সোনা কান্তি বড়ুয়া : বুধবার শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা, ২৫৬৫ বুদ্ধাব্দের ১৩ই জুলাই ২০২২ ইংরেজী খ্রিষ্টাব্দ। সুপ্রভাত- শুভ কামনা সকলের প্রতি। পূজনীয় গৌতমবুদ্ধের অহিংস নীতিতে মানুষ শব্দটাতে কোন কাঁটাতারের বেড়া নেই! ২৬০০ বছর পূর্বে আষাঢ়ী পূর্ণিমার রাতে মহামতি গৌতম বুদ্ধ সারানাথের ঈষিপত্তন মৃগদাবে সেই পঞ্চবর্গীয় শিষ্যদেরকে প্রথম “ধর্মচক্র প্রবর্তন সূত্র” দেশনা করলেন! গৌতম বুদ্ধের প্রথম ধর্মচক্র উপদেশ প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে বৌদ্ধ চিন্তাধারাপুষ্ঠ অশোক চক্র (ধর্মচক্র) ভারতের জাতীয় পতাকা এবং জাতীয় এমবেøম বা সরকারী স্মারক চিহ্ন রুপে “সত্য মেব জয়তে” বিরাজমান! ভারতীয় উপমহাদেশ সাতচল্লিশে ধর্মের জন্য ভারত ও পাকিস্তান দ্বিখন্ডিত হয়ে হিন্দু ও মুসলমানদের ধর্মান্ধ রাজনীতি তৈরি করল কাঁটাতারের বেড়া আতঙ্ক!

সম্রাট অশোকের বুদ্ধ বন্দনার অমর এ্যালবাম গৌতম বুদ্ধের প্রথম ধর্মচক্র উপদেশ আজ ভারতের জাতীয় পতাকার কেন্দ্রস্থলে বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারায় ২৪টি দণ্ডযুক্ত (প্রতীত্যসমূৎপাদ বা সমগ্র কার্যকারণ প্রবাহ) ঘন নীল রঙের অশোকচক্র সংবলিত ভারতীয় গেরুয়া, সাদা ও ভারতীয় সবুজ এই তিন রঙের একটি আনুভূমিক আয়তাকার পতাকা। ১৯৪৭ সালের ২২ জুলাই আয়োজিত গণপরিষদের একটি অধিবেশনে পতাকার বর্তমান নকশাটি গৃহীত হয় এবং সেই বছর ১৫ অগস্ট এটি ভারত অধিরাজ্যের সরকারি পতাকার স্বীকৃতি লাভ করে। এরপরে এটি ভারতীয় প্রজাতন্ত্রেও জাতীয় পতাকার স্বীকৃতি বজায় রাখে। ভারতে এটিকে “তেরঙা” নামে অভিহিত করা হয়। পতাকাটির নকশা প্রস্তুত করা হয়েছিল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া কৃত “স্বরাজ” পতাকার আদলে। বর্তমানে নয়া দিল্লিস্থ ভারতের রাষ্ঠ্রপতি ভবনে দরবার প্রাঙ্গনে এখন সুদীর্ঘ ধ্যানমগ্ন পূজনীয় গৌতমবুদ্ধ দিল্লির সিংহাসনে বিরাজমান, যিনি ভারতের জনগন ও শাসকবৃন্দকে আশির্বাদ করছেন। এর পাশে আছে সম্রাট অশোক হল, এখানে ভারতীয মন্ত্রীরা শপথ নেন এবং বিদেশী রাষ্ঠ্রদূতগণ মাননীয় রাষ্ঠ্রপতির নিকট তাঁদের পরিচয় পত্র পেশ করেন। সাধু সাধু সাধু।

বৌদ্ধ ভারত মহাকাব্যের মহাকবি সম্রাট অশোক বুদ্ধগয়া মহাজনসমুদ্রে জনগণমনের মুক্তির মঞ্চে দাঁড়িয়ে জলদ গম্ভীর স্বরে ঘোষণা করেছিলেন, “অহিংসা মানুষের ধর্ম এবং “সত্য মেব জয়তে।” ভূপালে সাঁচীর তোরনদ্বারের দক্ষিন তোরণের পশ্চিমের স্তম্ভের মাঝের দুটো প্যানেলে সেই মহামতি সম্রাট অশোকের তীর্থভূমি বুদ্ধগয়ায় মহাবোধিবৃক্ষে বুদ্ধ বন্দনার অমর এ্যালবাম আজ ও অ¤øান হয়ে আছে। সম্রাট অশোক ব্রাহ্মণ শাসিত সংস্কৃত ভাষা বাদ দিয়ে পালি ভাষা গ্রহন করেছিলেন। ব্রাহ্মণ শাসিত সংস্কৃত ভাষা বাদ দিয়ে সম্রাট অশোক বৌদ্ধ ত্রিপিটক পালি ভাষায় প্রকাশনা প্রচার ও প্রসার করার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। “অশোক যাহার কীর্তি গাইল. / হিমালয় থেকে জলধি শেষ।” পরম পূজনীয় গৌতমবুদ্ধকে সশ্রদ্ধ বন্দনা করে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিতা লিখেছিলেন, “ওই নামে ধন্য হলো একদিন তব জন্মভূমি / আর বার সেই নাম / এ দেশের নগরে প্রান্তরে দান কর তুমি।” হিন্দু মুসলমান রাজনীতিতে ভারতের জাতীয় পতাকায় বৌদ্ধধর্মের বিশ্বজয়! মানবতা কাছেপরাজিত ধর্মান্ধ রাজনীতি!

গৌতমবুদ্ধের অহিংস নীতিতে দীক্ষা নিয়ে সম্রাট অশোকের (After three hundred years of Lord Buddha) মানবাধিকারের ঘোষণা ছিল”অহিংসা পরম ধর্ম”! শিলালিপিতে লিপিবদ্ধ করেছিলেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের ভাষায়, “জগতের মধ্যে শ্রেষ্ট সম্রাট অশোক আপনার যে কথাগুলিকে চিরকালের শ্রুতিগোচর করিতে চাহিয়া ছিলেন, তাহাদিগকে পাহাড়ের গায়ে খুদিয়া দিয়াছিলেন। ভাবিয়া ছিলেন, পাহাড় কোনকালে মরিবে না, সরিবে না, অনন্তকালের পথের ধারে অচল হইয়া দাঁড়াইয়া নব নব যুগের পথিকদের কাছে এক কথা প্রতিদিন ধরিয়া আবৃত্তি করিতেই থাকিবে। পাহাড়কে তিনি কথা কইবার ভার দিয়াছিলেন। তোমার কীর্তির চেযে তুমি যে মহৎ, / তাই তব জীবনের রথ,/ পশ্চাতে ফেলিয়া যায় কীর্তিরে তোমারে,/ বারম্বার। / তাই চিহ্ন তব পড়ে আছে,/ তুমি হেথা নাই।”
হিন্দুরাজনীতি বৌদ্ধ ধর্মচক্রকে বদলায়ে অশোকচক্র বানিয়েছে এবং সম্রাট অশোকের বৌদ্ধ ভারতকে হিন্দু ভারত করেছেন। অথচ “বন্দে মাতরম” শীর্ষক কবিতার লেখক সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ভাষায়, “তখন বিশুদ্ধাত্মা শাক্যসিংহ (বুদ্ধ) অনন্তকালস্থায়ী মহিমা বিস্তারপূর্বক, ভারতাকাশে উদিত হইয়া, দিগন্ত প্রসারিত রূপে বলিলেন, – আমি তোমাদের রক্ষা করিব। বর্ণ বৈষম্য মিথ্যা। যাগযজ্ঞ মিথ্যা। বেদ মিথ্যা, সূত্র মিথ্যা, ঐহিক সুখ মিথ্যা, কে রাজা, কে প্রজা, সব মিথ্যা। ধর্মই সত্য। মিথ্যা ত্যাগ করিয়া সকলেই সত্যধর্ম পালন কর। (বঙ্কিম রচনাবলী, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৩৮২ থেকে ৩৮৩, (SAMYAVADA) সাহিত্য সংসদ প্রকাশিত!

ভারতীয় উপমহাদেশ সাতচল্লিশে ধর্মের জন্য ভারত ও পাকিস্তান দ্বিখন্ডিত হয়ে হিন্দু ও মুসলমানদের কাঁটাতারের বেড়া আতঙ্ক তৈরি করল ধর্মান্ধ রাজনীতি! বাংলাদেশে সংখ্যাগুরু ‘মুসলমান নেস’ আপত্তিকর না হলেও সংখ্যালঘুর ‘বৌদ্ধনেস’ এবং হিন্দুনেস ঢের সমস্যাজনক। সংখ্যাগুরু মুসলমানদের ধর্মাচরণে, সংস্কৃতিতে কেউ বিপন্ন বোধ করে না। কিন্তু সংখ্যালঘু হিন্দু বৌদ্ধদের বেলা গল্প আলাদা। তখন তাঁদের ক্ষেত্রে সংবিধানস্বীকৃত আত্মপরিচয়ের বৌদ্ধদের রামুর বৌদ্ধ বিহার অধিকারকে ও দেশের স্বার্থের বিপরীতে দাঁড় করিয়ে দেওয়া চলে! কেবল পর্দাতেই নয়, বাস্তবেও নাগরিক থেকে রাষ্ট্র সকলের চোখে হিন্দু বৌদ্ধকে সহজেই ‘ভিলেন’ বানানো চলে। তখন ধর্মান্ধ সংখ্যাগুরুর এই রাষ্ট্র তাঁর এমন একটি ভাবমূর্তি নির্মাণ সম্পূর্ণ করে, যাতে তার আত্মপরিচিতির অন্যতম অভিজ্ঞানবৌদ্ধনেস – হিন্দুনেস ও খোদ হিন্দু বৌদ্ধ সমাজের মধ্যেই আতঙ্ক তৈরি করে। উগ্র জামায়াতের ভয়ঙ্কর বিদ্বেষটাই ধর্মান্ধ জামায়াতের অধর্ম!

ভারত সরকার PALI & HINDI BUDDHIST TRIPITAKA (in 1957), ইংরেজী ভাষায় মূল্যবান গ্রন্থ 2500 Years of Buddhism এবং “দি ওয়ে ওব দি বুদ্ধ” শীর্ষক গ্রন্থে গৌতমবুদ্ধের আগের (১) কনকমুনি বুদ্ধ এবং (২) কাশ্যপবুদ্ধের নাম সম্রাট অশোকের শিলালিপিতে সগৌরবে বিরাজমান। Mr. Bishu Kumar বড়ুয়ার লেখায় “শ্রেষ্ঠ পদার্থ বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বৌদ্ধ ধর্মকে আগামীর একমাত্র ধর্ম বলে গিয়েছিলেন যা এই পৃথিবীর সমস্ত কিছুর বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যাকে ধারন করে থাকবে। তাঁর এই কথার পেছনে মূল কারন হলো বৌদ্ধ ধর্মই একমাত্র চিত্তের নিয়ন্ত্রণ, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ বা জয় করা, ঈশ্বর কেন্দ্রীক ধর্মীয় বোধকে এড়িয়ে যাওয়া, শুধু নিজে কিংবা মানুষ নয় বরং সকল প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধ, এবং সর্বশেষ মানুষকে যে কোন কিছুই অভিজ্ঞতার মাধ্যমে উপলব্ধি, শেখা ও ধারন করা- এ শিক্ষা গুলোর উপরে ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আর একারনেই আইনস্টাইন বলেছেন, “ভবিষ্যতের একটি কসমিক রিলিজিয়নে যেমন হওয়া দরকার বৌদ্ধ ধর্মের সেই সকল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি “ব্যক্তি ঈশ্বর” ধারণাকে ব্যবহার করে, অন্যের চাপিয়ে দেওয়া কোন “অবিতর্কযোগ্য”ও ঈশ্বর কেন্দ্রীক ধর্মীয় বিশ্বাসকে অগ্রাহ্য করে। বৌদ্ধ ধর্ম প্রাকৃতিক এবং আত্মিক দুটি ধারণাকেই অর্থপূর্ণভাবে একীভূত করতে পেরেছে; এবং এটি প্রাকৃতিক এবং আত্মিক দুই ক্ষেত্রেই অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান থেকে তৈরী ধর্মীয় অনুভূতির উপরে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে”।

ভারতের জাতীয় পতাকায় বৌদ্ধধর্মের ধর্মচক্র উপদেশে বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারায় উদ্ভাসিত ধরনীতল! শ্রেষ্ঠ পদার্থ বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বৌদ্ধ ধর্মকে আগামীর একমাত্র ধর্ম বলে গিয়েছিলেন যা এই পৃথিবীর সমস্ত কিছুর বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যাকে ধারন করে থাকবে। তাঁর এই কথার পেছনে গৌতম বুদ্ধের অহিংসা পরম ধর্মে বিজ্ঞানভিত্তিক অনুমান সে কথাই বলছে। গাত্রবর্ণ, উচ্চতা, চোখের মণির রং, খুলির গঠনের মতো আপাত বৈচিত্রের মূলে বিভিন্ন পূর্বসূরির জিনের বিষনুপাতিক মিশ্রণ, জিনের উপর পরিবেশের প্রভাব, মানবজাতির বিভিন্ন শাখার ভৌগোলিক স্থানপরিবর্তন- এ সবেরও চুলচেরা হিসাব করা সম্ভব আধুনিক কম্পিউটারের বিপুল গণনাশক্তি প্রয়োগ করে।

বিজ্ঞানী আইনস্টাইন যে কারনে বৌদ্ধ ধর্মকে “ভবিষ্যতের একটি কসমিক রিলিজিয়ন বলে মন্তব্য করেন! এ পৃথিবীকে পরিবর্তন করে দেয়া, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ পদার্থ বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছেন যে পৃথিবীতে যত ধর্মের প্রবর্তক আছে, তাঁদের মধ্যে আমি শুধু গৌতম বুদ্ধকে শ্রদ্ধা করি। শ্রদ্ধা করার প্রধান কারন হল যে বৌদ্ধ ধর্মই একমাত্র চিত্তের নিয়ন্ত্রণ, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ বা জয় করা, ঈশ্বর কেন্দ্রীক ধর্মীয় বোধকে এড়িয়ে যাওয়া, শুধু নিজে কিংবা মানুষ নয় বরং সকল প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধ, এবং সর্বশেষ মানুষকে যে কোন কিছুই অভিজ্ঞতার মাধ্যমে উপলব্ধি, শেখা ও ধারন করা –এ শিক্ষা গুলোর উপরে ভিত্তি করে দাড়িয়ে রয়েছে (Mr. Bishu Kumar বড়ুয়ার লেখায়)।

মূল কারন হলো বৌদ্ধ ধর্মই একমাত্র চিত্তের নিয়ন্ত্রন, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ বা জয় করা, ঈশ্বর কেন্দ্রীক ধর্মীয় বোধকে এড়িয়ে যাওয়া, শুধু নিজে কিংবা মানুষ নয় বরং সকল প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধ, এবং সর্বশেষ মানুষকে যে কোন কিছুই অভিজ্ঞতার মাধ্যমে উপলব্ধি, শেখা ও ধারন করা-এ শিক্ষা গুলোর উপরে ভিত্তি করে দাড়িয়ে রয়েছে। আর একারনেই আইনস্টাইন বলেছেন, “ভবিষ্যতের একটি কসমিক রিলিজিয়নে যেমন হওয়া দরকার বৌদ্ধ ধর্মের সেই সকল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি “ব্যক্তি ঈশ্বর” ধারণাকে ব্যবহার করে, অন্যের চাপিয়ে দেওয়া কোন “অবিতর্কযোগ্য”ও ঈশ্বর কেন্দ্রীক ধর্মীয় বিশ্বাসকে অগ্রাহ্য করে। বৌদ্ধ ধর্ম প্রাকৃতিক এবং আত্মিক দুটি ধারণাকেই অর্থপূর্ণভাবে একীভূত করতে পেরেছে; এবং এটি প্রাকৃতিক এবং আত্মিক দুই ক্ষেত্রেই অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান থেকে তৈরী ধর্মীয় অনুভূতির উপরে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে”।

এমন আরেকটি বক্তব্যে আইনস্টাইন বলেছেন, “যদি পৃথিবীতে এমন একটি ধর্মও থেকে থাকে যা আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক চাহিদাকে পূরণ করতে পারবে তবে তা হল বৌদ্ধ ধর্ম। বৌদ্ধ ধর্ম হবে আগামীর কসমিক ধর্ম। এই ধর্ম ভিত্তি করে অভিজ্ঞতার উপরে, অন্যের চাপিয়ে দেওয়া “অবিতর্কযোগ্য” ধারণার উপরে নয়”। (২) অন্য আরো একটি বক্তব্যে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, “কসমিক ধর্মীয় অনুভূতি ইতিমধ্যেই প্রারম্ভিক পর্যায়ে বিদ্যমান এবং তা বৌদ্ধ ধর্মে”।

আইনস্টাইনের এই ছায়া পরিবেশের কারাগার মানেই বৌদ্ধ ধর্মের সেই অজ্ঞানতা এবং দুঃখের শৃংখল। যে শৃংখলের আবরণে আমরা পরম জ্ঞাণ, শান্তি এবং মুক্তি কোন কিছুই দেখতে পাই না। আমরা আমদের আশে পাশের বস্তুগত জীবন নিয়েই নিজেদের এতটাই ছোট কারাগারের মধ্যে আবদ্ধ করে ফেলেছি যে এর বাইরে “নির্বাণ”-এর মাধ্যমে নিজেকে “মুক্ত” করা এবং এই মুক্তিই যে আসল সুখ তা উপলব্ধি করতে পারি না।

গৌতম বুদ্ধ মৈত্রী দ্বারাই চিত্তের জয় সম্ভব একমাত্র বৌদ্ধ ধর্মেই বলা হয়েছে, “সব্বে সত্ত¡া সুখীতা হোন্তু” অর্থাৎ জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক। এ পৃথিবীর সকল জীবের প্রতি অহিংসা প্রদর্শন এবং সকল প্রাণীর সুখ কামনা বা মৈত্রী কামনা পৃথিবীর অন্য কোন ধর্মেই শিক্ষা দেয়না। এই পৃথিবীর সকল প্রাণীই এক একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর এই সর্বজীবের প্রতি দয়া এবং সকল প্রাণীর প্রতি মৈত্রী প্রদর্শণ মানেই নিজেকে ছাড়িয়ে গিয়ে, আত্মকেন্দ্রীকতা কে বিসর্জন দিয়ে সমগ্র পৃথিবীর প্রতি অপ্রমত্ততা প্রদর্শন। এভাবেই শুরু হয় মানুষের নিজেকে ধীরে ধীরে চিত্তকে পরিশীলতার প্রক্রিয়া।

আইনস্টাইনও ঠিক একই কথা বলেছেন, “একজন মানুষ “ইউনিভার্স” নামে পরিচিত “সামগ্রীকতা”র অংশ যা কাল এবং স্থানের মাঝেই সীমাবদ্ধ। মানুষ নিজেই নিজের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা নেয়; তার চিন্তা এবং অনুভূতি অন্য সবকিছুর চাইতে আলাদা কিছু – যা তার সচেতনতার এক ধরনের দর্শনযোগ্য নিজের মত করে গড়ে তোলা ছায়াপরিবেশ। নিজেদের তৈরী এই ছায়া পরিবেশ আমাদের জন্যে একটি কারাগারের যা আমাদেরকে নিজেদের চাহিদা আর আশেপাশের কিছু মানুষের জন্যে আবেগ এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে দেয়। আমাদের কাজ হওয়া উচিৎ এই ছোট্ট কারাগার থেকে নিজেদের মুক্ত করে পৃথিবীর সকল প্রাণী এবং সমগ্র প্রকৃতির জন্যে আমাদের আবেগ এবং ভালোবাসাকে ছড়িয়ে দেওয়া কেউই এ কাজটি সম্পূর্ণরূপে করতে পারেননা তবে এটার জন্যে সর্বদা সচেষ্ট থাকাও মুক্তির পথে অনেকটাই এগিয়ে যাওয়া যা আমাদের চিত্তের ভেতরের নিরাপত্তার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে”।

লক্ষ্য করলে দেখা যায় আইনস্টাইন বলেছেন, “বৌদ্ধ ধর্ম প্রাকৃতিক এবং আত্মিক দুই ক্ষেত্রেই অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান থেকে তৈরী ধর্মীয় অনুভূতির উপরে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে”! (১)। অর্থাৎ সকল প্রাণীর প্রতি মৈত্রী প্রদর্শন হচ্ছে সমগ্র প্রকৃতিকে ভালোবাসারই একটি নামান্তর অন্যদিকে ধ্যাণ এবং বুদ্ধের নীতি অনুশীলনের মাধ্যমে নিজেকে বা নিজের চিত্তকে জয় করা, অজ্ঞানতাকে দূর করে নিজের মাঝে লুকায়িত পরম জ্ঞান বিশালতাকে আবিষ্কার করা হচ্ছে আত্মিক ক্ষেত্র। লক্ষ্য করুন, বৌদ্ধ ধর্মের সকল শিক্ষা এই দুটি ক্ষেত্রের উপরেই সর্বোচ্চ জোর দেয় এবং এই শিক্ষা অনুসরণ থেকেই অর্জিত হতে পারে পরম জ্ঞান এবং পরম মুক্তি – নির্বাণ।

বুদ্ধ বলেছেন, তুমি শুনেছো বলেই কোন কিছু বিশ্বাস করো না, কোন কিছু বলা হয়েছে বা সবাই বলছে বলেই তুমি তা বিশ্বাস করো না, ধর্মীয় বইতে লেখা আছে বলেই তুমি তা বিশ্বাস করো না, তোমার গুরু কিংবা শিক্ষক বলেছেন বলেই তুমি তা বিশ্বাস করো না, প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম কোন কিছু চলে আসছে বলেই তুমি তা বিশ্বাস করো না। নিজের পর্যবেক্ষন, অভিজ্ঞতা এবং বিশ্লেষন এর পর যদি তুমি দেখো তা যুক্তিযুক্ত এবং সকলের জন্যে কল্যাণকর তখন কেবল তুমি তা গ্রহণ করো এবং তা ধরে রাখো। ঠিক এই কথাগুলোই আইনস্টাইন বলেছেন এভাবেন “বুদ্ধ ধর্ম অভিজ্ঞতা কেন্দ্রীক একটি ধর্ম”।

এই পরম জ্ঞানোপলব্ধির পথ নিজেকে অজ্ঞানতার শৃংখল থেকে মুক্ত করা যে অজ্ঞানতার শৃংখলকে আইনস্টাইন “ছায়া পরিবেশের কারাগার”-এ মানুষের বসবাস বলে অভিহিতি করেছেন। এই অজ্ঞানতার মাঝে যার বসবাস সে প্রকৃত সুখ কি তা কখনোই উপলব্ধি করতে পারে না। আর তাই তার প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠা হয়!

জিনতাত্তি¡ক অ্যাডাম চার্লস রাদারফোর্ড ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিতে সহজ একটা অঙ্ক কষেছেন ২০২০ সালে প্রকাশিত তাঁর হাউ টু আর্গু উইথ আ রেসিস্ট: হিস্ট্রি, সায়েন্স, রেস অ্যান্ডরিয়্যালিটি বইটিতে। পৃথিবীর বর্তমান মোট জনসংখ্যা প্রায় ৭৯০ কোটি। এই জনসংখ্যা এখন প্রতি বছর মোটামুটি এক শতাংশ হারে বাড়ছে। এখন, আপনার বাবা এবং মা, দু’জন আলাদা মানুষ, জন্মেছেন তাঁদের দুই জোড়া আলাদা বাবা-মায়ের থেকে, অর্থাৎ ৪ জন মানুষ থেকে (আপনার দিদিমা-দাদামশাই, এবং ঠাকুরমা-ঠাকুরদা)। যদি ধরে নেওয়া হয় যে, এই ৪ জন এসেছেন তাঁদের চার জোড়া আলাদা আলাদা বাবা-মায়ের থেকে, তা হলে সরাসরি আপনার সঙ্গে জিনগত ভাবে যুক্ত প্র-পিতা ও প্র-মাতার সংখ্যা তিন প্রজন্ম আগে ছিল আট জন, চার প্রজন্ম আগে ছিল ষোলো জন- এবং, এক-একটি করে প্রজন্ম পিছিয়ে গেলে সংখ্যাটিও এ ভাবে প্রতি ধাপে দ্বিগুণ হতে থাকে। পর পর দু’টি প্রজন্মের মধ্যে কম-বেশি ২৫ বছরের ব্যবধান রয়েছে বলে ধরা হয়ে থাকে। সুতরাং, এই ভাবে চলতে থাকলে ১০০০ বছর আগে, অর্থাৎ ৪০ প্রজন্মের ব্যবধানে শুধুমাত্র একটি বংশের পূর্বনারী ও পুরুষের মোট সংখ্যাটাই দাঁড়ায় প্রায় ১ লক্ষ ১০ হাজার কোটি। এই সংখ্যাটা আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে জন্মানো সমস্ত মানুষ, অর্থাৎ হোমো সেপিয়েন্স প্রজাতির সর্বকালের মোট লোকসংখ্যার (যেটা আনুমানিক ১১ হাজার কোটি) ১০ গুণ বেশি! রাজনীতি বা ক্ষমতার দম্ভ যে সত্যটাকে কখনও স্বীকার করে না, তা হল, যুক্তিবাদী বা বিজ্ঞানীকে হত্যা করলেই বৈজ্ঞানিক সত্যকে পাল্টে দেওয়া যায় না।

অতএব, আজকের পৃথিবীর প্রতিটা মানুষের ঊর্ধ্বতন পুরুষ ও নারীরা যদি সবাই আলাদা আলাদা হতেন, তা হলে ১০০০ বছর আগে পৃথিবীর জনসংখ্যা আজকের জনসংখ্যার থেকে প্রায় হাজার কোটি গুণ বেশি হত! অথচ, বিজ্ঞানভিত্তিক ভাবে অনুমান করা হয় যে, হাজার বছর আগের পৃথিবীতে জনসংখ্যা ছিল তিন কোটির আশেপাশে। তা হলে এই ধাঁধার উত্তর কী? উত্তর একটাই, আর সেটা হল এই যে, আমাদের পূর্বপুরুষেরা আদৌ সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র বংশধারার পথে আসেননি। বরং সময়ের উজানস্রোতে হাঁটলে দেখা যাবে যে, আর্থ-সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ আলাদা পরিবারগুলোর মধ্যেও বিরাট জিনগত সমাপতন রয়েছে। জাতপাত আর ধর্মের ধুয়ো তুলে যারা একে অপরের গলায় ছুরি বসাচ্ছে, সময়ের উল্টোরথে মাত্র আট-ন’শো বছরের ব্যবধানে তাদের পূর্বনারী-পূর্বপুরুষরা হয়তো বড় হচ্ছিলেন একই বাবা-মায়ের কোলে-পিঠে জেনেটিক ডেমোগ্রাফি-র পরিভাষায় এই নির্দিষ্ট সময়কে বলা হয় ‘জেনেটিক আইসো-পয়েন্ট’। পৃথিবীর যে কোনও দুই প্রান্তে থাকা সব দিক থেকে আলাদা দুটো পরিবারের বংশধারা এই জেনেটিক আইসো-পয়েন্ট’এ পৌঁছে সম্পূর্ণ জুড়ে যাবে। রাদারফোর্ডের কথায়, কেউ যদি জেনেটিক আইসো-পয়েন্ট’এ বেঁচে থাকেন, তা হলে হয় আজ পৃথিবীর তাবৎ মানুষ তাঁর জিন বহন করছে, না হলে তাঁর বংশধারা চিরতরে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। এমআইটি-র বিজ্ঞানীদের গণনা বলছে যে, এই সময়টা খুঁজতে আমাদের আদৌ কোনও প্রস্তরযুগে ফিরে যেতে হবে না— এই সময়টা ছিল মাত্র খ্রিস্টপূর্ব ৫৩০০ থেকে ২২০০ অব্দের মধ্যে।

জেনেটিক আইসো-পয়েন্ট সংক্রান্ত এ ধরনের গবেষণার ফল স্বভাবতই চামড়ার রং, রক্তের বিশুদ্ধতা, কিংবা তথাকথিত বংশমর্যাদার অহঙ্কারের মতো ধ্যানধারণাকে খুব সুনির্দিষ্ট ভাবে নস্যাৎ করে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত জাতিবিদ্বেষকে সামনে রেখে গড়ে ওঠা ইউজেনিক্স-এর মতো অপবিজ্ঞানের বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে রাদারফোর্ডরা নতুন করে সারা পৃথিবীর মানুষকে আত্মীয় বলে ভাবতে শেখান। তাঁদের বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার সামনে বড় বেচারা মনে হয় সেই রাজনীতির কারবারিদের- মানুষে মানুষে ধর্মের রূপকথাগুলোর ভিত্তিতে শত্রুতা আর অবিশ্বাস জিইয়ে রাখাটাই যাঁদের মূলধন।

বৌদ্ধ পাল রাজত্বের আধিপত্যের প্রেক্ষাপটে এবং ব্রাহ্মণ্য ধর্মের পূনরুত্থান কালে চর্যাপদের জন্ম আধুনিক গণতান্ত্রিক অধিকারের মেনিফিষ্টো হিসেবে। এর মধ্যে নিহিত রয়েছে বাঙালীর সর্বপ্রথম গনতন্ত্রের বীজ ‘বাক স্বাধীনতার অধিকার’। বাংলা ভাষার প্রথম ‘বিপ্লবী মিনার’। বৌদ্ধ কবি ও সাধকগন বিপুল প্রজ্ঞা ও ক্ষুরধার বৌদ্ধদর্শন প্রয়োগ করে মনুষ্যত্বের উন্মেষ বিকাশে চর্যাপদের (৮ম – ১২শ শতাব্দী) এক একটি কবিতা রচনা করতেন। মানুষের দেশ মানুষের মনেরই সৃষ্টি। জগতের সকল প্রাণী সুখী হউক এবং হিন্দু মুসলমান, বৌদ্ধ, খৃষ্ঠানসহ সকল মানব সন্তান মিলে আমাদের মানবজাতি। মানবজাতির বুদ্ধ বন্দনষয় আমার দেশ আমার পরম তীর্থভূমি এবং বৌদ্ধ জনতার কণ্ঠে ধ্বনিত হয়, বুদ্ধং সরনং গচ্ছামি!

ধর্মের ছদ্মবেশে ধর্ম বিদ্বেষের অভিশপ্ত রাজনীতি সুদূর তূর্কি (TURKEY) দেশ থেকে বখতিয়ার খিলজি এসে ১২০২ সালে বাংলাদেশ দখল করল! এবং রামষই পন্ডিতের লেখা “শূন্য পুরান“ শীর্ষক বই বলছে (16th Century), সন্ত্রাসী তুর্কি মুসলমান বখতিয়ার খিলজি ও মুসলমান শাসকগণ বৌদ্ধগণকে মুসলমান বানিয়েছিলেন! বৌদ্ধ বিদ্বেসী বই লিখে বাংলাদেশে প্রতিবছর বৌদ্ধ ভিক্ষু হত্যা কেন? মৌলবাদীরা বাংলাদেশে ২০১৯ সালে মুসলমান রচিত নৈতিকতা শিক্ষা’ ইসলাম ধর্মের পঞ্চম শ্রেণির ইসলাম ধর্ম ও বইয়ের ১৬ ও ১৭ নম্বর পৃষ্ঠায় পাঠ্য বইতে বলছে ““অমুসলিমরা‘ মিথ্যাবাদী’, ‘লোভী’, ‘পশুর অধম! রামু বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার ৮ বছর শেষে ৯ বছর অতিবাহিত হলেও মামলার বিচার এখনো শুরু না করে বৌদ্ধধর্মকে খারাপ সাব্যস্ত করে, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে কালেক্ট’র স এডিশন ‘বুদ্ধ’ শীর্ষক বই লিখেছেন!

হিন্দু মুসলমান রাজনীতির আক্রমণের শিকার বৌদ্ধ ধর্ম কেন? মুসলমানদের প্রতারণার রাজনীতিতে রোহিঙ্গা জামাতুল মুজাহিদীনের জঙ্গিরা বৌদ্ধদের সর্বশ্রেষ্ঠ তীর্থভূমি বুদ্ধগয়ায় (ভারতে) মহাবোধি বিহারে মর্মন্তিকভাবে নির্বিচারে বোমা হামলা চালিয়ে ছিল ২০১৩ সালের ৭ জুলাই ভোর সাড়ে পাঁচটা হতে ছয়টার সময় ! বাংলাদেশে বৌদ্ধ বিদ্বেসী উল্লাস মানবজাতির ধর্ম নয়!

হিন্দুরাজনীতির হিন্দুধর্মই শুধু বৌদ্ধ ভারতের বুদ্ধগয়া ম্যানেজম্যান্ট কমিটি নিয়ন্ত্রন সহ সব রাষ্ঠ্রীয় সুযোগ সুবিধা সমূহ ভোগ করে বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা তো সভ্যসমাজে গণতন্ত্রের আইন নয়। গণতান্ত্রিক ভারতে হিন্দুধর্ম কি অহিন্দু ধর্ম সমূহকে মুন্ডক উপনিষদ (বা গৃহত্যাগী জৈন, বৌদ্ধ, হিন্দু ইত্যাদি) এবং আল্লাহ উপনিষদের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রন করার কি ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে? সম্রাট অশোক বৈদিক প্রাণী হত্যা মূলক যজ্ঞ এবং জাতিভেদ প্রথা আইন করে বন্ধ করে দিয়ে বৌদ্ধধর্ম গ্রহন করেছিলেন। আমার লেখা কবিতা:
হাজার বছর আগে হরিসেনের বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞের কথা
বল্লালসেনের মহামন্ত্রী হলায়ুধ মিশ্রের নাম ও আছে গাঁথা।
বৌদ্ধগণ বন্দী আজ হিন্দুত্বের ঘৃণার অগ্নিগিরিতে
ফেলে আসা বৌদ্ধ শ্মশান ও হাজার বছরের কবর খুঁড়তে।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত নটীর পূজা ও চন্ডালিকায় গৌতমবুদ্ধ নারী জাতির পরম মঙ্গলময় হলো, লেখক হুমায়ুন আহমেদ (His BOOK ‘রাবনের দেশে আমি ও আমরা’) এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাঠ্য “GENDER, SOCIETY AND DEVELOPMENT“ শীর্ষক বইটিতে পলিটিক্যাল ইসলাম পূজনীয় গৌতমবুদ্ধকে নারী বিদ্বেষী বলেন কেন? বৌদ্ধধর্মে নারীর মানবাধিকার এবং বোধিসত্ত¡ পন্থায় নারী ও বুদ্ধত্বলাভ করতে পারেন! হিংসা ও লোভের নাম ধর্ম নয়! গৌতমবুদ্ধের উপদেশ ছিল, “যে আমার দেহকে দেখে সে আমাকে দেখেনা, যে আমার উপদেশ মেনে চলে সে আমাকে দেখে ও মেনে চলে।“

বৌদ্ধধর্মকে খারাপ সাব্যস্ত করে ইসলাম ধর্ম ও হিন্দু ধর্মকে মহিমান্বিত করতে বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য “GENDER, SOCIETY AND DEVELOPMENT“ শীর্ষক বইটিতে দেশে আক্রমণের শিকার বৌদ্ধধর্ম কেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য বইটিতে অপরাধের আতঙ্ক ছড়াচ্ছে এবং মুসলমান না হলে কি বাংলাদেশের আদর্শবান নাগরিক হওয়া যায় না? ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করার উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য বইতে বৌদ্ধধর্ম ও বৌদ্ধদেরকে যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে, তা নিতান্তই (A father made her daughter prostitute) আপত্তিকর এবং বিব্রতকরও (Buddhist family life is not good) বটে। (১) Mr. Azizul Hoq Khan (২) Mr. Mahamudul Ala (৩) Mr. Bilas Mallik and (৪) Mr. Ujjal Chakraborty “লেখকগণ “Gender, Society and Development শীর্ষক বইটি লিখেছেন (For B.A (Honours) Fourth Year Social Science students in Bengali“ গ্রন্থ লিখে প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন যে, ইসলাম ও হিন্দু ধর্ম বৌদ্ধ ধর্মের চেয়ে উন্নত, better! ধর্মান্ধ বিভেদ বিদ্বেষের নামই কি ধর্ম ও রাজনীতি?

নট ফর সেল ক্লাবের ‘বই বিপ্লব’ সিরিজের প্রথম বই কালেক্টার্স এডিশন ‘বুদ্ধ’ গ্রাফিক গাইডটির গত ২০ সেপ্টেম্বর (২০২২) মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বইটি প্রকাশের পর পর বিভ্রান্তিকর তথ্য এবং কিছু কুরুচিপূর্ণ চিত্র শান্তপ্রিয় বৌদ্ধ জনসাধারণের মনে ধর্মীয়ভাবে আঘাত আনে।বিষয়টি দেশ-বিদেশের অনেকেরই নজরে আসে এবং এ ঘৃন্য কাজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সচেতন বৌদ্ধ জনসাধারণ সোচ্চার, প্রতিবাদ এবং নিন্দা জানায়। বৌদ্ধধর্মকে খারাপ সাব্যস্ত করে ইসলাম ধর্মকে মহিমান্বিত করতে লেখক গোলাম মুস্তাফা, লেখক হুমায়ুন আহমেদ এবং লেখকগণ বৌদ্ধ বিদ্বেসী বই লিখেছেন। এবং ধর্ম বিশ্বাসের কারনে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করার উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে লেখক হুমায়ুন আহমেদ ‘রাবনের দেশে আমি ও আমরা’ বইটি লিখেছেন!

হিন্দু মুসলমান রাজনীতির আক্রমণের শিকার বৌদ্ধ ধর্ম কেন? হিন্দু মুসলমান রাজনীতির প্রাচীন বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞ! বৌদ্ধ বাংলার অতীত মুখ ফোটে মনের কথা বলতে পারেনি। বৌদ্ধ বাংলায় এয়োদশ শতাব্দীতে দু’চারিটি অশ্রুজল! বৌদ্ধ বাংলাদেশে বৌদ্ধগণ মুসলমান হয়েছিলেন কেন? জামাত হিন্দু ও বৌদ্ধদের মুসলমান বানষচ্ছে! India (Sind / Pakistan) দখল করে নিল! রাজনীতি ও ধর্ম মানবাধিকারকে ধ্বংস করা অমানবিক অপরাধ বলে কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ভাষায়, “গোত্র দেবতা গর্তে পুরিয়া, / এশিয়া মিলাল শাক্যমুনি।” আজ বৌদ্ধধর্ম ভারতের গরীব আদিবাসীদের ও ডঃ বি. আর. আম্ভেদকরের অনুসারীদের অহিংসা পরম ধর্মে পূজনীয় গৌতমবুদ্ধ বলেছেন, “আমার শিক্ষা জ্ঞাণীদের জন্যে। তুমি যদি নিজের মন দ্বারা বিভ্রান্ত না হয়ে সেগুলো সঠিকভাবে পড়তে জানো তবে তুমি এই মহাবিশ্বের প্রকৃত শিক্ষা পাবে।” একমাত্র গৌতম বুদ্ধ উপলদ্ধি করেছেন সত্যিকার অর্থে প্রাকৃতিকভাবে পৃথিবীর উৎপত্তি। চামড়ার রং, ধর্ম বা জাতের নামে মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টির সমস্ত ফন্দির বিরুদ্ধে গলা তুলে, জিনতত্ত¡ বিজ্ঞানের উপর ভর করে সেই সত্য বলছে, আজকের পৃথিবীর কোটি কোটি জীবিত মানুষ আসলে এসেছে কয়েকটি আলাদা আলাদা দম্পতির বংশধারার পথে। এই পূর্বপুরুষ ও পূর্বনারীরা কিন্তু প্রায় ৭০,০০০ বছর আগে আফ্রিকা মহাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া হোমো সেপিয়েন্স-দের সেই আদিম অভিভাবকদের তুলনায় কালানুক্রমে অনেকটাই নবীন। এঁরা হয়তো পৃথিবীতে ছিলেন মাত্র ১০০০-১৫০০ বছর আগেই। মানবজনগোষ্ঠীগুলোর সুবিপুল আপাত বিভেদ ও বৈচিত্রের শেষ তবে ছিল এতটাই অনতিঅতীতে?

আসুন আজকের পূর্ণিমা তিথিতে উপোসথ শীল গ্রহণ ও প্রতিপালন পূর্বক নিজেদের শীল পারমীতার পরিপূর্ণতা সাধনে সংকল্পবদ্ধ হই। শুভ পূর্ণিমাকে কেন্দ্র করেই গৌতম বুদ্ধের জীবনে নানা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। আষাঢ় মাসের আরেক পূর্ণিমা রাতে মাত্র ২৯ বৎসর বয়সে তিনি স্ত্রী-পুত্র-রাজ্য সব মায়া ছেড়ে গৃহত্যাগ করেন। গয়ার বোধিদ্রুম মূলে একাধারে ছয় বছর কঠোর তপস্যার পর পরম জ্ঞান “মহাবোধি” লাভ করেন। নবলব্ধ ধর্ম প্রকাশের উদ্দেশ্যে তিনি আরেক আষাঢ়ী পূর্ণিমাতে সারানাথের ঈষিপত্তন মৃগদাবে আগমন করেন। বুদ্ধ এক আষাঢ়ী পূর্ণিমার রাতে ঈষিপত্তন মৃগদাবে সেই পঞ্চবর্গীয় শিষ্যদেরকে প্রথম ধর্মদেশনা “ধর্মচক্র প্রবর্তন সূত্র” দেশনা করলেন। কৌণ্ডণ্য, বপ্প, ভদ্দীয়, মহানাম ও অশ্বজিৎ—এ পঞ্চবর্গীয় শিষ্যদের কাছে তার নবলব্ধ সদ্ধর্মকে প্রকাশ করেন।

আষাঢ়ী পূর্ণিমার যে পাঁচটি স্মৃতির বিষয় পথ অবলম্বন প্রারম্ভে মডেল বা প্যারাডাইমে ইঙ্গিত করা হয়েছে সেগুলো হলো (১) মাতৃগর্ভে সিদ্ধার্থের প্রতিসন্ধি গ্রহণ, (২) গৃহত্যাগ, (৩) পঞ্চবর্গীয় শিষ্যদের ধর্মদেশনা ছিল যেটি বুদ্ধের প্রথম ধর্মচক্র প্রবর্তন (DEFENDANT ORIGINATION) সূত্র দেশনা; (৪) শ্রাবস্তীর গন্ডম্ব মতান্তরে গন্ডাম্র বৃক্ষমূলে যমক প্রাতিহার্য ঋদ্ধি প্রদর্শন এবং (৫) মাতৃদেবীকে তাবতিংস স্বর্গে অভিধর্ম দেশনা। ভারতের জাতীয় পতাকায় গৌতম বুদ্ধের ধর্মচক্র উপদেশ বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা ধর্ম কি? একটি বৃহৎ প্রশ্ন বটে! লোভ দ্বেষ মোহ সহ ষড়রিপুকে জয় করার নাম বৌদ্ধ‘ধর্ম!

বিশ্ববৌদ্ধ পুরস্কার প্রাপ্ত প্রখ্যাত মানবতাবাদী লেখক সোনা কান্তি বড়ুয়া (Bachelor of Arts, University of Toronto), The AuthorÕs World famous and glorious New Book entitled ÒPRE – VEDIC MOHENJODARO BUDDHISM & MEDITATION IN THE NUCLEAR AGE , (516 Pages)” সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা প্রবাসী কলামিষ্ঠ, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে বিশ্ববৌদ্ধ প্রতিনিধি!