প্রিয়াঙ্কা ভৌমিক, নিউইয়র্ক : আমেরিকায় বেকারদের জন্য করোনাকালীন ৬০০ ডলারের ফেডারেল বেনিফিট বন্ধ হতে যাচ্ছে। যদিও আমেরিকার অর্থনীতি এখনো পুরোদমে সচল হয়নি। এর মধ্যেই বিভিন্ন কোম্পানি কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা অব‍্যাহত রেখেছে।

বেকারদের জন্য করোনাকালীন এই ফেডারেল বেনিফিট প্রোগ্রাম ৩১ জুলাই শেষ হওয়ার কথা হলেও শেষ সপ্তাহের বেনিফিট আগামী ১ বা ২ আগস্ট পাওয়া যাবে। কারণ কেবল শনিবার বা রোববারে শেষ হওয়া সপ্তাহের জন্য টাকা প্রদান করা হয়।

গত মার্চ মাসে পাস হওয়া দুই ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক সহায়তা প্যাকেজের অংশ হিসেবে পাওয়া ৬০০ ডলারের বেনিফিট বন্ধ হয়ে গেলেও বেকার আমেরিকানরা এখনো স্টেট থেকে বেকারত্বের জন্য বরাদ্দ প্রণোদনার কিছু অংশ পাবেন। তবে এতে অর্থের পরিমাণ খুব বেশি না হওয়ায় মানুষ এখন ধীরে ধীরে বেকারত্বের আসল কষ্টটা বুঝতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধারণা করা হচ্ছে, এর কারণে প্রতি মাসে ২৫ লাখের বেশি মানুষ দরিদ্র হয়ে যাবে, যা গণ বেকারত্বের সৃষ্টি করতে পারে।

দ্য সেঞ্চুরি ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো অ্যান্ড্রু স্ট্যাটনারের এক বিশ্লেষণে জানা গেছে, ৬০০ ডলারের পেমেন্টে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ২৫ লাখ আমেরিকানকে ১৫ কোটি ডলারের বেশি অর্থ সরবরাহ করতে হয়। অনেকে এই অর্থ বাড়িভাড়া, বিভিন্ন বিল, খাবার কিনতে এবং অন্যান্য প্রাথমিক প্রয়োজনে ব্যয় করছেন।

দারিদ্র্য ও বৈষম্যবিষয়ক জর্জটাউন সেন্টারের জ্যেষ্ঠ নীতি বিশ্লেষক ক‍্যালি গ্রান্ট বলেছেন, এই জরুরি বেকারত্বের সুবিধাগুলোর কারণে আমেরিকা বেশ কয়েক মাস ধরে পরিবারগুলোকে সহায়তা করছে। অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অসময়ে এই সুবিধা বন্ধ হলে সত্যিকার অর্থে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হতে পারে।

৬০০ ডলারের এই বেনিফিট পাওয়ায় পরও কিছু পরিবারের জন্য মোট বেকার ভাতার পরিমাণ তাঁদের পারিবারিক চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না। যেমন ফ্লোরিডার জ্যাকসনভিলের ন্যাগা ম্যাকনার তাঁদের মধ্যে একজন। ফ্লোরিডায় লকডাউন হওয়ার আগে এই তিন সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিনই দুই শিফটে দুটি আলাদা কোম্পানিতে কাজ করতেন। লকডাউনের কারণে তাঁর দুটি কাজই বন্ধ হয়ে যায়। এখন যদিও তিনি বেকার ভাতা পাচ্ছেন, তবে সেটা আগের রোজগারের তুলনায় অনেক কম। এখন যদি এই ৬০০ ডলারের ফেডারেল বেনিফিট বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে সংসার কীভাবে চলবে, সেই চিন্তায় অস্থির হয়ে আছেন ম্যাকনার।

অপর দিকে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের এক হিসাবে দেখা যায়, এই বেনিফিট কার্যক্রমটি শুরু থেকেই বিতর্কিত হয়েছিল। কারণ অতিরিক্ত ৬০০ ডলার যখন রাষ্ট্রীয় সুবিধার সঙ্গে যুক্ত হয়, তখন প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের মাসিক আয় নিয়মিত আয়ের থেকে অনেক বেড়ে গিয়েছিল। বিতর্কিত হওয়া সত্ত্বেও আইনপ্রণেতারা মার্চের শেষের দিকে এই বেনিফিটটি অনুমোদন করেন। কারণ করোনার বিস্তার রোধ করার জন্য হেলথ অফিশিয়ালদের নির্দেশ অনুযায়ী অনেককেই কাজ ছাড়তে হয়েছিল। কংগ্রেস মাত্র চার মাসের জন্য এই বেনিফিটটির অনুমোদন দিয়েছিল। কারণ তখন ধারণা ছিল, শিগগিরই করোনা পরিস্থিতি ভালো হবে এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আবার চালু হয়ে গেলে অর্থনীতি দ্রুত ফিরে আসবে। তাঁদের এই ধারণা অবশ্য আংশিক সত্যি হয়েছিল যখন এপ্রিল মাসে ২০ লাখ লোক চাকরিচ্যুত হওয়ার পর মে ও জুন মাসে নিয়োগকর্তারা প্রায় ৪০ লাখের বেশি শ্রমিক নিযুক্ত করেন।

কংগ্রেসের সংসদ সদস্যরা পরবর্তী অর্থনৈতিক উদ্দীপনা প্যাকেজ নিয়ে এই সপ্তাহে কাজ শুরু করেছেন। তবে তাঁরা শেষ পর্যন্ত এ বিষয়ে সম্মত হবেন কি না, তা এখনো স্পষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না।

সিনেট রিপাবলিকানরা, যাঁরা এই সপ্তাহে তাঁদের প্রস্তাব প্রকাশ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে, তাঁরা সাধারণত বেনিফিট বাড়ানোর বিষয়টি ভালোভাবে দেখছেন না। তাঁরা মনে করেন, এটি জনগণকে আবার কাজে ফিরে আসার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করতে পারে। তাই বেনিফিট বাড়ানোর পরিবর্তে জিওপির আইনপ্রণেতারা কাজে ফিরে যাওয়া লোকজনের জন্য একটি বোনাস চালু করার বিষয়টি বিবেচনা করছেন। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটরা মনে করেন, পরিবার ও অর্থনীতির জন্য সঠিক কাজ হলো সুপার চার্জযুক্ত বেকারত্বের সুবিধাগুলো প্রসারিত করা।