অনলাইন ডেস্ক : ভবিষ্যতে রাজনীতি করা অনেক কষ্টকর হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।

রোববার (১১ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।

এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পুলিশ সদস্যদের ওপর যে হামলা হয়েছে তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। মাথার চামড়া খুলে ফেলা, হাত-পা-মাথা থেতলিয়ে ফেলা, এটা টলারেট করার মতো না। হাজার তরুণ মারা গেছে পুলিশ ও অন্যদের গুলিতে, এটাও দুঃখজনক। পুলিশ ছাড়া আমাদের সমাজ চলতে পারে না। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর লুট হওয়ার খবর পাচ্ছি। আমাদের সেনাবাহিনী ও বিজিবি মাঠে আছে কিন্তু এটা তাদের কাজ না। পুলিশের যেটা কাজ, সেটা তারা পারে না।

তিনি বলেন, একটা রাষ্ট্র এভাবে চলে না, একজনের ইচ্ছে মতো রাষ্ট্র চালানো যায় না। দেশটা কারো পার্সোনাল প্রপার্টি বা ফ্যামিলি প্রপার্টি না। হাজার হাজার লোক মারার পরেও ক্ষমতায় থাকতে চাওয়ার মানসিকতা। পুলিশকে ব্যবহার করেছে লাঠিয়াল বাহিনীর মতো। তাদের হাতে গত ১৫-২০ বছর আগে মারণাস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছে। দেখে আমি আশ্চর্য হয়ে গেছি। এটা ঠিক হয়নি। ভবিষ্যতে রাজনীতি করা অনেক কষ্ট হবে। পুলিশকে আর লাঠিয়াল বাহিনীর মতো ব্যবহার করতে পারবেন না। পুলিশ কমিশনের মতো পুলিশ চলবে।

এই উপদেষ্টা বলেন, আজ অবস্থা দেখেন, প্রতিদিন সন্ধ্যায় ডাকাতি হচ্ছে। কী করবেন পুলিশ নাই, পুলিশ সদস্যরা ডিমোরালাইজড হয়ে গেছে। আপনাকে মনে রাখতে হবে পুলিশকে ব্যবহার করেছে কে? তাদের ধরেন। আমি চেষ্টা করব। হুকুমদাতা যারা ছিল তাদের শাস্তি হবে, কঠোর শাস্তি হবে। দেশে না পারলে বিদেশে হবে। এটা কোনো কথা হলো না, হুকুম দিয়ে ছেলে-পেলে আর জনগণকে মারবেন, এটা হতে পারে না। আবার আসেন, দেখেন জনগণ কী করে। জনগণ ছিড়ে ফেলবে এবার। এটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে কারা পুলিশকে এভাবে ব্যবহার করেছে।

এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এ বাংলাদেশে রাজনীতি হয়ে গেছে চাটুকারদের রাজনীতি। আমরা কোনো রাজনীতিবিদ তৈরি করিনি, চাটুকার তৈরি করেছি। মানুষ মরে যাচ্ছে কিন্তু বলা হচ্ছে, না সব ঠিক আছে। এরকম চাটুকারদের দল দিয়ে রাজনীতি করা যায় না।

তিনি বলেন, আর আপনাদের মিডিয়া, অন্তত এই পিরিয়ডে, কোনো মিডিয়া চাটুকারিতা করলে বন্ধ হয়ে যাবে। চাটুকারী মিডিয়া হবেন, বন্ধ করে দেব। অতীতে যা ছিলেন ছিলেন, আমি কোনোটা বন্ধ করতে চাই না। আমি এক কথার মানুষ, চাটুকারিতা করবেন, বন্ধ করে দেব।

এই উপদেষ্টা বলেন, আপনারা সত্যি ঘটনা তুলে ধরেন। আপনারা সত্যি ঘটনা তুলে ধরেননি। যদি ধরতেন তাহলে পুলিশের এ অবস্থা হয় না। বারবার বলছেন ‘কিছু হয়নি’। শেম অন ইউ। শেম অন দ্য মিডিয়া ওনার।

এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আপনারা টকশোতে কাকে ডাকা যাবে, কাকে ডাকা যাবে না লিস্ট করেন। সেখানে জ্ঞানগর্ভ কোনো আলোচনা হয় না। আটকে গেলেই চলে যান ৭৫-এ কী হয়েছিল। অনুগ্রহ করে তাদের ডাকবেন না, চাটুকারদের ডাকবেন না। দয়া করে সঠিক তথ্য তুলে ধরেন, যাতে যারা ক্ষমতায় থাকেন তাদের চোখটা যেন খোলে। একটা দেশ ডুবে কখন? যখন মিডিয়া সত্য কথা বলে না, মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করে। সবার বিচার হওয়া উচিত, মিডিয়া ওনারদেরও। নির্বাচনে চুরি হচ্ছে, বলে কোনো সমস্যা নেই। ভোট খুব ভালো হয়েছে। দয়া করে দেশটাকে বাঁচান। যেটা হয়েছে সেটার তদন্ত হবে। দেশে তদন্ত হবে, আন্তর্জাতিক তদন্ত হবে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যা হয়েছে হয়েছে, ইতিহাসকে ফেরত আনতে পারব না। আমরা মনে করি আওয়ামী লীগ অনেক পুরোনো পার্টি, সেখানে নতুন নেতৃত্ব আসবে। তারা এ শিক্ষাটা গ্রহণ করবে। আমি চেষ্টা করব, যাতে পলিটিক্যাল পার্টি অ্যাক্ট থাকে। সে অনুযায়ী দল চালাতে পারলে চালাবেন, নয়তো বন্ধ করে দেবেন। পুলিশ প্রধানদের বলব, আপনারা অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করবেন না। যাদের টার্গেট করছেন তারা আপনার সন্তান।

রংপুরে আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে কিন্তু সেখানকার পুলিশ কমিশনারকে এখনও সরানো হয়নি, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি প্রথমে বলেছি, এটা মার্ডার। আমরা এ ধরনের লোক চাই না, যারা গাইড করতে পারে না।

পুলিশ সদস্যদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ওনাদের কয়েকজন প্রতিনিধি আসবে, তাদের শতভাগ কথা শুনব। তারা এমন কোনো দাবি করেননি, যেটা পূরণ করা সম্ভব নয়। কিছু জায়গায় হয়ত দেরি হবে। আপনারা থানায় ফিরে যান।

দেশে স্বাভাবিক পরিস্থিতি কবে নাগাদ ফিরবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা স্বাভাবিক হওয়ার সম্পূর্ণ বিষয় জনগণের কাছে। সংখ্যালঘু যারা আছেন তারা আপনাদের সমাজেই বাস করেন। এ ধরনের হামলা কোথাও করতে দেবেন না। তাদের কোনো দোষ নেই। জনগণের কাছে অনুরোধ আপনারা এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনুন। দুষ্কৃতকারী যারা আছে, ধরে ফেলেছে অনেক জায়গায়। আমাদের সাহায্য করেন। যত তাড়াতাড়ি সাহায্য করবেন, তত তাড়াতাড়ি আগের মতো পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে পারব। পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করুন। পুলিশের বিচার করা আপনার হাতে না, আইন আদালত আছে। যারা অতিরিক্ত করেছে তারা শাস্তির আওতায় আসবে।

এসময় আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম বলেন, আমরা ভিআইপি রোডে ইতোমধ্যে ট্রাফিক সদস্যদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেছি। ইতোমধ্যে ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে জাহাঙ্গির গেট পর্যন্ত বেশি করে ফোর্স দিয়ে চালু করেছি।

তিনি বলেন, আন্দোলনে সহিংসতায় ৪২ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন, এর মধ্যে পরিদর্শক ৩ জন ও ২ জন র‌্যাব সদস্য। আহত অসংখ্য, শুধু রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালেই ৫০৭ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। ২৭ জন বেশি আহত, এদের মধ্যে আইসিইউতে আছেন ২ জন। যারা আহত হয়েছেন তাদের আমরা ফুল সাপোর্ট দিচ্ছি।