অনলাইন ডেস্ক : দেশের অর্থনীতির চাকা সচলে প্রবাসী শ্রমিকদের রেমিট্যান্সের পরই রফতানিমুখী পণ্য তৈরী পোশাকের ভূমিকা অনন্য। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দিল্লি পালানোর পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার খাদের কিনারে থাকা অর্থনীতিকে টেনে তোলার চেষ্টা চলছে। অর্থনীতিকে গতিশীল করতে গত এক মাসে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ, বিশ্বনেতা ও গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাগুলো যখন বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগী হচ্ছে; তখন শ্রমিক বিক্ষোভের নামে তৈরী পোশাক শিল্পকে ধ্বংসের চেষ্টা চলছে।
বিদেশি ক্রেতারা শীত মৌসুমের জন্য বাংলাদেশ থেকে পোশাক ক্রয়ে অর্ডার যখন দেবেন, তখন শ্রমিক অসন্তোষের নামে গার্মেন্টস শিল্পকে ধ্বংসের অপচেষ্টা চলছে। হিন্দুত্ববাদী ভারতের পাপেট শেখ হাসিনা দিল্লিতে বসে বাংলাদেশের জনগণের ওপর প্রতিশোধ নিতে একের পর এক ষড়যন্ত্রের কার্ড ছুড়ছেন। ভারতের স্বার্থে হাসিনার এই নীলনকশা বাস্তবায়নে দেশের প্রশাসনের কিছু আমলা, কিছু ব্যবসায়ী নামের দিল্লির এজেন্ট এবং কিছু শ্রমিক-শ্রমিক নেতা নামের হাসিনার পোষা প্রাণী শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ উস্কে দিচ্ছেন এবং পর্দার আড়াল থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অথচ দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বশীলরা ‘আনজুমানে মফিদুল ইসলাম’ এবং ‘রামকৃষ্ণ মিশনের’ ন্যায় ‘হোমিও প্যাথি’ ক্রিয়াকলাপ করছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে একের পর এক অস্থিরতা সৃষ্টির অপচেষ্টা সরকার কঠোরভাবে দমাতে না পারলে সামনে এই ধারা আরো বাড়তে থাকবে। কারণ প্রতিহিংসাপরায়ণ হাসিনা অন্তর্বর্তী সরকার ও দেশের মানুষকে শান্তিতে থাকতে দেবে না। খাল কেটে কুমির আনার মতোই হাসিনা নিজের অনিষ্ট করে হলেও বাংলাদেশের ক্ষতি করার চেষ্টা অব্যাহত রাখবে।
বর্তমানে দেশের অর্থনীতির বেহাল দশা। উন্নয়নের নামে দেশের অর্থনীতিকে ফোকলা করেছে হাসিনা। ১৫ বছর ধরে লুটপাট, দুর্নীতি, বিদেশে টাকা পাচার, বোন শেখ রেহানা-পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়-কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের টাকার পাহাড় গড়া এবং দলীয় মন্ত্রী-এমপিদের পকেট ভারী করতে শেখ হাসিনা ব্যাংক-বীমা-শিল্প-ব্যবসা সবকিছু ধ্বংস করে গেছেন।
এ অবস্থায় ড. ইউনূসের দায়িত্ব গ্রহণের পর অর্থনীতিতে গতি আসতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে কিছু সংস্কার কর্মসূচিও গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের কেউ কেউ ‘হেসে খেলে’ মন্ত্রণালয় চালানো এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাদের কেউ কেউ ‘রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা’ নেয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। ১৫ বছর জুলুম-নির্যাতনের শিকার রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের নিয়ে মহাব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকারকে এগিয়ে নেয়ার দায়িত্ব যেন কারো নেই।
এমন পরিস্থিতি বুঝতে পেরে ভারত এবং তার পাপেট হাসিনা পাট শিল্প ধ্বংসের মতোই তৈরী পোশাক ও ওষুধ শিল্প ধ্বংস করে বিশ্ববাজারকে ভারতের কব্জায় নেয়ার ষড়যন্ত্র করছেন। নতুন সরকার গঠনের পর ভারত একের পর এক ষড়যন্ত্র কার্ড ছুঁড়ছে অথচ দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ঘুমিয়ে রয়েছে? জুডিশিয়াল ক্যু, সংখ্যালঘু নির্যাতন কার্ড, ১৫ আগস্টে ১০ লাখ লোকের ঢাকায় অবস্থান, আনসারের সচিবালয় ঘেড়াও, প্রশাসনের কর্মর্কতা-কর্মচারীদের দাবি-দাওয়ার নামে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে এখন তারই ধারাবাহিকতায় তৈরী পোশাক শিল্পকে টার্গেট করেছে। গত কয়েক দিন ধরে আশুলিয়া, সাভার, টঙ্গী ও গাজীপুরে পোশাক শ্রমিকদের নামে বিক্ষোভ-ভাঙচুরের তাণ্ডব চলছে। অথচ সরকারের বাণিজ্য-শ্রম-শিল্প-বস্ত্র-স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল উপদেষ্টা-সচিব-কর্মকর্তারা নাকে শর্ষের তেল দিয়ে দিবানিদ্রায় গেছেন!
গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও প্রকৃত শ্রমিকরা বলছেন, বাংলাদেশের পোশাক খাত নিয়ে ভারত গভীর ষড়যন্ত্র করছে। এর মধ্যে অপরাজনীতিও ঢুকে পড়েছে। যারা আন্দোলন করছে তারা প্রকৃত শ্রমিক নয়। প্রকৃত শ্রমিকরা কখনো নিজ কর্মস্থলের ধ্বংস চায় না। হাসিনার আমলে সুবিধাভোগী শ্রমিক নেতা এবং আওয়ামী লীগের এজেন্টরা গার্মেন্টসে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। তারাই পোশাক শিল্পকে অস্থিতিশীল করতে ভাঙচুর চালাচ্ছে। শ্রমিক বিক্ষোভের আড়ালে তারা শিল্পকে ধ্বংস করতে উঠেপড়ে লেগেছে। গার্মেন্টস ভাঙচুরে নিরীহ শ্রমিকরা জড়িত নন, বহিরাগতরাই এসব করছে। শ্রমিকদের যেসব দাবির কথা বলা হচ্ছে, ৫ আগস্টের আগে গার্মেন্টস সেক্টরে সেসব দাবির কথা শোনা যায়নি। এ সংকট দ্রুত শক্তভাবে প্রতিহত করতে না পারলে দেশের পুরো পোশাক শিল্পে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। শ্রমিক অসন্তোষের খবর প্রচার হলে বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশের পণ্য ক্রয়ের অর্ডার না দিয়ে ভারতের তৈরী পোশাক ক্রয়ে বাধ্য হবে। আর যেসব বিদেশি অর্ডার ইতোমধ্যেই পাওয়া গেছে পোশাক উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় সময়মতো পণ্য জাহাজীকরণে অনিশ্চয়তায় পড়ে যাবে।
চলমান শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর শ্রম ও কর্মসংস্থানবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, সাভারের পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বকেয়া বেতন বৃহস্পতিবারের মধ্যে পরিশোধ করা হবে। ইতোমধ্যে শ্রমসংক্রান্ত অভিযোগ পর্যালোচনা কমিটি করা হয়েছে। যেখানে যে কেউ শ্রমের বিষয়ে অভিযোগ জানাতে পারবেন। মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিরাও আছে এই কমিটিতে। বিজিএমইএ জানিয়েছে ৪০ থেকে ৬০টি কারখানা এখন বন্ধ আছে। ১০ থেকে ১৫ ভাগ অর্ডার সাময়িক সময়ের জন্য অন্য জায়গায় চলে গেছে।
গার্মেন্টস মালিকরা জানান, গার্মেন্টস সেক্টরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন বিদেশি ক্রেতারা, নতুন অর্ডার দিচ্ছেন না। তারা ভারতে অর্ডার দিচ্ছেন বেশি। ফলে বোঝাই যাচ্ছে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে হিন্দুত্ববাদী ভারতের শকুনি দৃষ্টি পড়েছে। তিন দশক আগে বাংলাদেশের পাট শিল্প ধ্বংস করে ভারতে নতুন নতুন পাটকল গড়ে তোলা হয়েছে। এখন গার্মেন্টস শিল্পকে ধ্বংস করতে চাচ্ছে। এখনই সতর্ক না হলে এবং শ্রমিক আন্দোলন ঠেকাতে সরকার কঠোর অবস্থান গ্রহণ না করলে পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
জানতে চাইলে বিকেএমইএ-এর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, তৈরী পোশাক শিল্প কঠিন সময় অতিক্রম করছে। শ্রমিক অসন্তোষের জেরে একদিকে কারখানা বন্ধ থাকায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে বিদেশি ক্রেতারা শীত ও গ্রীষ্মের অর্ডার কমিয়ে দিয়েছেন। রফতানি আদেশ যাতে অন্য দেশে চলে যায়, সেজন্য পরিকল্পিতভাবে গার্মেন্টে হামলা, ভাঙচুর চালানো হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, এ বিক্ষোভের সঙ্গে সাধারণ শ্রমিকদের দূরতম সম্পর্কও নেই। রফতানিমুখী এ শিল্পকে বাঁচাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মালিকদের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতা, শ্রমিকনেতা, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্বৈরশাসক হাসিনা রেজিমে সাধারণ ব্যবসায়ীরা নানাভাবে হয়রানির শিকার ও বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের অনুগত ছাড়া কেউ স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পরেননি। সে কারণে ব্যবসায়ীদের বড় অংশ চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বিশেষ ব্যবসায়ী সম্মেলন’ করে শেখ হাসিনাকে ফের ক্ষমতায় আনার ঘোষণা দেন। এমনকি মৃত্যুর পরও হাসিনার সঙ্গে থাকার অঙ্গীকার করেন।