Home আন্তর্জাতিক বেসরকারি চাকরি হারানোর ভয়, তাই সরকারি চাকরির পেছনে ছুটছে চীনা যুবকরা

বেসরকারি চাকরি হারানোর ভয়, তাই সরকারি চাকরির পেছনে ছুটছে চীনা যুবকরা

অনলাইন ডেস্ক : স্নাতক পর্যায়ে ভালো ফল করা শিক্ষার্থীদের জন্য বিশাল সুযোগ রয়েছে চীনের বার্ষিক ন্যাশনাল সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায়। কারণ প্রতি বছর এ পরীক্ষায় (সরকারি চাকরিতে) বহু প্রার্থী প্রয়োজন হয়। দেশটিতে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে স্নাতক পাস করা চীনা শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক পদ সংরক্ষিত থাকে।

২২ বছর বয়সী ডু জিং সম্প্রতি স্নাতক শেষ করেছেন। গত বছরের ডিসেম্বরে তিনি চীনের হুবেই প্রদেশের শিজিয়াংহুয়াং শহরের একটি কেন্দ্রে সরকারি চাকরির জন্য পরীক্ষা দেন। এজন্য তিনি ছয় মাস ধরে ব্যাপক পড়াশুনা করেন।

আবার অনেকে সরকারি চাকরির পরীক্ষায় বসার জন্য শিক্ষকের কাছে প্রাইভেটও পড়েছে। চীনে সরকারি চাকরির পরীক্ষায় প্রার্থীদের সাধারণ জ্ঞান এবং বিশ্লেষণধর্মী দক্ষতার ওপর প্রশ্ন করা হয়। এছাড়া চীনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং এর সম্পর্কে তাদের মতবাদ কী এবং চীন নিয়ে তাদের স্বপ্ন কী তা জানতে চাওয়া হয়।

সরকারি চাকরির পরীক্ষায় বসা ডু জিং দীর্ঘ প্রস্তুতি নেওয়ার পরও পাস করা নিয়ে দুঃচিন্তায় পড়েন। কারণ চীনের অন্যান্য শহরে তার মতো হাজার হাজার পরীক্ষার্থী সরকারি চাকরির জন্য পরীক্ষা দিয়েছেন।

ডু আল জাজিরাকে বলেন, পরীক্ষা খুবই প্রতিযোগিতাপূর্ণ হয়েছে। ওই বছর সিভিল সার্ভিসের প্রতিটি পদের জন্য ৭০ জন প্রার্থী প্রতিযোগিতা করেন।

পরবর্তীতে ডু খুবই আশ্চর্য হন, কারণ তিনি জানতে পারেন পরীক্ষায় সে পাস করেছে। পরে শিজিয়াংহুয়াং শহরে অবস্থিত চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) স্থানীয় একটি অফিসে সে যোগদান করেন।

চলতি বছর সরকারি চাকরিতে প্রতিযোগিদের সংখ্যা ছিল উল্লেখ করার মতো। গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত সরকারি চাকরির পরীক্ষায় এবারই প্রথম ৩০ লাখ প্রার্থী অংশ নেয়।

স্টেট রান গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবার সরকারি চাকরিতে কয়টি পদ খালি রয়েছে তার উল্লেখ করা হয়নি। তবে আগের মতো একটা পদের বিপরীতে ৭০ জনের পরবর্তীতে ৭৭ জন করা হয়েছে।

তবে এ ঘটনায় ডু আশ্চর্য হয়নি। তিনি বলেন, আমি মনে করি চীনের অধিকাংশ যুবক একটি স্থায়ী চাকরি চাচ্ছেন।

চীনের টালমাটাল অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ডুকে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় আকৃষ্ট করে। এজন্য তিনি গত বছর এ পরীক্ষায় বসেন।

তিনি আল জাজিরাকে বলেন, স্নাতক শেষ করার পরে আমি চিন্তা পড়ে যাই, আমি জানি না কী করব। তবে আমি জানতাম যে আমার একটি চাকরি দরকার। যেখানে নিজেকে নিরাপদ বোধ করি। এজন্যই আমি সরকারি চাকরিকে বেছে নিলাম।

যদিও চীনের সরকারি চাকরিজীবিদের বেতন তেমন বেশি নয়, সেক্ষেত্রে দেশটিতে বেসরকারি খাতে কর্মরত কর্মীদের বেতন অনেক বেশি। তবে চীনে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য মেডিকেল সুবিধা অনেক ভালো। এছাড়া রয়েছে পেনশন সুবিধা এবং বোনাসসহ আজীবন চাকরির নিরাপত্তা। সরকারি চাকরিতে নিরাপত্তা থাকায় দেশটির মানুষ এর নাম দিয়েছে `আয়রন রাইস বোল’ বা লোহার ভাত ভর্তি বাটি।

চীনার পিতা-মাতারা তাদের সন্তানদের জন্য এমন কিছু প্রত্যাশা করে যাকে লোহার ভাত ভর্তি বাটির সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এটি মূলত সরকারি চাকরির সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। কারণ সরকারি চাকরি পাওয়া যেমন নিরাপত্তার, তেমনি গৌরবের।

এছাড়া সরকারি চাকরিতে রয়েছে চাপবিহীন কাজের সুবিধা। ডু বলেন, চাকরি জীবনে কতঘণ্টা কাজ করছি সেটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কাজ করছি এবং ছুটির দিনগুলোতে আমার কাজ করতে হয় না।

ডু এর অনেক বন্ধু রয়েছে, যারা বেসরকারি সেক্টরে চাকরি করেন। তারা সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কাজ করেন। সপ্তাহে ছয়দিনই তাদের কাজ করতে হয়। এর নাম দেওয়া হয়েছে ৯৯৬। তিনি আরও বলেন, চাকরি করেও আমি অনেকে সময় পাচ্ছি। যে সময় আমি আমার ব্যক্তিগত কাজে ব্যয় করতে পারি।

চলতি বছর চীনে সরকারি চাকরিতে রেকর্ড সংখ্যক প্রার্থী বসায় আশ্চর্য হননি ইয়াং জিয়াং। তিনি ড্যানিশ ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের একজন শিক্ষক।

সম্রাট শাহজাহান কি সত্যি তাজমহলের কারিগরদের হাত কেটে দিয়েছিলেন?
তিনি বলেন, সরকারি চাকরিতে প্রার্থীদের সংখ্যা আরও বাড়বে। কারণ চীনে স্নাতক পাস করা যুবকদের সংখ্যা বেড়েছে।২০২৩ সালে চীনে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ ৬ হাজার যুবক তাদের শিক্ষা জীবন শেষ করেছে।

ইয়াং জিয়াং বলেন, বড় সংখ্যাক প্রার্থীদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করার অন্যতম কারণ হলো চীনের অর্থনীতি। কারণ আমাদের অর্থনীতি দোদুল্যমান।

সূত্র: আল জাজিরা

Exit mobile version