যন্ত্রে হিন্দুত্ববাদীদের গায়ের জোরে উচ্চবর্ণের হিন্দু শাসকগণ বৌদ্ধগণকে দলিত বানিয়েছিলেন! স্বনামধন্য ভারতীয় লেখক টি. (তিরুমেল্লাই) এন. (নারায়ন আইয়ার) সেশন “ভারতের অধঃপতন” শীর্ষক বিখ্যাত গ্রন্থে ভারতীয় রাজনীতির চালচিত্র বিশদভাবে বর্ণনা করেছেন।

ভারতের জনগণ বৈদিক হিন্দু জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে এক বহু-সংস্কৃতির ভারত গঠনের জয়গান গেয়ে ভারতের সাবেক আইন মন্ত্রী বাবা সাহেব ডঃ বি. আর আম্বেদকর ভারতের সংবিধান রচনা করেছিলেন এবং “ভারতীয় বিধান পরিষদ, ১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এই সংবিধান গ্রহণ করল, কার্যকর করল ও আমাদের হাতে সংবিধান তুলে দিল।” প্রস্তাবনার মূল শব্দগুলির অর্থ কী? “আমরা,ভারতের জনগণ” বলতে ভারতের মানুষের চূড়ান্ত সার্বভৌমত্ব বোঝায়। এখানে ভারতকে “প্রজাতন্ত্র” হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, যা থেকে বোঝায় সরকার হবে জনগণের দ্বারা ও জনগণের জন্য। এখানে উদ্দেশ্য হিসেবে “সামাজিক, আর্থিক ও রাজনৈতিক ন্যায়ের” কথা বলা হয়েছে।

১৯৫৬ সালে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু বলেছিলেন, “গণতন্ত্রের কথা মুখ্যত আগে যা বলা হয়েছে, রাজনৈতিক গণতন্ত্রে মুখ্যত সব মানুষের ভোটাধিকার রয়েছে। কিন্তু যে মানুষ একেবারে নিচে রয়েছে, বাইরে রয়েছে, ধরুন যে মানুষটা উপোসী, ক্ষুধার্ত, তার একটা ভোট তার প্রতিনিধিত্ব করে না। রাজনৈতিক গণতন্ত্র যথেষ্ট নয়, যদি না এর মাধ্যমে কেবল অর্থনৈতিক গণতন্ত্র, সমতার ক্রমবর্ধমানতার পরিমাপ করা যেতে পারে, এবং যদি না জীবনের সুন্দর জিনিসগুলি অন্যদের কাছে ছড়িয়ে না দেওয়া যেতে পারে এবং মোটাদাগের অসাম্যগুলি দূর করা যেতে পারে।”

কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এই উগ্র জাতীয়তাবাদী ভাবাদর্শকে দূরে সরিয়ে রেখে এক বহু-সংস্কৃতির ভারত গঠনের কথা বলেছিলেন, যেখানে জনজীবনে সমস্ত রাজনৈতিক স¤প্রদায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। হিন্দু জাতীয়তাবাদী ও মুসলিম লিগ, দু’ পক্ষকেই নেহরু সরিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন। অহিংসা পরম ধর্ম এবং আনন্দবাজার পত্রিকায় (১৬ অগষ্ট ২০১৬ লেখক জয়ন্ত ঘোষালের লেখা “উচ্চবর্ণ আর দলিতে সংঘাতে হিন্দুত্ববাদীরা বেসামাল” শীর্ষক} প্রবন্ধে বিরাজমান“ ঐতিহাসিক ভাবে কংগ্রেস স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় থেকে বহুত্ববাদের প্রবক্তা। কংগ্রেসের মধ্যে এ নিয়ে সমস্যা ছিল। মদনমোহন মালব্যের মতো নেতা কংগ্রেস সংগঠনের পাশাপাশি হিন্দু মহাসভার ধ্বজাকে উড়িয়ে চলেছিলেন। পরবর্তী কালে, ১৯৩০ সালে বীর সাভারকর অবশ্য হিন্দু মহাসভাকে একটি পৃথক রাজনৈতিক সংগঠনে রূপান্তরিত করেন।

ভারতীয় সাবেক আইন মন্ত্রী বাবা সাহেব ডঃ বি. আর আম্বেদকর বিধান পরিষদে তাঁর অন্তিম ভাষণে বলেছিলেন, “রাজনৈতিক গণতন্ত্রের ভিত্তিতে সামাজিক গণতন্ত্র না থাকলে তা টিকে থাকতে পারে না। গণতন্ত্র মানে কী? তার মানে এমন একটা জীবন যেখানে স্বাধীনতা, সমতা ও সৌভ্রাতৃত্বকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় যে তিনটি পৃথক নয়। এই তিনে মিলে একটি সংযুক্তি তৈরি হয় যার একটি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেই গণতন্ত্র তার উদ্দেশ্য হারাবে। স্বাধীনতাকে সমতার থেকে আলাদা করা যায় না, সমতাকে পৃথক করা যায় না স্বাধীনতার থেকে। আবার সৌভ্রাতৃত্বের থেকে স্বাধীনতা ও সমতাকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না।” ১৯৭৬ সালে সংবিধানের ৪২ তম সংশোধনীতে ‘সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে’র জায়গায় ‘সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র’ গৃহীত হয়েছে। সে সময়ে ‘দেশের ঐক্য’-কে বদলে ‘দেশের ঐক্য ও সংহতি’ করা হয়েছে।

ভারতীয় সাবেক আইন মন্ত্রী বাবা সাহেব ডঃ বি. আর আম্বেদকর বলেছিলেন, “লড়াই লড়তে হলে সংসদে- আদালতে-সরকারি উচ্চপদে যাওয়ার জন্য লড়াই করো, মন্দিরে যাওয়ার জন্য নয়। মন্দিরে তো কুকুরও ঢুকে যায়! অধিকার ভিক্ষায় বা অন্যায় পথে মেলে না, কঠিন সংগ্রাম আর যোগ্যতায় পাওয়া যায়। তাই শিক্ষিত, সচেতন ও যোগ্য হতে হয়।” প্রস্তাবনা কী, ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনার ইতিহাস কীরকম? প্রস্তাবনা হল কোনও নথির প্রারম্ভিক বিবৃতি যাতে ওই নথির দর্শন ও উদ্দেশ্য বর্ণিত থাকে। সংবিধানের ক্ষেত্রে, এতে সংবিধান রচয়িতাদের উদ্দেশ্য, তৈরির ইতিহাস এবং দেশের আদত মূল্যবোধ ও নীতি লিপিবদ্ধ রাখা হয়। ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনার আদর্শ জওহরলাল নেহরু বর্ণিত, যা ২২ জানুয়ারি ১৯৪৭-এ গণপরিষদ গ্রহণ করেছিল।

১৯৫৬ সালে ১৪ অক্টোবর জাতিভেদ প্রথার ট্রাজেডি সহ্য করতে না পেরে ভারতীয় সাবেক আইন মন্ত্রী ডঃ বি. আর আম্বেদকর ৫০ হাজার জনতা নিয়ে বৌদ্ধধর্ম গ্রহন করেন। ভারতীয় হিন্দু শাসকগণ বুদ্ধকে হিন্দুর অবতার বানিয়ে বৌদ্ধগণকে নীচ জাতি করে রাখেন। ফল বিশ্ববৌদ্ধদের শ্রেষ্ঠতম তীর্থস্থান “বুদ্ধগয়ার মহাবোধি মন্দির” (যেই পবিত্র বোধিবৃক্ষের তলে বসে রাজকুমার সিদ্ধার্থ কঠোর সাধনার মাধ্যমে সম্যক সম্বুদ্ধ বা বুদ্ধত্ব লাভ করেন) হিন্দু রাজনীতি দখলে রাখবে।

—মৌলিক মানবাধিকারে, মানুষের মূল্য মর্যাদায়, নারী পুরুষের সমানাধিকারে এবং সমস্ত ছোট বড় দেশের প্রতি আমাদের বিশ্বাস পুনরুচ্চারণ করতে, এবং তেমন পরিস্থিতি প্রতিষ্ঠা করতে যার আওতায় ন্যায়বিচার ও সমস্ত চুক্তির দায়বদ্ধতার প্রতি সম্মান ও আন্তর্জাতিক আইন যাতে রক্ষা করা হয়, এবং সামাজিক প্রগতি, উচ্চতর জীবনচর্যা ও বৃহত্তর স্বাধীনতাকে বর্ধিত করতে, এবং আমাদের অন্তিম লক্ষ্য সহিষ্ণুতা পালন করা এবং সুপ্রতিবেশী হিসেবে একে অন্যের সঙ্গে শান্তিতে বসবাস করা!

এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় আমাদের শক্তি একত্রিত করা এবং — নীতি ও পদ্ধতি মেনে যাতে সশস্ত্র শক্তি ব্যবহৃত না হয়, তা সুনিশ্চিত করা, সাধারণ স্বার্থের জন্য রক্ষা করা এবং সমস্ত মানুষের আর্থিক ও সামাজিক প্রগতির জন্য আন্তর্জাতিক পরিকাঠামো কাজে লাগানো আমাদের যৌথ প্রচেষ্টার লক্ষ্য হিসেবে আমরা এগুলি নির্ধারণ করেছি! আমাদের সংশ্লিষ্ট সরকারগুলি, তাদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সানফ্রান্সিসকো শহরে মিলিত হয়েছেন, যাঁরা সম্পূর্ণ ক্ষমতা যথাযোগ্যতায়, ভালোভাবে প্রদর্শন করেছেন, তাঁরা সকলে মিলে রাষ্ট্র সংঘের বর্তমান সনদে সম্মত হয়েছেন এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রাষ্ট্র সংঘ প্রতিষ্ঠা করেছেন।

ব্রাহ্মণ্য ধর্মের পূনরুত্থান! নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের বিজেপি ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শক্তিশালী জাতিরাষ্ট্র গঠনের কথা বলেন। কিন্তু বাস্তবে তাঁদের ভোটব্যাঙ্কের মুখ চেয়ে জাতপাত নিয়ে এক বিচিত্র ‘কাট অ্যান্ড পেস্ট’ রণকৌশল গ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে। আগে এটা ছিল শুধু হিন্দু-মুসলমান বিতর্ক। এখন হয়েছে ব্রাহ্মণ দলিত বিতর্ক।” দেশ পত্রিকার লেখক দীপঙ্কর রায়ের মতে, “গীতায় একজন বুদ্ধিমান আরেকজন অপেক্ষাকৃত অল্প বুদ্ধিমানকে হত্যায় প্ররোচিত করছেন। এই প্ররোচনার ফলে মানুষ নিহত হয়েছিলেন অগণ্য। এর পর হাজার বছর ধরে সেই প্ররোচনামূলক গ্রন্থটিকে একটি জাতির মহান গ্রন্থ বলে জাহির করে ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতি অর্থাৎ কায়েমি স্বার্থকে টিকিয়ে রাখার চেষ্ঠা চলেছে (দেশ, কোলকাতা, জুন ২২, ১৯৯১)।”

আদিতে বৈদিক সংস্কৃতির ঔরসে জন্ম বর্ণাশ্রম আইন। সবার উপরে ব্রাহ্মণ বর্ণ। রয়েছে-যজ্ঞ-পুজো-উপাসনা-মন্ত্র-স্বর্গ-পরজন্ম ইত্যাদি তত্ত¡। রয়েছে শ্রমিক ও নারী জাতির প্রতি বিমাতৃসুলভ আচরণ তথা অস্পৃশ্যতা। বর্ণাশ্রম কিন্তু নিছক প্রথা ছিল না। এটাই ছিল রাষ্ট্রীয় আইন (Law)। বর্ণাশ্রম ব্যবস্থাকে প্রথা না বলে আইন বলাই উচিত। বর্তমান হিন্দু ধর্মেও সেই বর্ণাশ্রম-আইন বেসড বৈদিক সংস্কৃতি চলছে। এ হেন সংস্কৃতি বা ধর্মের মধ্যে তফসিলি তথা এসসি-এসটি-ওবিসি এবং নারী জাতিকে বলা হয় শূদ্র বা নিচু বর্ণ। এমন কি কায় স্থ-বৈদ্য জাতিকেও শূদ্র বলা হয়। এরাও ব্রাহ্মণ বা আর্য তকমা পায় না। স্বামী বিবেকানন্দ তথা নরেন্দ্রনাথ দত্ত তো ব্রাহ্মণ তকমা পাননি। তিনিও শূদ্র হয়ে রয়েছেন। এই হল হিন্দু ধর্ম।
বাবরি মসজিদ ভেঙে সেই উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের বিচার না হলে তাদের ঔদ্ধত্য ভারত জাতিকে নষ্ট করে দেবে! জাতিভেদ প্রথায় মানুষের মনুষ্যত্ব কেড়ে নেওয়াটাই হিন্দু রাজনীতির হিন্দু ধর্ম!

“সেই উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা কেমন করিয়া ভুলিয়া গেলেন যে, একদা রাশি রাশি বৌদ্ধ ধর্মস্থান ধ্বংস করিয়া একদিন গড়িয়া উঠিয়াছিল রাশি রাশি হিন্দু মন্দির (আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদকীয়, ২২ আগষ্ট, ১৯৯৩)!” ৬ই ডিসেম্বর ১৯৯২ সালে বাবরী মসজিদ ভেঙে রাম মন্দির প্রতিষ্ঠা ট্রাজেডী ইহা এক ভারতীয় আইনের শাসনে হিউম্যান রাইটস এবং ধর্মনিরপেক্ষতার কলঙ্ক। ২৮ বছর পর ভারতীয় লোকসভার মনোনিত “লিবারহ্যান কমিশন” বাবরি মসজিদ ধ্বংসের জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী নরসিংহ রাও এবং উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কল্যানসিংহ সহ ৬৮জন হিন্দু নেতাকে অভিযুক্ত করেছেন। ভারত সরকারের দায়িত্ব ছিল বাবরি মসজিদ রক্ষা করে “প্রত্যেকরই জীবন ধারন, স্বাধীনতা ও ব্যক্তি নিরাপত্তার অধিকারকে” শ্রদ্ধা করা। আদালতে অভিযুক্ত কিন্তু বাবরি মসজিদ ধ্বংসের হোতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ি, সাবেক উপ প্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আদভানি ও মুরলি মোহন যোশী। সিডি প্লেয়ারে মান্না দে’র একটা বিখ্যাত গান শুনছি।
হিন্দুরাজনীতি তোমার নিশ্বাসে বিষ ছিল
আমি বিশ্বাস করিনি।
ওরা বলেছিল বহুবার
কারো কথা কানে ধরিনি।
রূপ সুন্দর যার,
ভাবিনি এমন কালো হবে অন্তর (হিন্দুরাজনীতি ) তার।
তোমারই তো মালা পড়েছি
আর কারো মালা পড়িনি।
বাইরে তো সুনাম,
এতো খাদ ভিতরে যাচাই না হলে আমি কি করে?
গান এতো সুমধুর যার, (হিন্দুরাজনীতি)
ভাবিনি মুখের কথা এতো নিষ্ঠুর তার।
আমি জেনে মরেছি,
কিছু না জেনে তো মরিনি।
তোমার (হিন্দুরাজনীতি) নিশ্বাসে বিষ ছিল
আমি বিশ্বাস করিনি।”
গানটা শেষ হতে না হতেই হিন্দুরাজনীতিকদের স্বপ্নভঙ্গের কথা নানাদিক দিক থেকে কানে আসছে।

বিশ্ববৌদ্ধ পুরস্কার প্রাপ্ত প্রখ্যাত মানবতাবাদী লেখক সোনা কান্তি বড়ুয়া (Bachelor of Arts, University of Toronto), সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা প্রবাসী কলামিষ্ঠ, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে বিশ্ববৌদ্ধ প্রতিনিধি!

Exit mobile version