অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত (রিজার্ভ) নতুন উচ্চতা ছুঁয়েছে। বৃহস্পতিবার মজুত ৪০ বিলিয়ন ডলার বা ৪ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। এর আগে গত বুধবার রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ৯৭৮ কোটি ডলার। ১ সেপ্টেম্বর রিজার্ভ বেড়ে হয়েছিল ৩ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বৈদেশিক মুদ্রার মজুত অর্থনীতির একধরনের শক্তি। সাধারণত, তিন মাসের সমান রিজার্ভ বা মজুত রাখতে হয়। কিন্তু এখন বাংলাদেশে প্রায় ১০ মাসের আমদানির সমান রিজার্ভ রয়েছে।
বিশ্ব অর্থনীতি এখন মন্দার মধ্যে। করোনাভাইরাসের কারণে বিপর্যস্ত সব দেশের অর্থনীতি। এ রকম এক কঠিন সময়েও রিজার্ভ বাড়ার রহস্য কী?
রিজার্ভের বেশ কয়েকটি উৎস রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে বড় ভূমিকা রাখছে প্রবাসী আয়। প্রবাসীরা অর্থ পাঠানো বাড়িয়ে দিয়েছেন। গত জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি ৪৬ শতাংশ। রপ্তানিও ঋণাত্মক ধারা থেকে ফিরে এসেছে। এখন পর্যন্ত রপ্তানির প্রবৃদ্ধি প্রায় ২ শতাংশ। তবে আমদানিতে তেমন গতি নেই। আবার মহামারির কারণে দাতাদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে ঋণসহায়তা। বিদেশে যাওয়ায় প্রায় বন্ধ। ফলে ডলারের ওপর চাপ নেই। এসব কারণেই নতুন নতুন রেকর্ড করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ।
মহামারির প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই গত সেপ্টেম্বরে ২১৫ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন। গত বছরের একই মাসে এসেছিল ১৪৭ কোটি ডলার। ফলে গত মাসে প্রবাসী আয়ে ৪৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। করোনার মধ্যে গত জুলাই মাসে ২৫৯ কোটি ডলারের আয় এসেছিল। আর আগস্টে এসেছিল ১৯৬ কোটি ডলার। এত প্রবাসী আয় আসায় ব্যাংকগুলোতে ডলারের উদ্বৃত্ত দেখা দিয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার কিনে দাম স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে। এসবই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ার পেছনে প্রধান ভূমিকা রাখছে। আর ডলার কিনে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা দেওয়ায় অনেক ব্যাংকের হাতে অতিরিক্ত টাকা জমে গেছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, সংকটে পড়লে এই রিজার্ভ অর্থনীতির গতি ধরে রাখতে কাজে দেবে। আমদানি দায় মেটাতে সমস্যায় পড়তে হবে না। প্রবাসী আয় বাড়াতে ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া শুরু করে সরকার। এরপর থেকেই প্রবাসী আয়ে গতি এসেছে। তবে করোনার পরে তাতে নতুন মাত্রা দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কাজ হারানোর আশঙ্কায় অনেকে সব বিক্রি করে টাকা পাঠাচ্ছেন। সুতরাং সামনের দিনগুলোতে প্রবাসী আয়ের এই গতি ধরে রাখা যাবে কি না, এ নিয়ে সংশয় রয়েছে।
মূলত ২০১৪ সাল থেকেই দেশে রিজার্ভের পরিমাণ বেশি করে বাড়তে শুরু করে। ওই বছরের ১০ এপ্রিল রিজার্ভ ২ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে তা ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলার ছাড়ায়। আর ২০১৬ সালের জুনে রিজার্ভ বেড়ে হয় ৩ হাজার কোটি ডলার।